‘নৈঃশব্দ ভেঙে জেগে ওঠো দ্রোহে’

রুখে দাঁড়াও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি

‘নৈঃশব্দ ভেঙে জেগে ওঠো দ্রোহে’- প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বানের মধ্য দিয়ে উদীচীর ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে ও বক্তার কথনে ব্যক্ত হলো সাংস্কৃতিক শক্তি দিয়ে অশুভ শক্তিকে রূখে দেয়ার প্রত্যয়। জাতীয় সংগীত ও সংগঠন সংগীতের সঙ্গে জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আয়োজন।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল বিকেলে ‘নৈঃশব্দে জেগে ওঠো দ্রোহে’ সেøাগানে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের সহ-সভাপতি উদীচী গোলাম মোহাম্মদ ইঁদু, উদীচীর পতাকার ডিজাইনার শিল্পী আনোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি প্রবীর সরদার, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম প্রমুখ।

সাংস্কৃতিক পর্বে একক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন, মাহমুদ সেলিম ও হাবিবুল ইসলাম। মাহমুদ সেলিম গেয়ে শোনান ‘ওরা আমাদের গান গাইতে না’ শীর্ষক সঙ্গীত। কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন, বাচিকশিল্পী রফিকুল ইসলাম। এছাড়াও জামসেদ আনোয়ার তপনের গ্রন্থনায় পরিবেশিত হয় ‘কেমন আছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলেখ্যানুষ্ঠান। নির্দেশনায় ছিলেন, সঙ্গীতা ইমাম ও সুরাইয়া পারভিন। সব শেষে পরিবেশিত হয় ড. রতন সিদ্দিকী রচিত ও প্রবীর সরদার নির্দেশিত নাটক ‘অজ্ঞাতনামা’।

সত্য ও সুন্দরের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর উদীচীর যাত্রা শুরু হয়। এরপর সংস্কৃতির সেই জাগরিত শক্তি দিয়ে অব্যাহত রয়েছে মুক্ত মানুষের মুক্ত পৃথিবী গড়ার সংগ্রাম। কালের পরিক্রমায় সংগ্রামী সেই সাংস্কৃতিক অভিযাত্রার ৫৩ বছর পূর্ণ করলো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানের সুরে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সেই সুরকে সঙ্গী করে উত্তোলিত হয় জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা। এরপর সবাই মিলে গায় সংগঠনের সঙ্গীতÑ আরশির সামনে একা একা দাঁড়িয়ে/যদি ভাবি কোটি জনতার মুখ দেখব/হয় না হয় না হয় না/কে বলেছে হয় না, এসো এই মঞ্চে/উদীচী এমনই এক আয়না। এরপর ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে শহীদ মিনারে বেদিমূলে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে উদীচীর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে পেশকৃত কয়েক দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- মুক্তমত ও সংস্কৃতিচর্চার অবাধ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ’৭২-এর সংবিধানের মূলনীতির ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করতে হবে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্যকর শিল্পকলা একাডেমি গড়ে তুলতে হবে। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধসম্পন্ন সাংস্কৃতিক বলয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। উন্নয়নের নামে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসকারী সব প্রকল্প বাতিল ও উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।

ে পৃষ্ঠা : ২ ক :৫

‘নৈ:শব্দ ভেঙে

(১২ পৃষ্ঠার পর)

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিল্পকলাবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ এবং বিভেদ, বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টিকারী লেখা ও উপাদান পাঠ্যপুস্তক থেকে তুলে নিতে হবে।

