ইংলিশ চ্যালেঞ্জের সামনে টাইগাররা

টি-২০ বিশ্বকাপের মূলপর্বে বা দ্বিতীয় রাউন্ডে এখনও পর্যন্ত জয় পায়নি বাংলাদেশ দল। বহু কাক্সিক্ষত সেই জয়টা হাত ফস্কে গেছে শ্রীলঙ্কার কাছে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে। বলা ভালো, উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাসের অমার্জনীয় ক্যাচ মিসের কারণে জয় হাতছাড়া হয়। টি-২০ বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগাররা আবুধাবীর শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার সময়ে নিশ্চিতভাবেই চোখ থাকবে জয়ের দিকে। যদিও টি-২০ ফরম্যাটে এই মুহূর্তে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইংলিশদের বিপক্ষে কাজটা খুব সহজ হবে না।

বাংলাদেশের জন্য যেমন এই ম্যাচটা ‘প্রথম’ ইংল্যান্ডের জন্যও ঠিক তেমনি। টি-২০’র ১৫ বছরের ইতিহাসে টাইগাররা ১১৬টি ম্যাচ খেললেও কখনও যে ইংলিশদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি।

‘প্রথম’ মোকাবিলায় দুই দলের আত্মবিশ্বাসের লেভেলটা একেবারেই বিপরীত। বাংলাদেশ দল সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১৭১ রান করেও পরাজিত হয়েছে শ্রীলঙ্কার কাছে। অন্যদিকে সুপার টুয়েলভ পর্বে নিজেদের প্রথম গতবারের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাচে পরাজয়ের হিসেবটা কড়ায়-গণ্ডায় মিটিয়ে ছয় উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে ইংল্যান্ড।

আগে ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবিয়ান দলের টপ অর্ডারকে দুই ইংলিশ বোলার মঈন আলী ও টাইমাল মিলস ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার পর লেজের দিকের চার ব্যাটারকে মাত্র দুই রান খরচায় শিকার করেন আদিল রশীদ। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা তাদের টি-২০ ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৫৫ রানে অল আউট হয়ে যায়। এই স্কোর টি-২০ বিশ্বকাপে যে কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশের জন্য সর্বনিম্ন

জয়ের জন্য ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গত আসরের রানার্স-আপ দল চার ব্যাটারকে হারালেও, সেটা কন্ডিশন বুঝতে নিঃসন্দেহে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকবে। জেসন রয় ও জস বাটলারের ওপেনিং জুটি যে কোন বোলিং ডিপার্টমেন্টকে স্রেফ উড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। ডেভিড মালান, জনি বেয়ারস্টো, লিয়াম লিভিংস্টোন এবং অধিনায়ক এউইন মরগানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মিডল হয়ে উঠতে পারে প্রতিপক্ষ বোলারদের দুঃস্বপ্ন।

বাংলাদেশের ব্যাটাররা শারজার ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের মেলে ধরতে সক্ষম হলেও ইংলিশ বোলারদের হালকাভাবে দেখার কোন সুযোগই নেই। টাইগার ওপেনার নাঈম শেখ চলতি টুর্নামেন্টে দুটো হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি থিতু হয়ে গেলে দল তার কাছ থেকে দ্রুতলয়ে রান আশা করবে। আরেক ওপেনার লিটন কুমার দাসের ব্যাটে চলছে রানখরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটো ক্যাচ ফেলে দেয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে তার আত্মবিশ্বাসে বড় রকমের ধাক্কা দিয়েছে।

বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে আসলে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে মিডল অর্ডারের তিন অভিজ্ঞ ব্যাটার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের দিকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে তিন নম্বরে নেমে সাকিব আল হাসান বড় স্কোর গড়তে না পারলেও, যে কোন মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে তার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে হাঁকানো হাফ সেঞ্চুরিটা মুশফিককেও আত্মবিশ্বাসের রসদ যোগাবে। ওই হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসটা খেলেছেন তিনি দুই বছর পর।

এদিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ রান পেলেও, তার অধিনায়কত্ব নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। শ্রীলঙ্কার দুই বাঁ-হাতি ব্যাটারের বিপক্ষে তার নিজের ও আফিফ হোসেনের করা তিনটা ওভার নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ তো বটেই, পরের ম্যাচগুলোতেও এধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটলে আগেভাগেই দেশে ফেরার বিমানে উঠতে হবে টাইগারদের। কেননা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে উড়াল দেয়ার আগে অন্তত সেমিফাইনালে খেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন টাইগাররা।

তবে বৈশ্বিক এই আসরে ইংলিশদের বিপক্ষে টাইগারদের প্রেরণা হতে পারে ২০১৯ সালের ওডিআই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের আগে, ২০১১ এবং ২০১৫ সালের আসরে ইংলিশদের বিপক্ষে জয়।

বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিং কোচ ওটিস গিবসন অবশ্য দল নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেছেন, দলে রয়েছেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। ডেথ ওভারে সাইফুদ্দিন ভালো করছেন। এর সঙ্গে তাসকিন আহমেদ যোগ হলে সোনায় সোহাগা। বাঁ-হাতি বলের বৈচিত্র্যের জন্য শরিফুল তো আছেনই। কোচ, নির্বাচক এবং অধিনায়ক সেরা কম্বিনেশন নিয়েই একাদশ সাজাবেন।

তার কথাতেই বোঝা যায় যে, আবুধাবির পিচ পেস বোলারদের সহায়তা করতে পারে। যে কারণে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট নাসুম আহমেদের জায়গায় ফেরাতে পারেন তাসকিন আহমেদকে। এর বাইরে আর কোন পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। ফলে সৌম্য সরকার, শামীম হোসেন ও শরিফুল ইসলামকে সাইড বেঞ্চেই বসে থাকতে হবে।

বুধবার, ২৭ অক্টোবর ২০২১ , ১১ কার্তিক ১৪২৮ ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ইংলিশ চ্যালেঞ্জের সামনে টাইগাররা

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

গতকাল অনুশীলনে ঘাম ঝরানোর পর ক্লান্ত টাইগার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ মাঠেই বিশ্রাম নিচ্ছেন -বিসিবি

টি-২০ বিশ্বকাপের মূলপর্বে বা দ্বিতীয় রাউন্ডে এখনও পর্যন্ত জয় পায়নি বাংলাদেশ দল। বহু কাক্সিক্ষত সেই জয়টা হাত ফস্কে গেছে শ্রীলঙ্কার কাছে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে। বলা ভালো, উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান লিটন কুমার দাসের অমার্জনীয় ক্যাচ মিসের কারণে জয় হাতছাড়া হয়। টি-২০ বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগাররা আবুধাবীর শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার সময়ে নিশ্চিতভাবেই চোখ থাকবে জয়ের দিকে। যদিও টি-২০ ফরম্যাটে এই মুহূর্তে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইংলিশদের বিপক্ষে কাজটা খুব সহজ হবে না।

বাংলাদেশের জন্য যেমন এই ম্যাচটা ‘প্রথম’ ইংল্যান্ডের জন্যও ঠিক তেমনি। টি-২০’র ১৫ বছরের ইতিহাসে টাইগাররা ১১৬টি ম্যাচ খেললেও কখনও যে ইংলিশদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি।

‘প্রথম’ মোকাবিলায় দুই দলের আত্মবিশ্বাসের লেভেলটা একেবারেই বিপরীত। বাংলাদেশ দল সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১৭১ রান করেও পরাজিত হয়েছে শ্রীলঙ্কার কাছে। অন্যদিকে সুপার টুয়েলভ পর্বে নিজেদের প্রথম গতবারের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাচে পরাজয়ের হিসেবটা কড়ায়-গণ্ডায় মিটিয়ে ছয় উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে ইংল্যান্ড।

