অভিযোগকারী ৯ পরিবারের এক পরিবারকে মামলায় ফাঁসালেন

রাজধানীর পূর্ব গোড়ানে সিআইডি পুলিশের এক ইন্সপেক্টরের দাপটে নিজের বাসায়ই পরবাসীর মতো থাকা ৯ পরিবার অভিযোগ করেছিলেন পুলিশ সদরদপ্তরে। অভিযোগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে এক অভিযোগকারী পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছেন ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিন। আর সেই ‘সাজানো’ মামলায় এইচ এম এরাশাদুজ্জামান রুদ্রকে গ্রেপ্তার করিয়ে জেলে পাঠিয়ে ক্রোধ মিটালেন সেই ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিন। এমন পরিস্থিতিতে অন্য পরিবারগুলো এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের বক্তব্যÑ রুদ্রের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি মামলা করেছেন তার সঙ্গে আর্থিক দেনা-পাওনার সম্পর্ক রয়েছে আর পাওনাদার ইন্সক্টের সামসুদ্দিনের শ্যালক হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন ধার কর্জ, জমি নিয়ে বিরোধ সংক্রান্ত ঘটনায় পুলিশকে না জড়ানোর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু কিভাবে এ মামলা হলো আর দ্রুত আসামিকেও গ্রেপ্তার করা হলো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের শ্যালক সেলিম মীর সুদ পরিশোধের শর্তে সাড়ে চার লাখ টাকা ধার দিয়েছেন এএইচ এম এরশাদুজ্জামন রুদ্রকে। রুদ্র শর্ত অনুযায়ী লাভসহ টাকাও পরিশোষ করে আসছিলেন। যে ৯ পরিবার ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে পুলিশ সদরদপ্তর এবং সিআইডি কার্যালয়ে অভিযোগ করেছিলেন তাতে এইচএম এরশাদুজ্জামান একজন অভিযোগকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেছিলেন। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের শ্যালককে দিয়ে মামলা করিয়েছেন। সেই মামলায় এরশাদুজামান রুদ্র ও তার স্ত্রী নাসরিন নাহারসহ ৩ জনকে আসামি করেছেন। আর সেই মামলায় প্রভাব খাটিয়ে রুদ্রকে গ্রেপ্তারও করিয়েছেন খিলগাঁও থানা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে।

সম্প্রতি খিলগাঁও পূর্ব গোড়ানের ৪৪৮ নম্বর মীর নিপুন মহল নামে একটি ভবনের ৯ ফ্ল্যাট মালিক পুলিশ সদরদপ্তরে অভিযোগ করেন ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাট মালিক সামসুদ্দিন পুরো ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছেন। এ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে গত ৩ বছর ধরে তিনি ভবনের জমির মালিকসহ ৯ ফ্ল্যাট মালিকের ওপর নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করছেন। পুলিশ সদরদপ্তরের এমন অভিযোগের কপি হাতে পাওয়ার পর সরেজমিনে অনুসন্ধান করে সংবাদে রিপোর্ট প্রকাশ হয়। সেখানে ভুক্তভোগী এএইএম এরশাদুজ্জামান রুদ্রসহ অভিযোগকারী ৯ জনের নামও প্রকাশ করা হয়। এরপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন সিআইডির ঢাকা মেট্রো উত্তর বিভাগের ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, সিআইডি ও পুলিশ সদরদপ্তরের অভিযোগ, সংবাদে রিপোর্ট আসার পর ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রত্যেক পরিবারকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিতে থাকেন। এরই জের ধরে ২০ অক্টোবর খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করান নিজের শ্যালক মো. সেলিম মীরকে দিয়ে। ২১ অক্টোবর ওই মামলায় খিলগাঁও থানা পুলিশ রাত ১১টায় ফ্ল্যাটের ৬ তলায় হানা দিয়ে ফ্ল্যাট মালিক এএইচএম এরশাদুজ্জামান রুদ্রকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান। পরদিন আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনও করেন। রুদ্র বর্তমানে জেলে আছে। এখন অন্য পরিবারগুলোকেও রুদ্রের পরিবারের মতো মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন।

