রপ্তানি করা যাবে বিদ্যুৎ বাধা সঞ্চালন লাইন

বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ৯৩৪ মেগাওয়াট

দেশে এখন উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ আছে, যা রপ্তানি করা যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিশেষ করে, শীতকালে যখন দেশে চাহিদা একেবারে কমে যায়, তখন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ রপ্তানি করার সুযোগ আছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে চেয়েছে। তবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সঞ্চালন লাইন।

পাওয়ার সেলের তথ্যানুযায়ী, দেশের ৯৯.৭৫ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুতের আওতায়। ক্যাপটিভ ও অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। এরমধ্যে ২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ এবং ৪০৪ মেগাওয়াট অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাদ দিলে সক্ষমতা দাঁড়ায় ২২ হাজার ৩১ মেগাওয়াট। রক্ষণাবেক্ষণসহ নানা কারণে বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ৯৩৪ মেগাওয়াট।

বর্তমানে গরমের সময় বিদ্যুতের দৈনিক সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। তবে শীতকালে এ চাহিদা নেমে যায় ৫ থেকে ৬ হাজার মেগাওয়াটে।

বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার মতে, মানসম্পন্ন সঞ্চালন লাইন না থাকায় বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। ভারতের ‘গ্রিড ফ্রিকোয়েন্সি’ এবং ‘ভোল্টেজ স্টেবিলিটি’ তুলনামুলক উন্নত হওয়ায় এই মুহূর্তে দুদেশের গ্রিড সমন্বয় করা যাচ্ছে না। নয়তো ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে শীতকালে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেপালে রপ্তানির বড় সুযোগ ছিল।

বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্রিড কানেক্টিভিটি ও জ্বালানি নিরাপত্তা সংক্রান্ত উপআঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে এক দশক আগে জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি (জেএসসি) গঠন করে ‘ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেড’ শীর্ষক আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ ও ভারত। এর ধারাবাহিকতায় ভারতের বহরমপুর থেকে ভেড়ামারা পয়েন্ট দিয়ে এক হাজার মেগাওয়াট এবং ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লা দিয়ে আরও একশ’ ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে।

বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার এবং ভারতের অরুনাচল মিলিয়ে এক লাখ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই সম্ভাবনার সামান্যই ব্যবহার হচ্ছে। দেশগুলো এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে এ অঞ্চলের জ্বালানি সমস্যার সমাধান হবে।

জেএসসির বৈঠকে নেপাল ও ভুটান থেকে বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ চেয়েছে বাংলাদেশ। শীতের সময় বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানির এবং উপআঞ্চলিক একটি গ্রিড প্রতিষ্ঠার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে সমন্বিত গ্রিড না হওয়ায়, বিদ্যুৎ রপ্তানির সুবিধা পায়নি বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেডের জন্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সিনক্রোনাইজড (সমন্বিত) গ্রিড কানেকশন থাকতে হয়। জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির এজেন্ডায় বিষয়টি আছে। তবে ভারতের ফ্রিকোয়েন্সি, ভোল্টেজ অনেক স্ট্যাবল। আমাদের সমমানের গ্রিড না হওয়ায় সিনক্রোনাইজ করা যাচ্ছে না। ’

এ জন্য সঞ্চালনের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করি, ২০২৪ সালের মধ্যেই আমাদের গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি, ভোল্টেজ স্টেবিলিটি ভারতের স্ট্যান্ডার্ডে হবে। তখন আর অভিন্ন গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানিতে সমস্যা থাকবে না।’

এদিকে নেপাল সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশটিতে চাহিদা পুরনোর পর যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকবে, তা বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে বিক্রি করতে পারবে নেপালের বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হলে দুটি দেশ থেকে বিদ্যুৎ কিনতেও পারবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে নেপালের তৎকালীন জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী জনার্দন শর্মার ঢাকা সফরের সময় দেশটি থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। ২০১৯ সালে নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, নেপালে আপার কার্নালি হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্ট থেকে ভারতের মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করবে সরকার। কার্নালি নদীর উজানে রপ্তানির উদ্দেশ্যে ৯০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে ভারতের জিএমআর কোম্পানি। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের সরাসরি সীমান্ত না থাকায় ভারতের ভেতর দিয়ে সঞ্চালন লাইন তৈরি করে এই বিদ্যুৎ আনতে হবে। সূত্র বলছে, নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করতে জিএমআর ভারতে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে।

