মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি দিয়ে চলছে সার্ভিস

১৪ টি ফেরির বয়স ৪০ বছরের বেশি

মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি দিয়ে চলছে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) গাড়ি পারাপার। ঢাকা-মানিকগঞ্জ মহাসড়কে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে কাত হয়ে ডুবে যাওয়া আমানত শাহ বড় ফেরিটি ১৯৮০ সালে ডেনমার্ক থেকে আনা হয়।

সে হিসেবে ফেরিটির বয়স হবে ৪০ বছর। অথচ ফেরিটির আয়ুষ্কাল ছিল ২৫ বছর। ২০০৫ সালে এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে ফেরি মেরামত করে পুনর্বাসন করে আরও ১০ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাও ২০২০ সালে শেষ হয়ে গেছে বলে ডিআইডব্লিউটিসির সূত্র জানায়।

গতকাল সকালে ১৭টি ট্রাক ও কিছু ছোট যানবাহন নিয়ে বিআইডব্লিউটিসির রো রো ফেরি আমানত শাহ পদ্মা নদী পার হয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে পৌঁছানোর পরপরই সেটি কাত হয়ে নদীতে উল্টে যায়। মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনেক পুরাতন হওয়ার কারণে ফেরি ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনি। তাই যানবাহনের ভারে এক পাশ কাত হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মাঝনদীতেই ফেরীতে পানি উঠতে থাকায় ফেরির গতি বাড়িয়ে অতিদ্রুত পাটুরিয়া পাঁচ নম্বর ঘাটে ভিড়ে যায় ফেরিটি। তাড়াহুড়োর সময় পুরাতন ফেরিটির তলা ফেটে তীব্র গতিতে পানি উঠতে থাকে। এ সময় তাড়াহুড়ো করে ট্রাক আনলোড করতে গিয়ে ফেরি কর্তৃপক্ষ ফেরিটি পন্টুনের সঙ্গে বাঁধতেই ভুলে যায়। এতে মাত্র দুটি ট্রাক ফেরির পূর্ব দিক থেকে নামলেই ফেরিটি পশ্চিম দিকে ভারী হয়ে যায় এবং পশ্চিম দিকেই কাত হয়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার সময় ফেরিটিতে থাকা ট্রাকগুলো একটি আরেকটির ওপর ছিটকে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায়। ফেরিটি অনেক পুরাতন হওয়ায় তলা ফেটে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘১৯৮০ সালে ডেনমার্ক সরকার এই ফেরিটি অনুদান দিয়েছিল। ৪০ বছর হলেও এই ফেরির সার্ভিস অনেক ভালো ছিল। তবে কি কারণে কাত হয়ে গেছে তা তদন্ত করে বের করা হবে।’ এ জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিআইডব্লিউটিসির সূত্র জানায়, বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে চলাচলকারী বেশিরভাগ ফেরির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই। গত সাত বছর ধরে ফিটনেস সনদ ছাড়াই চলছিল এ ফেরিগুলো। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকায় বিআইডব্লিউটিসির ১৮টি রো রো ফেরি সবগুলো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে চলাচল করছিল।

এ সব ফেরির রয়েছে নানা কারিগরি ত্রুটি। অনেক ফেরিতে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল স্টিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও দুর্ঘটনার সময় মেকানিক্যাল স্টিয়ারিং অকার্যকর। বেশিরভাগ ফেরি ১৯৮০ সালে তৈরি করা হয়েছে। তাই ১৮টি রো রো ফেরির ১৪টিরই ফিটনেস সনদ নেই। বেশিরভাগ ফেরিতে নেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি। অনেক ফেরির বয়স ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী ৪০ বছরের বেশি বয়সী নৌযানের ফিটনেস সনদ দেয় না বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদপ্তর।

ফেরি শাহ মখদুম ১৯৮৫ সালে তৈরি করা হয়। ওই হিসেবে ফেরির বয়স ৩৬ বছর। ওই ফেরির ৫০০ হর্সপাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইঞ্জিন ও ঘণ্টায় প্রায় ১৯ কিলোমিটার বেগে চলার কথা। রো রো ফেরি শাহজালাল তৈরি করা হয়েছে ১৯৮০ সালে। এ ফেরিতে ৫০০ হর্সপাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইঞ্জিন ও ঘণ্টায় প্রায় ১৯ কিলোমিটার গতিতে চলার কথা।

রো রো ফেরি ও বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ফেরির একই সমান শক্তিসম্পন্ন দুটি ইঞ্জিন রয়েছে। এটির গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৯ কিলোমিটার। ফেরি কাকলী তৈরি করা হয় ১৯৭৪ সালে। এ ফেরিটির বয়স ৪৭ বছর। নেই ফিটনেস সনদ। এছাড়া ডাম্প ফেরি থোবাল ১৯৩৮ সালে, ফেরি রায়পুরা, রানীক্ষেত ও রানীগঞ্জ ১৯২৫ সালে তৈরি করা হয়। এগুলোরও ফিটনেস সনদ নেই।

বর্তমানে বিআইডব্লিউটিসির বহরে থাকা ৫৩টি ফেরির অনেকগুলোই ৪০ বছরের বেশি পুরাতন। ফেরিগুলো আন্তর্জাতিক ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়। বিধায় অনেক মজবুত এবং ৪০ বছর পরও ফেরি পরিচালনা করা যায়। তবে মিঠা পানিতে চলাচলের কারণে তেমন সমস্যা হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১ , ১২ কার্তিক ১৪২৮ ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি দিয়ে চলছে সার্ভিস