আগে ব্যাটিংয়ে নামা ক্যারিবিয়ান দলের টপ অর্ডারকে দুই ইংলিশ বোলার মঈন আলী ও টাইমাল মিলস ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার পর লেজের দিকের চার ব্যাটারকে মাত্র দুই রান খরচায় শিকার করেন আদিল রশীদ। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা তাদের টি-২০ ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৫৫ রানে অল আউট হয়ে যায়। এই স্কোর টি-২০ বিশ্বকাপে যে কোন টেস্ট খেলুড়ে দেশের জন্য সর্বনিম্ন

জয়ের জন্য ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গত আসরের রানার্স-আপ দল চার ব্যাটারকে হারালেও, সেটা কন্ডিশন বুঝতে নিঃসন্দেহে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকবে। জেসন রয় ও জস বাটলারের ওপেনিং জুটি যে কোন বোলিং ডিপার্টমেন্টকে স্রেফ উড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। ডেভিড মালান, জনি বেয়ারস্টো, লিয়াম লিভিংস্টোন এবং অধিনায়ক এউইন মরগানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মিডল হয়ে উঠতে পারে প্রতিপক্ষ বোলারদের দুঃস্বপ্ন।

বাংলাদেশের ব্যাটাররা শারজার ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের মেলে ধরতে সক্ষম হলেও ইংলিশ বোলারদের হালকাভাবে দেখার কোন সুযোগই নেই। টাইগার ওপেনার নাঈম শেখ চলতি টুর্নামেন্টে দুটো হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি থিতু হয়ে গেলে দল তার কাছ থেকে দ্রুতলয়ে রান আশা করবে। আরেক ওপেনার লিটন কুমার দাসের ব্যাটে চলছে রানখরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটো ক্যাচ ফেলে দেয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে তার আত্মবিশ্বাসে বড় রকমের ধাক্কা দিয়েছে।

বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে আসলে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে মিডল অর্ডারের তিন অভিজ্ঞ ব্যাটার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের দিকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে তিন নম্বরে নেমে সাকিব আল হাসান বড় স্কোর গড়তে না পারলেও, যে কোন মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে তার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে হাঁকানো হাফ সেঞ্চুরিটা মুশফিককেও আত্মবিশ্বাসের রসদ যোগাবে। ওই হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসটা খেলেছেন তিনি দুই বছর পর।

এদিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ রান পেলেও, তার অধিনায়কত্ব নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। শ্রীলঙ্কার দুই বাঁ-হাতি ব্যাটারের বিপক্ষে তার নিজের ও আফিফ হোসেনের করা তিনটা ওভার নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ তো বটেই, পরের ম্যাচগুলোতেও এধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটলে আগেভাগেই দেশে ফেরার বিমানে উঠতে হবে টাইগারদের। কেননা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে উড়াল দেয়ার আগে অন্তত সেমিফাইনালে খেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন টাইগাররা।

তবে বৈশ্বিক এই আসরে ইংলিশদের বিপক্ষে টাইগারদের প্রেরণা হতে পারে ২০১৯ সালের ওডিআই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের আগে, ২০১১ এবং ২০১৫ সালের আসরে ইংলিশদের বিপক্ষে জয়।

বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিং কোচ ওটিস গিবসন অবশ্য দল নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেছেন, দলে রয়েছেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। ডেথ ওভারে সাইফুদ্দিন ভালো করছেন। এর সঙ্গে তাসকিন আহমেদ যোগ হলে সোনায় সোহাগা। বাঁ-হাতি বলের বৈচিত্র্যের জন্য শরিফুল তো আছেনই। কোচ, নির্বাচক এবং অধিনায়ক সেরা কম্বিনেশন নিয়েই একাদশ সাজাবেন।

তার কথাতেই বোঝা যায় যে, আবুধাবির পিচ পেস বোলারদের সহায়তা করতে পারে। যে কারণে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট নাসুম আহমেদের জায়গায় ফেরাতে পারেন তাসকিন আহমেদকে। এর বাইরে আর কোন পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। ফলে সৌম্য সরকার, শামীম হোসেন ও শরিফুল ইসলামকে সাইড বেঞ্চেই বসে থাকতে হবে।