ইটভাটার গ্রাসে অস্তিত্ব সংকটে লালমাটির পাহাড়-টিলা-বন

টাঙ্গাইলের সখীপুরে অবাধে চলছে লাল মাটির পাহাড় ও টিলা কাটার মহোৎসব। আর এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। ফলে দেখা দিচ্ছে জলবায়ু ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এক সময় সখীপুরের পাহাড়ে বসবাস করত বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী । জনসংখ্যার আধিক্যে পাহাড় ও বনে গড়ে উঠছে ঘর-বাড়ি, কারখানা। এখন বন্যপ্রাণীর মধ্যে একমাত্র কিছু বানর চোখে পড়ে। তাও খাদ্যাভাবে বিলুপ্তপ্রায়। এভাবে চলতে থাকলে এ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে বলে পরিবেশবাদীদের ধারণা। এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শাল-গজারি কপিচ বাগান নিধন করে পাহাড়ের লাল মাটি কেটে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর ও নিচু জমি। বিভিন্ন ফসল ও সবজি আবাদের নাম করে কিংবা বাড়িঘর নির্মাণের কথা বলে উঁচু টিলা কেটে সমতলভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে। সখীপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের নাকশালা গ্রামের উজ্জল মিয়া ইতোমধ্যে টিলার বিশাল আকৃতির দুটি গাছ ও মাটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে প্রতিবছর চলে পাহাড়ি টিলা কাটার ধুম। একইভাবে এ বছরও লাল মাটির সুউচ্চ টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে অনেকটাই সমতল ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের নাকশালা বাজারের ২০০ গজ পূর্বে বিশাল আকৃতির একটি টিলা কেটে মাটি বিক্রি করার দৃশ্য। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ইতোমধ্যে টিলা কেটে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার মাটি বিক্রি করা হয়েছে। যাদবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে ছোট-বড় লাল মাটির অনেক পাহাড়-টিলাসহ বন বিভাগের জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন বলে এলাকাবাসী জানান। বন বিভাগের সংরক্ষিত জমিতে এক্সকেভেটর (ভেকু) দিয়ে পাহাড় কাটার মহোৎসব চললেও এ ব্যাপারে বন বিভাগ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কোন মাথাব্যথা নেই। উপজেলার কীর্ত্তনখোলা, দাড়িয়াপুর, কৈয়ামধু, দেওবাড়ি, গজারিয়া, পাথার, প্রতিমাবংকী গ্রামে গিয়েও দেখা যায়, বন বিভাগের উঁচু জমি কেটে পুকুর তৈরি ও পাহাড় কাটার দৃশ্য। উপজেলার প্রতিমাবংকী এলাকায় প্রায় ৪০ শতাংশ বনের জমিতে সৃজিত শাল-গজারি বাগান কেটে প্রায় ৪০ শতাংশ জমি ভেকু দিয়ে গর্ত করে পুকুর তৈরি ও মাটি বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, ওই এলাকার প্রভাবশালী একজন অর্থের বিনিময়ে প্রতিমাবংকী মৌজায় বনের উচু জমি থেকে প্রথমে গাছ কেটে পরিষ্কার করে। পরে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে বলেও একাধিক গ্রামবাসী অভিযোগ করেন। কতিপয় ভেকু ও মাটি ব্যবসায়ীরা বনের পাহাড়ি উঁচু জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে নিচু করেছেন। এ বিষয়ে বন বিভাগের গজারিয়া (কৈয়ামধু) বিট কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, ভেকু দিয়ে বনের জমি থেকে মাটি কাটার খবর পেয়ে ওই মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তবে দীর্ঘদিন মাটি কাটার পর কাজ বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি ওই বিট কর্মকর্তা। বন বিভাগের বাঁশতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, পাহাড় বা টিলা রক্ষা করার দায়িত্ব ইউএনওর। আর বন রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। ওই জায়গাটি বন বিভাগের কিনা তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চিত্রা শিকারী বলেন, পাহাড় যদি কোনো ব্যক্তির হয় তাহলেও কাটতে পারবেন না। এ রকম যদি কেউ কেটে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১ , ১০ কার্তিক ১৪২৮ ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ইটভাটার গ্রাসে অস্তিত্ব সংকটে লালমাটির পাহাড়-টিলা-বন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

image

টাঙ্গাইল : এটি কোন জলাশয় নয়। ইটভাটার জন্য পাহাড়ের মাটি লুট হওয়ায় সৃষ্ট পুকুর -সংবাদ

