ইংলিশদের দাপটে পাত্তাই পেল না টাইগাররা

টি-২০ ফরম্যাটে কখনও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠেই নামেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দুই দলের প্রথম মোকাবিলায় টাইগারদের কাছ থেকে ‘ভালো’ কিছু প্রত্যাশা ছিল ভক্তদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিয়ে আবারও হতাশ করেছে বাংলাদেশ দল। সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে পরাজয়ের পর ইংল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশ দল পরাজিত হয়েছে ৮ উইকেটে।

আবুধাবীর শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের পিচ শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মতোই স্পিনবান্ধব। এই উইকেটে ইংলিশ স্পিন বা পেস কোনটাই ঠিকমতো সামাল দিতে পারেনি টাইগার ব্যাটাররা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা টাইগার ব্যাটারদের ইনিংসের শুরু থেকেই এলোমেলো শটে উইকেট ‘বিসর্জন’ দেয়াটা ছিল দৃষ্টিকটূ। যার প্রতিফলন ঘটেছে স্কোরকার্ডে, ৯ উইকেটে ওঠে মাত্র ১২৪ রান। অন্যদিকে বাংলাদেশের বোলারদের কোন পাত্তা না দিয়ে এই রান টপকাতে ইংলিশরা ব্যবহার করে মাত্র ১৪ ওভার ১ বল, আর হারায় ২ জন ব্যাটারকে। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ছয় উইকেটে জয়ের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ড পায় আট উইকেটের জয়। আর ইংলিশদের টানা দুই জয়ের পর সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের একাউন্টে জমা হয় টানা দুটো পরাজয়।

আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের ম্যাচে একাদশে একটি পরিবর্তন নিয়ে নিয়ে মাঠে নেমেছিল টাইগাররা। ইনজুরিতে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়া সাইফুদ্দিনের পরিবর্তে সুযোগ পান পেসার শরিফুল।

ব্যাট হাতে ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে ইংল্যান্ডের স্পিনার মঈন আলিকে সীমানাছাড়া করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে দুটো ক্যাচ ছাড়ার প্রায়শ্চিত্ত করার ইংগিত দিয়েছিলেন ওপেনার লিটন দাস। কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মঈন আলিকে সুইপ শটে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে লিয়াম লিভিংস্টোনকে ক্যাচ দিয়ে থেমে যান ৮ বলে ৯ রান করা এই ওপেনার, ব্যর্থতার বৃত্তেই আটকে যান তিনি।

একই ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটনের আউটের পর অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে মিড-অনে ক্যাচ দেন ৭ বলে ৫ রান করা আরেক ওপেনার নাঈম শেখ।

মাত্র ১৪ রানেই দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ক্রিজে থাকা অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার সাকিব ও মুশফিক দলকে প্রাথমিক বিপদ থেকে টেনে তোলার চেষ্টা চালালেও তা ব্যর্থ হয়। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে পেসার ক্রিস ওকসের বলে শর্ট ফাইন লেগে আদিল রশিদের তালুবন্দী হয়ে ৭ বলে ৪ রান করা সাকিব প্যাভিলিয়নে ফেরেন।

দলীয় ২৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো টাইগারদের বড় স্কোর গড়ার পথে তখন মুশফিকের সঙ্গী হন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। পাওয়ার প্লে’তে ২৭ রানে তিন উইকেট হারানো টাইগারদের স্কোর দশ ওভার শেষে দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬০ রান। বাংলাদেশের বড় স্কোর গড়ার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ান অনিয়মিত স্পিনার লিভিংস্টোন। বলা ভালো ক্রিজে স্টে হওয়ার পর বরাবরের মতোই নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন মুশফিকুর রহিম। একাদশ ওভারে লিভিংস্টোনকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হন ৩টি বাউন্ডারির মারে ৩০ বলে ২৯ রান করা এই টাইগার ব্যাটার। ভাঙে চতুর্থ উইকেটে ৩২ বলে ৩৭ রানের জুটি।

মুশফিকের আউটের পর শতরানের কোটা পেরোনোর আগেই আফিফ (৫), মাহমুদুল্লাহ (১৯) ধরেন সাজঘরের পথ। লিটনের মতোই দুটো বাউন্ডারিতে আত্মবিশ্বাসের ছাপ রাখা মাহেদী হাসান থেমে যান ১১ রানে।

