একে একে বন্ধ হচ্ছে রেলস্টেশন

চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন করে আরও ১০টিসহ ১১৬টি বন্ধ

একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলো। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন করে আরও ১০টি স্টেশনসহ মোট ১১৬টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে।

এর মধ্যে জনবল সংকটের কারণে গত সেপ্টেম্বর মাসে লাকসাম-চাঁদপুর রুটের ‘চিতষীরোড’ স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এর এক মাস আগে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জবাজার রুটের ‘নুরুন্দী’ স্টেশনটি বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে। মাস্টার না থাকায় গত জুলাই মাস থেকে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজারের ‘লংলা’ বন্ধ রয়েছে।

এভাবেই প্রতিমাসেই বন্ধ হচ্ছে রেলওয়ের স্টেশন। এতে স্থানীয় যাত্রীদের ক্ষোভের সৃষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চুরি হচ্ছে রেলওয়ে মূল্যবান সম্পদ। এ পর্যন্ত ১১৬টি স্টেশন দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

গত ১৮ বছর যাবত বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিভাগে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার রুটের লস্করপুর স্টেশনটি। ১০ বছর যাবত বন্ধ থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে প্রথম স্টেশন কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশনের নাম। সারাদেশে প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৪৮৩টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে অপারেটিং (রেলওয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত) স্টেশন রয়েছে ৩৫৯টি। বাকি ১২৪টি স্টেশন ডি ক্লাশ (স্বল্প রিবতিকালীন)।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ৪টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৬টি স্টেশন নতুন করে বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া ১৬টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৯ সালে ২৬টি এবং ২০১০ সালে ৩৪টি। পরবর্তীতে ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ১১৬টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের অপারেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বন্ধ রেখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন চালু রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতি মাসে আমরা উচ্চপর্যায়ে চিঠি দিচ্ছি। কিন্তু পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে না। লোকবল স্বল্পতার কারণে ২০০৭ সালে একাধিক স্টেশন বন্ধ করে দিতে হয়।’

রেলওয়ে সূত্র জানায়, মোট রেলস্টেশনের মধ্যে পূর্বাঞ্চলে রয়েছে ২২৮টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ২৫৫টি স্টেশন রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৭০টি বন্ধ স্টেশন পশ্চিমাঞ্চলে। পূর্বাঞ্চলে বন্ধ স্টেশন রয়েছে ৪৬টি। রেলওয়ের চার শ্রেণীর স্টেশন রয়েছে।

এ ও বি ক্লাশ স্টেশন রেলওয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। এছাড়া ডি ও হল্ট ক্লাশ স্টেশন মাস্টার বিহীন স্বল্প বিরতির জন্য ব্যবহার করা হয়। রেলওয়ের ১২৪টি স্টেশন ডি ও হল্ট ক্লাশের স্টেশন রয়েছে। এছাড়া আংশিক ও এক/দুই শিফট করে বন্ধ রয়েছে অর্ধশত স্টেশন। এসব স্টেশনের অধিকাংশই মাস্টার সংকটের কারণে চালু করা যাচ্ছে না বলে জানান রেল কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সংবাদকে বলেন, ‘জনবল সংকটে সারাদেশে রেল ১০০ উপরে স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সত্তরের দশকে সারাদেশে রেলের লোকবল ছিল প্রায় ৭০ হাজার। যা কমতে কমতে এখন এসে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজারে। তবে পর্যায়ক্রমে জনবল নিয়োগ দিয়ে বন্ধ স্টেশনগুলো চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৩৫টি সহকারী স্টেশন মাস্টার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ এদের নিয়োগ শেষ হলে অনেক স্টেশন চালু করা যাবে বলে জানান তিনি।

