ডাকাতির টাকায় ত্রিশটি সিএনজির মালিক রেজা

পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

কিশোর বয়স থেকেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে শামীম রেজা (৩০)। গ্রামের একটি স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে ২০০৫ সালে রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসে। জীবিকার তাগিদে চাকরি নেন একটি গার্মেন্টসে। মাদক সেবন থেকে জড়িয়ে পড়ে মাদক কারবারে। একপর্যায় রেজা নিজেই ডাকাত চক্র গড়ে তোলে। পুলিশের ইউনিফর্ম পরে নিজেকে এসআই পরিচয় দিয়ে সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় ডাকাতি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। ডাকাতির টাকায় ৩০টি সিএনজির কেনা পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতে জমিও কিনেছে রেজা।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত সাভার থানাধীন রাজাশন এলাকা থেকে চক্রের মূলহোতা রেজাসহ ছয় ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন, হেলাল উদ্দিন, মো. পারভেজ, ওয়াসিম ইসলাম, নাইম খান ও ফেরদৌস আহমেদ রাজু।

অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, গুলি, একটি নকল পিস্তল, একটি পিস্তল টাইপ লাইটার, একটি কভারসহ হ্যান্ডকাফ, একটি ওয়াকিটকি, দুই সেট পুলিশ ইউনিফর্ম, পুলিশ জ্যাকেট, পুলিশ বেল্ট, ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড, দুটি রামদা, একটি ডেগার, একটি চাপাতি, দুটি ছুরি, দুটি টর্চলাইট, দুটি রশি, ৪৬৭ পিস ইয়াবা, ৩০ বোতল ফেনসিডিল, দেড় কেজি গাঁজা, সাত গ্রাম হেরোইন, পাঁজ লিটার চোলাই মদ, ১৯টি মোবাইল এবং নগদ ৪৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটি রাতের আঁধারে পুলিশের ভুয়া ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় টর্চলাইট দিয়ে গাড়ি থামিয়ে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল এবং দামি জিনিসপত্র তার বাহিনীর সদস্যদেরকে নিয়ে লুটপাট করত। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, রেজা ৩০টি সিএনজির মালিক। তার নামে অস্ত্র, মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে নিজেকে আমিনুল হক নামে পুলিশের এসআই (উপ-পরিদর্শক) পরিচয় দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র, নকল আগ্নেয়াস্ত্র, নকল আইডি কার্ড, ইউনিফর্ম, ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও চাঁদাবাজি করত। সাভার এলাকায় সক্রিয় ডাকাত চক্রের পাশাপাশি মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করত। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, সে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া পুলিশ অফিসার সেজে চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা ও বানোয়াটভাবে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করত। শামীমসহ গ্রেপ্তারকৃত সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

শামীম পুলিশ পরিচয়ে কতদিন ধরে ডাকাতি করে আসছিল জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ৩/৪ বছর ধরে সে ডাকাতির দল পরিচালনা করছে। সে নিজেকে এসআই পরিচয়ে ডাকাতি করছে দুই বছর। এর মধ্যে সে ৮/৯টি ডাকাতি করেছে বলে তথ্য মিলেছে। নিজের এলাকা রাজশাহীতে সে জমি-জমা করেছে। এর আগে শামীম প্রতারণা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছে।

পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি ও পুলিশের ইউনিফর্ম সংগ্রহ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-৪ সিও বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিচয় ছাড়া পুলিশের পোশাক বিক্রির সুযোগ নেই। এরপরও সে কোন এক ফাঁকে পুলিশের পোশাক সংগ্রহ করেছে। এসআই পরিচয়ে পুলিশের পোশাক পরে ডাকাতির ঘটনায় শামীম পুলিশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পুলিশের পোশাক সংগ্রহের ক্ষেত্রে পুলিশবাহিনী বা অন্য কারও যোগসাজশ রয়েছে কি না- তা খতিয়ে দেখা হবে।

শনিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২১ , ১৪ কার্তিক ১৪২৮ ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

