চাঁদপুরে অবসরপ্রাপ্ত ২ সরকারি কর্মকর্তা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে অবসরপ্রাপ্ত দুইজন সরকারি কর্মকর্তা (স্বামী-স্ত্রী) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। গত ২৯ জুন রাতে এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আর পহেলা জুলাই সকালে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে বাড়ির ছাদের উপর ছিল স্বামীর লাশ ও বাসার ভিতর স্ত্রীর লাশ পাওয়া গেছে। তাদের রড দিয়ে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন, নুরুল আমিন (৬৫) ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার (৬০)। তারা দুই জন সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চাঁদপুর জেলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক কবির আহমেদ সংবাদকে জানান, স্বামী-স্ত্রী হত্যার ঘটনায় তাদের ছেলে মো. জাকারিয়া বাবু বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ এক মাস তদন্ত করেছে। পরে বাদী আদালতের মাধ্যমে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেয়ার জন্য আবেদন করেন।

আদালতের নির্দেশে পিবিআই প্রায় ৩ মাস টানা তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২২ অক্টোবর শুক্রবার কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকা থেকে আবদুল মালেককে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে গত ১৯ অক্টোবর আসামি ইলিয়াছ হোসেনকে ঝালকাঠি থেকে গ্রেপ্তার করেছে। আর গত ২০ অক্টোবর চট্টগ্রামের রেলস্ট্রেশন থেকে অভিযুক্ত বশিরকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্ত মালেক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, গত ২৯ জুন রাত প্রায় ৮টার দিকে নুরুল আমিনের বিল্ডিংয়ের মূল গেইট (কলাপসিবল) খোলা ছিল। তখন অভিযুক্ত আবদুল মালেক অতিগোপনে নুরুল আমিনের ঘরে ঢুকে। এরপর বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে ছাদের উপর উঠে অবস্থান করে। বাড়ির মালিক নূরুল আমিন রাতে বাড়ির ছাদে উঠলে অভিযুক্ত আবদুল মালেক কৌশলে পিছনের দিক থেকে রড দিয়ে নুরুল আমিনকে মাথায় আঘাত করে। এরপর গলায় মোজা পেছিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ ছাদে রেখে অভিযুক্ত মালেক ছাদ থেকে ছুরির উদ্দেশ্যে বাসার ভিতরে ঢুকে। বাসার ভিতরে একটি রুমে ঢুকে ফাইল কেবিনেটের ড্রয়ার টানাহেচড়ার সময় শব্দ শুনে ভিতরে থাকা নুরুল আমিনের স্ত্রী কামরুন নাহার লাইট জ্বালিয়ে অভিযুক্ত মালেককে দেখে ও চিনতে পারায় অভিযুক্ত মালেক লোহার রড দিয়ে কামরুন নাহারের মাথায় আঘাত করে। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়। ঘরের ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। সেখানে তার মৃত্যুও হয়। এরপর মালেক বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন সেট ও কিছু টাকা ও স্বর্ণলঙ্কার নিয়ে ছাদের উপর উঠে। আর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রডটি ফেলে দিয়ে কাঁঠাল গাছ বেয়ে নিচে নেমে যায়।

পিবিআই জানায়, অভিযুক্ত একটি মোবাইল ফোন সেট ছাড়াও বাসা থেকে ২টি কানের দুল, ১টি আংটি ও নগদ ১ হাজার ৫০ টাকা নিয়ে গেছে। চোর দুইটি কানের দুল ও একটি আংটি ৮ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন সেট ২ হাজার টাকায় বিক্রি করছে।

পিবিআই কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত আবদুল মালেক প্রথমে ট্রাক থেকে মাল উঠানামা করত। চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরের শাহরাস্তির বাড়ি ফিরে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সে একাই দুইজনকে হত্যা করেছে। অন্য দুইজন তার চোরাই মালামাল কিনেছে। তাই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১ , ০৯ কার্তিক ১৪২৮ ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

চাঁদপুরে অবসরপ্রাপ্ত ২ সরকারি কর্মকর্তা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন

বাকী বিল্লাহ

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে অবসরপ্রাপ্ত দুইজন সরকারি কর্মকর্তা (স্বামী-স্ত্রী) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। গত ২৯ জুন রাতে এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আর পহেলা জুলাই সকালে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে বাড়ির ছাদের উপর ছিল স্বামীর লাশ ও বাসার ভিতর স্ত্রীর লাশ পাওয়া গেছে। তাদের রড দিয়ে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন, নুরুল আমিন (৬৫) ও তার স্ত্রী কামরুন নাহার (৬০)। তারা দুই জন সমাজসেবা অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চাঁদপুর জেলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক কবির আহমেদ সংবাদকে জানান, স্বামী-স্ত্রী হত্যার ঘটনায় তাদের ছেলে মো. জাকারিয়া বাবু বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ এক মাস তদন্ত করেছে। পরে বাদী আদালতের মাধ্যমে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেয়ার জন্য আবেদন করেন।

আদালতের নির্দেশে পিবিআই প্রায় ৩ মাস টানা তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২২ অক্টোবর শুক্রবার কুমিল্লার লাকসাম রেলওয়ে জংশন এলাকা থেকে আবদুল মালেককে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে গত ১৯ অক্টোবর আসামি ইলিয়াছ হোসেনকে ঝালকাঠি থেকে গ্রেপ্তার করেছে। আর গত ২০ অক্টোবর চট্টগ্রামের রেলস্ট্রেশন থেকে অভিযুক্ত বশিরকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্ত মালেক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, গত ২৯ জুন রাত প্রায় ৮টার দিকে নুরুল আমিনের বিল্ডিংয়ের মূল গেইট (কলাপসিবল) খোলা ছিল। তখন অভিযুক্ত আবদুল মালেক অতিগোপনে নুরুল আমিনের ঘরে ঢুকে। এরপর বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে ছাদের উপর উঠে অবস্থান করে। বাড়ির মালিক নূরুল আমিন রাতে বাড়ির ছাদে উঠলে অভিযুক্ত আবদুল মালেক কৌশলে পিছনের দিক থেকে রড দিয়ে নুরুল আমিনকে মাথায় আঘাত করে। এরপর গলায় মোজা পেছিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর লাশ ছাদে রেখে অভিযুক্ত মালেক ছাদ থেকে ছুরির উদ্দেশ্যে বাসার ভিতরে ঢুকে। বাসার ভিতরে একটি রুমে ঢুকে ফাইল কেবিনেটের ড্রয়ার টানাহেচড়ার সময় শব্দ শুনে ভিতরে থাকা নুরুল আমিনের স্ত্রী কামরুন নাহার লাইট জ্বালিয়ে অভিযুক্ত মালেককে দেখে ও চিনতে পারায় অভিযুক্ত মালেক লোহার রড দিয়ে কামরুন নাহারের মাথায় আঘাত করে। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়। ঘরের ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। সেখানে তার মৃত্যুও হয়। এরপর মালেক বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন সেট ও কিছু টাকা ও স্বর্ণলঙ্কার নিয়ে ছাদের উপর উঠে। আর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লোহার রডটি ফেলে দিয়ে কাঁঠাল গাছ বেয়ে নিচে নেমে যায়।

পিবিআই জানায়, অভিযুক্ত একটি মোবাইল ফোন সেট ছাড়াও বাসা থেকে ২টি কানের দুল, ১টি আংটি ও নগদ ১ হাজার ৫০ টাকা নিয়ে গেছে। চোর দুইটি কানের দুল ও একটি আংটি ৮ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন সেট ২ হাজার টাকায় বিক্রি করছে।

পিবিআই কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত আবদুল মালেক প্রথমে ট্রাক থেকে মাল উঠানামা করত। চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরের শাহরাস্তির বাড়ি ফিরে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। সে একাই দুইজনকে হত্যা করেছে। অন্য দুইজন তার চোরাই মালামাল কিনেছে। তাই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।