পশ্চিমাঞ্চলের ৭০ যাত্রীবাহী স্টেশন বন্ধ

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে ২৫৬টি স্টেশনের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৭০টি। এর মধ্যে লালমনিরহাট বিভাগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ২০টি স্টেশন হলো- আলতাফনগর, ভেলুরপাড়া, কাহালু, নলডাঙ্গা, চৌধুরানী, বাদিয়াখালী, কাউগাঁ, মন্মথপুর, খোলাহাটা, অন্নদানগর, ভোমরাদহ, শিবগঞ্জ, ভোটমারী, বাউরা, পাটগ্রাম, আদিতমারী, মহেন্দ্রনগর, ত্রিমোহনী, রাজারহাট ও উলিপুর।

এছাড়া পাকশী বিভাগে ৫০টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা-দর্শনা রুটে ৬টি বন্ধ স্টেশন হলো- ফুলতলা, চেংগুটিয়া, রূপদিয়া, যশোর ক্যান্টনমেন্ট, মেহেরুন্নেসানগর ও আনসারবাড়ীয়া, দর্শনা-ঈশ্বরদী রুটে ৪টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো-জয়রামপুর, মোমিনপুর, মুন্সীগঞ্জ ও মিরপুর।

যশোর-বেনাপোল রুটে নাভারণ ও ঝিকরাগাছা দুটি স্টেশন বন্ধ, ঈশ্বরদী-সান্তাহার রুটে মালঞ্চি, ইয়াসিনপুর, বাসুদেবপুর ও সাহাগোলা চারটি স্টেশন দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সান্তাহার-পার্বতীপুর রুটে তিলকপুর, জামালগঞ্জ, ভবানীপুর ও হিলি এই চারটি যাত্রীবাহী স্টেশন বন্ধ রয়েছে।

পার্বতীপুর-চিলাহাটি রুটের বেলাইচড়ি, দারোয়ানি, মির্জাগঞ্জ, ঈশ্বরদী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে নন্দনগাছি ও নাচোল, ঈশ্বরদী-জামতৈল-সিবাজার রুটে শরৎনগর স্টেশন, পোড়াদহ-গোয়ালন্দঘাট রুটে জগতি, চড়াইকোল, মাছপাড়া, বেলগাছি, গোয়ালন্দবাজার, খোকসা ও সাতৈরসহ ৭টি স্টেশন দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে।

কালুখালী-ভাটিয়াপাড়াঘাট রুটে বহরপুর, নলিয়াগ্রাম, বোয়ালমারী বাজার ও সহ¯্রাইল স্টেশন, কাশিয়ানী-গোবরা রুটে ৫টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো-চাপতা, ছোটবাহিরবাগ, চন্দ্রদিঘলিয়া, বোড়াশী ও গোবরা স্টেশন। মাঝগ্রাম-ঢালারচর রুটে দাশুড়িয়া, টেবুনিয়া, দুবলিয়া, তাতীবান্ধা ও কাশিনাথপুর স্টেশন, পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা রুটে খানখানাপুর-তালমা-পুকুরিয়া যাত্রীবাহী স্টেশন দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলো দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। কাছের স্টেশন বন্ধ থাকায় অনেক দূরে গিয়ে ট্রেনে চড়তে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পশ্চিম রেলের রাজস্ব আয় কমে গেছে অপদিকে যাত্রীরা সড়ক নির্ভর হয়ে পড়ছে বলে অনেকে মনে করছেন। এসব স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক যাত্রী বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতো বলে স্থানীয় সূত্রে জানায়।

পূর্বাঞ্চলের ৪৬টি স্টেশন সম্পূর্ণ বন্ধ

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ২২৮টি স্টেশনের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে প্রায় ৪৬টি স্টেশন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৯টি ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। ঢাকা বিভাগে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার রুটের লস্করপুর স্টেশনটি দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত বন্ধ রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে ২০০৩ সালে ২৬ জুলাই স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর এই রুটে ২০০৯-১০ সালে টিলাগাঁও ও ইটাখোলা স্টেশন দুটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া ভাটেরাবাজার, আফজালাবাদ, খাজাঞ্চিগাঁও ও ছাতকবাজার ১০ বছর যাবত সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে সর্বশেষ গত ১ জুলাই লংলা স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া হয় বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে ডানকান ব্রাদার্সের চা বাগান ও এলাকার জনসাধারণের সুবিধার্থে টিলাগাঁও স্টেশন স্থাপন করা হয়েছিল। বি-গ্রেডের স্টেশন টিলাগাঁওয়ে শুধু বাগানের মালপত্র বুকিং করেই সরকারের প্রচুর টাকা রাজস্ব আয় হতো। একইভাবে শিল্প কারখানা ও চা বাগানবেষ্টিত লস্করপুর, ইটাখোলা স্টেশন ও ভাটেরা রেলস্টেশনগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও বর্তমানে এগুলো অরক্ষিত অবস্থায় আছে।