ডাকাতির টাকায় ত্রিশটি সিএনজির মালিক রেজা

পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

কিশোর বয়স থেকেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে শামীম রেজা (৩০)। গ্রামের একটি স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে ২০০৫ সালে রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসে। জীবিকার তাগিদে চাকরি নেন একটি গার্মেন্টসে। মাদক সেবন থেকে জড়িয়ে পড়ে মাদক কারবারে। একপর্যায় রেজা নিজেই ডাকাত চক্র গড়ে তোলে। পুলিশের ইউনিফর্ম পরে নিজেকে এসআই পরিচয় দিয়ে সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় ডাকাতি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। ডাকাতির টাকায় ৩০টি সিএনজির কেনা পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতে জমিও কিনেছে রেজা।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান। এর আগে গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত সাভার থানাধীন রাজাশন এলাকা থেকে চক্রের মূলহোতা রেজাসহ ছয় ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন, হেলাল উদ্দিন, মো. পারভেজ, ওয়াসিম ইসলাম, নাইম খান ও ফেরদৌস আহমেদ রাজু।

অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, গুলি, একটি নকল পিস্তল, একটি পিস্তল টাইপ লাইটার, একটি কভারসহ হ্যান্ডকাফ, একটি ওয়াকিটকি, দুই সেট পুলিশ ইউনিফর্ম, পুলিশ জ্যাকেট, পুলিশ বেল্ট, ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড, দুটি রামদা, একটি ডেগার, একটি চাপাতি, দুটি ছুরি, দুটি টর্চলাইট, দুটি রশি, ৪৬৭ পিস ইয়াবা, ৩০ বোতল ফেনসিডিল, দেড় কেজি গাঁজা, সাত গ্রাম হেরোইন, পাঁজ লিটার চোলাই মদ, ১৯টি মোবাইল এবং নগদ ৪৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রটি রাতের আঁধারে পুলিশের ভুয়া ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় টর্চলাইট দিয়ে গাড়ি থামিয়ে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল এবং দামি জিনিসপত্র তার বাহিনীর সদস্যদেরকে নিয়ে লুটপাট করত। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, রেজা ৩০টি সিএনজির মালিক। তার নামে অস্ত্র, মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে নিজেকে আমিনুল হক নামে পুলিশের এসআই (উপ-পরিদর্শক) পরিচয় দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র, নকল আগ্নেয়াস্ত্র, নকল আইডি কার্ড, ইউনিফর্ম, ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও চাঁদাবাজি করত। সাভার এলাকায় সক্রিয় ডাকাত চক্রের পাশাপাশি মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করত। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, সে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া পুলিশ অফিসার সেজে চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা ও বানোয়াটভাবে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করত। শামীমসহ গ্রেপ্তারকৃত সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

শামীম পুলিশ পরিচয়ে কতদিন ধরে ডাকাতি করে আসছিল জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ৩/৪ বছর ধরে সে ডাকাতির দল পরিচালনা করছে। সে নিজেকে এসআই পরিচয়ে ডাকাতি করছে দুই বছর। এর মধ্যে সে ৮/৯টি ডাকাতি করেছে বলে তথ্য মিলেছে। নিজের এলাকা রাজশাহীতে সে জমি-জমা করেছে। এর আগে শামীম প্রতারণা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছে।

পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি ও পুলিশের ইউনিফর্ম সংগ্রহ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-৪ সিও বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিচয় ছাড়া পুলিশের পোশাক বিক্রির সুযোগ নেই। এরপরও সে কোন এক ফাঁকে পুলিশের পোশাক সংগ্রহ করেছে। এসআই পরিচয়ে পুলিশের পোশাক পরে ডাকাতির ঘটনায় শামীম পুলিশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পুলিশের পোশাক সংগ্রহের ক্ষেত্রে পুলিশবাহিনী বা অন্য কারও যোগসাজশ রয়েছে কি না- তা খতিয়ে দেখা হবে।