সম্প্রীতির আলোচনা ও সংখ্যালঘুদের নীরবতা

মিথুশিলাক মুরমু

উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন ফোন করে জানালেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জের আহবানে সম্প্রতি এলাকার সব ধর্মের ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে সম্প্রীতি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যেক ধর্মের পক্ষ থেকে বক্তব্য, মুক্ত আলোচনা এবং শেষান্তে ওসির সমাপনী বক্তব্য ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের হতাশ, ক্ষুব্ধ ও নির্বাক করেছে। উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের নেতার ভাষ্যমতে, ওসি মহোদয় যে বক্তব্য দিয়েছেন- ‘ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম...। অনেক হিন্দু ও অন্য ধর্মের লোকেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।’ তার এ বক্তব্যের পরই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে গুঞ্জনের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

সম্প্রীতির আলোচনাটি হিন্দু, খ্রিস্টান, আদিবাসীদের মন জয় করতে পারেনি। যিনি আমাকে ফোন করে জানালেন তার বক্তব্য হলো- আমরা আমাদের নিজ নিজ ধর্মের সম্প্রীতির বাণী, করণীয় দিকগুলো এবং কীভাবে একসাথে সমঝোতায় বসবাস করা যায়- সেগুলোর আলোচনা প্রাসঙ্গিক। ‘ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব’ বক্তব্যকে অন্য ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা বা হেয় করার শামিল মনে করেছেন। ইসলাম ধর্মের ব্যক্তিরা ব্যতীত সবাই হীনমন্যতায় ভুগেছেন, তাহলে তো আলোচনার রেজাল্ট শূন্য। মনোব্যথা নিয়ে প্রত্যেকেই প্রত্যাবর্তন করেছেন থানার চৌহুদ্দি থেকে।

রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির রকমফের থাকলে সত্যিই সেটি কষ্টজনক। তিনি তো বলতে পারতেন সংবিধানের ২.ক অনুযায়ী, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’

হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মের লোকেরা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন- এটি এ সময়ে না বললে কী ক্ষতি হতো! তাহলে কেন থানার প্রধান কর্মকর্তা এ জাতীয় বক্তব্য উপস্থাপন করলেন। গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল লোকেরা ওসির মুখ থেকে এরূপ বক্তব্য আশা করেননি। সম্প্রীতির আলোচনায় রাষ্ট্রের উদ্যোগ, রাষ্ট্রীয় দর্শন, উন্নয়নে ধর্মান্ধের বাধাগ্রস্ততা, উগ্রবাদিতা ইত্যাদি স্থান পেতে পারে কিন্তু ধর্মান্তরিত হওয়া না হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও অনভিপ্রেত। দেশের সংবিধানে স্পষ্ট করেই বর্ণিত হয়েছে- ‘৪১. ক. প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে; খ. প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে।’

হিন্দু, খ্রিস্টান, আদিবাসী নেতারা ভারাক্রান্ত হৃদয়েই বলেছেন- একদা সাম্প্রদায়িক দেশের জনসাধারণ ছিল অসাম্প্রদায়িক কিন্তু এখন অসাম্প্রদায়িক দেশের প্রতিবেশীরা সাম্প্রদায়িকতা হৃদয়ে লালন করে থাকেন।

সম্প্রীতির সমাবেশ, আলোচনা সভা হচ্ছে এবং বক্তাগণও চমৎকার চমৎকার বক্তব্য দিচ্ছেন। একজন মানুষের অসাম্প্রদায়িকতার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য নিজ থেকেই উদ্ভাসিত হবে। সেটি তার আচার-আচরণ, কথা-বার্তা এবং গৃহীত উদ্যোগসমূহে সেগুলো প্রতীয়মান হয়ে থাকে। সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালোবাসা, প্রেম পারস্পারিক সমর্থক শব্দ। ঐশ^রিক ও মানব প্রেম সম্পর্কে বলা হয়েছে- প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর, ঈর্ষা করে না, প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব করে না, অশিষ্টাচরণ করে না, স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না, অপকার গণনা করে না, অধার্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে; সবাই বহন করে, সবাই বিশ^াস করে, সবাই প্রত্যাশা করে, সবাই ধৈর্য্যপূর্বক সহ্য করে। মানুষের হৃদয়ের পরিবর্তন হওয়া আবশ্যিক, তাহলেই একজন মানুষকে ‘মানুষ’ হিসেবে আমরা সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসতে পারি। স্রষ্টার সৃষ্টি শ্রেষ্ঠজীব মানুষকে ভালোবাসলেই স্রষ্টাকে ভালোবাসা যায়।

২০০১ খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িকতার আলোকে জাতীয় নেতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘গণতদন্ত কমিশন’ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে-

রাষ্ট্র কোন ধর্মকেই আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র হবে সবার।

রাষ্ট্র কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে আনুকূল্য দেখাবে না।

রাষ্ট্র কোন ধর্মাবলম্বীর প্রতি আনুকূল্য বা বৈষম্য দেখাতে পারবে না।

আগামী নির্বাচনে কোন সাম্প্রদায়িক/ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে আঁতাত বা সমঝোতা করা যাবে না।

নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক বা ধর্ম বিশেষের পক্ষে বা বিপক্ষে প্রচারণা চালানো যাবে না।

বাংলাদেশকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, উদার মুসলিম দেশ- এ ধরনের সাম্প্রদায়িক প্রচারণা চালানো যাবে না।

রাষ্ট্রের নাগরিকরা অবাধে ধর্ম পালন করবেন; কিন্তু রাষ্ট্র ধর্ম চর্চা করবে না।

নাগরিককে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু- এভাবে ভাগ করা যাবে না।

অপির্ত সম্পত্তি আইন রাখা যাবে না।

নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে সাংবিধানিক স্বীকৃতির বাইরে রাখা যাবে না।

আমার দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা জমিজমা সমস্যা, প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ কিংবা রাজনৈতিক কোনো সহিংসতা পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়ে থাকে; এজন্যই পুলিশ প্রশাসনের সম্প্রীতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। একপেশে বা বৈষম্যমূলক চিন্তা-চেতনা, কার্যউদ্যোগ বা ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একজন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তার দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা বহুবিধ। গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণের কাছে স্থানীয় প্রশাসনই হচ্ছে সরকারের চিত্র, সরকারের প্রতিনিধি এবং সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কর্মকারীদের উদ্দেশ্যেই বলেছিলেন- ‘সরকারি কর্মচারীদের আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে তাদের সেবা করুন, যাদের অর্থে আজ আমরা চলছি তাদের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। যারা অন্যায় করবে, তাদের অবশ্যই আপনারা কঠোর হস্তে দমন করবেন। কিন্তু সাবধান একজন নিরপরাধ লোকের ওপর যেন অত্যাচার না হয়। তাহলে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠবে... মানুষের সেবার মতো শান্তি দুনিয়ার আর কিছুতে হয় না।’

বাংলাদেশের স্থপতির পদাঙ্ক অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উচ্চারণ করেছেন- ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণের শাসক নয়, সেবক হিসেবে কাজ করবে।’ একজন সেবক হিসেবে মানুষের মধ্যে বিভেদ নয়, কল্যাণের দিকেই জনসাধারণকে ধাবিত করবেন।

শুক্রবার, ২৯ অক্টোবর ২০২১ , ১৩ কার্তিক ১৪২৮ ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সম্প্রীতির আলোচনা ও সংখ্যালঘুদের নীরবতা

মিথুশিলাক মুরমু

উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন ফোন করে জানালেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জের আহবানে সম্প্রতি এলাকার সব ধর্মের ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে সম্প্রীতি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যেক ধর্মের পক্ষ থেকে বক্তব্য, মুক্ত আলোচনা এবং শেষান্তে ওসির সমাপনী বক্তব্য ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের হতাশ, ক্ষুব্ধ ও নির্বাক করেছে। উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের নেতার ভাষ্যমতে, ওসি মহোদয় যে বক্তব্য দিয়েছেন- ‘ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম...। অনেক হিন্দু ও অন্য ধর্মের লোকেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।’ তার এ বক্তব্যের পরই ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে গুঞ্জনের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

সম্প্রীতির আলোচনাটি হিন্দু, খ্রিস্টান, আদিবাসীদের মন জয় করতে পারেনি। যিনি আমাকে ফোন করে জানালেন তার বক্তব্য হলো- আমরা আমাদের নিজ নিজ ধর্মের সম্প্রীতির বাণী, করণীয় দিকগুলো এবং কীভাবে একসাথে সমঝোতায় বসবাস করা যায়- সেগুলোর আলোচনা প্রাসঙ্গিক। ‘ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব’ বক্তব্যকে অন্য ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা বা হেয় করার শামিল মনে করেছেন। ইসলাম ধর্মের ব্যক্তিরা ব্যতীত সবাই হীনমন্যতায় ভুগেছেন, তাহলে তো আলোচনার রেজাল্ট শূন্য। মনোব্যথা নিয়ে প্রত্যেকেই প্রত্যাবর্তন করেছেন থানার চৌহুদ্দি থেকে।

রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির রকমফের থাকলে সত্যিই সেটি কষ্টজনক। তিনি তো বলতে পারতেন সংবিধানের ২.ক অনুযায়ী, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করিবেন।’

হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মের লোকেরা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন- এটি এ সময়ে না বললে কী ক্ষতি হতো! তাহলে কেন থানার প্রধান কর্মকর্তা এ জাতীয় বক্তব্য উপস্থাপন করলেন। গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল লোকেরা ওসির মুখ থেকে এরূপ বক্তব্য আশা করেননি। সম্প্রীতির আলোচনায় রাষ্ট্রের উদ্যোগ, রাষ্ট্রীয় দর্শন, উন্নয়নে ধর্মান্ধের বাধাগ্রস্ততা, উগ্রবাদিতা ইত্যাদি স্থান পেতে পারে কিন্তু ধর্মান্তরিত হওয়া না হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও অনভিপ্রেত। দেশের সংবিধানে স্পষ্ট করেই বর্ণিত হয়েছে- ‘৪১. ক. প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে; খ. প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে।’

