সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে অভিবাসী বাঙালিদের প্রতিবাদ

গান, কবিতা আর কথায় প্রায় আড়াই ঘণ্টার অনলাইন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ নানা দেশের বাংলাদেশি অভিবাসীরা সাম্প্রতিক হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংস আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে ১৫টি দেশে বসবাসকারী দুইশ’র বেশি অভিবাসী বাঙালি স্বাক্ষরিত একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়।

ঘোষণায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশে দুর্গাপূজা উদযাপনের সময় মন্দিরে আক্রমণ, বিগ্রহ ধ্বংস ও সার্বিকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে আমরা অভিবাসী সাহিত্য সমাজ ও তার শুভানুধ্যায়ীরা তীব্র ধিক্কার ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। ’

ঘোষণায় আরও বলা হয়, ‘ফেইসবুকে জঘন্য মিথ্যা উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হানাহানির সৃষ্টি একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর হীন উদ্দেশ্যপ্রসূত কৌশল। যারা এই উসকানির সঙ্গে জড়িত, এমনকি যারা এই উসকানির ফলে হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছে, তারা আসলে ধর্মের ধ্বজাধারী দুর্বৃত্ত। দুঃখের বিষয় গত কয়েক দশক ধরে এই ধরনের শক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় পাচ্ছে। রামু, নাসিরনগরসহ বহু স্থানে এই ধরনের সহিংসতা বার বার সংঘটিত হচ্ছে। এর কোনটিতেই সঠিক আইনের প্রয়োগ দেখা যায়নি।’

ঘোষণায় বলা হয়, ‘আমাদের দাবি সরকার, সুশীল সমাজ এবং ধর্মবিশ্বাসী সব সৎ ও মানবতাবাদী মানুষ এই বিষয়ে সোচ্চার হোন, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’

ঘোষণায় এই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় অতীতের মতো এবারও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হবে।

উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে গত ২৪ অক্টোবর অনলাইনে এই সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং বিশিষ্ট অভিবাসী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে যোগ দেন যুক্তরাজ্য থেকে সাহিত্য গবেষক গোলাম মুরশিদ, অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান, কবি শামীম আজাদ, সংস্কৃতকর্মী ইমতিয়াজ আহমেদ, কানাডা থেকে কবি দিলারা হাফিজ, অস্ট্রেলিয়া থেকে গবেষক অধ্যাপিকা নিরুপমা রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা কামরুল আহসান খান, ফ্রান্স থেকে সংস্কৃতিকর্মী রবিশংকর মৈত্রী ও আমীরুল আরহাম। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতিকর্মী তাজুল ইমাম, অধাপক মোস্তফা সারওয়ার, অধ্যাপক হায়দার খান, জ্যোতির্বিদ দীপেন ভট্টাচার্যসহ আরও অনেকে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনলাইন অনুষ্ঠানে মহীতোষ তালুকদার তাপস যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্য থেকে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও সলিল চৌধুরীর গান পরিবেশন করেন। শিকাগো থেকে যোগ দেন শৈবাল তালুকদার। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য পূরবী বসুর দুটি কবিতা অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয়।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদে সংগঠনের সদস্যরা অভিবাসী বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে একটি ঘোষণার স্বপক্ষে বিশ্বব্যাপী স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করেন। কয়েকদিনে ইমেইল আর ফেইসবুকের মাধ্যমে পাঁচটি মহাদেশের ১৫টি দেশ থেকে ২১০ জন অভিবাসী বাঙালি এই ঘোষণার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন। বেশির ভাগ স্বাক্ষরকারী যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন। তার সঙ্গে যুক্ত হন ইরান, জাপান, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, লিবিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, সুইডেনের অভিবাসী বাঙালি।

অভিবাসী বাঙালি লেখক ও সাহিত্যামোদিদের মধ্যে মতবিনিময় ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত্য পরিষদ গঠিত হয়। এই সংগঠনের কর্মকা-ের মধ্যে প্রতিবছর বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশ অন্যতম। প্রতি সমাবেশের সঙ্গে ‘হৃদবাংলা’ শীর্ষক স্মারক সাহিত্য সঙ্কলন প্রকাশিত হয়।

মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১ , ১০ কার্তিক ১৪২৮ ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে অভিবাসী বাঙালিদের প্রতিবাদ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