এ সময় বক্তারা বলেন, সাম্য, স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং মানবিক সমাজ নির্মাণে উৎসর্গিত লাখো লাখো মানুষের রক্তস্নাত জমি আজ নিষ্ফলা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেশের মানুষের লড়াই আজও তাই সমভাবে বিদ্যমান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে গীতি-বাদ্যে-নৃত্যে কৃষাণ-কৃষাণীর উঠান ঝলমলিয়ে ওঠার কথা। বাউল-বোষ্টমীর সুরে প্লাবিত হওয়ার কথা চিরায়ত বাংলা। কিন্তু আজ কৃষকের উঠানে হতাশার বিলাপ। বাংলার চিরায়ত সুর আজ রুদ্ধ। ধর্মান্ধতার মাস্তানির কাছে গুমরে কাঁদছে সম্প্রীতির বাংলাদেশ। সাংস্কৃতিক শক্তি দিয়েই পরাভূত করতে হবে এই অপশক্তিকে। রূখে দিতে হবে অপশক্তির অপতৎপরতা। বিনির্মাণ করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সম্প্রীতির বাংলাদেশ।

দিনাজপুর

দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমির সম্মুখ সড়কে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করে উদীচী দিনাজপুর জেলা সংসদ। আয়োজনে ছিল আবৃত্তি, সঙ্গীত-নৃত্য পরিবেশন ও আলোচনাসভা। সভায় উদীচী দিনাজপুর জেলা সংসদের সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেজাউর রহমান রেজু, উদীচী জেলা সংসদের সাবেক সভাপতি আসাদুল্লাহ সরকার, শিক্ষাবিদ ও গবেষক কাজী আবদুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জেলা শাখার সভাপতি সুলতান কামাল উদ্দিন বাচ্চু, দিনাজপুর বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. মো. আহাদ আলী, রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি রবিউল আউয়াল খোকা, প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি অধ্যক্ষ জলিল আহমেদ, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম, নবরূপীর সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মেহেরুল্লাহ বাদল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উদীচী দিনাজপুর জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক সত্য ঘোষ।

বক্তারা বলেন, মানুষ ধর্ম পালন করলে বা না করলে সংশ্লিষ্ট ধর্মমতে ব্যক্তির পাপ বা পূণ্য হবে, দোজখ বা বেহেশতে যাবে অথবা স্বর্গ বা নরকে যেতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের কি কখনও দোজখ বা বেহেশত বা স্বর্গ বা নরকে যাওয়ার বিধান আছে ? না নেই। বাংলাদেশের মতো বিশ্বের প্রতিটি দেশে নানা ধর্ম ও মতের মানুষ একত্রে বাস করে থাকে। তারা সবাই সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিক। সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু বলে বিচার করার কোন সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী সব ধর্মের মানুষের জন্য সমান অধিকার ভোগ করার বিধান সেই দেশের সংবিধানে নিশ্চিত করা আছে। রাষ্ট্রযন্ত্র সরকার বা প্রশাসনের দায়িত্ব হলো সমাজের সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। বক্তারা বলেন, কোন দেশে যদি শুধু এক ধর্মের মানুষ বসবাস করে, তবুও ওই দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ ভূমিকা প্রদর্শিত করতে হবে। ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করে, তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিশ্বাস করে না।

এছাড়া শেখ ছগির আহমেদ কমলের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহী

দেশব্যাপী সামপ্রদায়িক সহিংসতার বিচার, বাক স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা ও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার পথ অবাধ করার দাবি জানিয়ে রাজশাহীতে উদীচীর ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষকী উদযাপিত হয়েছে। গতকাল বিকেল ৪টায় রাজশাহী নগরীর পদ্মাপাড় রবীন্দ্র-নজরুল মঞ্চে ‘নৈঃশব্দ ভেঙে জেগে ওঠো দ্রোহে’-সেøাগানকে ধারণ করে জাতীয় সংগীত ও সংগঠন সংগীত গেয়ে জাতীয় পতাকা ও সংগঠন পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয়ে আলোচনাসভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় উদীচীর ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা।

