‘হামরা ত্রাণ চাই না পাকাপুক্ত বাঁধ দেন’

হামরা ত্রাণ চাই না। হামাক পাকাপুক্ত বাঁধ দেন। বন্যার পানিত বাড়িঘর যেন না ডুবি নায়। জমিজমা যেন ভাঙ্গনের চলি না যায়। যাতে হামরা সন্তানদের নিয়া নিরাপদে থাইকপার পাই। আবাদ-সুবাদ যেন নষ্ট না হয়। বন্যার পানিত মোর ঘরে অনেক কষ্টে সঞ্চিত প্রায় দেড় লাখ টাকা, একটা মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, খাটসহ সউগ তিস্তা নিয়া গেইচে। মোর মতো তিস্তা পাড়ের আরও অনেকের বাড়িসহ সবকিছু নদীর পেটোত গেইছে।

সরেজমিনে আদিতমারি উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় এলাকায় গিয়ে আকস্মিক বন্যায় তিস্তার তীব্র ¯্রােতে বাড়িঘর হারানো নাজমুল হোসেনের (৫৫) সাথে কথা হলে কান্নাজরিত কণ্ঠে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় কথা হয় আবুল কাশেম, মিঠুল, ফজলু হক, মালেক মিয়া, মতিন মিয়া, পেয়ারুল, সুজা মিয়াসহ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের সাথে।

তারা জানান, অনেক কষ্টের গোছানো সংসার হামার তছনছ করে দেচে তিস্তা। যে জমি কষ্ট করে কিনেচি সেই জমির দলিলও হারায় গেছে। বন্যার পানিত হামার খালি বাড়িঘরেই তলায় নাই, হামার আলু, ধান, শাক-সবজি খেত সউগ শেষ হওয়া গেইচে।

মেলা টাকা হামার ক্ষতি হইচে। তারা আরও বলেন, আইজ পাকাপুক্ত বাঁধ থাকলে হামাক গুলাক পতোত বইসপের নাগিননে হয়। আইজ হামার থাইকপার জাগা নাই, পেটোত ভাত নাই। সবকিছু হারায়া কতগুলা মানুষত এটে থাকি কানতে কানতে চলি গেলো। হামরা বন্যার পানিত হাবুডুবু খাই তকনেসিন সরকার আইসে, মন্ত্রী আইনে। অল্পে একনা ত্রাণ দিয়া, অনেক মিষ্টি মিষ্টি কতা কয়া যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিচুই করে না। তাও ভালো হামার চেয়ারম্যান সরকারের কাচোত হামার কতা সউগসময় কয়। কোমর পানিত নামিয়া হামার চেয়ারম্যান হামারগুলার খোঁজ নেয়।

সাংবাদিকরা টিপিতো হামার দুঃখের কতা কয়। কিন্তু বন্যাত হামার সউগ কিচু শেষ হয়া যাবার পর সরকার অল্পেকনা ত্রাণ দেয়, তা নিয়া কি করি হামরা। হামাক ত্রাণ না দিয়া সরকার যদি একনা পাকাপুক্ত বাঁধ তৈরি করি দেইল হয়, তাহইলে হামরা হাজার হাজার মানুষ সরকারের জন্য দোয়া করনো হয়।

সূত্র মতে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে আকস্মিক বন্যার পানির কমে গেলেও দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। ইতোমধ্যে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য তিস্তাপাড়ের ২ হাজার পরিবার অন্যত্র চলে গেছে।

বন্যায় শুধুমাত্র মহিষখোচা ইউনিয়নেরই ৭টি ওয়ার্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জেলার গড্ডিমারি ,সিন্দুর্না, সিঙ্গিমারি ও কাকিনা, ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ২৪ ঘন্টার ওই বন্যায়। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, এক দিনের আকষ্মিক বন্যায় জেলার ১৬টি ইউনিয়নের ৭ শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনরোধে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১ , ১২ কার্তিক ১৪২৮ ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

