রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক করে নুরুর দলের আত্মপ্রকাশ

সাবেক গণফোরাম নেতা ড. রেজা কিবরিয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। দলটির নাম দেয়া হয়েছে ‘গণঅধিকার পরিষদ’।

আত্মপ্রকাশের দিনেই নুরের এই দলকে এবং এর সহযোগী সংগঠন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদকে ‘জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে দলটি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। একইসঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলায় মদদ দেয়ার অভিযোগ তুলে রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হককে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারা।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ‘গণঅধিকার পরিষদ’ নামের নতুন এই রাজনৈতিক দলটি আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দলের স্লোগান ঠিক করা হয়েছে ‘জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার।’

৮৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে রেজা কিবরিয়াকে। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান। আর দলীয় সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। এছাড়া যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়েছে ফারুক হাসান, সোহরাব হোসেন, আবু হানিফ ও মাহফুজুর রহমান খানকে।

গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ- এই চারটি বিষয়কে মূলনীতি ধরে ‘গণঅধিকার পরিষদ’ গঠন করা হয়েছে বলে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন নুরুল হক নুর। এছাড়া দলীয় ২১ দফাও প্রকাশ করা হয়েছে এ অনুষ্ঠানে।

এদিকে নুর ও রেজা কিবরিয়ার দলকে সমর্থন দিয়ে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তবে তিনি এ দলের কোন পদে থাকছেন না।

দল ঘোষণা করলেও দলের নিবন্ধন এখনও নেয়নি ‘গণঅধিকার পরিষদ’। তবে নিবন্ধনের সব নিয়ম মেনেই নিবন্ধনের আবেদন করা হবে এবং নিবন্ধন না পাওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন রেজা কিবরিয়া।

দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা জায়গা চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। যার কারণে এখানে ছোট পরিসরে করতে হচ্ছে। আমরা কাউকে এজন্য বলিনি। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে শুধু মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। নিরস্ত্র সভা সমাবেশ করার অধিকার এদেশের সংবিধান দিয়েছে। পুলিশের কাছে কিন্তু আমরা অনুমতি চাইনি। আমরা বাইরে একটা সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। যেখানে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে। আইনশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তার জন্য আমরা বলেছিলাম। সেটা তারা সহযোগিতা করেনি। এজন্য আমরা ছোট পরিসরে অনুষ্ঠান করছি।

নুর বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রাম করার জন্য কারও কাছে আমরা অনুমতি নেব না। আমরা সেই উত্থান দেখিয়েছি কোটা সংস্কার আন্দোলনে। ছাত্রসমাজের সঙ্গে কিন্তু আমরা বেইমানি করিনি। দাবি কিন্তু আদায় করছি। তাই আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে শুধু ছাত্রসমাজ না, নানা পেশার মানুষ এখানে আছে, তাদের মাধ্যমেই আগামী দিনে মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করতে পারবো।’

অন্য দলের সঙ্গে জোট গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন মেনে যারা রাজনীতি করতে পারে, বর্তমান সংকটে যারা রাজনীতির মাঠে লড়াই সংগ্রাম করতে প্রস্তুত, তাদের সঙ্গে নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে জোটগত আন্দোলন হতে পারে। কারণ, এই দায়িত্ব আমাদের একার না, আর আমরা একা পারবো না। সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’

দল ঘোষণার পর পল্টন এলাকায় মিছিল করেন ‘গণঅধিকার পরিষদ’-এর সমর্থক ও বিভিন্ন কমিটির নেতাকর্মীরা।

এদিকে আত্মপ্রকাশের দিনেই নুরের এই দলকে এবং এর সহযোগী সংগঠন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদকে ‘জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে দলটি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ

গতকাল দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে এই অবরোধ। অবরোধের কারণে শাহবাগ থেকে পল্টন, বাংলামোটর, সায়েন্স ল্যাব ও টিএসসি অভিমুখী মূল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

এ সময় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকরা দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলার মদদদাতা। তারা বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। এরা জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য মাঠে নেমেছেন। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। তাদের সাম্প্রদায়িক সংগঠন দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকের প্রত্যক্ষ মদদে বিজয়া দশমীর দিনে চট্টগ্রামের জে এম সেন পূজাম-পে হামলা চালিয়ে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে উসকে দিয়েছিল। এ ঘটনায় সুস্পষ্ট প্রমাণসহ নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় পূজাম-পে হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন

গণঅধিকার পরিষদ এবং ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদকে নিষিদ্ধ করাসহ হামলার মদদদাতা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক গংদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’