ভুক্তভোগী ৯ পরিবার জানান, গত ৩ বছর ধরে ক্ষমতা দেখিয়ে সিআইডি ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিন পূর্ব গোরানের ৪৪৮ নম্বর নিপুন মীর মহলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছেন। ৭ তলা ভবনের নিচতলায় গ্যারেজ আর ৬ তলায় ২ ইউনিটে ১২টি ফ্ল্যাট। ৬টি ফ্লাটের মালিক জমির মালিক মীর লুৎফর রহমান আর ৬টি ফ্ল্যাটের মালিক ডেভেলপার কোম্পানি। ইন্সপেক্টার সামসুদ্দিন, তার আত্মীয় মিলে দুটি ফ্ল্যাট নেন ডেভেলপারের কাছ থেকে। এরপর থেকেই সামসুদ্দিন পুরো বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করেন। ৯ ফ্ল্যাট মালিক এক হয়ে কোন সিদ্ধান্তে গেলে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেন সামসুদ্দিন। ফ্ল্যাটের নিচে বাগানের জায়গা, পাকিং এর কিছু জায়গা নিজের নিয়ন্ত্রণেও নেন সামসুদ্দিন। বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে ফ্ল্যাট মালিকরা সিকিউরিটি গার্ড রাখতে চাইলে তাতে বাধা দিতেন সামসুদ্দিন। ৯ ফ্ল্যাট মালিকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দারোয়ান নিয়োগ দেয়ার পর তাদের মারধর করেন তিনি। এমনকি স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়েও দারোয়ানদের মারধর করিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, ব্যবসায়ী রুদ্রের সঙ্গে ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের শ্যালকের মামলার বাদী মো. সেলিম মীরের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সেই সুবাধে ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের শ্যালক সেলিম মীরের কাছ থেকে ২০১৮ সালের জুনে আগে সুদ পরিশোধের চুক্তিতে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার নেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি লাখে মাসিক আড়াই হাজার টাকা সুদসহ টাকা পরিশোধ করতেন। কিন্তু ব্যক্তিগত লেনদেনের বিষয়টি সামসুদ্দিনের কথায় তার শ্যালক রুদ্রের বিরুদ্ধে মামলা করেন খিলগাঁও থানায়। মামলাটি পুরোপুরি তদন্ত না করেই বাসা থেকে খিলগাঁও থানা পুলিশ রুদ্রকে রাতে ধরে নিয়ে যান।

বাদী তার মামলায় দাবি করেন নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আসামি তার কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা ধার নেন। কিন্তু আসামি তার টাকা আত্মসাত করেছে। স্ট্যাম্পে করা চুক্তি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাদী প্রতি মাসে লাখ প্রতি আড়াই হাজার টাকা লাভে আসামি রুদ্রকে সাড়ে চার লাখ টাকা ধার দিয়েছেন ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি। চুক্তিতে বলা হয়েছে ৩০ নভেম্বর ২০১৮ তারিখের মধ্যে লাভসহ পুরো টাকা ফেরত দিবে দ্বিতীয় পক্ষ (আসামি রুদ্র)। নির্ধারিত সময় টাকা না দিলে লাভের টাকা দ্বিগুণ হবে। প্রতি মাসের টাকা ৩১ তারিখের মধ্যে দিতে হবে। দ্বিতীয় পক্ষ সময়মতো টাকা না দিলে প্রথম পক্ষ (বাদী) দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী জরিমানাসহ সমুদয় টাকা আদায় করে নিতে পারবেন। ১ম পক্ষ (বাদী) সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণসহ টাকা ফেরত প্রদান করিতে বাধ্য থাকবে। কোন পক্ষের অকাল মৃত্যুতে তার ওয়ারিশগণ সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ ও গ্রহণ করতে পারবে।

এ বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আবদুল আহাদ জানান, দেনা-পাওয়ার বিষয়ে থানা পুলিশ না জড়ানোর নির্দেশনা রয়েছে। দেনা-পাওনা নিয়ে থানায় মামলা নেয়ারও নির্দেশনা নেই। তবে প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হলে তদন্ত করে মামলা নিবেন। তদন্ত করে আসামি গ্রেপ্তার করবেন। তিনি খিলগাঁও থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের বিষয়টি জানার পর ভুত্তভোগীদের তার কাছে গিয়ে অভিযোগ করার বিষয়ে বলেন। অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি পুরো বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান।

সামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে সেটি সিআইডির প্রশাসনের কাছে যাবে। ডিআইজি প্রশাসন অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রুদ্রের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বাবলুর রহমান বলেন, বাদী দীর্ঘদিন বিদেশ ছিল বলে শুনেছি। তার কাছ থেকে লাভের উপর টাকা নিয়েছে বলে আসামি আদালতে স্বীকার করেছে। সে এও বলেছে, বাদী তার কাছ থেকে দের লাখ টাকা পাবে। বাকি টাকা সে লাভসহ পরিশোধ করেছে। সুদের উপর টাকা লাগিয়ে সুদসহ টাকা ফেরত নিয়ে এ ধরনের মামলা করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। আমরা শুধু তদন্ত করি। আমি রিমান্ড চেয়েছিলাম, আদালত রিমান্ড দেয়নি।

মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১ , ১০ কার্তিক ১৪২৮ ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সিআইডি ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের অত্যাচার