প্রতিটি স্টেশনে তিনজন মাস্টার থাকার কথা থাকলেও নেই একজনও। লোকবলের অভাবে দীর্ঘদিন থেকে টিলাগাঁও স্টেশনে ক্রসিং বন্ধ থাকার কারণে লংলা অথবা শমসেরনগর স্টেশনে দেয়া হয় ট্রেনের ক্রসিং। ভাটেরা স্টেশন বন্ধ থাকায় মাইজগাঁও ও বরমচাল স্টেশনে এবং লস্করপুর বন্ধ থাকায় শায়েস্তাগঞ্জ অথবা রশীদপুর স্টেশনে ক্রসিং দেয়া হয়। ইটাখোলা স্টেশন বন্ধ থাকায় নোয়াপাড়া অথবা মনতলা স্টেশনে ট্রেনের ক্রসিং দেয়া হয়। এতে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামগ্রামী আন্তঃনগর ট্রেনকে ক্রসিংয়ের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অসংখ্য যাত্রী সিলেট, আখাউড়া, ঢাকা ও চট্টগ্রামে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন বলে স্থানীয়রা জানান।

এছাড়া আখাউড়া-ঢাকা রুটে আশুগঞ্জ ও শ্রীনিধী স্টেশন, ভৈরববাজার-ময়মনসিংহ রুটে কালিকাপ্রসাদ, নীলগঞ্জ, সোহাগী ও বিষকা, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার রুটে ইজ্জতপুর, সাতখামাইর, উমেদনগর, বেগুনবাড়ী, মোশারফগঞ্জ, জামালপুরকোট সম্পূর্ণ বন্ধ। এছাড়া এ রুটে আংশিক বন্ধ স্টেশন হলো- ময়মনসিংহ রোড, দুরমুট ও নূরুন্দী।

জামালপুর-জংশন-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রুটে বাউসি, শহীদনগর বারৈপটল, হেমনগর, বাহাদুরাবাদঘাট ও কেন্দুয়াবাজার স্টেশন বন্ধ রয়েছে। ময়মনসিংহ-ঝারিয়াঞ্জাইল-মোহনগঞ্জ রুটে পূর্বধলা যাত্রীবাহী স্টেশনটি দশ বছর যাবত বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা বিভাগে ১৭ স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো-বাড়বকু-, বারৈয়াঢালা, মিরসরাই, মস্তাননগর, মুহরীগঞ্জ, কালিদহ, শর্শদী, নাওটি, আলীশহর, ময়নামতি, রাজাপুর, দৌলতগঞ্জ, খিলা, বজরা, শাহাতলী, মধুরোড ও চিতষীরোড স্টেশন।

এছাড়া হবিগঞ্জ জেলার চুনারঘাট ও বাহুবল উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত সাটিয়াজুরী রেল স্টেশন নামে রেল স্টেশন হলেও কাজের কাজ কিছুই নেই এ রেল স্টেশনে। অথচ এ স্টেশনই এক সময় ছিল খুবই জমজমাট। বর্তমানে স্টেশনে ২৪ ঘণ্টা তালা ঝুলছে। নেই মাস্টার, ক্লাক কিছুই। অথচ এ স্টেশন থেকে সরকার আয় করছে লাখ লাখ টাকা। দুটি উপজেলার ৫০/৬০ গ্রামের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এ স্টেশন দিয়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করত এ এলাকার মানুষ।

