অর্থপাচার মামলা, ২১ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিদেশে পাচার করা অর্থ অবিলম্বে ফেরত আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের জবাব না পেয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত বলেছেন, রুলের জবাব দিতে এতো দেরি হলো কেন? পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দেয়ার পর গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বাকি ১৩ বিবাদীকে প্রতিবেদন দিতে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেন।

এদিন আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এর আগে, গত ১৭ আগস্ট ক্যাসিনোকা-ে সম্পৃক্ত যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও বহিষ্কৃত কমিশনার মোমিনুল হক সাঈদসহ ১৩ জনের বিদেশে ৩১১ কোটি টাকা পাচারে জড়িতদের বিষয়ে সিআইডির প্রতিবেদন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করা হয়।

পরে ১৭ অক্টোবর একেএম আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বিদেশে ৩১১ কেটি টাকার অর্থপাচারে জড়িতদের মধ্যে ক্যাসিনোকা-ে সম্পৃক্ত যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও বহিষ্কৃত কমিশনার মোমিনুল হক সাঈদসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে এসেছে।

সম্রাট, খালেদ ও সাঈদ ছাড়াও ফরিদপুরের বোয়ালমারীর রাজীব হোসেন রানা, নেত্রকোনার বারহাট্টার জামাল, কুমিল্লার দাউদকান্দির শরিফুল ইসলাম ও আউলাদ হোসেন, ফেনীর ছাগলনাইয়ার এনামুল হক, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মো. শাহজাহান বাবলু, চট্টগ্রামের খুলশীর নাজমুল আবেদীন, সোহেল আবেদীন, পাহারতলী এলাকার এ কে এম জাহিদ হোসেনসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনের অর্থপাচারে সম্পৃক্ততার কথা প্রতিবেদনে জানায় সিআইডি।

এছাড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রামের ‘এ অ্যান্ড বি আউটারওয়্যার অ্যান্ড নর্ম আউটফিট অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড’র নামও তারা উল্লেখ করে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে অর্থপাচারে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে, এদের মধ্যে সরকারি কর্মচারীই বেশি। এছাড়া রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীও রয়েছেন। তবে সেদিন কারও নাম তিনি প্রকাশ করেননি।

ওই বক্তব্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বাঙালি অধ্যুষিত কানাডার কথিত ‘বেগম পাড়ার’ প্রসঙ্গ উঠে আসে। সে সব প্রতিবেদন নজরে আসার পর ওই বছরের ২২ নভেম্বর হাইকোর্ট ‘অর্থপাচারকারী দুর্বৃত্তদের’ নাম-ঠিকানা চাওয়ার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা, তা জানতে চান। স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়।

এরপর বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টে জমা দেয় দুদক ও রাষ্ট্রের অন্যান্য পক্ষ। তখন প্রতিবেদনে পুরনো তথ্য থাকায় দুদকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত। পরে এ বিষয়ে অগ্রগতির প্রতিবেদন জানাতে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে বছরের ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় ঠিক করে দেন হাইকোর্ট। অন্যদিকে বিদেশি ব্যাংক, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকে গোপনে কার কত টাকা পাচার করে পাঠানো হয়েছে বা আছে তার তথ্যসহ তালিকা চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পাচার হওয়া ওইসব টাকা ফেরত আনতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে জড়িতদের নাম উঠে আসে। মোট সাতটি মামলায় বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৮ টাকা পাচারের তথ্য হাইকোর্টকে দেয় সিআইডি।

সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১ , ০৯ কার্তিক ১৪২৮ ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

অর্থপাচার মামলা, ২১ নভেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

আদালত বার্তা পরিবেশক

বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিদেশে পাচার করা অর্থ অবিলম্বে ফেরত আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুলের জবাব না পেয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ সময় আদালত বলেছেন, রুলের জবাব দিতে এতো দেরি হলো কেন? পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দেয়ার পর গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ বাকি ১৩ বিবাদীকে প্রতিবেদন দিতে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেন।

এদিন আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এর আগে, গত ১৭ আগস্ট ক্যাসিনোকা-ে সম্পৃক্ত যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও বহিষ্কৃত কমিশনার মোমিনুল হক সাঈদসহ ১৩ জনের বিদেশে ৩১১ কোটি টাকা পাচারে জড়িতদের বিষয়ে সিআইডির প্রতিবেদন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দাখিল করা হয়।

পরে ১৭ অক্টোবর একেএম আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বিদেশে ৩১১ কেটি টাকার অর্থপাচারে জড়িতদের মধ্যে ক্যাসিনোকা-ে সম্পৃক্ত যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও বহিষ্কৃত কমিশনার মোমিনুল হক সাঈদসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে এসেছে।

সম্রাট, খালেদ ও সাঈদ ছাড়াও ফরিদপুরের বোয়ালমারীর রাজীব হোসেন রানা, নেত্রকোনার বারহাট্টার জামাল, কুমিল্লার দাউদকান্দির শরিফুল ইসলাম ও আউলাদ হোসেন, ফেনীর ছাগলনাইয়ার এনামুল হক, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মো. শাহজাহান বাবলু, চট্টগ্রামের খুলশীর নাজমুল আবেদীন, সোহেল আবেদীন, পাহারতলী এলাকার এ কে এম জাহিদ হোসেনসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনের অর্থপাচারে সম্পৃক্ততার কথা প্রতিবেদনে জানায় সিআইডি।

এছাড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রামের ‘এ অ্যান্ড বি আউটারওয়্যার অ্যান্ড নর্ম আউটফিট অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড’র নামও তারা উল্লেখ করে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে অর্থপাচারে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে, এদের মধ্যে সরকারি কর্মচারীই বেশি। এছাড়া রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীও রয়েছেন। তবে সেদিন কারও নাম তিনি প্রকাশ করেননি।

ওই বক্তব্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বাঙালি অধ্যুষিত কানাডার কথিত ‘বেগম পাড়ার’ প্রসঙ্গ উঠে আসে। সে সব প্রতিবেদন নজরে আসার পর ওই বছরের ২২ নভেম্বর হাইকোর্ট ‘অর্থপাচারকারী দুর্বৃত্তদের’ নাম-ঠিকানা চাওয়ার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা, তা জানতে চান। স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়।

এরপর বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের তথ্য-উপাত্ত প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টে জমা দেয় দুদক ও রাষ্ট্রের অন্যান্য পক্ষ। তখন প্রতিবেদনে পুরনো তথ্য থাকায় দুদকের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত। পরে এ বিষয়ে অগ্রগতির প্রতিবেদন জানাতে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে বছরের ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় ঠিক করে দেন হাইকোর্ট। অন্যদিকে বিদেশি ব্যাংক, বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা ‘বিপুল পরিমাণ’ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপের নির্দেশনা চেয়ে ১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকে গোপনে কার কত টাকা পাচার করে পাঠানো হয়েছে বা আছে তার তথ্যসহ তালিকা চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পাচার হওয়া ওইসব টাকা ফেরত আনতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে জড়িতদের নাম উঠে আসে। মোট সাতটি মামলায় বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ৩১০ কোটি ৮০ লাখ ১৪ হাজার ৭৪৮ টাকা পাচারের তথ্য হাইকোর্টকে দেয় সিআইডি।