আর নয় শিশুশ্রম

তানজিমুল ইসলাম

করোনার এই ভয়াল থাবায় পুরো দেশ যখন লকডাউনে নিমজ্জিত তখন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশু সন্তানেরা কেমন আছে? কোথায় আছে? প্রায় দেড় বছর পরে শুধু স্কুলের মুখ দেখতে শুরু করেছে, ছোট্ট বাড়িতে বা বস্তি এলাকায় কেমন কাটতে পারে তাদের দৈনন্দিন? ইতোমধ্যে মা-বাবার প্রাত্যহিক কাজের সহযোগী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করলেও, আজ তারা নতুন করে উপার্জনকারী ‘শ্রমিক’ হিসেবে প্রমাণ করছে। আজকাল নতুন করে গৃহকর্মে, ইটের ভাটায়, কলকারখানায়, হোটেলে, ভ্যানে, এমনকি মাদক-জুয়ার আসরেও তাদের শ্রম বিক্রি হচ্ছে হরহামেশাই!

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এবং ২০১৩-এর সংশোধন অনুসারে কর্মরত শিশু বলতে বোঝায়, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে। এ শ্রম অনুমোদনযোগ্য। অথচ, আইনের এই বিষয়টিকে তোয়াক্কা না করে শিশুশ্রম চলছে দেশের আনাচে-কানাচে সর্বত্রই! যা শিশু সুরক্ষা তথা শিশু অধিকারের পরিপন্থি! আমরা যখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবার আনন্দে পুলকিত; ঠিক সেই মুহূর্তে এই শিশু তথা আগামীর ভবিষ্যতের ভয়াবহতার কথা ভাবলে কি আর ভালো থাকা যায়?

সরকার ছাড়াও দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ শিশুশ্রম রোধে নানাবিধ কাজ অব্যাহত রাখলেও শিশুশ্রম কমছে না কিছুতেই! ক্রমশ: শিশুশ্রম বন্ধের লড়াইয়ে আমরা যেন হারতে বসেছি। নতুন করে করোনাভাইরাস মহামারী আমাদের অনেক পেছনে ঠেলে দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশে ৩২ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে, যার মধ্যে ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত যা তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও নৈতিকতার জন্য ক্ষতিকারক।

শৈশবে যার হাতে থাকার কথা ছিল বই আর পেন্সিল, যাদের হাত ধরে এদেশ নতুন করে এগিয়ে যাবার কথা, তারাই যেন আজ জীবিকায়নের মূল কারিগর হয়ে অভাবগ্রস্ত সংসারের সংগ্রামী সৈনিক সেজেছে! এক শ্রেণীর লোভী স্বার্থপিপাসু মানুষ নামের দানবেরা এই সব শিশু ও তার পরিবারের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে নামমাত্র পারিশ্রমিকে তাদের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করে। কেননা, শুধু বয়সে কম অথবা শিশু হবার জন্যই তাদের শ্রমের মূল্য খুবই নগণ্য হয় এ সমাজে!

সারা পৃথিবীজুড়েই শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনা করতে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যপক কর্মসূচি গৃহীত হলেও শিশু নির্যাতন তথা শিশু অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি থেমে নেই একটি মুহূর্তের জন্যেও! চোখের সামনেই এমন অজস্র ঘটনার সাক্ষী আমরা সবাই! নির্বাক দর্শক-শ্রোতা হয়ে শুধু হজম করে ফেলি সবকিছুই! আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিশু অধিকার সনদে মূলনীতি হিসেবে (১) বৈষম্যহীনতা, (২) শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা, (৩) শিশুর অধিকার সমুন্নত রাখতে অভিভাবকদের দায়িত্ব ও (৪) ‘শিশুদের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন’ এর কথা উল্লেখ থাকলেও বাংলাদেশের মতো এই বৈচিত্র্যময় দেশটিতে বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে এর যথাযথ প্রয়োগ খুবই বিরল!

একই ছাদের নিচে বাড়িওয়ালার শিশু-সন্তানেরা যখন ঘুমকাতুরে হয়ে সকাল ১০টায় বিছানা ছেড়ে ওঠে, একই বয়সী গৃহকর্মী নামক আরেকটি শিশুকে তখন কাকভোরে উঠে রুটিন মাফিক ভারী কাজে মনোনিবেশ করতে হয়! নিয়মিত কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হলেও কোনদিন কোনো বাড়তি প্রশংসা না জুটে না। অথচ, একদিন ব্যতিক্রমী কিছু ঘটলেই পুরস্কার হিসেবে জুটে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন! আর এসবের সাক্ষী হয় তাদেরই সমবয়সী আলালের ঘরে দুলালেরা! তবে কি শিশু অধিকার সনদ কি শুধুই ওই অভিজাত শ্রেণীর বিশেষ শিশুদের জন্যই?

শিশুশ্রম শুধু একটি শিশু বা তার পরিবারকেই ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে না বরং অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে ফেলে তার সব সম্ভাবনা! নিষ্পাপ শিশুর শৈশবকে যারা গলা টিপে হত্যা করে বা যারা প্ররোচিত ও বাধ্য করে তারা আসলে কেমন মানুষ! মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি হলো সুশিক্ষা (প্রাতিষ্ঠানিক ও বাস্তবভিত্তিক)। কিন্তু অনুকূল পরিবেশের অভাবে অন্য আরেকটি মৌলিক চাহিদা অর্থাৎ অন্ন জোগাড় করতে তখন তাকে শৈশবেই যুবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয় এ দেশে! কাজ যতই হোক পারিশ্রমিকের বেলায় (অল্প টাকায়) শুধু শৈশবকে বিবেচনা করা হয় এ সমাজে!

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ৮.৭-এ বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের সরিয়ে নেয়ার জন্য রাষ্ট্রগুলোকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল করতে হবে। আর এক্ষুণি তার প্রকৃত সময়! সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। এর ফলে শিশুশ্রমের ওপর কী প্রভাব পড়ল, তার হিসাব কেউ রাখছে কি? এক বছরের অধিক সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুশ্রম কতটা বেড়ে গেল, তা কি আমরা জানি? হয়তো জানি! হয়তো স্বীকার করি না!

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শ্রম নিয়োগ সম্পর্কে যে-মান নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, সেখানে মূলত চারটি মাত্রার কথা বলে হয়েছে: সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা, যৌথ দর-কষাকষির অধিকার, শিশুশ্রমিকের অনস্তিত্ব ও বৈষম্যহীন নিয়োগ ব্যবস্থা। এগুলো নিশ্চয়ই সব দেশে নীতি হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে এর প্রয়োগ কৌশল নিয়ে। দিন, মাস, বছর যায়! সময়ের পরিক্রমায় শিশু দিবস, শিশু অধিকার সপ্তাহ, শিশুশ্রম দিবস, মানবাধিকার দিবস পালিত হয়। অনেকে আবার শিশুদের উন্নয়নে অনেক কাজ করে, গবেষণা চালিয়ে যায়! বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়! অনেকে আবার দেশ বরেণ্য মানুষের স্বীকৃতি পায়! আনেক নামিদামি পুরস্কারও পায়! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমজনতার শিশুদের অধিকার কখনোই প্রতিষ্ঠিত হয় না! বন্ধ হয় না শিশুশ্রম!

সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করতে না পারলে শিশুশ্রম কমবে না, শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ব্যপক ভূমিকা রয়েছে। সুন্দর আগামীর জন্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাক্তিবর্গের পৃষ্ঠপোষকতা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনি প্রয়োজন, প্রতিটি শিশুর জন্য আমজনতার আন্তরিক ভালোবাসা! যদিও বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী এদেশে ‘বাড়ছে শিশুশ্রম, বঞ্চিত হচ্ছে শিশু অধিকার’! তবুও যে কোনো সচেতন ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিই চাইবেন শিশুশ্রম বন্ধ হোক, প্রতিষ্ঠিত হোক শিশু অধিকার! আমরাও প্রত্যাশায় আছি সেদিনের! হয়তো সেদিন সন্নিকটে!

