প্রথম জয়ের খোঁজে মুখোমুখি বাংলাদেশ-উইন্ডিজ

টি-২০ ফরম্যাটটার সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কোনওভাবেই যেন নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না। যে কারণে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের পরাজয়ের পাল্লাই ভারী। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। অথচ টি-২০ বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে একেবারেই ছন্নছাড়া দশা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ক্যারিবিয়ানদের। বাংলাদেশ দল যেমন সুপার টুয়েলভের গ্রুপ পর্বে টানা দুই ম্যাচে পরাজিত হয়েছে, তেমনি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরাও পরাজিত হয়েছে টানা দুই ম্যাচে। আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় শারজাহ স্টেডিয়ামে দুই দল মুখোমুখি হওয়ার সময়ে পরাজয়ের বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইবে। চলতি আসরে টিকে থেকে সেমিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে চাইলে যে জয়ের বিকল্প নেই কোনও দলেরই। টি-২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলের রেকর্ড বলার মত না হলেও ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সাফল্য বেশি টাইগারদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ১২ বারের মোকাবিলায় পাঁচটি জয়ের বিপরীতে টাইগারদের পরাজয় ছয় ম্যাচে। টি-২০ বিশ্বকাপে বড় দলগুলোর মধ্যে একমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই জয় রয়েছে টাইগারদের। যদিও এই জয়টা ছিল ২০০৭ সালের অসরের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে। অথচ এ পর্যন্ত ১১৭টা টি-২০ ম্যাচ খেলে ৪৩ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ দলের পরাজয় ৭২ ম্যাচে। রেকর্ড বই থেকে প্রেরণা নিতে পারে বাংলাদেশ দল। আবার চলতি আসরের সুপার টুয়েলভে নিজেদের গ্রুপে দুই দল টানা দুই ম্যাচে পরাজিত হলেও নেট রান রেটে টাইগাররা আছে পঞ্চম স্থানে, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থান ষষ্ঠ।

দুই দলেরই মূল সমস্যা ব্যাটিং। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ৫৫ রানে অল আউট হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আট উইকেটে ১৪৩ রান করেছিল। কিন্তু কাক্সিক্ষত জয় থেকে গেছে অধরা। ক্রিস গেইল, নিকোলাস পুরান, শিমরন হেটমায়ার, কাইরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল এবং ডোয়াইন ব্র্যাভো সমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইন আপের ব্যর্থতার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে লেন্ডল সিমন্সের ৩৫ বলে ১৬ রানের ইনিংস কোনও মতেই টি-২০ ফরম্যাটের সাথে মানানসই নয়। কিন্তু অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড শুধুমাত্র সিমন্সকে দায়ী করতে রাজী নন। পোলার্ড বলছেন, সাফল্য পেতে হলে দলগতভাবে জ্বলে ওঠার বিকল্প নেই। পয়েন্ট টেবিলে উন্নতি করতে হলে ব্যাটারদের ভালো করার ওপর জোর দিচ্ছেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।

অন্যদিকে সাফল্য পেতে হলে টাইগারদের উন্নতি ঘটাতে হবে সব ডিপার্টমেন্টে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চার উইকেটে ১৭১ রান তুলেও বাজে বোলিংয়ের সাথে লিটন কুমার দাসের ক্যাচ মিসের মহড়ায় ম্যাচ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশ দলের। ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচে ব্যাটাররা যেনো পিচের ভাষাই বুঝতে পারেননি। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ১২৪ রানের মামুলি পুঁজি নিয়ে টাইগাররা ইংল্যান্ডের কাছে ম্যাচ হারে আট উইকেটের বড় ব্যবধানে।

ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সাফল্য পেতে হলে চলতি টুর্নামেন্টের চার ম্যাচে দুটো হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলা নাইম শেখ এবং অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে রান বড় স্কোর চাই বাংলাদেশ দলের। ঘরোয়া আসরে ভালো করাসহ জিম্বাবুয়ে সফরের পর দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন নুরুল হাসান সোহান। এই উইকেটকিপার-ব্যাটারের কাছ থেকেও বড় স্কোর আশা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

বাংলাদেশের দল নির্বাচন নিয়েও নানামুখী কথাবার্তা চলছে। খেলোয়াড় এবং বোর্ড কর্তাদের দ্বন্দ্ব অনেকটাই প্রকাশ্য এখন। সাকিব আল হাসানের স্ত্রী শিশিরের করা টুইটেও ছড়িয়েছে বিতর্ক। সব মিলিয়ে ড্রেসিংরুমের পরিবেশও খুব একটা ভালো নয় বলেই আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান হয়। সৌম্য সরকারের ব্যর্থতার পর সেই মিছিলে যোগ দিয়েছেন ওপেনার লিটন কুমার দাস। টপ অর্ডারে এখনই লিটন-সৌম্যর পরিবর্তে নবীন শামীম হোসেনকে সুযোগ দেয়া ঠিক হবে কি না, তা নিয়েও আছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব।

চলতি আসরের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, টাইগাররা জয় না পেলেও, ক্যারিবিয়ান দল অনেকটাই অগোছালো। ২০০৭ সালের আসরের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ক্যারিবিয়ানদের পরাজিত করার এটাই সুবর্ণ সুযোগ। পারবে কি টাইগাররা? আশায় বুক বাঁধতে দোষ কোথায়? একটা জয় যে, বাঁচিয়ে রাখবে সেমির স্বপ্ন।

শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর ২০২১ , ১৩ কার্তিক ১৪২৮ ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