অভিযোগকারী ৯ পরিবারের এক পরিবারকে মামলায় ফাঁসালেন

সাইফ বাবলু

রাজধানীর পূর্ব গোড়ানে সিআইডি পুলিশের এক ইন্সপেক্টরের দাপটে নিজের বাসায়ই পরবাসীর মতো থাকা ৯ পরিবার অভিযোগ করেছিলেন পুলিশ সদরদপ্তরে। অভিযোগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে এক অভিযোগকারী পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছেন ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিন। আর সেই ‘সাজানো’ মামলায় এইচ এম এরাশাদুজ্জামান রুদ্রকে গ্রেপ্তার করিয়ে জেলে পাঠিয়ে ক্রোধ মিটালেন সেই ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিন। এমন পরিস্থিতিতে অন্য পরিবারগুলো এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের বক্তব্যÑ রুদ্রের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি মামলা করেছেন তার সঙ্গে আর্থিক দেনা-পাওনার সম্পর্ক রয়েছে আর পাওনাদার ইন্সক্টের সামসুদ্দিনের শ্যালক হয়। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন ধার কর্জ, জমি নিয়ে বিরোধ সংক্রান্ত ঘটনায় পুলিশকে না জড়ানোর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু কিভাবে এ মামলা হলো আর দ্রুত আসামিকেও গ্রেপ্তার করা হলো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের শ্যালক সেলিম মীর সুদ পরিশোধের শর্তে সাড়ে চার লাখ টাকা ধার দিয়েছেন এএইচ এম এরশাদুজ্জামন রুদ্রকে। রুদ্র শর্ত অনুযায়ী লাভসহ টাকাও পরিশোষ করে আসছিলেন। যে ৯ পরিবার ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে পুলিশ সদরদপ্তর এবং সিআইডি কার্যালয়ে অভিযোগ করেছিলেন তাতে এইচএম এরশাদুজ্জামান একজন অভিযোগকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেছিলেন। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের শ্যালককে দিয়ে মামলা করিয়েছেন। সেই মামলায় এরশাদুজামান রুদ্র ও তার স্ত্রী নাসরিন নাহারসহ ৩ জনকে আসামি করেছেন। আর সেই মামলায় প্রভাব খাটিয়ে রুদ্রকে গ্রেপ্তারও করিয়েছেন খিলগাঁও থানা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে।

সম্প্রতি খিলগাঁও পূর্ব গোড়ানের ৪৪৮ নম্বর মীর নিপুন মহল নামে একটি ভবনের ৯ ফ্ল্যাট মালিক পুলিশ সদরদপ্তরে অভিযোগ করেন ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাট মালিক সামসুদ্দিন পুরো ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছেন। এ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে গত ৩ বছর ধরে তিনি ভবনের জমির মালিকসহ ৯ ফ্ল্যাট মালিকের ওপর নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতন করছেন। পুলিশ সদরদপ্তরের এমন অভিযোগের কপি হাতে পাওয়ার পর সরেজমিনে অনুসন্ধান করে সংবাদে রিপোর্ট প্রকাশ হয়। সেখানে ভুক্তভোগী এএইএম এরশাদুজ্জামান রুদ্রসহ অভিযোগকারী ৯ জনের নামও প্রকাশ করা হয়। এরপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন সিআইডির ঢাকা মেট্রো উত্তর বিভাগের ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, সিআইডি ও পুলিশ সদরদপ্তরের অভিযোগ, সংবাদে রিপোর্ট আসার পর ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিন আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে প্রত্যেক পরিবারকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিতে থাকেন। এরই জের ধরে ২০ অক্টোবর খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করান নিজের শ্যালক মো. সেলিম মীরকে দিয়ে। ২১ অক্টোবর ওই মামলায় খিলগাঁও থানা পুলিশ রাত ১১টায় ফ্ল্যাটের ৬ তলায় হানা দিয়ে ফ্ল্যাট মালিক এএইচএম এরশাদুজ্জামান রুদ্রকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান। পরদিন আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনও করেন। রুদ্র বর্তমানে জেলে আছে। এখন অন্য পরিবারগুলোকেও রুদ্রের পরিবারের মতো মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন।