[লেখক : সামাজিক উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী]

মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১ , ১০ কার্তিক ১৪২৮ ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

আর নয় শিশুশ্রম

তানজিমুল ইসলাম

করোনার এই ভয়াল থাবায় পুরো দেশ যখন লকডাউনে নিমজ্জিত তখন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশু সন্তানেরা কেমন আছে? কোথায় আছে? প্রায় দেড় বছর পরে শুধু স্কুলের মুখ দেখতে শুরু করেছে, ছোট্ট বাড়িতে বা বস্তি এলাকায় কেমন কাটতে পারে তাদের দৈনন্দিন? ইতোমধ্যে মা-বাবার প্রাত্যহিক কাজের সহযোগী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করলেও, আজ তারা নতুন করে উপার্জনকারী ‘শ্রমিক’ হিসেবে প্রমাণ করছে। আজকাল নতুন করে গৃহকর্মে, ইটের ভাটায়, কলকারখানায়, হোটেলে, ভ্যানে, এমনকি মাদক-জুয়ার আসরেও তাদের শ্রম বিক্রি হচ্ছে হরহামেশাই!

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এবং ২০১৩-এর সংশোধন অনুসারে কর্মরত শিশু বলতে বোঝায়, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে। এ শ্রম অনুমোদনযোগ্য। অথচ, আইনের এই বিষয়টিকে তোয়াক্কা না করে শিশুশ্রম চলছে দেশের আনাচে-কানাচে সর্বত্রই! যা শিশু সুরক্ষা তথা শিশু অধিকারের পরিপন্থি! আমরা যখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবার আনন্দে পুলকিত; ঠিক সেই মুহূর্তে এই শিশু তথা আগামীর ভবিষ্যতের ভয়াবহতার কথা ভাবলে কি আর ভালো থাকা যায়?

সরকার ছাড়াও দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সংস্থাসমূহ শিশুশ্রম রোধে নানাবিধ কাজ অব্যাহত রাখলেও শিশুশ্রম কমছে না কিছুতেই! ক্রমশ: শিশুশ্রম বন্ধের লড়াইয়ে আমরা যেন হারতে বসেছি। নতুন করে করোনাভাইরাস মহামারী আমাদের অনেক পেছনে ঠেলে দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশে ৩২ লাখ শিশু শ্রমিক রয়েছে, যার মধ্যে ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত যা তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও নৈতিকতার জন্য ক্ষতিকারক।

শৈশবে যার হাতে থাকার কথা ছিল বই আর পেন্সিল, যাদের হাত ধরে এদেশ নতুন করে এগিয়ে যাবার কথা, তারাই যেন আজ জীবিকায়নের মূল কারিগর হয়ে অভাবগ্রস্ত সংসারের সংগ্রামী সৈনিক সেজেছে! এক শ্রেণীর লোভী স্বার্থপিপাসু মানুষ নামের দানবেরা এই সব শিশু ও তার পরিবারের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে নামমাত্র পারিশ্রমিকে তাদের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করে। কেননা, শুধু বয়সে কম অথবা শিশু হবার জন্যই তাদের শ্রমের মূল্য খুবই নগণ্য হয় এ সমাজে!

সারা পৃথিবীজুড়েই শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনা করতে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যপক কর্মসূচি গৃহীত হলেও শিশু নির্যাতন তথা শিশু অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি থেমে নেই একটি মুহূর্তের জন্যেও! চোখের সামনেই এমন অজস্র ঘটনার সাক্ষী আমরা সবাই! নির্বাক দর্শক-শ্রোতা হয়ে শুধু হজম করে ফেলি সবকিছুই! আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিশু অধিকার সনদে মূলনীতি হিসেবে (১) বৈষম্যহীনতা, (২) শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ রক্ষা, (৩) শিশুর অধিকার সমুন্নত রাখতে অভিভাবকদের দায়িত্ব ও (৪) ‘শিশুদের মতামতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন’ এর কথা উল্লেখ থাকলেও বাংলাদেশের মতো এই বৈচিত্র্যময় দেশটিতে বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে এর যথাযথ প্রয়োগ খুবই বিরল!