প্রথম জয়ের খোঁজে মুখোমুখি বাংলাদেশ-উইন্ডিজ

ক্রীড়া বার্তা পরিবেশক

image

অনুশীলনে বাংলাদেশ দল

টি-২০ ফরম্যাটটার সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কোনওভাবেই যেন নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না। যে কারণে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের পরাজয়ের পাল্লাই ভারী। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাটে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। অথচ টি-২০ বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে একেবারেই ছন্নছাড়া দশা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ক্যারিবিয়ানদের। বাংলাদেশ দল যেমন সুপার টুয়েলভের গ্রুপ পর্বে টানা দুই ম্যাচে পরাজিত হয়েছে, তেমনি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরাও পরাজিত হয়েছে টানা দুই ম্যাচে। আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় শারজাহ স্টেডিয়ামে দুই দল মুখোমুখি হওয়ার সময়ে পরাজয়ের বৃত্ত ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইবে। চলতি আসরে টিকে থেকে সেমিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে চাইলে যে জয়ের বিকল্প নেই কোনও দলেরই। টি-২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলের রেকর্ড বলার মত না হলেও ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সাফল্য বেশি টাইগারদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ১২ বারের মোকাবিলায় পাঁচটি জয়ের বিপরীতে টাইগারদের পরাজয় ছয় ম্যাচে। টি-২০ বিশ্বকাপে বড় দলগুলোর মধ্যে একমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই জয় রয়েছে টাইগারদের। যদিও এই জয়টা ছিল ২০০৭ সালের অসরের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে। অথচ এ পর্যন্ত ১১৭টা টি-২০ ম্যাচ খেলে ৪৩ জয়ের বিপরীতে বাংলাদেশ দলের পরাজয় ৭২ ম্যাচে। রেকর্ড বই থেকে প্রেরণা নিতে পারে বাংলাদেশ দল। আবার চলতি আসরের সুপার টুয়েলভে নিজেদের গ্রুপে দুই দল টানা দুই ম্যাচে পরাজিত হলেও নেট রান রেটে টাইগাররা আছে পঞ্চম স্থানে, আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের অবস্থান ষষ্ঠ।

দুই দলেরই মূল সমস্যা ব্যাটিং। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটিং ডিপার্টমেন্ট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ৫৫ রানে অল আউট হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আট উইকেটে ১৪৩ রান করেছিল। কিন্তু কাক্সিক্ষত জয় থেকে গেছে অধরা। ক্রিস গেইল, নিকোলাস পুরান, শিমরন হেটমায়ার, কাইরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল এবং ডোয়াইন ব্র্যাভো সমৃদ্ধ ব্যাটিং লাইন আপের ব্যর্থতার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে লেন্ডল সিমন্সের ৩৫ বলে ১৬ রানের ইনিংস কোনও মতেই টি-২০ ফরম্যাটের সাথে মানানসই নয়। কিন্তু অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড শুধুমাত্র সিমন্সকে দায়ী করতে রাজী নন। পোলার্ড বলছেন, সাফল্য পেতে হলে দলগতভাবে জ্বলে ওঠার বিকল্প নেই। পয়েন্ট টেবিলে উন্নতি করতে হলে ব্যাটারদের ভালো করার ওপর জোর দিচ্ছেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক।

অন্যদিকে সাফল্য পেতে হলে টাইগারদের উন্নতি ঘটাতে হবে সব ডিপার্টমেন্টে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চার উইকেটে ১৭১ রান তুলেও বাজে বোলিংয়ের সাথে লিটন কুমার দাসের ক্যাচ মিসের মহড়ায় ম্যাচ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশ দলের। ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচে ব্যাটাররা যেনো পিচের ভাষাই বুঝতে পারেননি। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ১২৪ রানের মামুলি পুঁজি নিয়ে টাইগাররা ইংল্যান্ডের কাছে ম্যাচ হারে আট উইকেটের বড় ব্যবধানে।

ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সাফল্য পেতে হলে চলতি টুর্নামেন্টের চার ম্যাচে দুটো হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলা নাইম শেখ এবং অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে রান বড় স্কোর চাই বাংলাদেশ দলের। ঘরোয়া আসরে ভালো করাসহ জিম্বাবুয়ে সফরের পর দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন নুরুল হাসান সোহান। এই উইকেটকিপার-ব্যাটারের কাছ থেকেও বড় স্কোর আশা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

বাংলাদেশের দল নির্বাচন নিয়েও নানামুখী কথাবার্তা চলছে। খেলোয়াড় এবং বোর্ড কর্তাদের দ্বন্দ্ব অনেকটাই প্রকাশ্য এখন। সাকিব আল হাসানের স্ত্রী শিশিরের করা টুইটেও ছড়িয়েছে বিতর্ক। সব মিলিয়ে ড্রেসিংরুমের পরিবেশও খুব একটা ভালো নয় বলেই আপাতদৃষ্টিতে প্রতীয়মান হয়। সৌম্য সরকারের ব্যর্থতার পর সেই মিছিলে যোগ দিয়েছেন ওপেনার লিটন কুমার দাস। টপ অর্ডারে এখনই লিটন-সৌম্যর পরিবর্তে নবীন শামীম হোসেনকে সুযোগ দেয়া ঠিক হবে কি না, তা নিয়েও আছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব।

চলতি আসরের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, টাইগাররা জয় না পেলেও, ক্যারিবিয়ান দল অনেকটাই অগোছালো। ২০০৭ সালের আসরের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ক্যারিবিয়ানদের পরাজিত করার এটাই সুবর্ণ সুযোগ। পারবে কি টাইগাররা? আশায় বুক বাঁধতে দোষ কোথায়? একটা জয় যে, বাঁচিয়ে রাখবে সেমির স্বপ্ন।