হিন্দু, খ্রিস্টান, আদিবাসী নেতারা ভারাক্রান্ত হৃদয়েই বলেছেন- একদা সাম্প্রদায়িক দেশের জনসাধারণ ছিল অসাম্প্রদায়িক কিন্তু এখন অসাম্প্রদায়িক দেশের প্রতিবেশীরা সাম্প্রদায়িকতা হৃদয়ে লালন করে থাকেন।

সম্প্রীতির সমাবেশ, আলোচনা সভা হচ্ছে এবং বক্তাগণও চমৎকার চমৎকার বক্তব্য দিচ্ছেন। একজন মানুষের অসাম্প্রদায়িকতার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য নিজ থেকেই উদ্ভাসিত হবে। সেটি তার আচার-আচরণ, কথা-বার্তা এবং গৃহীত উদ্যোগসমূহে সেগুলো প্রতীয়মান হয়ে থাকে। সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালোবাসা, প্রেম পারস্পারিক সমর্থক শব্দ। ঐশ^রিক ও মানব প্রেম সম্পর্কে বলা হয়েছে- প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর, ঈর্ষা করে না, প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না, গর্ব করে না, অশিষ্টাচরণ করে না, স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না, অপকার গণনা করে না, অধার্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে; সবাই বহন করে, সবাই বিশ^াস করে, সবাই প্রত্যাশা করে, সবাই ধৈর্য্যপূর্বক সহ্য করে। মানুষের হৃদয়ের পরিবর্তন হওয়া আবশ্যিক, তাহলেই একজন মানুষকে ‘মানুষ’ হিসেবে আমরা সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসতে পারি। স্রষ্টার সৃষ্টি শ্রেষ্ঠজীব মানুষকে ভালোবাসলেই স্রষ্টাকে ভালোবাসা যায়।

২০০১ খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িকতার আলোকে জাতীয় নেতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘গণতদন্ত কমিশন’ নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে-

রাষ্ট্র কোন ধর্মকেই আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র হবে সবার।

রাষ্ট্র কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে আনুকূল্য দেখাবে না।

রাষ্ট্র কোন ধর্মাবলম্বীর প্রতি আনুকূল্য বা বৈষম্য দেখাতে পারবে না।

আগামী নির্বাচনে কোন সাম্প্রদায়িক/ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে আঁতাত বা সমঝোতা করা যাবে না।

নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক বা ধর্ম বিশেষের পক্ষে বা বিপক্ষে প্রচারণা চালানো যাবে না।

বাংলাদেশকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, উদার মুসলিম দেশ- এ ধরনের সাম্প্রদায়িক প্রচারণা চালানো যাবে না।

রাষ্ট্রের নাগরিকরা অবাধে ধর্ম পালন করবেন; কিন্তু রাষ্ট্র ধর্ম চর্চা করবে না।

নাগরিককে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু- এভাবে ভাগ করা যাবে না।

অপির্ত সম্পত্তি আইন রাখা যাবে না।

নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে সাংবিধানিক স্বীকৃতির বাইরে রাখা যাবে না।

আমার দেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা জমিজমা সমস্যা, প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ কিংবা রাজনৈতিক কোনো সহিংসতা পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়ে থাকে; এজন্যই পুলিশ প্রশাসনের সম্প্রীতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। একপেশে বা বৈষম্যমূলক চিন্তা-চেতনা, কার্যউদ্যোগ বা ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একজন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তার দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা বহুবিধ। গ্রামাঞ্চলের জনসাধারণের কাছে স্থানীয় প্রশাসনই হচ্ছে সরকারের চিত্র, সরকারের প্রতিনিধি এবং সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কর্মকারীদের উদ্দেশ্যেই বলেছিলেন- ‘সরকারি কর্মচারীদের আমি অনুরোধ করি, যাদের অর্থে আমাদের সংসার চলে তাদের সেবা করুন, যাদের অর্থে আজ আমরা চলছি তাদের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। যারা অন্যায় করবে, তাদের অবশ্যই আপনারা কঠোর হস্তে দমন করবেন। কিন্তু সাবধান একজন নিরপরাধ লোকের ওপর যেন অত্যাচার না হয়। তাহলে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে উঠবে... মানুষের সেবার মতো শান্তি দুনিয়ার আর কিছুতে হয় না।’

বাংলাদেশের স্থপতির পদাঙ্ক অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উচ্চারণ করেছেন- ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণের শাসক নয়, সেবক হিসেবে কাজ করবে।’ একজন সেবক হিসেবে মানুষের মধ্যে বিভেদ নয়, কল্যাণের দিকেই জনসাধারণকে ধাবিত করবেন।