আলোচনা সভায় উদীচী রাজশাহী জেলা সংসদের সভাপতি জুলফিকার আহমেদ গোলাপের সভাপতিত্বে ও সহ-সভাপতি ড. রাজীব ব্যানার্জীর সঞ্চাচালনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আকুঞ্জি, বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, মুক্তিযোদ্ধা ও কলামিস্ট প্রশান্ত কুমার সাহা, কবি আরিফুল হক কুমার, উদীচীর সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আলমগীর মালেক, অধ্যক্ষ রাজ কুমার সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান আলী বরজাহান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উদীচী রাজশাহী জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক অজিত কুমার ম-ল।

আলোচনাসভা শেষে উদীচী ও রাজশাহী খেলাঘর আসর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন। উদীচীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন, আফরোজা আহমেদ, তরুণ ধর, মতিয়ার রহমান, তর্পণা দে, শাহিনুর রহমান সোনা, বিধান চন্দ্র, সেলিনা বানু, রতন ভট্টাচার্য, সন্তোষ কুমার, সোমা ভৌমিক, সুস্মিতা ফণি, শিউলি মার্ডি, সাথী আকতার, অনিক ও তবলায় ছিলেন, রথিজিৎ কুমার দাস। রাজশাহী খেলাঘর আসরের পরিবেশনায় ছিলেন, হালিমা, সেঁজুতি, লাবণ্য, তমা, অন্তরা, রাব্বি, অন্তর ও তবলা সংগদে ছিলেন জয় ক্রিস্টোফার বিশ্বাস।

image

দিনাজপুর : উদীচীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলার হিন্দু-বাংলার বৌদ্ধ-বাংলার-খ্রিস্টান-বাংলার মুসলমান আমরা সবাই বাঙালি গানে নৃত্য পরিবেশন -সংবাদ

আরও খবর
ডুবে যাওয়া ফেরি ৩ দিনেও উদ্ধার হয়নি
জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে কাল গ্লাসগো যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
পানের চুন বিক্রি : দেড়শ বছরের পুরোনো পেশা ধরে রেখেছে ২০ পরিবার
রাজধানীতে নারী গার্মেন্টকর্মীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
অপরাধ ও ডাকাতি নিয়ন্ত্রণে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে
যুগ্ম সচিব পদে ২১৩ কর্মকতার পদোন্নতি
ছয় ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াত সমঝোতায় প্রার্থী দিয়েছে
বাংলাদেশ কখনও সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেবে না - আইনমন্ত্রী

শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১ , ১৪ কার্তিক ১৪২৮ ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

‘নৈঃশব্দ ভেঙে জেগে ওঠো দ্রোহে’

রুখে দাঁড়াও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

দিনাজপুর : উদীচীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলার হিন্দু-বাংলার বৌদ্ধ-বাংলার-খ্রিস্টান-বাংলার মুসলমান আমরা সবাই বাঙালি গানে নৃত্য পরিবেশন -সংবাদ

‘নৈঃশব্দ ভেঙে জেগে ওঠো দ্রোহে’- প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করার আহ্বানের মধ্য দিয়ে উদীচীর ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে ও বক্তার কথনে ব্যক্ত হলো সাংস্কৃতিক শক্তি দিয়ে অশুভ শক্তিকে রূখে দেয়ার প্রত্যয়। জাতীয় সংগীত ও সংগঠন সংগীতের সঙ্গে জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আয়োজন।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল বিকেলে ‘নৈঃশব্দে জেগে ওঠো দ্রোহে’ সেøাগানে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, উদীচীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের সহ-সভাপতি উদীচী গোলাম মোহাম্মদ ইঁদু, উদীচীর পতাকার ডিজাইনার শিল্পী আনোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি প্রবীর সরদার, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম প্রমুখ।

সাংস্কৃতিক পর্বে একক কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন করেন, মাহমুদ সেলিম ও হাবিবুল ইসলাম। মাহমুদ সেলিম গেয়ে শোনান ‘ওরা আমাদের গান গাইতে না’ শীর্ষক সঙ্গীত। কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন, বাচিকশিল্পী রফিকুল ইসলাম। এছাড়াও জামসেদ আনোয়ার তপনের গ্রন্থনায় পরিবেশিত হয় ‘কেমন আছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলেখ্যানুষ্ঠান। নির্দেশনায় ছিলেন, সঙ্গীতা ইমাম ও সুরাইয়া পারভিন। সব শেষে পরিবেশিত হয় ড. রতন সিদ্দিকী রচিত ও প্রবীর সরদার নির্দেশিত নাটক ‘অজ্ঞাতনামা’।

