ডুবে যাওয়া ফেরি ৩ দিনেও উদ্ধার হয়নি

স্বল্প সক্ষমতার উদ্ধারকারী জাহাজ শত চেষ্টা করেও কাজে আসছে না

তিনদিন পার হয়ে গেলেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি পাটুরিয়া ঘাটে অসাবধানতায় ডুবে যাওয়া ফেরি আমানত শাহ। অল্প সক্ষমতার উদ্ধারকারী যান ও কর্তৃপক্ষের শত চেষ্টাও কোন কাজে আসছে না ফেরিটি উদ্ধারে। উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ বলছেন, নৌযান উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার ভারউত্তোলন সক্ষমতা মাত্র ষাট টন। কিন্তু ডুবে যাওয়া ফেরিটির বর্তমান ওজন হয়েছে প্রায় হাজার টন। বিধায় হামজার সক্ষমতার চেয়ে ফেরিটির ওজন বেড়ে গেছে বহুগুণ।

তাই এই জাহাজটি দিয়ে ফেরিটি উদ্ধারে তেমন সুবিধা করা যাচ্ছে না। তবে গতকাল দুপুরের দিকে আরও দুটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানিয়েছেন। এখনও উদ্ধার অভিযান চলমান আছে। উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়ার জন্য বিআইডব্লিউটিএর আরও একটি উদ্ধারকারী প্রত্যয় নামের জাহাজ পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়েও পথিমধ্যে তার যাত্রা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রত্যয় জাহাজের বদলে পাটুরিয়ায় আসছে রুস্তম নামের জাহাজ। প্রত্যয় গতকাল পাটুরিয়ায় এসে পৌঁছানোর কথা থাকলেও এখন আর আসছে না।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারের সক্ষমতা প্রত্যয়ের নেই। তার বদলে রুস্তম আসলেও কোন সমস্যা হবে না এবং উদ্ধার অভিযানে আরও গতি আসবে বলে বিআইডব্লিউটিএর সূত্রটি জানিয়েছেন। রুস্তম নামের উদ্ধারকারী জাহাজটি এখন কোথায় আছে তা জানা যায়নি। তবে সেটা আজকালের মধ্যেই আসবে বলে জানা গেছে।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান গতকাল পাটুরিয়া ঘাট পরিদর্শন করেছেন এবং ফেরিটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, পাটুরিয়ার ৫নং ফেরিঘাটে গাড়ি আনলোড করার সময় ফেরিতে অতিরিক্ত পানি ওঠায় এবং পন্টুনের সঙ্গে ফেরির বন্ধন না থাকার কারণে ঘাটেই আমানত শাহ নামের ফেরিটি উল্টে ডুবে যায়। ফেরিতে থাকা কাভার্ডভ্যানসহ ১৫টি ট্রাক ও ১৪টি মোটরসাইকেল এবং দুটি প্রাইভেট কারও ফেরির সঙ্গে নদীতে ডুবে যায়। আমানত শাহ ফেরিটি ডুবে যাওয়ার আগে মাত্র দুটি ট্রাক পাটুরিয়া ঘাটে নামতে পেরেছিল। অন্যান্য গাড়িসহ ফেরিটি ঘাটেই উল্টে কাত হয়ে ডুবে যায়। তাড়াহুড়ো না করে সাবধানতা অবলম্বন করলে এই দুর্ঘটনা সামাল দেয়া যেত বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর সকাল নয়টায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলসহ কিছু যাত্রী লোড করে আমানত শাহ নামের ফেরিটি পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় পাটুরিয়া ঘাটে ভিড়ে।

মাঝনদীতেই ফেরিতে পানি উঠতে থাকায় ফেরির গতি বাড়িয়ে দ্রুত পাটুরিয়ার পাঁচ নম্বর ঘাটে ভিড়ে যায় ফেরিটি। তাড়াহুড়োর সময় পানির অতিরিক্ত চাপে পুরাতন ফেরিটির তলা ফেটে তীব্র গতিতে পানি উঠতে থাকে। এমন অবস্থায় ফেরিটি পন্টুনের সঙ্গে সঠিকভাবে না আটকিয়েই ট্রাক আনলোড করতে থাকে। তাড়াহুড়োর সময় ফেরি কর্তৃপক্ষ ফেরিটি পন্টুনের সঙ্গে বাঁধতেই ভুলে যায়।