বুধবার, ২৭ অক্টোবর ২০২১ , ১১ কার্তিক ১৪২৮ ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক করে নুরুর দলের আত্মপ্রকাশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সাবেক গণফোরাম নেতা ড. রেজা কিবরিয়া এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। দলটির নাম দেয়া হয়েছে ‘গণঅধিকার পরিষদ’।

আত্মপ্রকাশের দিনেই নুরের এই দলকে এবং এর সহযোগী সংগঠন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদকে ‘জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে দলটি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। একইসঙ্গে সাম্প্রদায়িক হামলায় মদদ দেয়ার অভিযোগ তুলে রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হককে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারা।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ‘গণঅধিকার পরিষদ’ নামের নতুন এই রাজনৈতিক দলটি আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দলের স্লোগান ঠিক করা হয়েছে ‘জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার।’

৮৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে রেজা কিবরিয়াকে। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান। আর দলীয় সদস্য সচিব নুরুল হক নুর। এছাড়া যুগ্ম-আহ্বায়ক করা হয়েছে ফারুক হাসান, সোহরাব হোসেন, আবু হানিফ ও মাহফুজুর রহমান খানকে।

গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ- এই চারটি বিষয়কে মূলনীতি ধরে ‘গণঅধিকার পরিষদ’ গঠন করা হয়েছে বলে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন নুরুল হক নুর। এছাড়া দলীয় ২১ দফাও প্রকাশ করা হয়েছে এ অনুষ্ঠানে।

এদিকে নুর ও রেজা কিবরিয়ার দলকে সমর্থন দিয়ে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তবে তিনি এ দলের কোন পদে থাকছেন না।

দল ঘোষণা করলেও দলের নিবন্ধন এখনও নেয়নি ‘গণঅধিকার পরিষদ’। তবে নিবন্ধনের সব নিয়ম মেনেই নিবন্ধনের আবেদন করা হবে এবং নিবন্ধন না পাওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন রেজা কিবরিয়া।

দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা জায়গা চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। যার কারণে এখানে ছোট পরিসরে করতে হচ্ছে। আমরা কাউকে এজন্য বলিনি। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে শুধু মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। নিরস্ত্র সভা সমাবেশ করার অধিকার এদেশের সংবিধান দিয়েছে। পুলিশের কাছে কিন্তু আমরা অনুমতি চাইনি। আমরা বাইরে একটা সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। যেখানে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে। আইনশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তার জন্য আমরা বলেছিলাম। সেটা তারা সহযোগিতা করেনি। এজন্য আমরা ছোট পরিসরে অনুষ্ঠান করছি।

নুর বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রাম করার জন্য কারও কাছে আমরা অনুমতি নেব না। আমরা সেই উত্থান দেখিয়েছি কোটা সংস্কার আন্দোলনে। ছাত্রসমাজের সঙ্গে কিন্তু আমরা বেইমানি করিনি। দাবি কিন্তু আদায় করছি। তাই আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে শুধু ছাত্রসমাজ না, নানা পেশার মানুষ এখানে আছে, তাদের মাধ্যমেই আগামী দিনে মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করতে পারবো।’

অন্য দলের সঙ্গে জোট গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন মেনে যারা রাজনীতি করতে পারে, বর্তমান সংকটে যারা রাজনীতির মাঠে লড়াই সংগ্রাম করতে প্রস্তুত, তাদের সঙ্গে নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে জোটগত আন্দোলন হতে পারে। কারণ, এই দায়িত্ব আমাদের একার না, আর আমরা একা পারবো না। সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’

দল ঘোষণার পর পল্টন এলাকায় মিছিল করেন ‘গণঅধিকার পরিষদ’-এর সমর্থক ও বিভিন্ন কমিটির নেতাকর্মীরা।

এদিকে আত্মপ্রকাশের দিনেই নুরের এই দলকে এবং এর সহযোগী সংগঠন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদকে ‘জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দিয়ে দলটি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ

গতকাল দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে এই অবরোধ। অবরোধের কারণে শাহবাগ থেকে পল্টন, বাংলামোটর, সায়েন্স ল্যাব ও টিএসসি অভিমুখী মূল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

এ সময় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকরা দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলার মদদদাতা। তারা বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। এরা জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য মাঠে নেমেছেন। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। তাদের সাম্প্রদায়িক সংগঠন দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকের প্রত্যক্ষ মদদে বিজয়া দশমীর দিনে চট্টগ্রামের জে এম সেন পূজাম-পে হামলা চালিয়ে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে উসকে দিয়েছিল। এ ঘটনায় সুস্পষ্ট প্রমাণসহ নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় পূজাম-পে হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন

গণঅধিকার পরিষদ এবং ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদকে নিষিদ্ধ করাসহ হামলার মদদদাতা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক গংদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’