কুষ্টিয়ার জগতি রেলওয়ের প্রথম স্টেশন

কুষ্টিয়ার জগতি এলাকায় দেশের সর্বপ্রথম রেলওয়ে স্টেশন অবস্থিত। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতার রানাঘাট থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ চালু হয়। রেলপথ ও জগতি স্টেশন স্থাপনের পর দেশে শুরু হয় রেলওয়ের যাত্রা। কিন্তু অবহেলায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে দেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশনটি।

পরবর্তীতে ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারিতে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত আরও ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ সম্প্রসারণসহ পর্যায় ক্রমে দেশজুড়ে রেলওয়ের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হয়। কিন্তু ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক আড়াইশ বছর আগে স্থাপিত দেশের প্রথম এ স্টেশনটির বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক ও জরাজীর্ণ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলায় সংস্কার কিংবা আধুনিকায়নের অভাবে দোতলা স্টেশন ভবনটি এখন ব্যবহার অনুপযোগী ও পরিত্যক্ত।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্য পরিবহনে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে জগতি রেলওয়ে স্টেশনটির গুরুত্ব ও কদর ছিল। দোতলা স্টেশন ভবনটির ছাদে জন্মেছে প্রচুর আগাছা। ভবনটিতে ধরেছে ফাটল। অযতœ-অবহেলায় স্টেশন ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্ল্যাটফর্মের ইট ও গাঁথুনি ক্ষয়ে গেছে। প্লাটফর্মের অদূরেই তৎকালে নির্মিত বিশাল আয়তনের ওভারহেড পানির ট্যাংকটি বিলীন হয়ে গেছে। স্টেশন মাস্টাসহ প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় স্টেশনটি ১০ বছর যাবত বন্ধ রয়েছে।

শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১ , ১৪ কার্তিক ১৪২৮ ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

একে একে বন্ধ হচ্ছে রেলস্টেশন

চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন করে আরও ১০টিসহ ১১৬টি বন্ধ

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের প্রথম রেলস্টেশন কুষ্টিয়ার ‘জগতি’

একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলো। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নতুন করে আরও ১০টি স্টেশনসহ মোট ১১৬টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে।

এর মধ্যে জনবল সংকটের কারণে গত সেপ্টেম্বর মাসে লাকসাম-চাঁদপুর রুটের ‘চিতষীরোড’ স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এর এক মাস আগে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জবাজার রুটের ‘নুরুন্দী’ স্টেশনটি বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে। মাস্টার না থাকায় গত জুলাই মাস থেকে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজারের ‘লংলা’ বন্ধ রয়েছে।

এভাবেই প্রতিমাসেই বন্ধ হচ্ছে রেলওয়ের স্টেশন। এতে স্থানীয় যাত্রীদের ক্ষোভের সৃষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চুরি হচ্ছে রেলওয়ে মূল্যবান সম্পদ। এ পর্যন্ত ১১৬টি স্টেশন দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

গত ১৮ বছর যাবত বন্ধ রয়েছে ঢাকা বিভাগে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার রুটের লস্করপুর স্টেশনটি। ১০ বছর যাবত বন্ধ থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে প্রথম স্টেশন কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশনের নাম। সারাদেশে প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৪৮৩টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে অপারেটিং (রেলওয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত) স্টেশন রয়েছে ৩৫৯টি। বাকি ১২৪টি স্টেশন ডি ক্লাশ (স্বল্প রিবতিকালীন)।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ৪টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৬টি স্টেশন নতুন করে বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া ১৬টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে ২০০৮ সাল থেকে। ২০০৯ সালে ২৬টি এবং ২০১০ সালে ৩৪টি। পরবর্তীতে ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ১১৬টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের অপারেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বন্ধ রেখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন চালু রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতি মাসে আমরা উচ্চপর্যায়ে চিঠি দিচ্ছি। কিন্তু পরিস্থিতির কোন উন্নতি হচ্ছে না। লোকবল স্বল্পতার কারণে ২০০৭ সালে একাধিক স্টেশন বন্ধ করে দিতে হয়।’

রেলওয়ে সূত্র জানায়, মোট রেলস্টেশনের মধ্যে পূর্বাঞ্চলে রয়েছে ২২৮টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ২৫৫টি স্টেশন রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৭০টি বন্ধ স্টেশন পশ্চিমাঞ্চলে। পূর্বাঞ্চলে বন্ধ স্টেশন রয়েছে ৪৬টি। রেলওয়ের চার শ্রেণীর স্টেশন রয়েছে।

এ ও বি ক্লাশ স্টেশন রেলওয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। এছাড়া ডি ও হল্ট ক্লাশ স্টেশন মাস্টার বিহীন স্বল্প বিরতির জন্য ব্যবহার করা হয়। রেলওয়ের ১২৪টি স্টেশন ডি ও হল্ট ক্লাশের স্টেশন রয়েছে। এছাড়া আংশিক ও এক/দুই শিফট করে বন্ধ রয়েছে অর্ধশত স্টেশন। এসব স্টেশনের অধিকাংশই মাস্টার সংকটের কারণে চালু করা যাচ্ছে না বলে জানান রেল কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সংবাদকে বলেন, ‘জনবল সংকটে সারাদেশে রেল ১০০ উপরে স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সত্তরের দশকে সারাদেশে রেলের লোকবল ছিল প্রায় ৭০ হাজার। যা কমতে কমতে এখন এসে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজারে। তবে পর্যায়ক্রমে জনবল নিয়োগ দিয়ে বন্ধ স্টেশনগুলো চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৩৫টি সহকারী স্টেশন মাস্টার পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ এদের নিয়োগ শেষ হলে অনেক স্টেশন চালু করা যাবে বলে জানান তিনি।

পশ্চিমাঞ্চলের ৭০ যাত্রীবাহী স্টেশন বন্ধ

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে ২৫৬টি স্টেশনের মধ্যে বন্ধ রয়েছে ৭০টি। এর মধ্যে লালমনিরহাট বিভাগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ২০টি স্টেশন হলো- আলতাফনগর, ভেলুরপাড়া, কাহালু, নলডাঙ্গা, চৌধুরানী, বাদিয়াখালী, কাউগাঁ, মন্মথপুর, খোলাহাটা, অন্নদানগর, ভোমরাদহ, শিবগঞ্জ, ভোটমারী, বাউরা, পাটগ্রাম, আদিতমারী, মহেন্দ্রনগর, ত্রিমোহনী, রাজারহাট ও উলিপুর।

এছাড়া পাকশী বিভাগে ৫০টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে খুলনা-দর্শনা রুটে ৬টি বন্ধ স্টেশন হলো- ফুলতলা, চেংগুটিয়া, রূপদিয়া, যশোর ক্যান্টনমেন্ট, মেহেরুন্নেসানগর ও আনসারবাড়ীয়া, দর্শনা-ঈশ্বরদী রুটে ৪টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো-জয়রামপুর, মোমিনপুর, মুন্সীগঞ্জ ও মিরপুর।

যশোর-বেনাপোল রুটে নাভারণ ও ঝিকরাগাছা দুটি স্টেশন বন্ধ, ঈশ্বরদী-সান্তাহার রুটে মালঞ্চি, ইয়াসিনপুর, বাসুদেবপুর ও সাহাগোলা চারটি স্টেশন দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে। এছাড়া সান্তাহার-পার্বতীপুর রুটে তিলকপুর, জামালগঞ্জ, ভবানীপুর ও হিলি এই চারটি যাত্রীবাহী স্টেশন বন্ধ রয়েছে।

পার্বতীপুর-চিলাহাটি রুটের বেলাইচড়ি, দারোয়ানি, মির্জাগঞ্জ, ঈশ্বরদী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে নন্দনগাছি ও নাচোল, ঈশ্বরদী-জামতৈল-সিবাজার রুটে শরৎনগর স্টেশন, পোড়াদহ-গোয়ালন্দঘাট রুটে জগতি, চড়াইকোল, মাছপাড়া, বেলগাছি, গোয়ালন্দবাজার, খোকসা ও সাতৈরসহ ৭টি স্টেশন দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে।

কালুখালী-ভাটিয়াপাড়াঘাট রুটে বহরপুর, নলিয়াগ্রাম, বোয়ালমারী বাজার ও সহ¯্রাইল স্টেশন, কাশিয়ানী-গোবরা রুটে ৫টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো-চাপতা, ছোটবাহিরবাগ, চন্দ্রদিঘলিয়া, বোড়াশী ও গোবরা স্টেশন। মাঝগ্রাম-ঢালারচর রুটে দাশুড়িয়া, টেবুনিয়া, দুবলিয়া, তাতীবান্ধা ও কাশিনাথপুর স্টেশন, পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর-ভাঙ্গা রুটে খানখানাপুর-তালমা-পুকুরিয়া যাত্রীবাহী স্টেশন দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলো দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ থাকায় যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে দুর্ভোগে। কাছের স্টেশন বন্ধ থাকায় অনেক দূরে গিয়ে ট্রেনে চড়তে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পশ্চিম রেলের রাজস্ব আয় কমে গেছে অপদিকে যাত্রীরা সড়ক নির্ভর হয়ে পড়ছে বলে অনেকে মনে করছেন। এসব স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক যাত্রী বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতো বলে স্থানীয় সূত্রে জানায়।

পূর্বাঞ্চলের ৪৬টি স্টেশন সম্পূর্ণ বন্ধ

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ২২৮টি স্টেশনের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে প্রায় ৪৬টি স্টেশন সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২৯টি ও চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। ঢাকা বিভাগে আখাউড়া-সিলেট-ছাতকবাজার রুটের লস্করপুর স্টেশনটি দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত বন্ধ রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে ২০০৩ সালে ২৬ জুলাই স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর এই রুটে ২০০৯-১০ সালে টিলাগাঁও ও ইটাখোলা স্টেশন দুটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া ভাটেরাবাজার, আফজালাবাদ, খাজাঞ্চিগাঁও ও ছাতকবাজার ১০ বছর যাবত সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। জনবল সংকটের কারণে সর্বশেষ গত ১ জুলাই লংলা স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া হয় বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে ডানকান ব্রাদার্সের চা বাগান ও এলাকার জনসাধারণের সুবিধার্থে টিলাগাঁও স্টেশন স্থাপন করা হয়েছিল। বি-গ্রেডের স্টেশন টিলাগাঁওয়ে শুধু বাগানের মালপত্র বুকিং করেই সরকারের প্রচুর টাকা রাজস্ব আয় হতো। একইভাবে শিল্প কারখানা ও চা বাগানবেষ্টিত লস্করপুর, ইটাখোলা স্টেশন ও ভাটেরা রেলস্টেশনগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও বর্তমানে এগুলো অরক্ষিত অবস্থায় আছে।

প্রতিটি স্টেশনে তিনজন মাস্টার থাকার কথা থাকলেও নেই একজনও। লোকবলের অভাবে দীর্ঘদিন থেকে টিলাগাঁও স্টেশনে ক্রসিং বন্ধ থাকার কারণে লংলা অথবা শমসেরনগর স্টেশনে দেয়া হয় ট্রেনের ক্রসিং। ভাটেরা স্টেশন বন্ধ থাকায় মাইজগাঁও ও বরমচাল স্টেশনে এবং লস্করপুর বন্ধ থাকায় শায়েস্তাগঞ্জ অথবা রশীদপুর স্টেশনে ক্রসিং দেয়া হয়। ইটাখোলা স্টেশন বন্ধ থাকায় নোয়াপাড়া অথবা মনতলা স্টেশনে ট্রেনের ক্রসিং দেয়া হয়। এতে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামগ্রামী আন্তঃনগর ট্রেনকে ক্রসিংয়ের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ফলে অসংখ্য যাত্রী সিলেট, আখাউড়া, ঢাকা ও চট্টগ্রামে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন বলে স্থানীয়রা জানান।

