কুমিল্লায় মামলার দায়িত্ব সিআইডিতে

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে। নগরীর মাজারের দক্ষিণ পাশে একটি ভবনের বাউন্ডারির ভেতর ঝোপ থেকে হনুমানের গদা উদ্ধার করা হয়েছে।

নানুয়ারদীঘিরপাড়ের ঘটনাসহ পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় জেলায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১২শ’র বেশি আসামি করা হয়েছে।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, ‘পূজাণ্ডপে কোরআন রেখে ধর্মীয় অবমাননার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার (কোতোয়ালি মডেল থানার মামলা নং-৫২) তদন্তভার সিআইডিতে হস্তান্তরের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত রোববার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পত্রের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেয়া হয়। মামলা হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলার নথি ও উদ্ধারকৃত আলামত সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

ইকবালসহ ৪ জনকে রিমান্ডে আনা হলেও জিজ্ঞাসাবাদে গত ৩ দিনে গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছেন তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন- ‘তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

রিমান্ডে আনার পর রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গ্রেপ্তার হওয়া ইকবাল হোসেনকে নিয়ে নগরীর দারোগাবাড়ি মসজিদ ও মাজার এলাকায় যান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ পুলিশের সদস্যরা।

গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিসিটিভির ফুটেজে থাকা পূজামণ্ডপ থেকে নেয়া গদাটি উদ্ধারে হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে ইকবালকে নিয়ে অভিযানে নামে পুলিশ। এ সময় মাজারের দক্ষিণ পাশে চৌধুরী ভবনের বাউন্ডারির ভেতর ঝোঁপ থেকে হনুমানের গদা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল হোসেন জানায়, গত ১২ অক্টোবর রাতে নানুয়ারদীঘির উত্তর পাড় পূজামণ্ডপে হনুমানের প্রতিমা থেকে গদাটি কাঁধে করে এনে তিনি প্রথম দারোগাবাড়ি মাজার ও মসজিদের পুকুরে ফেলে দেন। এসময় গদাটি বাঁশের তৈরি হওয়ায় পানিতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। পরে ইকবাল গদাটি পানি থেকে তুলে এনে মাজারের দক্ষিণ পাড়ের একটি বাসার পাশে বাউন্ডারির ভেতরে ফেলে চলে যায়।

ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত ইকবাল হোসেনকে সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্তের পর গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার থেকে আটক করা হয়। পরে তাকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। গত শনিবার ইকবালকে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয়ার পর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। এর প্রেক্ষিতে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এরপরই তাকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের এলআইসি শাখায় একটি কক্ষে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ধর্মীয় অবমাননার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় মূল হোতা ইকবাল হোসেন, মাজারের দুই খাদেম ফয়সাল ও হুমায়ন এবং ৯৯৯-এ ফোন দেয়া ব্যক্তি ইকরাম হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর আগে ঘটনাস্থলের আশপাশে নগরীর নানুয়ারদীঘিরপাড় ও দারোগাবাড়ি মসজিদ এলাকার ১২টি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে এবং তদন্তসাপেক্ষে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করে।

নানুয়ারদীঘিরপাড়ে ধর্মীয় অবমাননার ঘটনাসহ পরবর্তীতে মন্দির ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ঘটনায় জেলায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় ৬টি, সদর দক্ষিণ মডেল থানায় ২টি এবং দাউদকান্দি ও দেবিদ্বারে ১টি করে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৯২ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৭৫০ জনকে আসামি করা হয়। এদিকে কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়ের হওয়ায় ৬টি মামলায় ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪শ জনকে আসামি করা হয়। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ারুল আজিম জানান, এসব মামলায় এজাহারনামীয় ৪০ জন এবং অজ্ঞাতনামা ১৬ জনসহ ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ১৩ অক্টোবর সকালে নগরীর নানুয়াদীঘিরপাড়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত পূজামণ্ডপ থেকে পবিত্র কোরআন উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা নগরীসহ জেলার সদর দক্ষিণ, দেবিদ্বার ও দাউদকান্দিতে প্রতিমা ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১ , ১০ কার্তিক ১৪২৮ ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

