সাম্প্রদায়িক হামলার ইন্ধনদাতাদের নাম শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সম্প্রতি দুর্গোৎসবে কোরআন অবমাননার রেষে পূজামণ্ডব ও হিন্দুদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় ইন্ধনদাতাদের নাম শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। এখন পর্যন্ত সাম্প্রাদিক হামলার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় ১০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রংপুর ও নোয়াখালীর ঘটনায় যারা ইন্ধন দিয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করেছে গ্রেপ্তারকৃতরা।

গতকাল দুপুরে সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ দাবি করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। জবানবন্দিতে রংপুর ও নোয়াখালীর ঘটনায় ইন্ধনদাতাদের নাম বলেছে গ্রেপ্তারকৃতরা। তবে আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আপনাদের সামনে নাম প্রকাশ করবো। সেখানে বিএনপি-জামায়াত আছে কিনা সেটা এখনই বলতে চাচ্ছি না। নিশ্চিত হয়েই জানাতে চাই।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘কোরআন শরিফ রাখার পর আমরা এ ঘটনা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম, আমাদের পুলিশের সব পর্যায়ের টিম সেখানে পাঠিয়েছিলাম, যাতে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন হয়। আমরা দেখলাম, মসজিদের পাশে পুকুরের মাছ চাষি মসজিদের বারান্দায় একটা ক্যামেরা বসিয়েছেন। যেখানে পরিষ্কার দেখা গেছে, কেউ মসজিদ থেকে কোরআন নিয়ে হনুমানের গদার স্থানে রেখে গদা নিয়ে বেরিয়ে এলেন।’ ‘যখন এ ঘটনা সামনে চলে এলো, তখন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি, তার নাম প্রকাশ করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল জুমার নামাজের পর অসুবিধা হতে পারে। আমরা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বলেছিলাম, তার আগেই প্রতিমা বিসর্জন দেবেন এবং তারা তা করেছেন। আমাদের নামাজও ঠিকভাবে শেষ হলো। কিন্তু, দুই ভাগে বিতর্ক শুরু হলো। একপক্ষ পুলিশের সামনে হল্লা শুরু করলো। আরেক পক্ষ পুলিশকে ব্যস্ত রেখে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করলো। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলো। সেখানে বেশ কিছু ভাঙচুর হয়েছে। ওই সময় পুকুরে ঝাঁপ দেয়ায় একজন মারা গেছেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই সহিংসতা সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতেই। এর মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে একটি মহল। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। অনেকের নাম জানা গেছে। খুব শীঘ্রই কারা এসব ঘটিয়েছে তা উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এমন নামও শুনবেন যারা আপনাদেরও পরিচিত। ‘মন্দিরে কোরআন রাখা কোন হিন্দুর কাজ নয়, যা আমি আগেও বলেছি। আমি দায়িত্ব নিয়ে, অভিজ্ঞতা নিয়েই বলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে। কারণ কোন হিন্দুর এই দুঃসাহস হবে না।’

এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বলপূর্বক রোহিঙ্গাদের যে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়া হলো, তার পেছনের কারণ আপনারা জানেন। আরসার (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) পেছনে কারা রয়েছে, তাও আপনারা জানেন। তবে আমরা চাই, রোহিঙ্গারা এখানে ভালো থাকুক। তারা দ্রুত তাদের দেশে ফিরে যাক।

‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১ লাখ লোক বসবাস করছে। এটা বাড়তে বাড়তে এখন শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ‘আরসা’র কিছু যুবক নিয়মিত ঘোরাঘুরি করছে। রোহিঙ্গা নেতারা সব সময় বলেছেন, ‘আমরা ফিরে যেতে চাই।’ হত্যা, মারামারি, দখল, আধিপত্য বিস্তার, তার ওপরে মাদক ব্যবসা, যেটা আমি সব সময় বলি। তারা বর্ডার পার হয়ে দুর্গম এলাকায় চলে যায়, আবার ফিরে আসে। এর ভাগাভাগি সব মিলিয়ে সেখানে একটা অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যার জন্য আমরা পুলিশ, র‌্যাব, আনসার পাঠিয়েছি। আর্মির ওয়াচে রেখেছি তাদের। তারপরেও বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে পায়ে হাঁটার রাস্তাগুলোতে সহিংসতা ঘটে। নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। যারা খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা তাদের আটকের চেষ্টা করছি। এখানে নানামুখী বিষয় রয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’ যারা পাঠিয়েছে তাদেরও ইন্ধন থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

বুধবার, ২৭ অক্টোবর ২০২১ , ১১ কার্তিক ১৪২৮ ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সাম্প্রদায়িক হামলার ইন্ধনদাতাদের নাম শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সম্প্রতি দুর্গোৎসবে কোরআন অবমাননার রেষে পূজামণ্ডব ও হিন্দুদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় ইন্ধনদাতাদের নাম শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। এখন পর্যন্ত সাম্প্রাদিক হামলার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় ১০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রংপুর ও নোয়াখালীর ঘটনায় যারা ইন্ধন দিয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করেছে গ্রেপ্তারকৃতরা।

গতকাল দুপুরে সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ দাবি করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। জবানবন্দিতে রংপুর ও নোয়াখালীর ঘটনায় ইন্ধনদাতাদের নাম বলেছে গ্রেপ্তারকৃতরা। তবে আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আপনাদের সামনে নাম প্রকাশ করবো। সেখানে বিএনপি-জামায়াত আছে কিনা সেটা এখনই বলতে চাচ্ছি না। নিশ্চিত হয়েই জানাতে চাই।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘কোরআন শরিফ রাখার পর আমরা এ ঘটনা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম, আমাদের পুলিশের সব পর্যায়ের টিম সেখানে পাঠিয়েছিলাম, যাতে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন হয়। আমরা দেখলাম, মসজিদের পাশে পুকুরের মাছ চাষি মসজিদের বারান্দায় একটা ক্যামেরা বসিয়েছেন। যেখানে পরিষ্কার দেখা গেছে, কেউ মসজিদ থেকে কোরআন নিয়ে হনুমানের গদার স্থানে রেখে গদা নিয়ে বেরিয়ে এলেন।’ ‘যখন এ ঘটনা সামনে চলে এলো, তখন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি, তার নাম প্রকাশ করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল জুমার নামাজের পর অসুবিধা হতে পারে। আমরা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বলেছিলাম, তার আগেই প্রতিমা বিসর্জন দেবেন এবং তারা তা করেছেন। আমাদের নামাজও ঠিকভাবে শেষ হলো। কিন্তু, দুই ভাগে বিতর্ক শুরু হলো। একপক্ষ পুলিশের সামনে হল্লা শুরু করলো। আরেক পক্ষ পুলিশকে ব্যস্ত রেখে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করলো। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলো। সেখানে বেশ কিছু ভাঙচুর হয়েছে। ওই সময় পুকুরে ঝাঁপ দেয়ায় একজন মারা গেছেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই সহিংসতা সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতেই। এর মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে একটি মহল। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। অনেকের নাম জানা গেছে। খুব শীঘ্রই কারা এসব ঘটিয়েছে তা উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এমন নামও শুনবেন যারা আপনাদেরও পরিচিত। ‘মন্দিরে কোরআন রাখা কোন হিন্দুর কাজ নয়, যা আমি আগেও বলেছি। আমি দায়িত্ব নিয়ে, অভিজ্ঞতা নিয়েই বলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে। কারণ কোন হিন্দুর এই দুঃসাহস হবে না।’

এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বলপূর্বক রোহিঙ্গাদের যে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়া হলো, তার পেছনের কারণ আপনারা জানেন। আরসার (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) পেছনে কারা রয়েছে, তাও আপনারা জানেন। তবে আমরা চাই, রোহিঙ্গারা এখানে ভালো থাকুক। তারা দ্রুত তাদের দেশে ফিরে যাক।

‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১ লাখ লোক বসবাস করছে। এটা বাড়তে বাড়তে এখন শেষ সীমানায় পৌঁছে গেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ‘আরসা’র কিছু যুবক নিয়মিত ঘোরাঘুরি করছে। রোহিঙ্গা নেতারা সব সময় বলেছেন, ‘আমরা ফিরে যেতে চাই।’ হত্যা, মারামারি, দখল, আধিপত্য বিস্তার, তার ওপরে মাদক ব্যবসা, যেটা আমি সব সময় বলি। তারা বর্ডার পার হয়ে দুর্গম এলাকায় চলে যায়, আবার ফিরে আসে। এর ভাগাভাগি সব মিলিয়ে সেখানে একটা অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যার জন্য আমরা পুলিশ, র‌্যাব, আনসার পাঠিয়েছি। আর্মির ওয়াচে রেখেছি তাদের। তারপরেও বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে পায়ে হাঁটার রাস্তাগুলোতে সহিংসতা ঘটে। নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে। যারা খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা তাদের আটকের চেষ্টা করছি। এখানে নানামুখী বিষয় রয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’ যারা পাঠিয়েছে তাদেরও ইন্ধন থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।