সালথায় ইউপি নির্বাচন নিয়ে সংঘাত থামছে না, ফের বাড়িঘর ভাঙচুর

ফরিদপুরের সালথায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারদলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সকালে আরও বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার নারী ও শিশুরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।

আর মারিজ নিহতের ঘটনায় আরেকটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।

এদিকে রোববার সকালে সরেজমিনে উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সংঘর্ষে নিহত মারিজ শিকদারের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ৯ ভাইবোনের মধ্যে মারিজ ছিল মেজো। তার স্ত্রীর নাম জুই আকতার। মুসলিমা ইসলাম নামে তাদের মাত্র দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সবাই শোকে পাথর হয়ে বসে বসে কান্নাকাটি করছেন। বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে নিহত মারিজের লাশ দাফন করার কথা রয়েছে।

মারিজের বোন শিল্পী আকতার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মারিজ অন্যের জমিতে কাজ করে তার ছোট্ট সংসার চালাতেন। এখন কিভাবে চলবে ওর সংসার। কে দেখবে ওর স্ত্রী-সন্তানকে। অকালে এভাবে আমার ভাইয়ের হত্যার বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমি আমার ভাই হত্যার সঠিক বিচার চাই।

অপরদিকে সংঘর্ষে মারিজ নিহত ঘটনায় খারদিয়া এলাকায় একাধিক বাড়িঘরে ব্যাপক তা-ব চালানোর চিত্র দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, মারিজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পর সংঘর্ষ শেষে সরকারদলীয় প্রার্থীর পুরুষ সমর্থকরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এই সুযোগে শনিবার সারারাত ও রোববার সকালে তাদের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় যদুনন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়া, সংসদ উপনেতার সাবেক এপিএস আবু বক্কর সিদ্দিকী, ইউপি সদস্য ইমরুল খান ও তোরাপ হোসেনের বাড়িঘরসহ অন্তত ৭০ থেকে ৮০টি বসতঘর। গুঁড়িয়ে দেয়া হয় এসব ঘরে থাকা আসবাবপত্র। লুটপাট করা হয় গরু-ছাগলসহ মালামাল। বর্তমানে ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছে এসব বাড়ির নারী ও শিশুরা।

তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত আবদুর রব মোল্লা, বিদ্্েরাহী প্রার্থী রফিক মোল্লা, নুরুজ্জামান টুকু ঠাকুর ও যদুনন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়ার কাছে সংঘর্ষের বিষয় বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিবার ফোন করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সালথা থানার ওসি মো. আশিকুজ্জামান বলেন, শনিবার বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, এলাকায় উত্তেজনা চলছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, যদুনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রব মোল্লা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী গ্রাম্য মাতবর মো. রফিক মোল্লা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুরজ্জামান ওরফে টুকু ঠাকুর। রফিক মোল্লা ও নুরজ্জামান টুকু ঠাকুর খারদিয়া এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে একই দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তাদের বাড়িও একই গ্রামে। গত এক মাস আগে নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে রফিকের কাছ থেকে আলাদা হয়ে নুরজ্জামান টুকু ঠাকুর নৌকার মনোনীত প্রার্থী রব মোল্লা ও তার সমর্থক ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর মিয়ার দলে যোগ দেন। এরই জের ধরে শনিবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খারদিয়া এলাকায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মারিজ সিকদার নামে একজন নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ৩০ জন।

সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১ , ০৯ কার্তিক ১৪২৮ ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সালথায় ইউপি নির্বাচন নিয়ে সংঘাত থামছে না, ফের বাড়িঘর ভাঙচুর

প্রতিনিধি, ফরিদপুর

image

ভাঙচুর করা একটি বাড়ির ভেতরের চিত্র -সংবাদ

ফরিদপুরের সালথায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারদলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সকালে আরও বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার নারী ও শিশুরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।

আর মারিজ নিহতের ঘটনায় আরেকটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।

এদিকে রোববার সকালে সরেজমিনে উপজেলার যদুনন্দী ইউনিয়নের খারদিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সংঘর্ষে নিহত মারিজ শিকদারের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ৯ ভাইবোনের মধ্যে মারিজ ছিল মেজো। তার স্ত্রীর নাম জুই আকতার। মুসলিমা ইসলাম নামে তাদের মাত্র দুই বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। সবাই শোকে পাথর হয়ে বসে বসে কান্নাকাটি করছেন। বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে নিহত মারিজের লাশ দাফন করার কথা রয়েছে।

মারিজের বোন শিল্পী আকতার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মারিজ অন্যের জমিতে কাজ করে তার ছোট্ট সংসার চালাতেন। এখন কিভাবে চলবে ওর সংসার। কে দেখবে ওর স্ত্রী-সন্তানকে। অকালে এভাবে আমার ভাইয়ের হত্যার বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমি আমার ভাই হত্যার সঠিক বিচার চাই।

অপরদিকে সংঘর্ষে মারিজ নিহত ঘটনায় খারদিয়া এলাকায় একাধিক বাড়িঘরে ব্যাপক তা-ব চালানোর চিত্র দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, মারিজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পর সংঘর্ষ শেষে সরকারদলীয় প্রার্থীর পুরুষ সমর্থকরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।

এই সুযোগে শনিবার সারারাত ও রোববার সকালে তাদের বাড়িতে দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় যদুনন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়া, সংসদ উপনেতার সাবেক এপিএস আবু বক্কর সিদ্দিকী, ইউপি সদস্য ইমরুল খান ও তোরাপ হোসেনের বাড়িঘরসহ অন্তত ৭০ থেকে ৮০টি বসতঘর। গুঁড়িয়ে দেয়া হয় এসব ঘরে থাকা আসবাবপত্র। লুটপাট করা হয় গরু-ছাগলসহ মালামাল। বর্তমানে ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছে এসব বাড়ির নারী ও শিশুরা।

তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত আবদুর রব মোল্লা, বিদ্্েরাহী প্রার্থী রফিক মোল্লা, নুরুজ্জামান টুকু ঠাকুর ও যদুনন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়ার কাছে সংঘর্ষের বিষয় বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিবার ফোন করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সালথা থানার ওসি মো. আশিকুজ্জামান বলেন, শনিবার বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মোট ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, এলাকায় উত্তেজনা চলছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, যদুনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রব মোল্লা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার বিপরীতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী গ্রাম্য মাতবর মো. রফিক মোল্লা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুরজ্জামান ওরফে টুকু ঠাকুর। রফিক মোল্লা ও নুরজ্জামান টুকু ঠাকুর খারদিয়া এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে একই দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তাদের বাড়িও একই গ্রামে। গত এক মাস আগে নির্বাচনে অংশ নেয়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে রফিকের কাছ থেকে আলাদা হয়ে নুরজ্জামান টুকু ঠাকুর নৌকার মনোনীত প্রার্থী রব মোল্লা ও তার সমর্থক ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর মিয়ার দলে যোগ দেন। এরই জের ধরে শনিবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খারদিয়া এলাকায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মারিজ সিকদার নামে একজন নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ৩০ জন।