আবাসিক হোটেলে ঢাবি শিক্ষার্থীর লাশ

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কর্ণফুলী আবাসিক হোটেল থেকে আদনান সাকিব (২৫) নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে তার রুম থেকে একটি সুইসাইডাল নোট উদ্ধার করেছে। সেখানে লেখা ছিল, ‘১ সেকেন্ড ১ বছরের মতো মনে হয়। ১২ বছর যন্ত্রণা সইতে হয়েছে। তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলেও নোটে লিখে গেছেন।’ পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, ‘সাকিব যে সুইসাইড নোট লিখে গেছেন সেখানে তিনি তার মৃত্যুর জন্য স্ত্রী নুসরাত আফরিনকে দোষারোপ না করার কথা বলে গেছেন। পাশাপাশি স্ত্রী খুব ভালো বলেও লিখে যান। তবে ১২ বছরের যে যন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে সেটি কি, তা কেউই নিশ্চিত করতে পারেনি। গতকাল দুপুরে এসব তথ্য জানান, শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার। ঘটনার পর পুলিশ ওই সুসাইডাল নোটটি উদ্ধার করে তদন্ত শুরু করেছে।

ওসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুইসাইডাল নোট দেখে মনে হচ্ছে, আদনান সাকিব কোন সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। সেটা পারিবারিক, সাংসারিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত নানা কারণে হতে পারে। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। পাশাপাশি তার স্ত্রীকেও বিষয়গুলো অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তার আত্মহত্যার কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে, সাকিব আত্মহত্যা করেছেন। কেননা, সেগুনবাগিচার আবাসিক হোটেল কর্ণফুলীর দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’

গত মঙ্গলবার থেকে সাকিব নিখোঁজ ছিলেন। এ জন্য তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির সূত্র ধরে পুলিশ প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে সাকিবের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে। গত বুধবার রাতে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয়, সাকিব সেগুনবাগিচার ওই হোটেলের ১০৭ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছেন। পরে সেখান থেকে সাকিবের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহতের স্ত্রী নুসরাত বলেন, পরশুদিন দুপুরে শেষ কথা হয় সাকিবের সঙ্গে। এরপর আর তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার মোবাইল বন্ধ ছিল। সম্ভাব্য অনেক স্থানে খোঁজ-খবর করা হয়। কিন্তু, কেউ তার সন্ধান দিতে পারেনি। পরে বাধ্য হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করি।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন দ্বন্দ ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিবের স্ত্রী বলেন, আমাদের দাম্পত্য জীবনে এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি যে, সাকিবকে এভাবে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। সাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। মাস্টার্স করছিলেন অন্য একটি বিভাগ থেকে। থাকতেন জহুরুল হক হলে। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর ডিমলার সোনাখুলিতে। তার এভাবে চলে যাওয়া সহপাঠীরাও মেনে নিতে পারছেন না।

শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর ২০২১ , ১৩ কার্তিক ১৪২৮ ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

আবাসিক হোটেলে ঢাবি শিক্ষার্থীর লাশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কর্ণফুলী আবাসিক হোটেল থেকে আদনান সাকিব (২৫) নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে তার রুম থেকে একটি সুইসাইডাল নোট উদ্ধার করেছে। সেখানে লেখা ছিল, ‘১ সেকেন্ড ১ বছরের মতো মনে হয়। ১২ বছর যন্ত্রণা সইতে হয়েছে। তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয় বলেও নোটে লিখে গেছেন।’ পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানান, ‘সাকিব যে সুইসাইড নোট লিখে গেছেন সেখানে তিনি তার মৃত্যুর জন্য স্ত্রী নুসরাত আফরিনকে দোষারোপ না করার কথা বলে গেছেন। পাশাপাশি স্ত্রী খুব ভালো বলেও লিখে যান। তবে ১২ বছরের যে যন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে সেটি কি, তা কেউই নিশ্চিত করতে পারেনি। গতকাল দুপুরে এসব তথ্য জানান, শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার। ঘটনার পর পুলিশ ওই সুসাইডাল নোটটি উদ্ধার করে তদন্ত শুরু করেছে।

ওসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুইসাইডাল নোট দেখে মনে হচ্ছে, আদনান সাকিব কোন সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। সেটা পারিবারিক, সাংসারিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত নানা কারণে হতে পারে। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। পাশাপাশি তার স্ত্রীকেও বিষয়গুলো অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তার আত্মহত্যার কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে, সাকিব আত্মহত্যা করেছেন। কেননা, সেগুনবাগিচার আবাসিক হোটেল কর্ণফুলীর দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।’

গত মঙ্গলবার থেকে সাকিব নিখোঁজ ছিলেন। এ জন্য তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির সূত্র ধরে পুলিশ প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে সাকিবের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করে। গত বুধবার রাতে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয়, সাকিব সেগুনবাগিচার ওই হোটেলের ১০৭ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছেন। পরে সেখান থেকে সাকিবের লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহতের স্ত্রী নুসরাত বলেন, পরশুদিন দুপুরে শেষ কথা হয় সাকিবের সঙ্গে। এরপর আর তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার মোবাইল বন্ধ ছিল। সম্ভাব্য অনেক স্থানে খোঁজ-খবর করা হয়। কিন্তু, কেউ তার সন্ধান দিতে পারেনি। পরে বাধ্য হয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করি।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন দ্বন্দ ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিবের স্ত্রী বলেন, আমাদের দাম্পত্য জীবনে এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি যে, সাকিবকে এভাবে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। সাকিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। মাস্টার্স করছিলেন অন্য একটি বিভাগ থেকে। থাকতেন জহুরুল হক হলে। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর ডিমলার সোনাখুলিতে। তার এভাবে চলে যাওয়া সহপাঠীরাও মেনে নিতে পারছেন না।