কুমিল্লায় পূজামণ্ডপের ঘটনায় জড়িতদের তালিকা সিআইডির হাতে, চলছে যাচাই-বাছাই

ইকবালসহ চারজন ফের ৫ দিনের রিমান্ডে

কুমিল্লা নগরীর নানুয়াদীঘিরপাড়ে পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে ধর্মীয় উসকানি এবং পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় নেপথ্যের ইন্ধনদাতা ও জড়িতদের খোঁজে মাঠে কাজ করছে সিআইডি। রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পাওয়া তথ্য এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নেপথ্যের ইন্ধনদাতাদের একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। এ তালিকায় থাকা ইন্ধনদাতাদের নিয়ে চলছে যাচাই-বাছাই। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সহসাই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে তদন্তকারী সংস্থার দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি ইকবাল হোসেনসহ চারজনকে ফের ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। গতকাল বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবদুল হাকিম আসামিদের কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা সুলতানার আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত দ্বিতীয় দফায় ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জানা গেছে, নগরীর নানুয়াদীঘির উত্তর পাড়ে পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত-অবমাননার ঘটনায় এ পর্যন্ত কোতোয়ালি মডেল থানায় ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও সাড়ে ৬শ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মামলায় ইকবালসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অন্য আসামিরা হচ্ছে- ৯৯৯-এ পুলিশকে ফোন করে খবর দেয়া ইকরাম এবং দারোগাবাড়ি মাজারের খাদেম হুমায়ুন কবির ও ফয়সাল আহমেদ।

ইকবাল এবং গ্রেপ্তার ৩ জন গত ২৩ অক্টোবর থেকে ৭ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির একটি সূত্র জানায়, ৪ আসামিকে রিমান্ডে আনার পর থেকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনার নেপথ্যে থাকা ইন্ধনদাতাদেরও একটি তালিকা ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাও রয়েছেন। তদন্ত প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই শেষে যে কোন সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইকবালসহ চারজন ফের

৫ দিনের রিমান্ডে

নগরীর নানুয়াদীঘিরপাড়ে পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে ধর্মীয় উসকানির ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এ ঘটনায় জড়িত ইকবাল হোসেনকে কক্সবাজার থেকে আটক করে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এছাড়া ঘটনার দিন ৯৯৯ এ প্রথম কল করা ইকরাম হোসেন, দারোগাবাড়ী মাজারের খাদেম ফয়সাল ও হাফেজ হুমায়ুন কবীরকে আটক করে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত ২৩ অক্টোবর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মফিজুল ইসলাম খান তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এমতাবস্থায় মামলাটি পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়।

গতকাল দুপুর ২টা ৪৮ মিনিটের দিকে কড়া পাহারায় একটি কালো মাইক্রোবাসে ইকবাল হোসেনকে এবং পুলিশের প্রিজনভ্যানে ইকরাম হোসেন, ফয়সাল ও হুমায়ুন কবীরকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। রিমান্ড মঞ্জুরের পরপরই বিকেল ৩টা ৬ মিনিটের দিকে তাদের পুনরায় সিআইডি হেফাজতে নেয়া হয়।

সিআইডি কুমিল্লা অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান জানান, ‘পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদে এরই মধ্যে ভালো কিছু আশা করতে পারেন। সহসাই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা করছি। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যগুলো ম্যানুয়ালি ও ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যাদের নাম পাওয়া যাবে, তারা যে-ই হোন না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় যত মামলা

গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা নগরীর নানুয়াদীঘির পাড়ে পূজামণ্ডপের ঘটনা ও পরবর্তীতে মন্দির ভাঙচুরসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় জেলায় এ পর্যন্ত মোট ১১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় সাতটি, সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি এবং দাউদকান্দি মডেল থানা ও দেবিদ্বার থানায় একটি করে মামলা হয়েছে।

জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১১টি মামলায় ৮৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারে নাম আছে ৪৪ জনের। এর আগে এ সব মামলার এজাহারে ৯২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও এক হাজার ১০ জনকে আসামি করা হয়। সূত্র জানায়, এ সব মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অর্ধেকই বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

ইকবাল হোসেন গত ১৩ অক্টোবর নগরীর নানুয়াদীঘির পাড়ে একটি পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখেন বলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উসকানিতে সহিংসতার ঘটনা ঘটে, যা ছড়িয়ে পড়ে দেশের আরও কিছু স্থানে।

ঘটনার পরদিন ইকবাল কুমিল্লা থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে যান। গত ২১ অক্টোবর রাতে তাকে কক্সবাজারে গ্রেপ্তারের পরদিন ২২ অক্টোবর কুমিল্লায় আনা হয়। পরদিন তাকেসহ চারজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১ , ১৪ কার্তিক ১৪২৮ ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপের ঘটনায় জড়িতদের তালিকা সিআইডির হাতে, চলছে যাচাই-বাছাই

ইকবালসহ চারজন ফের ৫ দিনের রিমান্ডে

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা

কুমিল্লা নগরীর নানুয়াদীঘিরপাড়ে পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে ধর্মীয় উসকানি এবং পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় নেপথ্যের ইন্ধনদাতা ও জড়িতদের খোঁজে মাঠে কাজ করছে সিআইডি। রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পাওয়া তথ্য এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নেপথ্যের ইন্ধনদাতাদের একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। এ তালিকায় থাকা ইন্ধনদাতাদের নিয়ে চলছে যাচাই-বাছাই। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সহসাই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে তদন্তকারী সংস্থার দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি ইকবাল হোসেনসহ চারজনকে ফের ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। গতকাল বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আবদুল হাকিম আসামিদের কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা সুলতানার আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত দ্বিতীয় দফায় ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জানা গেছে, নগরীর নানুয়াদীঘির উত্তর পাড়ে পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত-অবমাননার ঘটনায় এ পর্যন্ত কোতোয়ালি মডেল থানায় ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও সাড়ে ৬শ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মামলায় ইকবালসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অন্য আসামিরা হচ্ছে- ৯৯৯-এ পুলিশকে ফোন করে খবর দেয়া ইকরাম এবং দারোগাবাড়ি মাজারের খাদেম হুমায়ুন কবির ও ফয়সাল আহমেদ।

ইকবাল এবং গ্রেপ্তার ৩ জন গত ২৩ অক্টোবর থেকে ৭ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির একটি সূত্র জানায়, ৪ আসামিকে রিমান্ডে আনার পর থেকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনার নেপথ্যে থাকা ইন্ধনদাতাদেরও একটি তালিকা ইতোমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাও রয়েছেন। তদন্ত প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই শেষে যে কোন সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ইকবালসহ চারজন ফের

৫ দিনের রিমান্ডে

নগরীর নানুয়াদীঘিরপাড়ে পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রেখে ধর্মীয় উসকানির ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে এ ঘটনায় জড়িত ইকবাল হোসেনকে কক্সবাজার থেকে আটক করে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এছাড়া ঘটনার দিন ৯৯৯ এ প্রথম কল করা ইকরাম হোসেন, দারোগাবাড়ী মাজারের খাদেম ফয়সাল ও হাফেজ হুমায়ুন কবীরকে আটক করে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গত ২৩ অক্টোবর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মফিজুল ইসলাম খান তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এমতাবস্থায় মামলাটি পুলিশ হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়।

গতকাল দুপুর ২টা ৪৮ মিনিটের দিকে কড়া পাহারায় একটি কালো মাইক্রোবাসে ইকবাল হোসেনকে এবং পুলিশের প্রিজনভ্যানে ইকরাম হোসেন, ফয়সাল ও হুমায়ুন কবীরকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। রিমান্ড মঞ্জুরের পরপরই বিকেল ৩টা ৬ মিনিটের দিকে তাদের পুনরায় সিআইডি হেফাজতে নেয়া হয়।

সিআইডি কুমিল্লা অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজওয়ান জানান, ‘পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদে এরই মধ্যে ভালো কিছু আশা করতে পারেন। সহসাই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আশা করছি। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যগুলো ম্যানুয়ালি ও ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যাদের নাম পাওয়া যাবে, তারা যে-ই হোন না কেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় যত মামলা

গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা নগরীর নানুয়াদীঘির পাড়ে পূজামণ্ডপের ঘটনা ও পরবর্তীতে মন্দির ভাঙচুরসহ বিভিন্ন সহিংসতার ঘটনায় জেলায় এ পর্যন্ত মোট ১১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি মডেল থানায় সাতটি, সদর দক্ষিণ মডেল থানায় দুটি এবং দাউদকান্দি মডেল থানা ও দেবিদ্বার থানায় একটি করে মামলা হয়েছে।

জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১১টি মামলায় ৮৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারে নাম আছে ৪৪ জনের। এর আগে এ সব মামলার এজাহারে ৯২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও এক হাজার ১০ জনকে আসামি করা হয়। সূত্র জানায়, এ সব মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অর্ধেকই বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

ইকবাল হোসেন গত ১৩ অক্টোবর নগরীর নানুয়াদীঘির পাড়ে একটি পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখেন বলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উসকানিতে সহিংসতার ঘটনা ঘটে, যা ছড়িয়ে পড়ে দেশের আরও কিছু স্থানে।

ঘটনার পরদিন ইকবাল কুমিল্লা থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে যান। গত ২১ অক্টোবর রাতে তাকে কক্সবাজারে গ্রেপ্তারের পরদিন ২২ অক্টোবর কুমিল্লায় আনা হয়। পরদিন তাকেসহ চারজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।