‘হামরা ত্রাণ চাই না পাকাপুক্ত বাঁধ দেন’

জেলা বার্তা পরিবেশক, লালমনিরহাট

image

হামরা ত্রাণ চাই না। হামাক পাকাপুক্ত বাঁধ দেন। বন্যার পানিত বাড়িঘর যেন না ডুবি নায়। জমিজমা যেন ভাঙ্গনের চলি না যায়। যাতে হামরা সন্তানদের নিয়া নিরাপদে থাইকপার পাই। আবাদ-সুবাদ যেন নষ্ট না হয়। বন্যার পানিত মোর ঘরে অনেক কষ্টে সঞ্চিত প্রায় দেড় লাখ টাকা, একটা মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, খাটসহ সউগ তিস্তা নিয়া গেইচে। মোর মতো তিস্তা পাড়ের আরও অনেকের বাড়িসহ সবকিছু নদীর পেটোত গেইছে।

সরেজমিনে আদিতমারি উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় এলাকায় গিয়ে আকস্মিক বন্যায় তিস্তার তীব্র ¯্রােতে বাড়িঘর হারানো নাজমুল হোসেনের (৫৫) সাথে কথা হলে কান্নাজরিত কণ্ঠে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় কথা হয় আবুল কাশেম, মিঠুল, ফজলু হক, মালেক মিয়া, মতিন মিয়া, পেয়ারুল, সুজা মিয়াসহ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের সাথে।

তারা জানান, অনেক কষ্টের গোছানো সংসার হামার তছনছ করে দেচে তিস্তা। যে জমি কষ্ট করে কিনেচি সেই জমির দলিলও হারায় গেছে। বন্যার পানিত হামার খালি বাড়িঘরেই তলায় নাই, হামার আলু, ধান, শাক-সবজি খেত সউগ শেষ হওয়া গেইচে।

মেলা টাকা হামার ক্ষতি হইচে। তারা আরও বলেন, আইজ পাকাপুক্ত বাঁধ থাকলে হামাক গুলাক পতোত বইসপের নাগিননে হয়। আইজ হামার থাইকপার জাগা নাই, পেটোত ভাত নাই। সবকিছু হারায়া কতগুলা মানুষত এটে থাকি কানতে কানতে চলি গেলো। হামরা বন্যার পানিত হাবুডুবু খাই তকনেসিন সরকার আইসে, মন্ত্রী আইনে। অল্পে একনা ত্রাণ দিয়া, অনেক মিষ্টি মিষ্টি কতা কয়া যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিচুই করে না। তাও ভালো হামার চেয়ারম্যান সরকারের কাচোত হামার কতা সউগসময় কয়। কোমর পানিত নামিয়া হামার চেয়ারম্যান হামারগুলার খোঁজ নেয়।

সাংবাদিকরা টিপিতো হামার দুঃখের কতা কয়। কিন্তু বন্যাত হামার সউগ কিচু শেষ হয়া যাবার পর সরকার অল্পেকনা ত্রাণ দেয়, তা নিয়া কি করি হামরা। হামাক ত্রাণ না দিয়া সরকার যদি একনা পাকাপুক্ত বাঁধ তৈরি করি দেইল হয়, তাহইলে হামরা হাজার হাজার মানুষ সরকারের জন্য দোয়া করনো হয়।

সূত্র মতে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে আকস্মিক বন্যার পানির কমে গেলেও দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। ইতোমধ্যে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য তিস্তাপাড়ের ২ হাজার পরিবার অন্যত্র চলে গেছে।

বন্যায় শুধুমাত্র মহিষখোচা ইউনিয়নেরই ৭টি ওয়ার্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জেলার গড্ডিমারি ,সিন্দুর্না, সিঙ্গিমারি ও কাকিনা, ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ২৪ ঘন্টার ওই বন্যায়। লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, এক দিনের আকষ্মিক বন্যায় জেলার ১৬টি ইউনিয়নের ৭ শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনরোধে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।