মাহেদীর আউটের পর বাংলাদেশের ইনিংসে ১৭ বল বাকি ছিল। তখন স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে ছিলেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান। তার ব্যাটে চার-ছক্কার আশায় ছিল দল। কিন্তু পারেননি নুরুল। পেরেছেন আরেক প্রান্তে থাকা নাসুম। ১৯তম ওভারে মঈনকে দুটো ছক্কা ও একটি বাউন্ডারির মেরে সীমানাছাড়া করেন নাসুম। ওই ওভার থেকে ১৭ রান পায় বাংলাদেশ।

আর শেষ ওভারের শেষ দুই বলে নুরুল ও মুস্তাফিজুর রহমানকে শিকার করে বাংলাদেশ স্কোর ১২৪ রানের বেশি যেতে দেননি ইংল্যান্ডের বাঁ-হাতি পেসার টাইমাল মিলস। ১৮ বলে ১৬ রান যোগ করেন নুরুল, ৯ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন নাসুম।

জয়ের জন্য ১২৫ রানের টার্গেটে ইংলিশদের ছোটার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি টাইগার বোলাররা। নাসুম পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে জস বাটলারকে (১৮) ফেরানোর পর দ্বিতীয় উইকেট হিসেবে আরেক ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় শরিফুলের শিকারে পরিণত হওয়ার সময়েই স্কোরবোর্ডে উঠে যায় ১১২ রান। ইংলিশদের প্রথম উইকেটে ৩৯ রান যোগ হবার পর দ্বিতীয় উইকেটে জেসন রয় ও ডেভিড মালান জমা দেন ৭৩ রান। জেসন রয়ের শুরু থেকেই রুদ্রমূর্তি ধারণের সাক্ষ্য দিচ্ছে তার ৩৮ বলে ৫টি বাউন্ডারি ও তিনটি ছক্কার মারে তোলা ৬১ রান। টপ অর্ডারের গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বাকি ১৩ রান ওঠাতে কোন ধরনের বেগ পেতে হয়সি মালান-বেয়ারস্টোকে। মালান তিন বাউন্ডারিতে ২৫ বলে ২৮ রান তুলে অপরাজিত থাকেন, আর চার বলে ৮ রানে অপরাজিত থাকা বেয়ারস্টোর স্ট্রাইক রেট কাঁটায় কাঁটায় দুইশ’।

বিধ্বংসী ইনিংসটার জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন জনি বেয়ারস্টো।

বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১ , ১২ কার্তিক ১৪২৮ ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ইংলিশদের দাপটে পাত্তাই পেল না টাইগাররা

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

গতকাল আবুধাবিতে ম্যাচ শেষে ইংলিশ ব্যাটসম্যানকে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর অভিনন্দন -সংগৃহীত

টি-২০ ফরম্যাটে কখনও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠেই নামেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দুই দলের প্রথম মোকাবিলায় টাইগারদের কাছ থেকে ‘ভালো’ কিছু প্রত্যাশা ছিল ভক্তদের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিয়ে আবারও হতাশ করেছে বাংলাদেশ দল। সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে পরাজয়ের পর ইংল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশ দল পরাজিত হয়েছে ৮ উইকেটে।

আবুধাবীর শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের পিচ শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মতোই স্পিনবান্ধব। এই উইকেটে ইংলিশ স্পিন বা পেস কোনটাই ঠিকমতো সামাল দিতে পারেনি টাইগার ব্যাটাররা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা টাইগার ব্যাটারদের ইনিংসের শুরু থেকেই এলোমেলো শটে উইকেট ‘বিসর্জন’ দেয়াটা ছিল দৃষ্টিকটূ। যার প্রতিফলন ঘটেছে স্কোরকার্ডে, ৯ উইকেটে ওঠে মাত্র ১২৪ রান। অন্যদিকে বাংলাদেশের বোলারদের কোন পাত্তা না দিয়ে এই রান টপকাতে ইংলিশরা ব্যবহার করে মাত্র ১৪ ওভার ১ বল, আর হারায় ২ জন ব্যাটারকে। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ছয় উইকেটে জয়ের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ড পায় আট উইকেটের জয়। আর ইংলিশদের টানা দুই জয়ের পর সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের একাউন্টে জমা হয় টানা দুটো পরাজয়।

আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামের ম্যাচে একাদশে একটি পরিবর্তন নিয়ে নিয়ে মাঠে নেমেছিল টাইগাররা। ইনজুরিতে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়া সাইফুদ্দিনের পরিবর্তে সুযোগ পান পেসার শরিফুল।

ব্যাট হাতে ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে ইংল্যান্ডের স্পিনার মঈন আলিকে সীমানাছাড়া করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে দুটো ক্যাচ ছাড়ার প্রায়শ্চিত্ত করার ইংগিত দিয়েছিলেন ওপেনার লিটন দাস। কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মঈন আলিকে সুইপ শটে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে লিয়াম লিভিংস্টোনকে ক্যাচ দিয়ে থেমে যান ৮ বলে ৯ রান করা এই ওপেনার, ব্যর্থতার বৃত্তেই আটকে যান তিনি।

একই ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটনের আউটের পর অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে মিড-অনে ক্যাচ দেন ৭ বলে ৫ রান করা আরেক ওপেনার নাঈম শেখ।

মাত্র ১৪ রানেই দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ক্রিজে থাকা অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার সাকিব ও মুশফিক দলকে প্রাথমিক বিপদ থেকে টেনে তোলার চেষ্টা চালালেও তা ব্যর্থ হয়। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে পেসার ক্রিস ওকসের বলে শর্ট ফাইন লেগে আদিল রশিদের তালুবন্দী হয়ে ৭ বলে ৪ রান করা সাকিব প্যাভিলিয়নে ফেরেন।

দলীয় ২৬ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো টাইগারদের বড় স্কোর গড়ার পথে তখন মুশফিকের সঙ্গী হন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। পাওয়ার প্লে’তে ২৭ রানে তিন উইকেট হারানো টাইগারদের স্কোর দশ ওভার শেষে দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬০ রান। বাংলাদেশের বড় স্কোর গড়ার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ান অনিয়মিত স্পিনার লিভিংস্টোন। বলা ভালো ক্রিজে স্টে হওয়ার পর বরাবরের মতোই নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন মুশফিকুর রহিম। একাদশ ওভারে লিভিংস্টোনকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হন ৩টি বাউন্ডারির মারে ৩০ বলে ২৯ রান করা এই টাইগার ব্যাটার। ভাঙে চতুর্থ উইকেটে ৩২ বলে ৩৭ রানের জুটি।

মুশফিকের আউটের পর শতরানের কোটা পেরোনোর আগেই আফিফ (৫), মাহমুদুল্লাহ (১৯) ধরেন সাজঘরের পথ। লিটনের মতোই দুটো বাউন্ডারিতে আত্মবিশ্বাসের ছাপ রাখা মাহেদী হাসান থেমে যান ১১ রানে।

মাহেদীর আউটের পর বাংলাদেশের ইনিংসে ১৭ বল বাকি ছিল। তখন স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে ছিলেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান। তার ব্যাটে চার-ছক্কার আশায় ছিল দল। কিন্তু পারেননি নুরুল। পেরেছেন আরেক প্রান্তে থাকা নাসুম। ১৯তম ওভারে মঈনকে দুটো ছক্কা ও একটি বাউন্ডারির মেরে সীমানাছাড়া করেন নাসুম। ওই ওভার থেকে ১৭ রান পায় বাংলাদেশ।

আর শেষ ওভারের শেষ দুই বলে নুরুল ও মুস্তাফিজুর রহমানকে শিকার করে বাংলাদেশ স্কোর ১২৪ রানের বেশি যেতে দেননি ইংল্যান্ডের বাঁ-হাতি পেসার টাইমাল মিলস। ১৮ বলে ১৬ রান যোগ করেন নুরুল, ৯ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন নাসুম।

জয়ের জন্য ১২৫ রানের টার্গেটে ইংলিশদের ছোটার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি টাইগার বোলাররা। নাসুম পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে জস বাটলারকে (১৮) ফেরানোর পর দ্বিতীয় উইকেট হিসেবে আরেক ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় শরিফুলের শিকারে পরিণত হওয়ার সময়েই স্কোরবোর্ডে উঠে যায় ১১২ রান। ইংলিশদের প্রথম উইকেটে ৩৯ রান যোগ হবার পর দ্বিতীয় উইকেটে জেসন রয় ও ডেভিড মালান জমা দেন ৭৩ রান। জেসন রয়ের শুরু থেকেই রুদ্রমূর্তি ধারণের সাক্ষ্য দিচ্ছে তার ৩৮ বলে ৫টি বাউন্ডারি ও তিনটি ছক্কার মারে তোলা ৬১ রান। টপ অর্ডারের গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বাকি ১৩ রান ওঠাতে কোন ধরনের বেগ পেতে হয়সি মালান-বেয়ারস্টোকে। মালান তিন বাউন্ডারিতে ২৫ বলে ২৮ রান তুলে অপরাজিত থাকেন, আর চার বলে ৮ রানে অপরাজিত থাকা বেয়ারস্টোর স্ট্রাইক রেট কাঁটায় কাঁটায় দুইশ’।

বিধ্বংসী ইনিংসটার জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন জনি বেয়ারস্টো।