স্ত্রীকে নির্যাতন না করার শর্তে স্বামীর চাকরি ফেরানোর আদেশ

দু’জনের মধ্যে আপস-রফার পর স্ত্রীকে নির্যাতন না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত স্বামী তরিকুল ইসলামের চাকরি ফেরানোর আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তবে পুনরায় নির্যাতন করলে চাকরি হারাতে হবে বলেও স্বামীর প্রতি মন্তব্য করেছেন আদালত।

আপিল বিভাগ আদেশে বলেছেন, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বামী ও স্ত্রী আদালতকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তারা সুখী দাম্পত্য জীবনযাপন করবেন। একইসঙ্গে কোর্টের নির্দেশমতো স্বামী-স্ত্রীকে এক টুকরো জমি লিখে দিয়েছেন। দুজনের সমঝোতার কারণে স্বামীর চাকরি ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো।

যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে ফায়ারম্যান স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন স্ত্রী। রাজশাহীর নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রায়ে স্বামীর সাজা হয় এবং তিনি তার চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্ট স্বামীকে খালাস দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। অন্যদিকে স্বামী মামলা খারিজ চেয়ে আপিল বিভাগে একটি ‘কম্প্রোমাইজ এপ্লিকেশন’ করেন। গতকাল আপিল বিভাগে নির্ধারিত শুনানিতে আদালত স্বামীকে বলেন, আপোষ-মীমাংসার কথা বলছেন কিন্তু এখান থেকে গিয়ে আবার যে মারপিট করবেন না, তার কি গ্যারান্টি আছে? জবাবে স্বামী বলেন, আমি আর নির্যাতন করবো না। তবে স্যার, এক হাতে তো আর তালি বাজে না। আদালত স্ত্রীর কথা শুনতে চাইলে তিনি বলেন, আমার একটা সন্তান আছে, আমি চেয়েছিলাম আমার স্বামী কিছু না করুক কিন্তু আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করুক। কিন্তু সে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতো। এখন সে যেহেতু বলেছে এবারের মতো মাফ করতে, আর ওইরকম আচরণ করবে না। তাই সন্তনটার চিন্তাটা করে এই (আপোষের) সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।

আদালত সেসময় ওই স্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, এই মামলা যদি খারিজ বা নিষ্পত্তি হয়ে যায়, আর তারপর যদি তার স্বামী দুর্ব্যবহার করে তখন কি করবেন? এর জবাবে ওই স্ত্রী বলেন, সেটা হলে তো নসিব, এক্ষেত্রে বিশ্বাস করা ছাড়া আমার আর কিছু করার নাই। আমি আমার ছেলের বাবাকে ধরে থাকতে চাই বাঁচা অব্দি। এরপর আদালত ওই স্বামীকে বলেন, আপনার স্ত্রী যেহেতু শিক্ষিত এবং আইনে পড়া, তাই উনি যদি চাকরি করতে চায় বা ওকালতি করতে চায় তা করতে দিবেন তো? জবাব সম্মতিসূচক হওয়াতে স্বামীকে এ সময় আদালত বলেন, ওনাকে (স্ত্রীকে) দুর্বল মনে করবেন না। আমরা চাই সংসারটা টিকুক। দুজনে দুজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন।

বুধবার, ২৭ অক্টোবর ২০২১ , ১১ কার্তিক ১৪২৮ ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

স্ত্রীকে নির্যাতন না করার শর্তে স্বামীর চাকরি ফেরানোর আদেশ

আদালত বার্তা পরিবেশক

দু’জনের মধ্যে আপস-রফার পর স্ত্রীকে নির্যাতন না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত স্বামী তরিকুল ইসলামের চাকরি ফেরানোর আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তবে পুনরায় নির্যাতন করলে চাকরি হারাতে হবে বলেও স্বামীর প্রতি মন্তব্য করেছেন আদালত।

আপিল বিভাগ আদেশে বলেছেন, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বামী ও স্ত্রী আদালতকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তারা সুখী দাম্পত্য জীবনযাপন করবেন। একইসঙ্গে কোর্টের নির্দেশমতো স্বামী-স্ত্রীকে এক টুকরো জমি লিখে দিয়েছেন। দুজনের সমঝোতার কারণে স্বামীর চাকরি ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো।

যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে ফায়ারম্যান স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন স্ত্রী। রাজশাহীর নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রায়ে স্বামীর সাজা হয় এবং তিনি তার চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্ট স্বামীকে খালাস দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। অন্যদিকে স্বামী মামলা খারিজ চেয়ে আপিল বিভাগে একটি ‘কম্প্রোমাইজ এপ্লিকেশন’ করেন। গতকাল আপিল বিভাগে নির্ধারিত শুনানিতে আদালত স্বামীকে বলেন, আপোষ-মীমাংসার কথা বলছেন কিন্তু এখান থেকে গিয়ে আবার যে মারপিট করবেন না, তার কি গ্যারান্টি আছে? জবাবে স্বামী বলেন, আমি আর নির্যাতন করবো না। তবে স্যার, এক হাতে তো আর তালি বাজে না। আদালত স্ত্রীর কথা শুনতে চাইলে তিনি বলেন, আমার একটা সন্তান আছে, আমি চেয়েছিলাম আমার স্বামী কিছু না করুক কিন্তু আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করুক। কিন্তু সে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতো। এখন সে যেহেতু বলেছে এবারের মতো মাফ করতে, আর ওইরকম আচরণ করবে না। তাই সন্তনটার চিন্তাটা করে এই (আপোষের) সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।

আদালত সেসময় ওই স্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, এই মামলা যদি খারিজ বা নিষ্পত্তি হয়ে যায়, আর তারপর যদি তার স্বামী দুর্ব্যবহার করে তখন কি করবেন? এর জবাবে ওই স্ত্রী বলেন, সেটা হলে তো নসিব, এক্ষেত্রে বিশ্বাস করা ছাড়া আমার আর কিছু করার নাই। আমি আমার ছেলের বাবাকে ধরে থাকতে চাই বাঁচা অব্দি। এরপর আদালত ওই স্বামীকে বলেন, আপনার স্ত্রী যেহেতু শিক্ষিত এবং আইনে পড়া, তাই উনি যদি চাকরি করতে চায় বা ওকালতি করতে চায় তা করতে দিবেন তো? জবাব সম্মতিসূচক হওয়াতে স্বামীকে এ সময় আদালত বলেন, ওনাকে (স্ত্রীকে) দুর্বল মনে করবেন না। আমরা চাই সংসারটা টিকুক। দুজনে দুজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন।