বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাল ভরাট করে তৈরি করা হলো পার্ক। সেটিও ছিল পরিবেশ রক্ষার উপযোগী। ছিল শিশুদের চিত্ত বিনোদনের স্থান। কিন্তু অবহেলায় সেটির হাল এখন গোচারণভূমি।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের একমাত্র শিশুপার্ক এটি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় শিশুদের ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পার্কের সব কটি দোলনা, সিøপার, রাইড ভেঙে গেছে। তবু দীর্ঘদিনেও মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় পার্কটি এখন শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র নয়, গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।
দীর্ঘ আয়তনের পার্কটির থানার মোড় এলাকা অংশ শিশুদের এবং থানা ভবনের সামনে থেকে হাইস্কুল মোড় পর্যন্ত বড়দের পার্ক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পুরো পার্কজুড়ে ছিল অসংখ্য রকমারি ফুলের গাছ। সারাবছর মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা থাকতো পুরো এলাকা। ফুলবাগানের মাঝে রাস্তা আর দুপাশে ছিল বসার জন্য ঢালাই করা ব্রেঞ্চ। প্রতিদিন বিকেলটা থাকতো শিশুদের কলকাকলিতে মুখর।
অভিভাবকেরা তাদের শিশুদের নিয়ে আসতেন এখানে। শিশুদের খেলতে দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতেন। আর বড়দের পার্কে সকাল থেকেই উঠতি ছেলেমেয়ে, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী আর সব বয়সের মানুষের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মত। কিন্তু এখন এসবের কিছুই অবশিষ্ট নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতায় পার্কটিতে এখন শিশুদের কোলাহল নেই, নেই ফুলের সৌরভ। এখন শোনা যায় গরুর হাম্বা ডাক। পার্কের ফুলের গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। বিদায় করে দেয়া হয়েছে কেয়ার টেকার কাম মালিকে। ফুলগাছের বদলে এখন পুরো পার্কজুড়ে শুধু ঘাস আর মাঝে মাঝে ঝোপ জঙ্গল। দুবছর আগে পার্কের মাঝখানে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু দুপাশে শিশুপার্ক ও বড়দের পার্কের কোনো উন্নয়ন করা হয়নি।
পার্কের এই জায়গাটি ছিল সড়কের পাশের গভীর নয়ানজলি বা খাল। উপজেলা শহরের বৃষ্টির পানি আর ডাকবাংলো সংলগ্ন কলেজ মাঠের পানি গিয়ে পড়তো ওই খালে। বিএনপির শাসনামলে খাল ভরাট করে পার্কটি নির্মাণ করা হয়। নাম দেয়া হয় জিয়া শিশুপার্ক। ১৯৯৪ সালের ৩ আগস্ট এলাকার এমপি (পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার) প্রয়াত আখতার হামিদ সিদ্দিকী এটি উদ্বোধন করেন। এটি নির্মাণের সময়ই বিতর্ক শুরু হয়। খালটি ভরাট করায় এলাকার পানি নিষ্কাষনে দারুণ সমস্যার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিপাতেই খেলার মাঠে পানি জমে যায়। এ জলাবদ্ধতা নিরসনে গতবছর মাঠের পূর্বপাশ দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।
এসব নানা কারণে বিএনপি পরবর্তী সময়ে এটির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আর আগ্রহ দেখায়নি। এছাড়া স্থানীয়রা মনে করেন, পার্কটির বিশেষ নামকরণের জন্য রাজনৈতিক কারণে পরবর্তীতে এর উন্নয়ন হয়নি। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সাত্তার নান্নু বলেন, পার্কটির নাম জিয়া শিশুপার্ক হবার কারণেই ২০০৭ সালের পর এটি ধ্বংস করে ফেলা হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবীব ভোদন বলেন, পার্কটি নির্মাণ করেছিল নওগাঁ জেলা পরিষদ। এটি দেখাশুনা ও উন্নয়নের দায়িত্ব তাদেরই। তিনি বলেন, কাগজে কলমে কোথাও এ পার্কটির নামকরণ নাই। শুধু পার্কের গেটের উপর লেখা ছিল। কিন্তু জিয়া শিশুপার্ক বা বঙ্গবন্ধু শিশুপার্ক নামকরণ হলেই কোন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন থেমে থাকে না। অচিরেই এটির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১ , ১৪ কার্তিক ১৪২৮ ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩
প্রতিনিধি, মহাদেবপুর (নওগাঁ)
বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাল ভরাট করে তৈরি করা হলো পার্ক। সেটিও ছিল পরিবেশ রক্ষার উপযোগী। ছিল শিশুদের চিত্ত বিনোদনের স্থান। কিন্তু অবহেলায় সেটির হাল এখন গোচারণভূমি।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের একমাত্র শিশুপার্ক এটি। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় শিশুদের ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পার্কের সব কটি দোলনা, সিøপার, রাইড ভেঙে গেছে। তবু দীর্ঘদিনেও মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় পার্কটি এখন শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র নয়, গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।
দীর্ঘ আয়তনের পার্কটির থানার মোড় এলাকা অংশ শিশুদের এবং থানা ভবনের সামনে থেকে হাইস্কুল মোড় পর্যন্ত বড়দের পার্ক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পুরো পার্কজুড়ে ছিল অসংখ্য রকমারি ফুলের গাছ। সারাবছর মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারা থাকতো পুরো এলাকা। ফুলবাগানের মাঝে রাস্তা আর দুপাশে ছিল বসার জন্য ঢালাই করা ব্রেঞ্চ। প্রতিদিন বিকেলটা থাকতো শিশুদের কলকাকলিতে মুখর।
অভিভাবকেরা তাদের শিশুদের নিয়ে আসতেন এখানে। শিশুদের খেলতে দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতেন। আর বড়দের পার্কে সকাল থেকেই উঠতি ছেলেমেয়ে, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী আর সব বয়সের মানুষের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মত। কিন্তু এখন এসবের কিছুই অবশিষ্ট নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতায় পার্কটিতে এখন শিশুদের কোলাহল নেই, নেই ফুলের সৌরভ। এখন শোনা যায় গরুর হাম্বা ডাক। পার্কের ফুলের গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। বিদায় করে দেয়া হয়েছে কেয়ার টেকার কাম মালিকে। ফুলগাছের বদলে এখন পুরো পার্কজুড়ে শুধু ঘাস আর মাঝে মাঝে ঝোপ জঙ্গল। দুবছর আগে পার্কের মাঝখানে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু দুপাশে শিশুপার্ক ও বড়দের পার্কের কোনো উন্নয়ন করা হয়নি।
পার্কের এই জায়গাটি ছিল সড়কের পাশের গভীর নয়ানজলি বা খাল। উপজেলা শহরের বৃষ্টির পানি আর ডাকবাংলো সংলগ্ন কলেজ মাঠের পানি গিয়ে পড়তো ওই খালে। বিএনপির শাসনামলে খাল ভরাট করে পার্কটি নির্মাণ করা হয়। নাম দেয়া হয় জিয়া শিশুপার্ক। ১৯৯৪ সালের ৩ আগস্ট এলাকার এমপি (পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার) প্রয়াত আখতার হামিদ সিদ্দিকী এটি উদ্বোধন করেন। এটি নির্মাণের সময়ই বিতর্ক শুরু হয়। খালটি ভরাট করায় এলাকার পানি নিষ্কাষনে দারুণ সমস্যার সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিপাতেই খেলার মাঠে পানি জমে যায়। এ জলাবদ্ধতা নিরসনে গতবছর মাঠের পূর্বপাশ দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।
এসব নানা কারণে বিএনপি পরবর্তী সময়ে এটির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আর আগ্রহ দেখায়নি। এছাড়া স্থানীয়রা মনে করেন, পার্কটির বিশেষ নামকরণের জন্য রাজনৈতিক কারণে পরবর্তীতে এর উন্নয়ন হয়নি। উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সাত্তার নান্নু বলেন, পার্কটির নাম জিয়া শিশুপার্ক হবার কারণেই ২০০৭ সালের পর এটি ধ্বংস করে ফেলা হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবীব ভোদন বলেন, পার্কটি নির্মাণ করেছিল নওগাঁ জেলা পরিষদ। এটি দেখাশুনা ও উন্নয়নের দায়িত্ব তাদেরই। তিনি বলেন, কাগজে কলমে কোথাও এ পার্কটির নামকরণ নাই। শুধু পার্কের গেটের উপর লেখা ছিল। কিন্তু জিয়া শিশুপার্ক বা বঙ্গবন্ধু শিশুপার্ক নামকরণ হলেই কোন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন থেমে থাকে না। অচিরেই এটির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হবে।