সত্য ও সুন্দরের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর উদীচীর যাত্রা শুরু হয়। এরপর সংস্কৃতির সেই জাগরিত শক্তি দিয়ে অব্যাহত রয়েছে মুক্ত মানুষের মুক্ত পৃথিবী গড়ার সংগ্রাম। কালের পরিক্রমায় সংগ্রামী সেই সাংস্কৃতিক অভিযাত্রার ৫৩ বছর পূর্ণ করলো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানের সুরে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সেই সুরকে সঙ্গী করে উত্তোলিত হয় জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা। এরপর সবাই মিলে গায় সংগঠনের সঙ্গীতÑ আরশির সামনে একা একা দাঁড়িয়ে/যদি ভাবি কোটি জনতার মুখ দেখব/হয় না হয় না হয় না/কে বলেছে হয় না, এসো এই মঞ্চে/উদীচী এমনই এক আয়না। এরপর ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনে শহীদ মিনারে বেদিমূলে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে উদীচীর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে পেশকৃত কয়েক দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- মুক্তমত ও সংস্কৃতিচর্চার অবাধ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ’৭২-এর সংবিধানের মূলনীতির ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করতে হবে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্যকর শিল্পকলা একাডেমি গড়ে তুলতে হবে। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধসম্পন্ন সাংস্কৃতিক বলয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। উন্নয়নের নামে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসকারী সব প্রকল্প বাতিল ও উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।

ে পৃষ্ঠা : ২ ক :৫

‘নৈ:শব্দ ভেঙে

(১২ পৃষ্ঠার পর)

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিল্পকলাবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ এবং বিভেদ, বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টিকারী লেখা ও উপাদান পাঠ্যপুস্তক থেকে তুলে নিতে হবে।

এ সময় বক্তারা বলেন, সাম্য, স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি এবং মানবিক সমাজ নির্মাণে উৎসর্গিত লাখো লাখো মানুষের রক্তস্নাত জমি আজ নিষ্ফলা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। দেশের মানুষের লড়াই আজও তাই সমভাবে বিদ্যমান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে গীতি-বাদ্যে-নৃত্যে কৃষাণ-কৃষাণীর উঠান ঝলমলিয়ে ওঠার কথা। বাউল-বোষ্টমীর সুরে প্লাবিত হওয়ার কথা চিরায়ত বাংলা। কিন্তু আজ কৃষকের উঠানে হতাশার বিলাপ। বাংলার চিরায়ত সুর আজ রুদ্ধ। ধর্মান্ধতার মাস্তানির কাছে গুমরে কাঁদছে সম্প্রীতির বাংলাদেশ। সাংস্কৃতিক শক্তি দিয়েই পরাভূত করতে হবে এই অপশক্তিকে। রূখে দিতে হবে অপশক্তির অপতৎপরতা। বিনির্মাণ করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সম্প্রীতির বাংলাদেশ।

দিনাজপুর

দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমির সম্মুখ সড়কে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন করে উদীচী দিনাজপুর জেলা সংসদ। আয়োজনে ছিল আবৃত্তি, সঙ্গীত-নৃত্য পরিবেশন ও আলোচনাসভা। সভায় উদীচী দিনাজপুর জেলা সংসদের সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেজাউর রহমান রেজু, উদীচী জেলা সংসদের সাবেক সভাপতি আসাদুল্লাহ সরকার, শিক্ষাবিদ ও গবেষক কাজী আবদুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জেলা শাখার সভাপতি সুলতান কামাল উদ্দিন বাচ্চু, দিনাজপুর বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. মো. আহাদ আলী, রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি রবিউল আউয়াল খোকা, প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি অধ্যক্ষ জলিল আহমেদ, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম, নবরূপীর সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মেহেরুল্লাহ বাদল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উদীচী দিনাজপুর জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক সত্য ঘোষ।

বক্তারা বলেন, মানুষ ধর্ম পালন করলে বা না করলে সংশ্লিষ্ট ধর্মমতে ব্যক্তির পাপ বা পূণ্য হবে, দোজখ বা বেহেশতে যাবে অথবা স্বর্গ বা নরকে যেতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের কি কখনও দোজখ বা বেহেশত বা স্বর্গ বা নরকে যাওয়ার বিধান আছে ? না নেই। বাংলাদেশের মতো বিশ্বের প্রতিটি দেশে নানা ধর্ম ও মতের মানুষ একত্রে বাস করে থাকে। তারা সবাই সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিক। সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু বলে বিচার করার কোন সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী সব ধর্মের মানুষের জন্য সমান অধিকার ভোগ করার বিধান সেই দেশের সংবিধানে নিশ্চিত করা আছে। রাষ্ট্রযন্ত্র সরকার বা প্রশাসনের দায়িত্ব হলো সমাজের সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। বক্তারা বলেন, কোন দেশে যদি শুধু এক ধর্মের মানুষ বসবাস করে, তবুও ওই দেশকে ধর্মনিরপেক্ষ ভূমিকা প্রদর্শিত করতে হবে। ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করে, তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বিশ্বাস করে না।

এছাড়া শেখ ছগির আহমেদ কমলের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ পারভেজসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহী

দেশব্যাপী সামপ্রদায়িক সহিংসতার বিচার, বাক স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা ও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার পথ অবাধ করার দাবি জানিয়ে রাজশাহীতে উদীচীর ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষকী উদযাপিত হয়েছে। গতকাল বিকেল ৪টায় রাজশাহী নগরীর পদ্মাপাড় রবীন্দ্র-নজরুল মঞ্চে ‘নৈঃশব্দ ভেঙে জেগে ওঠো দ্রোহে’-সেøাগানকে ধারণ করে জাতীয় সংগীত ও সংগঠন সংগীত গেয়ে জাতীয় পতাকা ও সংগঠন পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয়ে আলোচনাসভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় উদীচীর ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা।

আলোচনা সভায় উদীচী রাজশাহী জেলা সংসদের সভাপতি জুলফিকার আহমেদ গোলাপের সভাপতিত্বে ও সহ-সভাপতি ড. রাজীব ব্যানার্জীর সঞ্চাচালনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আকুঞ্জি, বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, মুক্তিযোদ্ধা ও কলামিস্ট প্রশান্ত কুমার সাহা, কবি আরিফুল হক কুমার, উদীচীর সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আলমগীর মালেক, অধ্যক্ষ রাজ কুমার সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান আলী বরজাহান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উদীচী রাজশাহী জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক অজিত কুমার ম-ল।

আলোচনাসভা শেষে উদীচী ও রাজশাহী খেলাঘর আসর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন। উদীচীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করেন, আফরোজা আহমেদ, তরুণ ধর, মতিয়ার রহমান, তর্পণা দে, শাহিনুর রহমান সোনা, বিধান চন্দ্র, সেলিনা বানু, রতন ভট্টাচার্য, সন্তোষ কুমার, সোমা ভৌমিক, সুস্মিতা ফণি, শিউলি মার্ডি, সাথী আকতার, অনিক ও তবলায় ছিলেন, রথিজিৎ কুমার দাস। রাজশাহী খেলাঘর আসরের পরিবেশনায় ছিলেন, হালিমা, সেঁজুতি, লাবণ্য, তমা, অন্তরা, রাব্বি, অন্তর ও তবলা সংগদে ছিলেন জয় ক্রিস্টোফার বিশ্বাস।