মাত্র দুটি ট্রাক ফেরির পূর্ব দিক থেকে নামলে ফেরিটির পশ্চিম দিক ভারী হয়ে যায় এবং পশ্চিম দিকে কাত হয়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার সময় ফেরিটিতে থাকা ট্রাকগুলো একটি আরেকটির ওপর ছিটকে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায়। ফেরিতে ১৫টি ট্রাক, দুটি প্রাইভেটকার ও ১৪টি মোটরসাইকেল এবং কিছু যাত্রী ছিল।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্র্ভিসের দুটি ইউনিটের কর্মীরা পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছান এবং এখন পর্যন্ত ঘাটে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরি আমানত শাহ ও ১৫টি ট্রাক, দুটি প্রাইভেটকার ও ১৪টি মোটরসাইকেলের মধ্যে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনদিনে ১১টি ট্রাক এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, পাটুরিয়ায় একটি ফেরিঘাট বন্ধ থাকার কারণে গতকাল অতিরিক্ত যানবাহন পারাপারে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। ঘাট বন্ধ থাকায় যানবাহনের চাপ সামাল দিতে বাড়তি গাড়িগুলো আরিচা রোডে লাইন করে রাখা হয়। এতে আরিচায় প্রায় আট ঘণ্টা যানজট লেগে ছিল।

পাটুরিয়া ঘাটে ইতিহাসের বিরল ঘটনা ফেরিডুবি দেখার জন্য গতকাল দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসছেন পাটুরিয়া ঘাটে। গত বুধবার সকাল থেকে এই পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেছেন। কৌতূহলী মানুষের ভিড় সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। গতকালও উৎসুক মানুষের ভিড় সামাল দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে।

শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১ , ১৪ কার্তিক ১৪২৮ ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ডুবে যাওয়া ফেরি ৩ দিনেও উদ্ধার হয়নি

স্বল্প সক্ষমতার উদ্ধারকারী জাহাজ শত চেষ্টা করেও কাজে আসছে না

প্রতিনিধি, শিবালয় (মানিকগঞ্জ)

image

তিনদিন পার হয়ে গেলেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি পাটুরিয়া ঘাটে অসাবধানতায় ডুবে যাওয়া ফেরি আমানত শাহ। অল্প সক্ষমতার উদ্ধারকারী যান ও কর্তৃপক্ষের শত চেষ্টাও কোন কাজে আসছে না ফেরিটি উদ্ধারে। উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ বলছেন, নৌযান উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার ভারউত্তোলন সক্ষমতা মাত্র ষাট টন। কিন্তু ডুবে যাওয়া ফেরিটির বর্তমান ওজন হয়েছে প্রায় হাজার টন। বিধায় হামজার সক্ষমতার চেয়ে ফেরিটির ওজন বেড়ে গেছে বহুগুণ।

তাই এই জাহাজটি দিয়ে ফেরিটি উদ্ধারে তেমন সুবিধা করা যাচ্ছে না। তবে গতকাল দুপুরের দিকে আরও দুটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানিয়েছেন। এখনও উদ্ধার অভিযান চলমান আছে। উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়ার জন্য বিআইডব্লিউটিএর আরও একটি উদ্ধারকারী প্রত্যয় নামের জাহাজ পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়েও পথিমধ্যে তার যাত্রা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রত্যয় জাহাজের বদলে পাটুরিয়ায় আসছে রুস্তম নামের জাহাজ। প্রত্যয় গতকাল পাটুরিয়ায় এসে পৌঁছানোর কথা থাকলেও এখন আর আসছে না।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারের সক্ষমতা প্রত্যয়ের নেই। তার বদলে রুস্তম আসলেও কোন সমস্যা হবে না এবং উদ্ধার অভিযানে আরও গতি আসবে বলে বিআইডব্লিউটিএর সূত্রটি জানিয়েছেন। রুস্তম নামের উদ্ধারকারী জাহাজটি এখন কোথায় আছে তা জানা যায়নি। তবে সেটা আজকালের মধ্যেই আসবে বলে জানা গেছে।

এদিকে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান গতকাল পাটুরিয়া ঘাট পরিদর্শন করেছেন এবং ফেরিটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, পাটুরিয়ার ৫নং ফেরিঘাটে গাড়ি আনলোড করার সময় ফেরিতে অতিরিক্ত পানি ওঠায় এবং পন্টুনের সঙ্গে ফেরির বন্ধন না থাকার কারণে ঘাটেই আমানত শাহ নামের ফেরিটি উল্টে ডুবে যায়। ফেরিতে থাকা কাভার্ডভ্যানসহ ১৫টি ট্রাক ও ১৪টি মোটরসাইকেল এবং দুটি প্রাইভেট কারও ফেরির সঙ্গে নদীতে ডুবে যায়। আমানত শাহ ফেরিটি ডুবে যাওয়ার আগে মাত্র দুটি ট্রাক পাটুরিয়া ঘাটে নামতে পেরেছিল। অন্যান্য গাড়িসহ ফেরিটি ঘাটেই উল্টে কাত হয়ে ডুবে যায়। তাড়াহুড়ো না করে সাবধানতা অবলম্বন করলে এই দুর্ঘটনা সামাল দেয়া যেত বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর সকাল নয়টায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলসহ কিছু যাত্রী লোড করে আমানত শাহ নামের ফেরিটি পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় পাটুরিয়া ঘাটে ভিড়ে।

মাঝনদীতেই ফেরিতে পানি উঠতে থাকায় ফেরির গতি বাড়িয়ে দ্রুত পাটুরিয়ার পাঁচ নম্বর ঘাটে ভিড়ে যায় ফেরিটি। তাড়াহুড়োর সময় পানির অতিরিক্ত চাপে পুরাতন ফেরিটির তলা ফেটে তীব্র গতিতে পানি উঠতে থাকে। এমন অবস্থায় ফেরিটি পন্টুনের সঙ্গে সঠিকভাবে না আটকিয়েই ট্রাক আনলোড করতে থাকে। তাড়াহুড়োর সময় ফেরি কর্তৃপক্ষ ফেরিটি পন্টুনের সঙ্গে বাঁধতেই ভুলে যায়।

মাত্র দুটি ট্রাক ফেরির পূর্ব দিক থেকে নামলে ফেরিটির পশ্চিম দিক ভারী হয়ে যায় এবং পশ্চিম দিকে কাত হয়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার সময় ফেরিটিতে থাকা ট্রাকগুলো একটি আরেকটির ওপর ছিটকে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায়। ফেরিতে ১৫টি ট্রাক, দুটি প্রাইভেটকার ও ১৪টি মোটরসাইকেল এবং কিছু যাত্রী ছিল।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্র্ভিসের দুটি ইউনিটের কর্মীরা পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছান এবং এখন পর্যন্ত ঘাটে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরি আমানত শাহ ও ১৫টি ট্রাক, দুটি প্রাইভেটকার ও ১৪টি মোটরসাইকেলের মধ্যে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনদিনে ১১টি ট্রাক এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, পাটুরিয়ায় একটি ফেরিঘাট বন্ধ থাকার কারণে গতকাল অতিরিক্ত যানবাহন পারাপারে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। ঘাট বন্ধ থাকায় যানবাহনের চাপ সামাল দিতে বাড়তি গাড়িগুলো আরিচা রোডে লাইন করে রাখা হয়। এতে আরিচায় প্রায় আট ঘণ্টা যানজট লেগে ছিল।

পাটুরিয়া ঘাটে ইতিহাসের বিরল ঘটনা ফেরিডুবি দেখার জন্য গতকাল দূর-দূরান্ত থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসছেন পাটুরিয়া ঘাটে। গত বুধবার সকাল থেকে এই পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেছেন। কৌতূহলী মানুষের ভিড় সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। গতকালও উৎসুক মানুষের ভিড় সামাল দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে হিমশিম খেতে দেখা গেছে।