কুমিল্লায় মামলার দায়িত্ব সিআইডিতে

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডিকে। নগরীর মাজারের দক্ষিণ পাশে একটি ভবনের বাউন্ডারির ভেতর ঝোপ থেকে হনুমানের গদা উদ্ধার করা হয়েছে।

নানুয়ারদীঘিরপাড়ের ঘটনাসহ পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় জেলায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১২শ’র বেশি আসামি করা হয়েছে।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, ‘পূজাণ্ডপে কোরআন রেখে ধর্মীয় অবমাননার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার (কোতোয়ালি মডেল থানার মামলা নং-৫২) তদন্তভার সিআইডিতে হস্তান্তরের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত রোববার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পত্রের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেয়া হয়। মামলা হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলার নথি ও উদ্ধারকৃত আলামত সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

ইকবালসহ ৪ জনকে রিমান্ডে আনা হলেও জিজ্ঞাসাবাদে গত ৩ দিনে গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছেন তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন- ‘তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

রিমান্ডে আনার পর রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গ্রেপ্তার হওয়া ইকবাল হোসেনকে নিয়ে নগরীর দারোগাবাড়ি মসজিদ ও মাজার এলাকায় যান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ পুলিশের সদস্যরা।

গত রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিসিটিভির ফুটেজে থাকা পূজামণ্ডপ থেকে নেয়া গদাটি উদ্ধারে হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে ইকবালকে নিয়ে অভিযানে নামে পুলিশ। এ সময় মাজারের দক্ষিণ পাশে চৌধুরী ভবনের বাউন্ডারির ভেতর ঝোঁপ থেকে হনুমানের গদা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইকবাল হোসেন জানায়, গত ১২ অক্টোবর রাতে নানুয়ারদীঘির উত্তর পাড় পূজামণ্ডপে হনুমানের প্রতিমা থেকে গদাটি কাঁধে করে এনে তিনি প্রথম দারোগাবাড়ি মাজার ও মসজিদের পুকুরে ফেলে দেন। এসময় গদাটি বাঁশের তৈরি হওয়ায় পানিতে ভাসমান অবস্থায় থাকে। পরে ইকবাল গদাটি পানি থেকে তুলে এনে মাজারের দক্ষিণ পাড়ের একটি বাসার পাশে বাউন্ডারির ভেতরে ফেলে চলে যায়।

ওই ঘটনার মূল অভিযুক্ত ইকবাল হোসেনকে সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্তের পর গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার থেকে আটক করা হয়। পরে তাকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। গত শনিবার ইকবালকে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয়ার পর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। এর প্রেক্ষিতে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এরপরই তাকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের এলআইসি শাখায় একটি কক্ষে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ধর্মীয় অবমাননার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় মূল হোতা ইকবাল হোসেন, মাজারের দুই খাদেম ফয়সাল ও হুমায়ন এবং ৯৯৯-এ ফোন দেয়া ব্যক্তি ইকরাম হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর আগে ঘটনাস্থলের আশপাশে নগরীর নানুয়ারদীঘিরপাড় ও দারোগাবাড়ি মসজিদ এলাকার ১২টি সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে এবং তদন্তসাপেক্ষে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৪ জনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করে।

নানুয়ারদীঘিরপাড়ে ধর্মীয় অবমাননার ঘটনাসহ পরবর্তীতে মন্দির ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ঘটনায় জেলায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় ৬টি, সদর দক্ষিণ মডেল থানায় ২টি এবং দাউদকান্দি ও দেবিদ্বারে ১টি করে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৯২ জনের নাম এজাহারে উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৭৫০ জনকে আসামি করা হয়। এদিকে কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়ের হওয়ায় ৬টি মামলায় ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪শ জনকে আসামি করা হয়। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. আনোয়ারুল আজিম জানান, এসব মামলায় এজাহারনামীয় ৪০ জন এবং অজ্ঞাতনামা ১৬ জনসহ ৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ১৩ অক্টোবর সকালে নগরীর নানুয়াদীঘিরপাড়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত পূজামণ্ডপ থেকে পবিত্র কোরআন উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা নগরীসহ জেলার সদর দক্ষিণ, দেবিদ্বার ও দাউদকান্দিতে প্রতিমা ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।