ভুক্তভোগী ৯ পরিবার জানান, গত ৩ বছর ধরে ক্ষমতা দেখিয়ে সিআইডি ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিন পূর্ব গোরানের ৪৪৮ নম্বর নিপুন মীর মহলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছেন। ৭ তলা ভবনের নিচতলায় গ্যারেজ আর ৬ তলায় ২ ইউনিটে ১২টি ফ্ল্যাট। ৬টি ফ্লাটের মালিক জমির মালিক মীর লুৎফর রহমান আর ৬টি ফ্ল্যাটের মালিক ডেভেলপার কোম্পানি। ইন্সপেক্টার সামসুদ্দিন, তার আত্মীয় মিলে দুটি ফ্ল্যাট নেন ডেভেলপারের কাছ থেকে। এরপর থেকেই সামসুদ্দিন পুরো বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করেন। ৯ ফ্ল্যাট মালিক এক হয়ে কোন সিদ্ধান্তে গেলে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেন সামসুদ্দিন। ফ্ল্যাটের নিচে বাগানের জায়গা, পাকিং এর কিছু জায়গা নিজের নিয়ন্ত্রণেও নেন সামসুদ্দিন। বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে ফ্ল্যাট মালিকরা সিকিউরিটি গার্ড রাখতে চাইলে তাতে বাধা দিতেন সামসুদ্দিন। ৯ ফ্ল্যাট মালিকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দারোয়ান নিয়োগ দেয়ার পর তাদের মারধর করেন তিনি। এমনকি স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়েও দারোয়ানদের মারধর করিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, ব্যবসায়ী রুদ্রের সঙ্গে ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের শ্যালকের মামলার বাদী মো. সেলিম মীরের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সেই সুবাধে ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের শ্যালক সেলিম মীরের কাছ থেকে ২০১৮ সালের জুনে আগে সুদ পরিশোধের চুক্তিতে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার নেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি লাখে মাসিক আড়াই হাজার টাকা সুদসহ টাকা পরিশোধ করতেন। কিন্তু ব্যক্তিগত লেনদেনের বিষয়টি সামসুদ্দিনের কথায় তার শ্যালক রুদ্রের বিরুদ্ধে মামলা করেন খিলগাঁও থানায়। মামলাটি পুরোপুরি তদন্ত না করেই বাসা থেকে খিলগাঁও থানা পুলিশ রুদ্রকে রাতে ধরে নিয়ে যান।

বাদী তার মামলায় দাবি করেন নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে আসামি তার কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা ধার নেন। কিন্তু আসামি তার টাকা আত্মসাত করেছে। স্ট্যাম্পে করা চুক্তি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাদী প্রতি মাসে লাখ প্রতি আড়াই হাজার টাকা লাভে আসামি রুদ্রকে সাড়ে চার লাখ টাকা ধার দিয়েছেন ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি। চুক্তিতে বলা হয়েছে ৩০ নভেম্বর ২০১৮ তারিখের মধ্যে লাভসহ পুরো টাকা ফেরত দিবে দ্বিতীয় পক্ষ (আসামি রুদ্র)। নির্ধারিত সময় টাকা না দিলে লাভের টাকা দ্বিগুণ হবে। প্রতি মাসের টাকা ৩১ তারিখের মধ্যে দিতে হবে। দ্বিতীয় পক্ষ সময়মতো টাকা না দিলে প্রথম পক্ষ (বাদী) দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী জরিমানাসহ সমুদয় টাকা আদায় করে নিতে পারবেন। ১ম পক্ষ (বাদী) সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণসহ টাকা ফেরত প্রদান করিতে বাধ্য থাকবে। কোন পক্ষের অকাল মৃত্যুতে তার ওয়ারিশগণ সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ ও গ্রহণ করতে পারবে।

এ বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আবদুল আহাদ জানান, দেনা-পাওয়ার বিষয়ে থানা পুলিশ না জড়ানোর নির্দেশনা রয়েছে। দেনা-পাওনা নিয়ে থানায় মামলা নেয়ারও নির্দেশনা নেই। তবে প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হলে তদন্ত করে মামলা নিবেন। তদন্ত করে আসামি গ্রেপ্তার করবেন। তিনি খিলগাঁও থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের বিষয়টি জানার পর ভুত্তভোগীদের তার কাছে গিয়ে অভিযোগ করার বিষয়ে বলেন। অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি পুরো বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান।

সামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে সেটি সিআইডির প্রশাসনের কাছে যাবে। ডিআইজি প্রশাসন অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রুদ্রের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বাবলুর রহমান বলেন, বাদী দীর্ঘদিন বিদেশ ছিল বলে শুনেছি। তার কাছ থেকে লাভের উপর টাকা নিয়েছে বলে আসামি আদালতে স্বীকার করেছে। সে এও বলেছে, বাদী তার কাছ থেকে দের লাখ টাকা পাবে। বাকি টাকা সে লাভসহ পরিশোধ করেছে। সুদের উপর টাকা লাগিয়ে সুদসহ টাকা ফেরত নিয়ে এ ধরনের মামলা করতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। আমরা শুধু তদন্ত করি। আমি রিমান্ড চেয়েছিলাম, আদালত রিমান্ড দেয়নি।