ভারতীয় এই কোম্পানির কাছ থেকেই বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ।

নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, আলোচনা চলছে। শীঘ্রই ট্যারিফ সংক্রান্ত চুক্তি হবে। আশা করি, প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে ২০২৭ সালের দিকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হবে।’

বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বর্তমানে এর সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। পিডিবির তথ্যানুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ১০ টাকা খরচ পড়বে। বর্তমানে আমদানি করা বিদ্যুতের গড় খরচ ইউনিট প্রতি প্রায় ৭ টাকা।

এদিকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি সংক্রান্ত নতুন ট্যারিফ চূড়ান্ত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে দেন-দরবারের মাধ্যমে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির হার কমাতে সক্ষম হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চুক্তিতে সরল সুদসহ বিদ্যুতের বার্ষিক মূল্যবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ শতাংশ। যা বিগত চুক্তিতে ৫ শতাংশ ছিল। এর ফলে আগামী ৫ বছরে বিদ্যুৎ আমদানিতে বাংলাদেশের প্রায় ৭০৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

এদিকে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেড এক হাজার ৬শ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। সেখান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ২০১৯ সালে চুক্তি করে বাংলাদেশ। মূলত, রাজশাহী ও রংপুর এলাকায় সরবরাহের উদ্দেশ্যে এই বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হলেও পিজিসিবির নির্মাণাধীন সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে দেশের যে কোন স্থানে ওই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। পিডিবির চেয়ারম্যান জানান, শুধু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্যই আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে।

মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১ , ১০ কার্তিক ১৪২৮ ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

রপ্তানি করা যাবে বিদ্যুৎ বাধা সঞ্চালন লাইন

বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ৯৩৪ মেগাওয়াট

ফয়েজ আহমেদ তুষার

দেশে এখন উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ আছে, যা রপ্তানি করা যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিশেষ করে, শীতকালে যখন দেশে চাহিদা একেবারে কমে যায়, তখন অতিরিক্ত বিদ্যুৎ রপ্তানি করার সুযোগ আছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে চেয়েছে। তবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সঞ্চালন লাইন।

পাওয়ার সেলের তথ্যানুযায়ী, দেশের ৯৯.৭৫ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুতের আওতায়। ক্যাপটিভ ও অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। এরমধ্যে ২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ এবং ৪০৪ মেগাওয়াট অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাদ দিলে সক্ষমতা দাঁড়ায় ২২ হাজার ৩১ মেগাওয়াট। রক্ষণাবেক্ষণসহ নানা কারণে বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ৯৩৪ মেগাওয়াট।

বর্তমানে গরমের সময় বিদ্যুতের দৈনিক সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। তবে শীতকালে এ চাহিদা নেমে যায় ৫ থেকে ৬ হাজার মেগাওয়াটে।

বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার মতে, মানসম্পন্ন সঞ্চালন লাইন না থাকায় বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। ভারতের ‘গ্রিড ফ্রিকোয়েন্সি’ এবং ‘ভোল্টেজ স্টেবিলিটি’ তুলনামুলক উন্নত হওয়ায় এই মুহূর্তে দুদেশের গ্রিড সমন্বয় করা যাচ্ছে না। নয়তো ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে শীতকালে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেপালে রপ্তানির বড় সুযোগ ছিল।

বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্রিড কানেক্টিভিটি ও জ্বালানি নিরাপত্তা সংক্রান্ত উপআঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে এক দশক আগে জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি (জেএসসি) গঠন করে ‘ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেড’ শীর্ষক আলোচনা শুরু করে বাংলাদেশ ও ভারত। এর ধারাবাহিকতায় ভারতের বহরমপুর থেকে ভেড়ামারা পয়েন্ট দিয়ে এক হাজার মেগাওয়াট এবং ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লা দিয়ে আরও একশ’ ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে।

বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার এবং ভারতের অরুনাচল মিলিয়ে এক লাখ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই সম্ভাবনার সামান্যই ব্যবহার হচ্ছে। দেশগুলো এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে এ অঞ্চলের জ্বালানি সমস্যার সমাধান হবে।

জেএসসির বৈঠকে নেপাল ও ভুটান থেকে বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ চেয়েছে বাংলাদেশ। শীতের সময় বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানির এবং উপআঞ্চলিক একটি গ্রিড প্রতিষ্ঠার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে সমন্বিত গ্রিড না হওয়ায়, বিদ্যুৎ রপ্তানির সুবিধা পায়নি বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেডের জন্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সিনক্রোনাইজড (সমন্বিত) গ্রিড কানেকশন থাকতে হয়। জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির এজেন্ডায় বিষয়টি আছে। তবে ভারতের ফ্রিকোয়েন্সি, ভোল্টেজ অনেক স্ট্যাবল। আমাদের সমমানের গ্রিড না হওয়ায় সিনক্রোনাইজ করা যাচ্ছে না। ’

এ জন্য সঞ্চালনের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করি, ২০২৪ সালের মধ্যেই আমাদের গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি, ভোল্টেজ স্টেবিলিটি ভারতের স্ট্যান্ডার্ডে হবে। তখন আর অভিন্ন গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানিতে সমস্যা থাকবে না।’

এদিকে নেপাল সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশটিতে চাহিদা পুরনোর পর যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত থাকবে, তা বাংলাদেশ ও ভারতের কাছে বিক্রি করতে পারবে নেপালের বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হলে দুটি দেশ থেকে বিদ্যুৎ কিনতেও পারবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে নেপালের তৎকালীন জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী জনার্দন শর্মার ঢাকা সফরের সময় দেশটি থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। ২০১৯ সালে নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, নেপালে আপার কার্নালি হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্ট থেকে ভারতের মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করবে সরকার। কার্নালি নদীর উজানে রপ্তানির উদ্দেশ্যে ৯০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে ভারতের জিএমআর কোম্পানি। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের সরাসরি সীমান্ত না থাকায় ভারতের ভেতর দিয়ে সঞ্চালন লাইন তৈরি করে এই বিদ্যুৎ আনতে হবে। সূত্র বলছে, নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করতে জিএমআর ভারতে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে।

ভারতীয় এই কোম্পানির কাছ থেকেই বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ।

নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, আলোচনা চলছে। শীঘ্রই ট্যারিফ সংক্রান্ত চুক্তি হবে। আশা করি, প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে ২০২৭ সালের দিকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হবে।’

বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ আমদানি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বর্তমানে এর সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। পিডিবির তথ্যানুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ১০ টাকা খরচ পড়বে। বর্তমানে আমদানি করা বিদ্যুতের গড় খরচ ইউনিট প্রতি প্রায় ৭ টাকা।

এদিকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি সংক্রান্ত নতুন ট্যারিফ চূড়ান্ত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে দেন-দরবারের মাধ্যমে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির হার কমাতে সক্ষম হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চুক্তিতে সরল সুদসহ বিদ্যুতের বার্ষিক মূল্যবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ শতাংশ। যা বিগত চুক্তিতে ৫ শতাংশ ছিল। এর ফলে আগামী ৫ বছরে বিদ্যুৎ আমদানিতে বাংলাদেশের প্রায় ৭০৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

এদিকে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেড এক হাজার ৬শ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। সেখান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য ২০১৯ সালে চুক্তি করে বাংলাদেশ। মূলত, রাজশাহী ও রংপুর এলাকায় সরবরাহের উদ্দেশ্যে এই বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হলেও পিজিসিবির নির্মাণাধীন সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে দেশের যে কোন স্থানে ওই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। পিডিবির চেয়ারম্যান জানান, শুধু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির জন্যই আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ডে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে।