বেকারি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানা

ব্রেড ও বিস্কুট তৈরির উপকরণ চিনি, পামওয়েল, ডালডা ও ময়দার অগ্নিমূল্যে ভয়ানক সঙ্কটে পড়েছে সৈয়দপুরের বেকারি শিল্প। উর্ধ্বমুখী দামের ধকলে পড়ে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে তিনটি বেকারি কারখানা। পণ্যের উৎপাদন খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে এ শিল্পের ব্যবসায়ীদের। ফলে এসব ক্ষুদ্র বেকারি শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় শিল্প মালিকদের সূত্রে জানা যায়, গত দুই মাস ধরে বাজারে উপকরণের দাম বৃদ্ধির অস্থিরতা চলছে। দফায় দফায় দাম বৃদ্ধির চাপে কঠিন সমস্যায় পড়েছে স্বল্প পুঁজির এ শিল্প। সৈয়দপুর উপজেলার সচল ১৩টি কারখানার মধ্যে তিনটি কারখানা উর্ধ্বমুখী দামের বিরূপ প্রভাবে পুঁজি সংকটে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ১০টি কারখানার অবস্থাও করুণ। ব্রেড ও বিস্কুট তৈরির প্রধান উপকরণ পামওয়েল, চিনি, ময়দা ও ডালডার মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পণ্যের উৎপাদন খরচ ও বিক্রি মূল্যের মধ্যে লাভ অতি সীমিত হয়ে পড়ায় কারখানা টিকিয়ে রাখা হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে কারখানাগুলো পণ্যের বাজার ধরে রাখতে পণ্যের দাম বাড়াতে পারছে না শিল্প মালিকরা। যথেচ্ছা দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই মাস আগে ব্রেড-বিস্কুট ও কনফেকশনারি তৈরিতে খরচ পড়তো ২০ শতাংশ। বর্তমানে এর উৎপাদন খরচ ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগে ১৮৬ কেজি এক ড্রাম পামওয়েল ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২৬ হাজার ৩০০ টাকায়, ৩ হাজার ৪০০ টাকার ৫০ কেজি বস্তা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়, ২ হাজার ৫০০ টাকার ৭৪ কেজি বস্তার ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায় এং ২ হাজার ১০০ টাকার ১৬ কেজি কার্টুন ডালডা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৭০ টাকায়। এছাড়াও এ শিল্পে ব্যবহৃত প্যাকেজিং সামগ্রী ফুড গ্রেড পলিথিন ও কার্টুনের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে উচ্চ হারে। এর সঙ্গে দাম বেড়েছে ফুড গ্রেড রঙেরও।

এ ব্যাপারে শহরের গাউসিয়া কনফেকশনারির মালিক হাজি মো. আওরঙ্গজেব বলেন, বাজারে উপকরণের দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে কারখানা সচল রাখা দুরূহ হয়ে পড়েছে। আমাদের দূরাবস্থা দেখার কেউ নেই। পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে আগের দামে। এতে মুনাফা টিকছে অতি সামান্য। আবার অনেক পণ্যে লোকসান গুণতে হচ্ছে। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকায় দাম বাড়ানোর ঝুঁকি নেয়া যাচ্ছে না।

কাস্টমার ধরে রাখতে আগের দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি প্রান্তিক জনপদের ক্ষুদ্র এই শিল্প বাঁচাতে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান। জানতে চাইলে, নীলফামারী ব্রেড-বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি ও সৈয়দপুর ডায়মন্ড কনফেকশনারির মালিক মো. আখতার সিদ্দিকী পাপ্পু জানান, করোনাকালের ধাক্কা সামলিয়ে জেলায় মাত্র ৪৫টি বেকারি।

কারখানা টিকে আছে। বর্তমানে কনফেকশনারি উপকরণের অস্বাভাবিক দামে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসানের মুখে জেলায় বন্ধ হয়ে গেছে ৫টি বেকারি কারখানা। বেকারি শিল্পের অবস্থা ভালো নয়। করোনাকালে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনাও আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চেষ্টা করেও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। সব মিলিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন বেকারি শিল্পের ব্যবসায়ীরা।

উৎপাদন খরচের তুলনায় পণ্য বিক্রি করে পোষাচ্ছে না, অনেকক্ষেত্রে লোকসান হচ্ছে পণ্য বিক্রি করে। ব্যবসা সচল রাখতে গিয়ে কঠিন সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে আমাদের। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে। চলমান দামের উর্ধ্বগতি পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দাম বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প থাকবে না।

শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর ২০২১ , ১৩ কার্তিক ১৪২৮ ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বেকারি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানা

প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

ব্রেড ও বিস্কুট তৈরির উপকরণ চিনি, পামওয়েল, ডালডা ও ময়দার অগ্নিমূল্যে ভয়ানক সঙ্কটে পড়েছে সৈয়দপুরের বেকারি শিল্প। উর্ধ্বমুখী দামের ধকলে পড়ে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে তিনটি বেকারি কারখানা। পণ্যের উৎপাদন খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসান গুণতে হচ্ছে এ শিল্পের ব্যবসায়ীদের। ফলে এসব ক্ষুদ্র বেকারি শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় শিল্প মালিকদের সূত্রে জানা যায়, গত দুই মাস ধরে বাজারে উপকরণের দাম বৃদ্ধির অস্থিরতা চলছে। দফায় দফায় দাম বৃদ্ধির চাপে কঠিন সমস্যায় পড়েছে স্বল্প পুঁজির এ শিল্প। সৈয়দপুর উপজেলার সচল ১৩টি কারখানার মধ্যে তিনটি কারখানা উর্ধ্বমুখী দামের বিরূপ প্রভাবে পুঁজি সংকটে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে। অবশিষ্ট ১০টি কারখানার অবস্থাও করুণ। ব্রেড ও বিস্কুট তৈরির প্রধান উপকরণ পামওয়েল, চিনি, ময়দা ও ডালডার মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পণ্যের উৎপাদন খরচ ও বিক্রি মূল্যের মধ্যে লাভ অতি সীমিত হয়ে পড়ায় কারখানা টিকিয়ে রাখা হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে কারখানাগুলো পণ্যের বাজার ধরে রাখতে পণ্যের দাম বাড়াতে পারছে না শিল্প মালিকরা। যথেচ্ছা দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই মাস আগে ব্রেড-বিস্কুট ও কনফেকশনারি তৈরিতে খরচ পড়তো ২০ শতাংশ। বর্তমানে এর উৎপাদন খরচ ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগে ১৮৬ কেজি এক ড্রাম পামওয়েল ২৪ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২৬ হাজার ৩০০ টাকায়, ৩ হাজার ৪০০ টাকার ৫০ কেজি বস্তা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়, ২ হাজার ৫০০ টাকার ৭৪ কেজি বস্তার ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায় এং ২ হাজার ১০০ টাকার ১৬ কেজি কার্টুন ডালডা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৭০ টাকায়। এছাড়াও এ শিল্পে ব্যবহৃত প্যাকেজিং সামগ্রী ফুড গ্রেড পলিথিন ও কার্টুনের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে উচ্চ হারে। এর সঙ্গে দাম বেড়েছে ফুড গ্রেড রঙেরও।

এ ব্যাপারে শহরের গাউসিয়া কনফেকশনারির মালিক হাজি মো. আওরঙ্গজেব বলেন, বাজারে উপকরণের দাম যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে কারখানা সচল রাখা দুরূহ হয়ে পড়েছে। আমাদের দূরাবস্থা দেখার কেউ নেই। পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে আগের দামে। এতে মুনাফা টিকছে অতি সামান্য। আবার অনেক পণ্যে লোকসান গুণতে হচ্ছে। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকায় দাম বাড়ানোর ঝুঁকি নেয়া যাচ্ছে না।

কাস্টমার ধরে রাখতে আগের দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি প্রান্তিক জনপদের ক্ষুদ্র এই শিল্প বাঁচাতে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান। জানতে চাইলে, নীলফামারী ব্রেড-বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি ও সৈয়দপুর ডায়মন্ড কনফেকশনারির মালিক মো. আখতার সিদ্দিকী পাপ্পু জানান, করোনাকালের ধাক্কা সামলিয়ে জেলায় মাত্র ৪৫টি বেকারি।

কারখানা টিকে আছে। বর্তমানে কনফেকশনারি উপকরণের অস্বাভাবিক দামে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসানের মুখে জেলায় বন্ধ হয়ে গেছে ৫টি বেকারি কারখানা। বেকারি শিল্পের অবস্থা ভালো নয়। করোনাকালে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনাও আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চেষ্টা করেও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। সব মিলিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন বেকারি শিল্পের ব্যবসায়ীরা।

উৎপাদন খরচের তুলনায় পণ্য বিক্রি করে পোষাচ্ছে না, অনেকক্ষেত্রে লোকসান হচ্ছে পণ্য বিক্রি করে। ব্যবসা সচল রাখতে গিয়ে কঠিন সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে আমাদের। তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে। চলমান দামের উর্ধ্বগতি পরিস্থিতির উন্নতি না হলে দাম বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প থাকবে না।