ফল উৎপাদনে সাফল্য

এমএইচ খান মঞ্জু

পুষ্টি চাহিদা পূরণে ফলের বিকল্প নেই বললেই চলে। অতিথি আপ্যায়ন, রোগীর খাদ্যসহ ফলের রয়েছে বিবিধ ব্যবহার। ২০ বছর আগে আম আর কাঁঠাল ছিল এ দেশের প্রধান ফল। এখন বাংলাদেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে। আগে হতো ৫৬ প্রজাতির ফল চাষ। এছাড়া বিশ্বের অন্যতম পুষ্টিকর ফল ড্রাগন ফল, অ্যাভোকাডো, রাম্বুটান, স্ট্রবেরি, ডুমুর, মাল্টা, বেল, নারকেল, জাম্বুরা, রঙ্গন, সূর্য ডিম ও খেজুরের বেশ কয়েকটি জাতের চাষও দেশে দ্রুত বাড়ছে। বিদেশি ফলের চাহিদা বাড়ায় দেশেই এখন মাল্টা, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ অনেক বিদেশি ফলের আবাদ শুরু হয়েছে। আবার আপেলের বিকল্প বড় আকারের কুল, থাই পেঁপে ও পেয়ারা উৎপাদনও বাড়ছে। যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক উৎপাদনে।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ফলের উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ২১৫ টন। ২০১৭-১৮-তে ১ কোটি ২১১ টন, ২০১৬-১৭-তে ১ কোটি ২০ টন এবং ২০১৫-১৬-তে ১ কোটি ১০ টন ফল উৎপাদন হয়। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ফলের মোট উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশে^ দ্বিতীয়, আমে সপ্তম ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে আছে বাংলাদেশ। আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে দশম। সংশ্লিষ্টরা বলেন, ফল চাষে বাংলাদেশে রীতিমতো একটি বিপ্লব ঘটে গেছে। গত ১০ বছরে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনা ও সড়কের পাশে ফলের গাছ রোপণের প্রবণতা বেড়েছে।

বাংলাদেশ যে খাদ্য নিরাপত্তায় বিশ্বের অন্যতম সফল দেশ হয়েছে এবং বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে তিন বছরে ছয় ধাপ এগিয়েছে; তার পেছনে ধান, সবজি ও মাছের পাশাপাশি ফলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বিচি ছাড়া পেয়ারার বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করছেন। দেশের সাতটি কোম্পানি বর্তমানে পেয়ারার জুস তৈরির জন্য প্লান্ট স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ থেকে পেয়ারা ও পেয়ারার জুস রপ্তানিও হচ্ছে। ফল উৎপাদনের এ সাফল্য অটুট থাকুক; প্রাপ্তজনের হাতে পৌঁছাক ফলের সুমিষ্ট স্বাদ- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

খাদ্য উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ধান, শাকসবজি, মৎস্য উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যে সবজি রপ্তানি করে বছরে আয় হচ্ছে ৩০ কোটি টাকা। এসব ফসলের পাশাপাশি ফল উৎপাদনেও বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এখন দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি দুর্লভ ফলও দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। একটা সময় কল্পনাও করা যেত না আমাদের দেশে বিদেশি খেজুর, স্ট্রবেরি, মাল্টা, ড্রাগন, এভোকাডো কিংবা জাপানের দুর্লভ বিশেষ প্রজাতির আম উৎপাদিত হবে। এখন বিশ্বের এমন কোনো ফল নেই যা দেশে স্বল্প ও বৃহৎ পরিসরে উৎপাদিত না হচ্ছে। এসব ফল পাহাড়ি অঞ্চল থেকে শুরু করে সমতল অঞ্চলে কিংবা বাসার ছাদ বা আঙ্গিনায় ব্যক্তি উদ্যোগে উৎপাদিত হচ্ছে। অনেকে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির উন্নত মানের ফল উৎপাদন করছে। এসব ফলের স্বাদ ও গুণগত মান বিশ্বমানের। দেশি ফলের পাশাপাশি এসব বিদেশি ফল উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ি অঞ্চলে বিশেষ করে পার্বত্য ও সিলেট অঞ্চলে অনাবাদি জমিতে দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি ফল উৎপাদনের ব্যাপক উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সমতল ভূমিতে ফলের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা যায়, ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশে নীরব বিপ্লব শুরু হয়েছে।

একটা সময় বিদেশি ফল হিসেবে আপেল, নাসপাতি, আঙ্গুর, কমলা, খেজুর, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ইত্যাদি ফল সাধারণ মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। এখন সেই সময় নেই। এমন কোনো গ্রামগঞ্জ নেই যেখানে এসব ফল পাওয়া যায় না। যদিও এসব ফল বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এবং বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হয়। শুধু ফল আমদানি নয়, প্রচুর বিদেশি জুসও আমদানি হচ্ছে। এতে বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যায়। তবে বিগত এক দশক ধরে উল্লিখিত ফল শুধু নয়, বিদেশের দুর্লভ ও সুস্বাদু নানা জাতের ফল দেশে উৎপাদন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে দেশি ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সুস্বাদু করতে কৃষিবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে সফল হয়েছেন এবং হচ্ছেন।

[লেখক : প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, এম এইচ খান ডিগ্রি কলেজ, গোপালগঞ্জ]

বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২১ , ১২ কার্তিক ১৪২৮ ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ফল উৎপাদনে সাফল্য

এমএইচ খান মঞ্জু

পুষ্টি চাহিদা পূরণে ফলের বিকল্প নেই বললেই চলে। অতিথি আপ্যায়ন, রোগীর খাদ্যসহ ফলের রয়েছে বিবিধ ব্যবহার। ২০ বছর আগে আম আর কাঁঠাল ছিল এ দেশের প্রধান ফল। এখন বাংলাদেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে। আগে হতো ৫৬ প্রজাতির ফল চাষ। এছাড়া বিশ্বের অন্যতম পুষ্টিকর ফল ড্রাগন ফল, অ্যাভোকাডো, রাম্বুটান, স্ট্রবেরি, ডুমুর, মাল্টা, বেল, নারকেল, জাম্বুরা, রঙ্গন, সূর্য ডিম ও খেজুরের বেশ কয়েকটি জাতের চাষও দেশে দ্রুত বাড়ছে। বিদেশি ফলের চাহিদা বাড়ায় দেশেই এখন মাল্টা, ড্রাগন, স্ট্রবেরিসহ অনেক বিদেশি ফলের আবাদ শুরু হয়েছে। আবার আপেলের বিকল্প বড় আকারের কুল, থাই পেঁপে ও পেয়ারা উৎপাদনও বাড়ছে। যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক উৎপাদনে।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ফলের উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ২১৫ টন। ২০১৭-১৮-তে ১ কোটি ২১১ টন, ২০১৬-১৭-তে ১ কোটি ২০ টন এবং ২০১৫-১৬-তে ১ কোটি ১০ টন ফল উৎপাদন হয়। মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে, বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ফলের মোট উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশে^ দ্বিতীয়, আমে সপ্তম ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে আছে বাংলাদেশ। আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে দশম। সংশ্লিষ্টরা বলেন, ফল চাষে বাংলাদেশে রীতিমতো একটি বিপ্লব ঘটে গেছে। গত ১০ বছরে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনা ও সড়কের পাশে ফলের গাছ রোপণের প্রবণতা বেড়েছে।

বাংলাদেশ যে খাদ্য নিরাপত্তায় বিশ্বের অন্যতম সফল দেশ হয়েছে এবং বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে তিন বছরে ছয় ধাপ এগিয়েছে; তার পেছনে ধান, সবজি ও মাছের পাশাপাশি ফলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বিচি ছাড়া পেয়ারার বেশ কয়েকটি জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করছেন। দেশের সাতটি কোম্পানি বর্তমানে পেয়ারার জুস তৈরির জন্য প্লান্ট স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ থেকে পেয়ারা ও পেয়ারার জুস রপ্তানিও হচ্ছে। ফল উৎপাদনের এ সাফল্য অটুট থাকুক; প্রাপ্তজনের হাতে পৌঁছাক ফলের সুমিষ্ট স্বাদ- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

খাদ্য উৎপাদনের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ধান, শাকসবজি, মৎস্য উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যে সবজি রপ্তানি করে বছরে আয় হচ্ছে ৩০ কোটি টাকা। এসব ফসলের পাশাপাশি ফল উৎপাদনেও বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এখন দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি দুর্লভ ফলও দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। একটা সময় কল্পনাও করা যেত না আমাদের দেশে বিদেশি খেজুর, স্ট্রবেরি, মাল্টা, ড্রাগন, এভোকাডো কিংবা জাপানের দুর্লভ বিশেষ প্রজাতির আম উৎপাদিত হবে। এখন বিশ্বের এমন কোনো ফল নেই যা দেশে স্বল্প ও বৃহৎ পরিসরে উৎপাদিত না হচ্ছে। এসব ফল পাহাড়ি অঞ্চল থেকে শুরু করে সমতল অঞ্চলে কিংবা বাসার ছাদ বা আঙ্গিনায় ব্যক্তি উদ্যোগে উৎপাদিত হচ্ছে। অনেকে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির উন্নত মানের ফল উৎপাদন করছে। এসব ফলের স্বাদ ও গুণগত মান বিশ্বমানের। দেশি ফলের পাশাপাশি এসব বিদেশি ফল উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ি অঞ্চলে বিশেষ করে পার্বত্য ও সিলেট অঞ্চলে অনাবাদি জমিতে দেশি ফলের পাশাপাশি বিদেশি ফল উৎপাদনের ব্যাপক উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। সমতল ভূমিতে ফলের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বলা যায়, ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশে নীরব বিপ্লব শুরু হয়েছে।

একটা সময় বিদেশি ফল হিসেবে আপেল, নাসপাতি, আঙ্গুর, কমলা, খেজুর, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ইত্যাদি ফল সাধারণ মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। এখন সেই সময় নেই। এমন কোনো গ্রামগঞ্জ নেই যেখানে এসব ফল পাওয়া যায় না। যদিও এসব ফল বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এবং বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হয়। শুধু ফল আমদানি নয়, প্রচুর বিদেশি জুসও আমদানি হচ্ছে। এতে বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যায়। তবে বিগত এক দশক ধরে উল্লিখিত ফল শুধু নয়, বিদেশের দুর্লভ ও সুস্বাদু নানা জাতের ফল দেশে উৎপাদন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে দেশি ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সুস্বাদু করতে কৃষিবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে সফল হয়েছেন এবং হচ্ছেন।

[লেখক : প্রাক্তন প্রিন্সিপাল, এম এইচ খান ডিগ্রি কলেজ, গোপালগঞ্জ]