গুগল, ফেইসবুক ও ইউটিউব থেকে রাজস্ব আদায়ের নির্দেশ

গুগল-ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, অ্যামাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত অর্থ থেকে ট্যাক্স, ভ্যাট এবং অন্য রাজস্ব আদায় করতে সরকারের সাত মন্ত্রণালয়-সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গত বছরের ৮ নভেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ আদেশে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের রায়ের ১৪৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের ওয়ায়েস আল হারুনী।

রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব সাংবাদিকদের জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুগল- ফেসবুক এবং অন্য ইন্টারনেট কোম্পানির বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার বিষয় এবং বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনের লক্ষ্যে জনস্বার্থে দায়ের করা রিট পিটিশনের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিবাদীদের প্রতি কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এই রায় দেশের জন্য একটি যুগান্তকারী রায় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ধারা ৪ অনুযায়ী গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে মূসক নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক এবং দ্য ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪-এর ধারা ৭৫ মোতাবেক গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে বাধ্য।

মূল্য সংযোজক কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এবং দ্য ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪ আইন অনুযায়ী গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মূসক, টার্নওভার কর ও সম্পূরক শুল্ক, ধারা ১৫-এর অধীন আরোপিত মূল্য সংযোজন কর এবং আয়কর প্রদানসহ সকল ধরনের রাজস্ব প্রদান করছেন না।

রায়ে আরও বলা হয়েছে, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি, লাইসেন্স ফিসহ সকল প্রকার লেনদেন থেকে উৎসে কর, শুল্কসহ সকল ধরনের রাজস্ব বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য পাওনা।

বাংলাদেশের জনগণের এই ন্যায্য পাওনা গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মূসক, টার্নওভার কর ও সম্পূরক শুল্ক, ধারা ১৫-এর অধীন আরোপিত মূল্য সংযোজন কর এবং আয়কর প্রদানসহ সকল ধরনের রাজস্ব বকেয়াসহ প্রদান করবেন এটি বাংলাদেশের জনগণ আশা করে।

যেহেতু বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবির উপরিল্লিখিত সকল চিঠিপত্র এবং অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট ও লেখা পর্যালোচনায় এটা কাচের মতো পরিষ্কার যে, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি, লাইসেন্স ফিসহ সকল প্রকার লেনদেন থেকে উৎসে কর, শুল্কসহ সকল ধরনের রাজস্ব প্রদান বাংলাদেশে করছেন না এবং যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাপক পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে এবং যেহেতু গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মূসক, টার্নওভার কর ও সম্পূরক শুল্ক, ধারা ১৫-এর অধীন আরোপিত মূল্য সংযোজন কর এবং আয়কর প্রদান না করা বেআইনি, সেহেতু অত্র রুলটি চূড়ান্ত (যথাযথ ঘোষণা) যোগ্য।

শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১ , ১৪ কার্তিক ১৪২৮ ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

গুগল, ফেইসবুক ও ইউটিউব থেকে রাজস্ব আদায়ের নির্দেশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

গুগল-ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, অ্যামাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত অর্থ থেকে ট্যাক্স, ভ্যাট এবং অন্য রাজস্ব আদায় করতে সরকারের সাত মন্ত্রণালয়-সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গত বছরের ৮ নভেম্বর এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ আদেশে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের রায়ের ১৪৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের ওয়ায়েস আল হারুনী।

রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব সাংবাদিকদের জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুগল- ফেসবুক এবং অন্য ইন্টারনেট কোম্পানির বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার বিষয় এবং বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনের লক্ষ্যে জনস্বার্থে দায়ের করা রিট পিটিশনের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিবাদীদের প্রতি কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এই রায় দেশের জন্য একটি যুগান্তকারী রায় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ধারা ৪ অনুযায়ী গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে মূসক নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক এবং দ্য ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪-এর ধারা ৭৫ মোতাবেক গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে বাধ্য।

মূল্য সংযোজক কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এবং দ্য ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪ আইন অনুযায়ী গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মূসক, টার্নওভার কর ও সম্পূরক শুল্ক, ধারা ১৫-এর অধীন আরোপিত মূল্য সংযোজন কর এবং আয়কর প্রদানসহ সকল ধরনের রাজস্ব প্রদান করছেন না।

রায়ে আরও বলা হয়েছে, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি, লাইসেন্স ফিসহ সকল প্রকার লেনদেন থেকে উৎসে কর, শুল্কসহ সকল ধরনের রাজস্ব বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য পাওনা।

বাংলাদেশের জনগণের এই ন্যায্য পাওনা গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী মূসক, টার্নওভার কর ও সম্পূরক শুল্ক, ধারা ১৫-এর অধীন আরোপিত মূল্য সংযোজন কর এবং আয়কর প্রদানসহ সকল ধরনের রাজস্ব বকেয়াসহ প্রদান করবেন এটি বাংলাদেশের জনগণ আশা করে।

যেহেতু বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), গ্রামীণফোন, বাংলালিংক ও রবির উপরিল্লিখিত সকল চিঠিপত্র এবং অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট ও লেখা পর্যালোচনায় এটা কাচের মতো পরিষ্কার যে, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিজ্ঞাপন, ডোমেইন বিক্রি, লাইসেন্স ফিসহ সকল প্রকার লেনদেন থেকে উৎসে কর, শুল্কসহ সকল ধরনের রাজস্ব প্রদান বাংলাদেশে করছেন না এবং যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাপক পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে এবং যেহেতু গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, ইয়াহু, আমাজনসহ অন্য ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মূসক, টার্নওভার কর ও সম্পূরক শুল্ক, ধারা ১৫-এর অধীন আরোপিত মূল্য সংযোজন কর এবং আয়কর প্রদান না করা বেআইনি, সেহেতু অত্র রুলটি চূড়ান্ত (যথাযথ ঘোষণা) যোগ্য।