গান, কবিতা আর কথায় প্রায় আড়াই ঘণ্টার অনলাইন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ নানা দেশের বাংলাদেশি অভিবাসীরা সাম্প্রতিক হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংস আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে ১৫টি দেশে বসবাসকারী দুইশ’র বেশি অভিবাসী বাঙালি স্বাক্ষরিত একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়।

ঘোষণায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশে দুর্গাপূজা উদযাপনের সময় মন্দিরে আক্রমণ, বিগ্রহ ধ্বংস ও সার্বিকভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে আমরা অভিবাসী সাহিত্য সমাজ ও তার শুভানুধ্যায়ীরা তীব্র ধিক্কার ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। ’

ঘোষণায় আরও বলা হয়, ‘ফেইসবুকে জঘন্য মিথ্যা উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হানাহানির সৃষ্টি একটি ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর হীন উদ্দেশ্যপ্রসূত কৌশল। যারা এই উসকানির সঙ্গে জড়িত, এমনকি যারা এই উসকানির ফলে হানাহানিতে লিপ্ত হয়েছে, তারা আসলে ধর্মের ধ্বজাধারী দুর্বৃত্ত। দুঃখের বিষয় গত কয়েক দশক ধরে এই ধরনের শক্তি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় পাচ্ছে। রামু, নাসিরনগরসহ বহু স্থানে এই ধরনের সহিংসতা বার বার সংঘটিত হচ্ছে। এর কোনটিতেই সঠিক আইনের প্রয়োগ দেখা যায়নি।’

ঘোষণায় বলা হয়, ‘আমাদের দাবি সরকার, সুশীল সমাজ এবং ধর্মবিশ্বাসী সব সৎ ও মানবতাবাদী মানুষ এই বিষয়ে সোচ্চার হোন, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।’

ঘোষণায় এই আশাবাদ ব্যক্ত করা হয় অতীতের মতো এবারও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হবে।

উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে গত ২৪ অক্টোবর অনলাইনে এই সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং বিশিষ্ট অভিবাসী অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে যোগ দেন যুক্তরাজ্য থেকে সাহিত্য গবেষক গোলাম মুরশিদ, অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান, কবি শামীম আজাদ, সংস্কৃতকর্মী ইমতিয়াজ আহমেদ, কানাডা থেকে কবি দিলারা হাফিজ, অস্ট্রেলিয়া থেকে গবেষক অধ্যাপিকা নিরুপমা রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা কামরুল আহসান খান, ফ্রান্স থেকে সংস্কৃতিকর্মী রবিশংকর মৈত্রী ও আমীরুল আরহাম। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক জ্যোতি প্রকাশ দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা ও সংস্কৃতিকর্মী তাজুল ইমাম, অধাপক মোস্তফা সারওয়ার, অধ্যাপক হায়দার খান, জ্যোতির্বিদ দীপেন ভট্টাচার্যসহ আরও অনেকে অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অনলাইন অনুষ্ঠানে মহীতোষ তালুকদার তাপস যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্য থেকে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও সলিল চৌধুরীর গান পরিবেশন করেন। শিকাগো থেকে যোগ দেন শৈবাল তালুকদার। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য পূরবী বসুর দুটি কবিতা অনুষ্ঠানে পাঠ করা হয়।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবাদে সংগঠনের সদস্যরা অভিবাসী বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে একটি ঘোষণার স্বপক্ষে বিশ্বব্যাপী স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করেন। কয়েকদিনে ইমেইল আর ফেইসবুকের মাধ্যমে পাঁচটি মহাদেশের ১৫টি দেশ থেকে ২১০ জন অভিবাসী বাঙালি এই ঘোষণার সঙ্গে সংহতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন। বেশির ভাগ স্বাক্ষরকারী যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন। তার সঙ্গে যুক্ত হন ইরান, জাপান, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, লিবিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, সুইডেনের অভিবাসী বাঙালি।

অভিবাসী বাঙালি লেখক ও সাহিত্যামোদিদের মধ্যে মতবিনিময় ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত্য পরিষদ গঠিত হয়। এই সংগঠনের কর্মকা-ের মধ্যে প্রতিবছর বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশ অন্যতম। প্রতি সমাবেশের সঙ্গে ‘হৃদবাংলা’ শীর্ষক স্মারক সাহিত্য সঙ্কলন প্রকাশিত হয়।