টাঙ্গাইলের সখীপুরে অবাধে চলছে লাল মাটির পাহাড় ও টিলা কাটার মহোৎসব। আর এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। ফলে দেখা দিচ্ছে জলবায়ু ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এক সময় সখীপুরের পাহাড়ে বসবাস করত বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী । জনসংখ্যার আধিক্যে পাহাড় ও বনে গড়ে উঠছে ঘর-বাড়ি, কারখানা। এখন বন্যপ্রাণীর মধ্যে একমাত্র কিছু বানর চোখে পড়ে। তাও খাদ্যাভাবে বিলুপ্তপ্রায়। এভাবে চলতে থাকলে এ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে বলে পরিবেশবাদীদের ধারণা। এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শাল-গজারি কপিচ বাগান নিধন করে পাহাড়ের লাল মাটি কেটে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর ও নিচু জমি। বিভিন্ন ফসল ও সবজি আবাদের নাম করে কিংবা বাড়িঘর নির্মাণের কথা বলে উঁচু টিলা কেটে সমতলভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে। সখীপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের নাকশালা গ্রামের উজ্জল মিয়া ইতোমধ্যে টিলার বিশাল আকৃতির দুটি গাছ ও মাটি কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে প্রতিবছর চলে পাহাড়ি টিলা কাটার ধুম। একইভাবে এ বছরও লাল মাটির সুউচ্চ টিলা কেটে মাটি বিক্রি করে অনেকটাই সমতল ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের নাকশালা বাজারের ২০০ গজ পূর্বে বিশাল আকৃতির একটি টিলা কেটে মাটি বিক্রি করার দৃশ্য। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ইতোমধ্যে টিলা কেটে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার মাটি বিক্রি করা হয়েছে। যাদবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে ছোট-বড় লাল মাটির অনেক পাহাড়-টিলাসহ বন বিভাগের জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন বলে এলাকাবাসী জানান। বন বিভাগের সংরক্ষিত জমিতে এক্সকেভেটর (ভেকু) দিয়ে পাহাড় কাটার মহোৎসব চললেও এ ব্যাপারে বন বিভাগ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কোন মাথাব্যথা নেই। উপজেলার কীর্ত্তনখোলা, দাড়িয়াপুর, কৈয়ামধু, দেওবাড়ি, গজারিয়া, পাথার, প্রতিমাবংকী গ্রামে গিয়েও দেখা যায়, বন বিভাগের উঁচু জমি কেটে পুকুর তৈরি ও পাহাড় কাটার দৃশ্য। উপজেলার প্রতিমাবংকী এলাকায় প্রায় ৪০ শতাংশ বনের জমিতে সৃজিত শাল-গজারি বাগান কেটে প্রায় ৪০ শতাংশ জমি ভেকু দিয়ে গর্ত করে পুকুর তৈরি ও মাটি বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, ওই এলাকার প্রভাবশালী একজন অর্থের বিনিময়ে প্রতিমাবংকী মৌজায় বনের উচু জমি থেকে প্রথমে গাছ কেটে পরিষ্কার করে। পরে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে বলেও একাধিক গ্রামবাসী অভিযোগ করেন। কতিপয় ভেকু ও মাটি ব্যবসায়ীরা বনের পাহাড়ি উঁচু জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে নিচু করেছেন। এ বিষয়ে বন বিভাগের গজারিয়া (কৈয়ামধু) বিট কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, ভেকু দিয়ে বনের জমি থেকে মাটি কাটার খবর পেয়ে ওই মাটি কাটার কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তবে দীর্ঘদিন মাটি কাটার পর কাজ বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি ওই বিট কর্মকর্তা। বন বিভাগের বাঁশতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, পাহাড় বা টিলা রক্ষা করার দায়িত্ব ইউএনওর। আর বন রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। ওই জায়গাটি বন বিভাগের কিনা তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চিত্রা শিকারী বলেন, পাহাড় যদি কোনো ব্যক্তির হয় তাহলেও কাটতে পারবেন না। এ রকম যদি কেউ কেটে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।