একই ছাদের নিচে বাড়িওয়ালার শিশু-সন্তানেরা যখন ঘুমকাতুরে হয়ে সকাল ১০টায় বিছানা ছেড়ে ওঠে, একই বয়সী গৃহকর্মী নামক আরেকটি শিশুকে তখন কাকভোরে উঠে রুটিন মাফিক ভারী কাজে মনোনিবেশ করতে হয়! নিয়মিত কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হলেও কোনদিন কোনো বাড়তি প্রশংসা না জুটে না। অথচ, একদিন ব্যতিক্রমী কিছু ঘটলেই পুরস্কার হিসেবে জুটে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন! আর এসবের সাক্ষী হয় তাদেরই সমবয়সী আলালের ঘরে দুলালেরা! তবে কি শিশু অধিকার সনদ কি শুধুই ওই অভিজাত শ্রেণীর বিশেষ শিশুদের জন্যই?

শিশুশ্রম শুধু একটি শিশু বা তার পরিবারকেই ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে না বরং অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে ফেলে তার সব সম্ভাবনা! নিষ্পাপ শিশুর শৈশবকে যারা গলা টিপে হত্যা করে বা যারা প্ররোচিত ও বাধ্য করে তারা আসলে কেমন মানুষ! মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি হলো সুশিক্ষা (প্রাতিষ্ঠানিক ও বাস্তবভিত্তিক)। কিন্তু অনুকূল পরিবেশের অভাবে অন্য আরেকটি মৌলিক চাহিদা অর্থাৎ অন্ন জোগাড় করতে তখন তাকে শৈশবেই যুবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয় এ দেশে! কাজ যতই হোক পারিশ্রমিকের বেলায় (অল্প টাকায়) শুধু শৈশবকে বিবেচনা করা হয় এ সমাজে!

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ৮.৭-এ বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে শিশুদের সরিয়ে নেয়ার জন্য রাষ্ট্রগুলোকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সব ধরনের শিশুশ্রম নির্মূল করতে হবে। আর এক্ষুণি তার প্রকৃত সময়! সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। এর ফলে শিশুশ্রমের ওপর কী প্রভাব পড়ল, তার হিসাব কেউ রাখছে কি? এক বছরের অধিক সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশুশ্রম কতটা বেড়ে গেল, তা কি আমরা জানি? হয়তো জানি! হয়তো স্বীকার করি না!

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) শ্রম নিয়োগ সম্পর্কে যে-মান নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, সেখানে মূলত চারটি মাত্রার কথা বলে হয়েছে: সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা, যৌথ দর-কষাকষির অধিকার, শিশুশ্রমিকের অনস্তিত্ব ও বৈষম্যহীন নিয়োগ ব্যবস্থা। এগুলো নিশ্চয়ই সব দেশে নীতি হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে এর প্রয়োগ কৌশল নিয়ে। দিন, মাস, বছর যায়! সময়ের পরিক্রমায় শিশু দিবস, শিশু অধিকার সপ্তাহ, শিশুশ্রম দিবস, মানবাধিকার দিবস পালিত হয়। অনেকে আবার শিশুদের উন্নয়নে অনেক কাজ করে, গবেষণা চালিয়ে যায়! বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়! অনেকে আবার দেশ বরেণ্য মানুষের স্বীকৃতি পায়! আনেক নামিদামি পুরস্কারও পায়! কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমজনতার শিশুদের অধিকার কখনোই প্রতিষ্ঠিত হয় না! বন্ধ হয় না শিশুশ্রম!

সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করতে না পারলে শিশুশ্রম কমবে না, শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ব্যপক ভূমিকা রয়েছে। সুন্দর আগামীর জন্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাক্তিবর্গের পৃষ্ঠপোষকতা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনি প্রয়োজন, প্রতিটি শিশুর জন্য আমজনতার আন্তরিক ভালোবাসা! যদিও বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী এদেশে ‘বাড়ছে শিশুশ্রম, বঞ্চিত হচ্ছে শিশু অধিকার’! তবুও যে কোনো সচেতন ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিই চাইবেন শিশুশ্রম বন্ধ হোক, প্রতিষ্ঠিত হোক শিশু অধিকার! আমরাও প্রত্যাশায় আছি সেদিনের! হয়তো সেদিন সন্নিকটে!

[লেখক : সামাজিক উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী]