এক মাসে ১শ’ কোটি টাকার ঋণ ছাড় করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন

করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরণের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকার ঋণ ছাড় করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ইতোমধ্যে ৩১৬ জন উদ্যোক্তার জন্য ৪২ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। ২৩০ জন উদ্যোক্তার জন্য ৪২ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আরও ২৬৮ জন উদ্যোক্তার জন্য ৫৪ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রান্তিক অঞ্চলের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই উদ্যোক্তাদের কাছে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পৌঁছে দিতে গতকাল সিলেটে উদ্যোক্তা-ব্যাংকার-ম্যাচমেকিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এসএমই ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট কার্যালয়ের সহায়তায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এ কে এম এহসান এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এসএমই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ব্যাংকারদের দূরত্ব কমাতে উদ্যোক্তা সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বড় উদ্যোক্তাদের তুলনায় ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণের প্রক্রিয়া ব্যয় সাপেক্ষ হলেও সরকারের প্রণোদনার ঋণ বিতরণে এগিয়ে আসায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধন্যবাদ জানায়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুষ্ঠুভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে একটি হটলাইন চালু করা যেতে পারে।’

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘ছোট উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ ফেরত না পাওয়ার কোন নজির নেই। এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন সহজ করতে ব্যাংকারদের প্রতি অনুরোধ করছি। উদ্যোক্তাদের বলছি, সহজে ঋণ পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন। চলতি অর্থবছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ শেষ করা সম্ভব হবে।

করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের দ্বিতীয় দফা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় চলতি অর্থবছরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ২০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের সেপ্টেম্বর ২০২১-এ ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সই করে ফাউন্ডেশন। ঋণের সুদের হার হবে মাত্র ৪ শতাংশ। একজন উদ্যোক্তা সর্বনি¤œ ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ পাবেন।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, ব্র্যাংক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বেসিক ব্যাংক, দ্যা সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সারাদেশের প্রায় ১০০টি এসএমই ক্লাস্টার, চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সারাদেশের নারী উদ্যোক্তা এবং এসএমই ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংগঠন ও অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সুপারিশকৃত এসএমই উপখাত, ট্রেডবডি এবং গ্রুপের তালিকাভুক্ত উদ্যোক্তা এবং সিএমএসএমই খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রথম দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ না পাওয়া পল্লী ও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাগণকে ঋণ প্রদান করবে। মোট ঋণের ৩০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের দ্বিতীয় দফার প্রণোদনার আওতায় মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের মাঝে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে এসএমই ফাউন্ডেশন। চলতি অর্থবছরে আরো ২০০ কোটি টাকা এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে বরাদ্দ দেয় অর্থ বিভাগ।

রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

এক মাসে ১শ’ কোটি টাকার ঋণ ছাড় করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরণের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকার ঋণ ছাড় করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ইতোমধ্যে ৩১৬ জন উদ্যোক্তার জন্য ৪২ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। ২৩০ জন উদ্যোক্তার জন্য ৪২ কোটি টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আরও ২৬৮ জন উদ্যোক্তার জন্য ৫৪ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রান্তিক অঞ্চলের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই উদ্যোক্তাদের কাছে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ পৌঁছে দিতে গতকাল সিলেটে উদ্যোক্তা-ব্যাংকার-ম্যাচমেকিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এসএমই ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট কার্যালয়ের সহায়তায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এ কে এম এহসান এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এসএমই উদ্যোক্তাদের সঙ্গে ব্যাংকারদের দূরত্ব কমাতে উদ্যোক্তা সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বড় উদ্যোক্তাদের তুলনায় ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণের প্রক্রিয়া ব্যয় সাপেক্ষ হলেও সরকারের প্রণোদনার ঋণ বিতরণে এগিয়ে আসায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধন্যবাদ জানায়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুষ্ঠুভাবে বিতরণ নিশ্চিত করতে একটি হটলাইন চালু করা যেতে পারে।’

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘ছোট উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ ফেরত না পাওয়ার কোন নজির নেই। এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন সহজ করতে ব্যাংকারদের প্রতি অনুরোধ করছি। উদ্যোক্তাদের বলছি, সহজে ঋণ পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন। চলতি অর্থবছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ শেষ করা সম্ভব হবে।

করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের দ্বিতীয় দফা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় চলতি অর্থবছরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ২০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের সেপ্টেম্বর ২০২১-এ ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি সই করে ফাউন্ডেশন। ঋণের সুদের হার হবে মাত্র ৪ শতাংশ। একজন উদ্যোক্তা সর্বনি¤œ ১ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণ পাবেন।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, ব্র্যাংক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বেসিক ব্যাংক, দ্যা সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সারাদেশের প্রায় ১০০টি এসএমই ক্লাস্টার, চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সারাদেশের নারী উদ্যোক্তা এবং এসএমই ফাউন্ডেশন, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংগঠন ও অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সুপারিশকৃত এসএমই উপখাত, ট্রেডবডি এবং গ্রুপের তালিকাভুক্ত উদ্যোক্তা এবং সিএমএসএমই খাতের জন্য সরকার ঘোষিত প্রথম দফার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ না পাওয়া পল্লী ও প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাগণকে ঋণ প্রদান করবে। মোট ঋণের ৩০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং পল্লী এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের দ্বিতীয় দফার প্রণোদনার আওতায় মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের মাঝে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে এসএমই ফাউন্ডেশন। চলতি অর্থবছরে আরো ২০০ কোটি টাকা এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে বরাদ্দ দেয় অর্থ বিভাগ।