হরিণার বিলে বেআইনিভাবে মাছের ঘের নির্মাণ করায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় দেড় হাজার বিঘা জমির ধান পচে গেছে। এতে চাষিদের অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ ব্যক্তিস্বার্থে বেআইনি এই কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনের কোন নজর নেই। সদর উপজেলার হরিণার বিলের ফসলি জমিতে চলছে একের পর এক মাছের ঘের নির্মাণ। যে কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিলের পানি নিষ্কাশন। বছরের যেকোন সময়ের বৃষ্টিতে বিল জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এবারও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় হাত খানেক বেড়ে ওঠা ধানের চারা মারা যায়। কৃষকরা বলছেন, চারা নষ্ট হওয়ায় প্রতি বিঘায় তাদের চার হাজার টাকার কাছাকাছি ক্ষতি হয়েছে। চারার দাম, জমি চাষ, রোপণ, সার ও নিড়ানিসহ অন্যান্য কাজে তাদের এই পরিমাণ ব্যয় হয়। কিন্তু হাতখানেক উচ্চতায় বেড়ে ওঠার পর জলাবদ্ধতায় চারা মারা যায়। আর এখন পর্যন্ত পানি না সরায় সব চারা পচে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিলের সব জায়গায় জলাবদ্ধতা নেই।
যেখানে ঘের আছে তার আশপাশের ফসল ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। সেখানকার আমণ চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। একই বিলের দু’রকম দৃশ্য। যেসব ফসল ক্ষেতের আশপাশে ঘের নেই সেখানে জলাবদ্ধতাও নেই। রোপা আমণের চারা সেখানে ভালোমত বেড়ে উঠেছে। শীষ বেরিয়ে পুষ্টও হতে শুরু করেছে। মাস খানেকের মধ্যে সেগুলো কাটার উপযোগীও হয়ে উঠবে। কিন্তু বিলের সাড়াঘুটো, বকুলনগর, কালাবাগা, মাহিদিয়ার কিছু অংশের আমন চারা জলাবদ্ধতায় পুরোপুরি পচে গেছে। আলাপচারিতায় কৃষকরা জানান, চাঁচড়ার হক ফিশারিসের কামাল এই সর্বনাশের হোতা। কামাল নিজে মরেও গেছে, তাদের মেরেও গেছে। বিলের প্রায় ৯০ বিঘা জমিতে মাছের ঘের করে তাদের সর্বনাশ করে রেখে গেছেন। তার দেখাদেখি পরবর্তীতে বিলের ফসলি জমিতে আরও অনেকে ঘের করেছেন। আর তখন থেকেই শুরু হয়েছে বিলের পানি নিষ্কাশন সমস্যা। বৃষ্টি হলেই বিল জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আর এতে ধানের আবাদ মার খায়। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে ফসল হারিয়ে অনেক জমির মালিক বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
কৃষক হজরত আলীর বিলে ছয় বিঘা জমি আছে। কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় সেই জমি পানিতে ডুবে থাকে। বিলের তিন ফসলি এই জমি থেকে বছরে একবারের বেশি ফলন পান না। তাই মাছ ধরে ও অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন বলে জানান তিনি।
চাষি শাহীন গাজী জানান, জলাবদ্ধতায় এ বছর তার নিজেরসহ লিজ নেয়া ১০ বিঘা জমির রোপা আমণের চারা পচে গেছে। এতে প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। পানিতে ডুবে চারা মরার আগ পর্যন্ত বিঘাপ্রতি আবাদে প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ করেছেন। সব টাকা তার জলে গেছে। তবে পানি সরে গেলে রবি ফসল আবাদের পরিকল্পনা রয়েছে তার। এ জন্য সরকারিভাবে সার, বীজসহ চাষবাদের অন্যান্য উপকরণ প্রণোদনা হিসেবে দেয়ায় দাবি জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের হিসেব মতে, এক বিঘা জমির জন্য ধানের চারা কেনায় খরচ হয়েছে এক হাজার টাকা। জমি চাষ ও চারা রোপণে ব্যয় হয়েছে দু’হাজার টাকা। এছাড়া নিড়ানি ও সার বাবদ খরচ হয়েছে আরও এক হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘায় তাদের চার হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বিলের ভাতুড়িয়া, সাড়াঘুটো ও বকুলনগর আবাদি জমিতে পঁচিশ-ত্রিশটিরও বেশি মাছের ঘের গড়ে উঠেছে। খননের পর চারপাশ উঁচু করে ঘিরে সেখানে মাছ চাষের কারণে বিলের পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এতে বছরের যেকোন সময় টানা কয়েকদিন বা ভারি বৃষ্টিপাত হলেই বিলের বড় একটি অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। আর যার কারণে বার বার ফসল মার খাচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, জলাবদ্ধতায় ধানের চারা নষ্টের ফলে আর্থিক পরিমাণ নির্ণয়ের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা করা হবে। তাদের জন্য কৃষি পূর্ণবাসন বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১ , ১২ কার্তিক ১৪২৮ ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩
যশোর অফিস
হরিণার বিলে বেআইনিভাবে মাছের ঘের নির্মাণ করায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় দেড় হাজার বিঘা জমির ধান পচে গেছে। এতে চাষিদের অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ ব্যক্তিস্বার্থে বেআইনি এই কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনের কোন নজর নেই। সদর উপজেলার হরিণার বিলের ফসলি জমিতে চলছে একের পর এক মাছের ঘের নির্মাণ। যে কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিলের পানি নিষ্কাশন। বছরের যেকোন সময়ের বৃষ্টিতে বিল জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। এবারও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় হাত খানেক বেড়ে ওঠা ধানের চারা মারা যায়। কৃষকরা বলছেন, চারা নষ্ট হওয়ায় প্রতি বিঘায় তাদের চার হাজার টাকার কাছাকাছি ক্ষতি হয়েছে। চারার দাম, জমি চাষ, রোপণ, সার ও নিড়ানিসহ অন্যান্য কাজে তাদের এই পরিমাণ ব্যয় হয়। কিন্তু হাতখানেক উচ্চতায় বেড়ে ওঠার পর জলাবদ্ধতায় চারা মারা যায়। আর এখন পর্যন্ত পানি না সরায় সব চারা পচে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, বিলের সব জায়গায় জলাবদ্ধতা নেই।
যেখানে ঘের আছে তার আশপাশের ফসল ক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। সেখানকার আমণ চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। একই বিলের দু’রকম দৃশ্য। যেসব ফসল ক্ষেতের আশপাশে ঘের নেই সেখানে জলাবদ্ধতাও নেই। রোপা আমণের চারা সেখানে ভালোমত বেড়ে উঠেছে। শীষ বেরিয়ে পুষ্টও হতে শুরু করেছে। মাস খানেকের মধ্যে সেগুলো কাটার উপযোগীও হয়ে উঠবে। কিন্তু বিলের সাড়াঘুটো, বকুলনগর, কালাবাগা, মাহিদিয়ার কিছু অংশের আমন চারা জলাবদ্ধতায় পুরোপুরি পচে গেছে। আলাপচারিতায় কৃষকরা জানান, চাঁচড়ার হক ফিশারিসের কামাল এই সর্বনাশের হোতা। কামাল নিজে মরেও গেছে, তাদের মেরেও গেছে। বিলের প্রায় ৯০ বিঘা জমিতে মাছের ঘের করে তাদের সর্বনাশ করে রেখে গেছেন। তার দেখাদেখি পরবর্তীতে বিলের ফসলি জমিতে আরও অনেকে ঘের করেছেন। আর তখন থেকেই শুরু হয়েছে বিলের পানি নিষ্কাশন সমস্যা। বৃষ্টি হলেই বিল জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আর এতে ধানের আবাদ মার খায়। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে ফসল হারিয়ে অনেক জমির মালিক বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
কৃষক হজরত আলীর বিলে ছয় বিঘা জমি আছে। কিন্তু বছরের বেশিরভাগ সময় সেই জমি পানিতে ডুবে থাকে। বিলের তিন ফসলি এই জমি থেকে বছরে একবারের বেশি ফলন পান না। তাই মাছ ধরে ও অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন বলে জানান তিনি।
চাষি শাহীন গাজী জানান, জলাবদ্ধতায় এ বছর তার নিজেরসহ লিজ নেয়া ১০ বিঘা জমির রোপা আমণের চারা পচে গেছে। এতে প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। পানিতে ডুবে চারা মরার আগ পর্যন্ত বিঘাপ্রতি আবাদে প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ করেছেন। সব টাকা তার জলে গেছে। তবে পানি সরে গেলে রবি ফসল আবাদের পরিকল্পনা রয়েছে তার। এ জন্য সরকারিভাবে সার, বীজসহ চাষবাদের অন্যান্য উপকরণ প্রণোদনা হিসেবে দেয়ায় দাবি জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের হিসেব মতে, এক বিঘা জমির জন্য ধানের চারা কেনায় খরচ হয়েছে এক হাজার টাকা। জমি চাষ ও চারা রোপণে ব্যয় হয়েছে দু’হাজার টাকা। এছাড়া নিড়ানি ও সার বাবদ খরচ হয়েছে আরও এক হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘায় তাদের চার হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বিলের ভাতুড়িয়া, সাড়াঘুটো ও বকুলনগর আবাদি জমিতে পঁচিশ-ত্রিশটিরও বেশি মাছের ঘের গড়ে উঠেছে। খননের পর চারপাশ উঁচু করে ঘিরে সেখানে মাছ চাষের কারণে বিলের পানি নিষ্কাশন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এতে বছরের যেকোন সময় টানা কয়েকদিন বা ভারি বৃষ্টিপাত হলেই বিলের বড় একটি অংশ জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। আর যার কারণে বার বার ফসল মার খাচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, জলাবদ্ধতায় ধানের চারা নষ্টের ফলে আর্থিক পরিমাণ নির্ণয়ের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা করা হবে। তাদের জন্য কৃষি পূর্ণবাসন বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।