বায়োপসির জন্য খালেদা জিয়ার নমুনা সংগ্রহ, বিপদমুক্ত বলছেন ফখরুল

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বায়োপসি সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১২ দিন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার শরীরে চাকা সদৃশ একটি মাংসপি-ের উপস্থিতি পাওয়া গেলে বায়োপসির জন্য রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ছোট্ট একটি অপারেশন করা হয়।

তবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারণে তার শরীরের কোথায় এই লাম্প রয়েছে তা বলতে রাজি হননি তার চিকিৎসক।

গতকাল খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানাতে গুলশানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বায়োপসির জন্য তার শরীর থেকে নমুনা নেয়া হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে আসলে কী হয়েছে।’

‘বায়োপসির রিপোর্ট পেতে ৭২ ঘণ্টা লাগতে পারে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অপারেশনের ফল পেতে কখনও ১৫ থেকে ২১ দিনও সময় লেগে যায়। ফলে, আজকেই বলা যাবে না এর ‘ন্যাচার অব অরিজিন কী। তবে আপাতত কোন শঙ্কা নেই।’

তিনি বলেন, ‘অপারেশনের পর বেগম জিয়ার ভাইটাল প্যারামিটারগুলো স্ট্যাবল আছে। বায়োপসি ডায়গনোস্টিক পার্ট, পরের চিকিৎসা কী হবে, কেমন হবে, সেটা ঠিক হবে পরে।’

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়ে তার মেডিকেল বোর্ড পরামর্শ দিয়েছেন। যতগুলো পুরনো ডিজিজ তার আছে, এজন্য তার মাল্টি অ্যাডভান্স সেন্টারে চিকিৎসা প্রয়োজন। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে এই ব্যবস্থা নেই। এটা আমরা বারবার বলে আসছি। তবে বিপদমুক্ত তিনি।’

খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আইনগত বাধা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেন তিনি জামিন পাবেন না? জামিন তার প্রাপ্য, দয়া নয়। জামিন পাওয়াটা তার অধিকার। অবিলম্বে তার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া দরকার।’

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর পরিবেশনার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর ছিল ভিত্তিহীন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতো দায়িত্বজ্ঞানহীন মিডিয়া কেন হবে ভাই? যারা কাজ করছেন তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে আমাকে অথবা ডাক্তার সাহেবদের, তা না করে একটা বলে দিলেই হয়ে গেল? এটা ঠিক না। এই ধরনের হাইপার জার্নালিজম!’

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. আল মামুন, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে খালেদা জিয়াকে দেখতে গত রোববার যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছেন তার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার কাছে ছুটে যান। রাত সোয়া ৯টার দিকে তিনি হাসপাতালে প্রবেশ করেন এবং রাত ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।

খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিমা ইসলাম গতকাল দুপুরে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অবস্থা ভালো না। জ্বর আছে, কিডনির সমস্যা আছে, সুগার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আরও নানা জটিলতা আছে। এ জন্য আমরা সরকারকে বার বার বলেছি যে, তাকে বিদেশে পাঠাব। কিন্তু সরকার তো কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। তার শারীরিক যে জটিলতা, এখানে এর চিকিৎসা সম্ভব নয়, বিদেশে যেতে হবে।’

৭৬ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া পুরোনো কিছু সমস্যা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ভুগছিলেন। পুরনো সমস্যাগুলোর পাশাপাশি শরীরে নতুন কিছু উপসর্গ দেখা দিলে এ মাসের ১২ তারিখে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন থেকে তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়।

প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। এর মধ্যে গত এপ্রিল মাসে তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন। বাসায় চিকিৎসা নিয়ে করোনা থেকে সেরে উঠলেও শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়ায় ২৭ এপ্রিল তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক পর্যায়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেয়া হয়। প্রায় দুই মাস সিসিইউতে থেকে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন তিনি। এর মধ্যে করোনার টিকা নেয়ার জন্য খালেদা জিয়া দুই দফায় মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে যান। ১৯ জুলাই করোনার প্রথম ডোজ টিকার নেয়ার পর ১৮ আগস্ট দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেন খালেদা জিয়া। কিন্তু কিছুদিন ধরে তার শরীরের তাপমাত্রা ওঠানামা করায় ১২ অক্টোবর বিকেলে শারীরিক অবস্থার ফলোআপ করাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরদিন থেকে তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়।

দুর্নীতির মামলায় দ-িত হলে খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়। করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত চার দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির সময় বৃদ্ধি করা হয়।

পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আবেদন জানানো হলেও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১ , ১০ কার্তিক ১৪২৮ ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বায়োপসির জন্য খালেদা জিয়ার নমুনা সংগ্রহ, বিপদমুক্ত বলছেন ফখরুল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বায়োপসি সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১২ দিন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার শরীরে চাকা সদৃশ একটি মাংসপি-ের উপস্থিতি পাওয়া গেলে বায়োপসির জন্য রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ছোট্ট একটি অপারেশন করা হয়।

তবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারণে তার শরীরের কোথায় এই লাম্প রয়েছে তা বলতে রাজি হননি তার চিকিৎসক।

গতকাল খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানাতে গুলশানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বায়োপসির জন্য তার শরীর থেকে নমুনা নেয়া হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে আসলে কী হয়েছে।’

‘বায়োপসির রিপোর্ট পেতে ৭২ ঘণ্টা লাগতে পারে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অপারেশনের ফল পেতে কখনও ১৫ থেকে ২১ দিনও সময় লেগে যায়। ফলে, আজকেই বলা যাবে না এর ‘ন্যাচার অব অরিজিন কী। তবে আপাতত কোন শঙ্কা নেই।’

তিনি বলেন, ‘অপারেশনের পর বেগম জিয়ার ভাইটাল প্যারামিটারগুলো স্ট্যাবল আছে। বায়োপসি ডায়গনোস্টিক পার্ট, পরের চিকিৎসা কী হবে, কেমন হবে, সেটা ঠিক হবে পরে।’

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার বিষয়ে তার মেডিকেল বোর্ড পরামর্শ দিয়েছেন। যতগুলো পুরনো ডিজিজ তার আছে, এজন্য তার মাল্টি অ্যাডভান্স সেন্টারে চিকিৎসা প্রয়োজন। আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে এই ব্যবস্থা নেই। এটা আমরা বারবার বলে আসছি। তবে বিপদমুক্ত তিনি।’

খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আইনগত বাধা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেন তিনি জামিন পাবেন না? জামিন তার প্রাপ্য, দয়া নয়। জামিন পাওয়াটা তার অধিকার। অবিলম্বে তার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া দরকার।’

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর পরিবেশনার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবর ছিল ভিত্তিহীন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতো দায়িত্বজ্ঞানহীন মিডিয়া কেন হবে ভাই? যারা কাজ করছেন তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে আমাকে অথবা ডাক্তার সাহেবদের, তা না করে একটা বলে দিলেই হয়ে গেল? এটা ঠিক না। এই ধরনের হাইপার জার্নালিজম!’

সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. আল মামুন, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে খালেদা জিয়াকে দেখতে গত রোববার যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছেন তার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার কাছে ছুটে যান। রাত সোয়া ৯টার দিকে তিনি হাসপাতালে প্রবেশ করেন এবং রাত ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।

খালেদা জিয়ার বড় বোন সেলিমা ইসলাম গতকাল দুপুরে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অবস্থা ভালো না। জ্বর আছে, কিডনির সমস্যা আছে, সুগার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আরও নানা জটিলতা আছে। এ জন্য আমরা সরকারকে বার বার বলেছি যে, তাকে বিদেশে পাঠাব। কিন্তু সরকার তো কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। তার শারীরিক যে জটিলতা, এখানে এর চিকিৎসা সম্ভব নয়, বিদেশে যেতে হবে।’

৭৬ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া পুরোনো কিছু সমস্যা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে ভুগছিলেন। পুরনো সমস্যাগুলোর পাশাপাশি শরীরে নতুন কিছু উপসর্গ দেখা দিলে এ মাসের ১২ তারিখে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন থেকে তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়।

প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। এর মধ্যে গত এপ্রিল মাসে তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হন। বাসায় চিকিৎসা নিয়ে করোনা থেকে সেরে উঠলেও শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়ায় ২৭ এপ্রিল তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক পর্যায়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেয়া হয়। প্রায় দুই মাস সিসিইউতে থেকে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন তিনি। এর মধ্যে করোনার টিকা নেয়ার জন্য খালেদা জিয়া দুই দফায় মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে যান। ১৯ জুলাই করোনার প্রথম ডোজ টিকার নেয়ার পর ১৮ আগস্ট দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেন খালেদা জিয়া। কিন্তু কিছুদিন ধরে তার শরীরের তাপমাত্রা ওঠানামা করায় ১২ অক্টোবর বিকেলে শারীরিক অবস্থার ফলোআপ করাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরদিন থেকে তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়।

দুর্নীতির মামলায় দ-িত হলে খালেদা জিয়াকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে পাঠানো হয়। করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত চার দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির সময় বৃদ্ধি করা হয়।

পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আবেদন জানানো হলেও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।