এছাড়া আখাউড়া-ঢাকা রুটে আশুগঞ্জ ও শ্রীনিধী স্টেশন, ভৈরববাজার-ময়মনসিংহ রুটে কালিকাপ্রসাদ, নীলগঞ্জ, সোহাগী ও বিষকা, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার রুটে ইজ্জতপুর, সাতখামাইর, উমেদনগর, বেগুনবাড়ী, মোশারফগঞ্জ, জামালপুরকোট সম্পূর্ণ বন্ধ। এছাড়া এ রুটে আংশিক বন্ধ স্টেশন হলো- ময়মনসিংহ রোড, দুরমুট ও নূরুন্দী।

জামালপুর-জংশন-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রুটে বাউসি, শহীদনগর বারৈপটল, হেমনগর, বাহাদুরাবাদঘাট ও কেন্দুয়াবাজার স্টেশন বন্ধ রয়েছে। ময়মনসিংহ-ঝারিয়াঞ্জাইল-মোহনগঞ্জ রুটে পূর্বধলা যাত্রীবাহী স্টেশনটি দশ বছর যাবত বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা বিভাগে ১৭ স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো-বাড়বকু-, বারৈয়াঢালা, মিরসরাই, মস্তাননগর, মুহরীগঞ্জ, কালিদহ, শর্শদী, নাওটি, আলীশহর, ময়নামতি, রাজাপুর, দৌলতগঞ্জ, খিলা, বজরা, শাহাতলী, মধুরোড ও চিতষীরোড স্টেশন।

এছাড়া হবিগঞ্জ জেলার চুনারঘাট ও বাহুবল উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত সাটিয়াজুরী রেল স্টেশন নামে রেল স্টেশন হলেও কাজের কাজ কিছুই নেই এ রেল স্টেশনে। অথচ এ স্টেশনই এক সময় ছিল খুবই জমজমাট। বর্তমানে স্টেশনে ২৪ ঘণ্টা তালা ঝুলছে। নেই মাস্টার, ক্লাক কিছুই। অথচ এ স্টেশন থেকে সরকার আয় করছে লাখ লাখ টাকা। দুটি উপজেলার ৫০/৬০ গ্রামের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এ স্টেশন দিয়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করত এ এলাকার মানুষ।

কুষ্টিয়ার জগতি রেলওয়ের প্রথম স্টেশন

কুষ্টিয়ার জগতি এলাকায় দেশের সর্বপ্রথম রেলওয়ে স্টেশন অবস্থিত। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতার রানাঘাট থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ চালু হয়। রেলপথ ও জগতি স্টেশন স্থাপনের পর দেশে শুরু হয় রেলওয়ের যাত্রা। কিন্তু অবহেলায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে দেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশনটি।

পরবর্তীতে ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারিতে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত আরও ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ সম্প্রসারণসহ পর্যায় ক্রমে দেশজুড়ে রেলওয়ের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হয়। কিন্তু ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক আড়াইশ বছর আগে স্থাপিত দেশের প্রথম এ স্টেশনটির বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক ও জরাজীর্ণ। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলায় সংস্কার কিংবা আধুনিকায়নের অভাবে দোতলা স্টেশন ভবনটি এখন ব্যবহার অনুপযোগী ও পরিত্যক্ত।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্য পরিবহনে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে জগতি রেলওয়ে স্টেশনটির গুরুত্ব ও কদর ছিল। দোতলা স্টেশন ভবনটির ছাদে জন্মেছে প্রচুর আগাছা। ভবনটিতে ধরেছে ফাটল। অযতœ-অবহেলায় স্টেশন ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্ল্যাটফর্মের ইট ও গাঁথুনি ক্ষয়ে গেছে। প্লাটফর্মের অদূরেই তৎকালে নির্মিত বিশাল আয়তনের ওভারহেড পানির ট্যাংকটি বিলীন হয়ে গেছে। স্টেশন মাস্টাসহ প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় স্টেশনটি ১০ বছর যাবত বন্ধ রয়েছে।