দক্ষ মানবসম্পদ, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও প্রযুক্তি বিনিময়ে গুরুত্বারোপ

এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় বাজার সক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্য বহুমুখীকরণ, মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্য-প্রযুক্তি বিনিময়ে গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২১’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের তৃতীয় দিনে ‘এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে তারা এসব বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ও অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতার পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যকার সুসম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি খাতের সৃজনশীলতা আরও বেশি হারে কাজে লাগাতে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। দেশের বেসরকারি খাতের ওপর সরকারের আস্থা ও বিশ্বাস দুটোই অত্যন্ত বেশি এবং বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় স্বল্প সময়ে আমরা বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি। এর সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছে। আজকের এ আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত হবে। এর মাধ্যমে তা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ সম্ভব হবে।’

অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হলেও কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হচ্ছে না। তবে সময় এসেছে বিষয়টিতে আরও বেশি হারে মনোযোগী হওয়ার। দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মসংস্থানের কোন বিকল্প নেই। তবে আরও বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে তৎপর হতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বেতন-ভাতায় প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে, যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্যতা ও দক্ষ মানব সম্পদের অভাবকেই ফুটিয়ে তুলছে। এ অবস্থায় আমাদেরকে অবশ্যই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। চামড়া ও পাদুকাখাতে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ ৯০-এর দশকে একই সঙ্গে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ভিয়েতনাম প্রায় ১৬-১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফুটওয়্যার পণ্য রপ্তানি করে। বিপরীতে আমরা মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের ফুটওয়্যার পণ্য রপ্তানি করছি এবং শুধুমাত্র যৌথ বিনিয়োগ ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই ভিয়েতনাম তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।’

এছাড়াও চামড়া ও ফুটওয়্যার খাতের উন্নয়ন ও যৌথ বিনিয়োগ আকর্ষণে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ করার জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি দেশের বিদ্যমান কর কাঠামোর আধুনিকায়ন ও সংস্কারের ওপর জোরারোপ করেন।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘বৈশি^ক অর্থনীতির মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ়করণে আমাদের বেসরকারি খাত অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের অবদান বজায় রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এলডিসি হতে উত্তরণের পথে রয়েছি। তবে এলডিসি হতে উত্তরণের পর বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হবে, যা কি না আমাদের রপ্তানিকে ব্যাহত করতে পারে।’

এ অবস্থায় তিনি পণ্য উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ়করণ, স্থানীয় বাজারের সম্প্রসারণ এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক নীতিমালার সংস্কার প্রভৃতি বিষয়ের ওপর আরও বেশি হারে মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান।

ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, ‘এলডিসি তালিকা হতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তীতে আমাদের রপ্তানি ধরে রাখতে হলে স্থানীয় বাজার সক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্য বহুমুখীকরণ, মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, সহায়ক নীতিমালা সংস্কার এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিনিময় একান্ত অপরিহার্য।’

ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচনায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-এর বোর্ড সদস্য তৌফিকুর রহমান, বিল্ডের চেয়ারপারসন ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আবুল কাসেম খান, ইউএন টেকনোলজি ব্যাংক ফর এলডিসি কান্ট্রিজের প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট অফিসার ইয়াসিম বাকেল এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান অংশগ্রহণ করেন।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বোর্ড মেম্বার তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট খাতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এলডিসি পরবর্তী সময়ে আমাদের করণীয় বিষয়ে একটি প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে, যা খুবই আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে। এ অবস্থায় সবার সর্বাত্মক অংশগ্রহণে আমাদেরকে এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।’

এছাড়াও তিনি বৈশি^ক বাণিজ্য সম্প্রসারণে নেগোশিয়েশনের বহুমাত্রিক দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন।

বিল্ডের চেয়ারপারসন ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে দেশের বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুযোগ রক্ষার পাশাপাশি নতুন চাকুরির ক্ষেত্র তৈরি, কর নীতিমালাসহ সংশ্লিষ্ট নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংস্কার, দেশি-বিদেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন খুবই জরুরি। সেই সঙ্গে জিডিপিতে করের অবদান বৃদ্ধিতে করজাল সম্প্রসারণ এবং আমাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র বহুমুখীকরণ করতে হবে, যার মাধ্যমে রপ্তানি পণ্যের তালিকা আরও সম্প্রসারিত হবে।’

বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, ‘দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমের মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের স্বাক্ষরিত এফটিএসমূহ কার্যকর করতে আমাদের রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণের কোন বিকল্প নেই।’

ইউএন টেকনোলজি ব্যাংক ফর এলডিসি কান্ট্রিজের প্রগ্রাম ম্যানেজমেন্ট অফিসার ইয়াসিম বাকেল বলেন, বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার বিষয়ে ইউএন টেকনোলজি ব্যাংক সরকার ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। তিনি বাংলাদেশের মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন ও বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আরও বেশি হারে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর ২০২১ , ১৩ কার্তিক ১৪২৮ ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ ও প্রস্তুতি শীর্ষক ওয়েবিনার

দক্ষ মানবসম্পদ, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও প্রযুক্তি বিনিময়ে গুরুত্বারোপ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্থানীয় বাজার সক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্য বহুমুখীকরণ, মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন ও তথ্য-প্রযুক্তি বিনিময়ে গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২১’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের তৃতীয় দিনে ‘এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে তারা এসব বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

ওয়েবিনারে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ও অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতার পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যকার সুসম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি খাতের সৃজনশীলতা আরও বেশি হারে কাজে লাগাতে সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। দেশের বেসরকারি খাতের ওপর সরকারের আস্থা ও বিশ্বাস দুটোই অত্যন্ত বেশি এবং বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় স্বল্প সময়ে আমরা বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি। এর সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছে। আজকের এ আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত হবে। এর মাধ্যমে তা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ সম্ভব হবে।’

অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হলেও কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হচ্ছে না। তবে সময় এসেছে বিষয়টিতে আরও বেশি হারে মনোযোগী হওয়ার। দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মসংস্থানের কোন বিকল্প নেই। তবে আরও বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে তৎপর হতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বেতন-ভাতায় প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে, যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্যতা ও দক্ষ মানব সম্পদের অভাবকেই ফুটিয়ে তুলছে। এ অবস্থায় আমাদেরকে অবশ্যই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি করার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। চামড়া ও পাদুকাখাতে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ ৯০-এর দশকে একই সঙ্গে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ভিয়েতনাম প্রায় ১৬-১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফুটওয়্যার পণ্য রপ্তানি করে। বিপরীতে আমরা মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের ফুটওয়্যার পণ্য রপ্তানি করছি এবং শুধুমাত্র যৌথ বিনিয়োগ ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই ভিয়েতনাম তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।’

এছাড়াও চামড়া ও ফুটওয়্যার খাতের উন্নয়ন ও যৌথ বিনিয়োগ আকর্ষণে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ করার জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি দেশের বিদ্যমান কর কাঠামোর আধুনিকায়ন ও সংস্কারের ওপর জোরারোপ করেন।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘বৈশি^ক অর্থনীতির মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ়করণে আমাদের বেসরকারি খাত অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের অবদান বজায় রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এলডিসি হতে উত্তরণের পথে রয়েছি। তবে এলডিসি হতে উত্তরণের পর বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হবে, যা কি না আমাদের রপ্তানিকে ব্যাহত করতে পারে।’

এ অবস্থায় তিনি পণ্য উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ়করণ, স্থানীয় বাজারের সম্প্রসারণ এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগবিষয়ক নীতিমালার সংস্কার প্রভৃতি বিষয়ের ওপর আরও বেশি হারে মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান।

ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, ‘এলডিসি তালিকা হতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তীতে আমাদের রপ্তানি ধরে রাখতে হলে স্থানীয় বাজার সক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্য বহুমুখীকরণ, মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, সহায়ক নীতিমালা সংস্কার এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিনিময় একান্ত অপরিহার্য।’

ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচনায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-এর বোর্ড সদস্য তৌফিকুর রহমান, বিল্ডের চেয়ারপারসন ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আবুল কাসেম খান, ইউএন টেকনোলজি ব্যাংক ফর এলডিসি কান্ট্রিজের প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট অফিসার ইয়াসিম বাকেল এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান অংশগ্রহণ করেন।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বোর্ড মেম্বার তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট খাতের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এলডিসি পরবর্তী সময়ে আমাদের করণীয় বিষয়ে একটি প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে, যা খুবই আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে। এ অবস্থায় সবার সর্বাত্মক অংশগ্রহণে আমাদেরকে এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।’

এছাড়াও তিনি বৈশি^ক বাণিজ্য সম্প্রসারণে নেগোশিয়েশনের বহুমাত্রিক দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন।

বিল্ডের চেয়ারপারসন ও ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ে দেশের বিদ্যমান কর্মসংস্থানের সুযোগ রক্ষার পাশাপাশি নতুন চাকুরির ক্ষেত্র তৈরি, কর নীতিমালাসহ সংশ্লিষ্ট নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংস্কার, দেশি-বিদেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন খুবই জরুরি। সেই সঙ্গে জিডিপিতে করের অবদান বৃদ্ধিতে করজাল সম্প্রসারণ এবং আমাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্র বহুমুখীকরণ করতে হবে, যার মাধ্যমে রপ্তানি পণ্যের তালিকা আরও সম্প্রসারিত হবে।’

বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, ‘দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমের মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি গবেষণা কার্যক্রমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের স্বাক্ষরিত এফটিএসমূহ কার্যকর করতে আমাদের রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণের কোন বিকল্প নেই।’

ইউএন টেকনোলজি ব্যাংক ফর এলডিসি কান্ট্রিজের প্রগ্রাম ম্যানেজমেন্ট অফিসার ইয়াসিম বাকেল বলেন, বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার বিষয়ে ইউএন টেকনোলজি ব্যাংক সরকার ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। তিনি বাংলাদেশের মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন ও বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আরও বেশি হারে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।