১৪ টি ফেরির বয়স ৪০ বছরের বেশি

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় গতকাল সকালে বেশ কয়েকটি যানবাহনসহ পদ্মায় উল্টে যায় ফেরি -সংবাদ

মেয়াদোত্তীর্ণ ফেরি দিয়ে চলছে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) গাড়ি পারাপার। ঢাকা-মানিকগঞ্জ মহাসড়কে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে কাত হয়ে ডুবে যাওয়া আমানত শাহ বড় ফেরিটি ১৯৮০ সালে ডেনমার্ক থেকে আনা হয়।

সে হিসেবে ফেরিটির বয়স হবে ৪০ বছর। অথচ ফেরিটির আয়ুষ্কাল ছিল ২৫ বছর। ২০০৫ সালে এর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১০ সালে ফেরি মেরামত করে পুনর্বাসন করে আরও ১০ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। তাও ২০২০ সালে শেষ হয়ে গেছে বলে ডিআইডব্লিউটিসির সূত্র জানায়।

গতকাল সকালে ১৭টি ট্রাক ও কিছু ছোট যানবাহন নিয়ে বিআইডব্লিউটিসির রো রো ফেরি আমানত শাহ পদ্মা নদী পার হয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে পৌঁছানোর পরপরই সেটি কাত হয়ে নদীতে উল্টে যায়। মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনেক পুরাতন হওয়ার কারণে ফেরি ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনি। তাই যানবাহনের ভারে এক পাশ কাত হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মাঝনদীতেই ফেরীতে পানি উঠতে থাকায় ফেরির গতি বাড়িয়ে অতিদ্রুত পাটুরিয়া পাঁচ নম্বর ঘাটে ভিড়ে যায় ফেরিটি। তাড়াহুড়োর সময় পুরাতন ফেরিটির তলা ফেটে তীব্র গতিতে পানি উঠতে থাকে। এ সময় তাড়াহুড়ো করে ট্রাক আনলোড করতে গিয়ে ফেরি কর্তৃপক্ষ ফেরিটি পন্টুনের সঙ্গে বাঁধতেই ভুলে যায়। এতে মাত্র দুটি ট্রাক ফেরির পূর্ব দিক থেকে নামলেই ফেরিটি পশ্চিম দিকে ভারী হয়ে যায় এবং পশ্চিম দিকেই কাত হয়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার সময় ফেরিটিতে থাকা ট্রাকগুলো একটি আরেকটির ওপর ছিটকে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায়। ফেরিটি অনেক পুরাতন হওয়ায় তলা ফেটে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানায়।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘১৯৮০ সালে ডেনমার্ক সরকার এই ফেরিটি অনুদান দিয়েছিল। ৪০ বছর হলেও এই ফেরির সার্ভিস অনেক ভালো ছিল। তবে কি কারণে কাত হয়ে গেছে তা তদন্ত করে বের করা হবে।’ এ জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিআইডব্লিউটিসির সূত্র জানায়, বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে চলাচলকারী বেশিরভাগ ফেরির ফিটনেস সনদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই। গত সাত বছর ধরে ফিটনেস সনদ ছাড়াই চলছিল এ ফেরিগুলো। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকায় বিআইডব্লিউটিসির ১৮টি রো রো ফেরি সবগুলো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে চলাচল করছিল।

এ সব ফেরির রয়েছে নানা কারিগরি ত্রুটি। অনেক ফেরিতে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল স্টিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও দুর্ঘটনার সময় মেকানিক্যাল স্টিয়ারিং অকার্যকর। বেশিরভাগ ফেরি ১৯৮০ সালে তৈরি করা হয়েছে। তাই ১৮টি রো রো ফেরির ১৪টিরই ফিটনেস সনদ নেই। বেশিরভাগ ফেরিতে নেই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি। অনেক ফেরির বয়স ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী ৪০ বছরের বেশি বয়সী নৌযানের ফিটনেস সনদ দেয় না বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদপ্তর।

ফেরি শাহ মখদুম ১৯৮৫ সালে তৈরি করা হয়। ওই হিসেবে ফেরির বয়স ৩৬ বছর। ওই ফেরির ৫০০ হর্সপাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইঞ্জিন ও ঘণ্টায় প্রায় ১৯ কিলোমিটার বেগে চলার কথা। রো রো ফেরি শাহজালাল তৈরি করা হয়েছে ১৯৮০ সালে। এ ফেরিতে ৫০০ হর্সপাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ইঞ্জিন ও ঘণ্টায় প্রায় ১৯ কিলোমিটার গতিতে চলার কথা।

রো রো ফেরি ও বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ফেরির একই সমান শক্তিসম্পন্ন দুটি ইঞ্জিন রয়েছে। এটির গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ১৯ কিলোমিটার। ফেরি কাকলী তৈরি করা হয় ১৯৭৪ সালে। এ ফেরিটির বয়স ৪৭ বছর। নেই ফিটনেস সনদ। এছাড়া ডাম্প ফেরি থোবাল ১৯৩৮ সালে, ফেরি রায়পুরা, রানীক্ষেত ও রানীগঞ্জ ১৯২৫ সালে তৈরি করা হয়। এগুলোরও ফিটনেস সনদ নেই।

বর্তমানে বিআইডব্লিউটিসির বহরে থাকা ৫৩টি ফেরির অনেকগুলোই ৪০ বছরের বেশি পুরাতন। ফেরিগুলো আন্তর্জাতিক ক্লাসিফিকেশন সোসাইটির তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়। বিধায় অনেক মজবুত এবং ৪০ বছর পরও ফেরি পরিচালনা করা যায়। তবে মিঠা পানিতে চলাচলের কারণে তেমন সমস্যা হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।