মায়ানমারে সেনাবাহিনীর হামলা, বাড়িঘরে আগুন

৩ দিনে ৮৫ জান্তা সেনা নিহত

মায়ানমারের চিন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে নতুন করে সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে ব্যাপক তা-ব চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। বহু বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা। প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, চিন রাজ্যের থান্টলাং শহরে স্থানীয় আত্মরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সেনা সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। এরপরই ভারি গোলাবর্ষণ চালায় সেনারা। থান্টলাং থেকে পালিয়ে আসা এক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপির। তিনি বলেন, এক সেনা সদস্যকে আটকের জেরে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ওই এলাকা প্রচ- গোলাগুলির কথা জানতে পেরেছি। সাধারণ মানুষের ওপর কামান নিয়ে হামলা চালিয়েছে সেনাবাহিনী। এতে ৮০ থেকে একশ’ ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।

সংবাদমাধ্যমকে তিনি আরও জানান, ‘আমরা জানি না আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কিনা।’ তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক ছবিতে দেখা গেছে, পাহাড়ের ভেতরে থাকা বাড়িঘর থেকে কালো ধোঁয়া ছড়াতে দেখা গেছে।

হামলার নিন্দা জানিয়ে দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, সেনারা হামলার পর কমপক্ষে ১০০ বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। স্থানীয়রা সেখানে আর ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে এই সংস্থাটি।

এদিকে, দেশটির সামরিক সরকারের বিরোধীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৮৫ জান্তা সেনা নিহত হয়েছেন। গত তিন দিনে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাগাইং অঞ্চলে সরকার বিরোধী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সরকারি বাহিনীর সদস্যদের প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) ২৫ সেনা সদস্য নিহত হন। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মায়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী। প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, গত বুধবারমা য়ানমারের জান্তাবিরোধী বাহিনী কাউলিন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (কেএলপিডিএফ) যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪০ জন সরকারি সেনা নিহত হয়েছিলেন। সাগাইংয়ের কাউলিন শহরের কিউনবিনথা গ্রামের কাছে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

জান্তাবিরোধী বাহিনী কেএলপিডিএফের সংবাদ প্রকাশ করে থাকে কাউলিন রিভ্যুলিউশন (কেআর)। সংস্থাটি বলছে, বুধবার ও বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষ-প্রাণহানির পাশাপাশি ওই এলকায় পৃথক আরেকটি লড়াইয়ে জান্তা সরকারের আরও ২০ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন।

কেআরের বরাত দিয়ে ইরাবতী বলছে, সর্বশেষ কাউলিন শহরের পূর্বাঞ্চলে সরকারি বাহিনী এবং প্রতিরোধ বাহিনী কেএলপিডিএফের যোদ্ধাদের মধ্যে গোলাগুলিতে ২৫ জন জান্তা সেনা নিহত হয়। একইসঙ্গে ওই সংঘর্ষে তিনজন প্রতিরোধ যোদ্ধাও নিহত হন। এছাড়া কেআরের প্রকাশিত একটি ছবিতে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে সংঘর্ষে নিহত কয়েকজন সরকারি সেনার মৃতদেহ পোড়াতে দেখা যায় কেএলপিডিএফের যোদ্ধাদের।

গ্রুপটি জানিয়েছে, সংঘর্ষের পর ইয়ে হতুত ও নামে মায়ানমার সেনাবাহিনীর এক মেজরের আংশিক পুঁতে রাখা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সরকারি সেনা সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আংশিক পুঁতে রাখা অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। এছাড়া সংঘর্ষের আগে বৃহস্পতিবার সকালে ছয়টি গাড়িতে করে জান্তা সেনারা কাউলিনে প্রবেশ করে বলেও জানানো হয়েছে। মায়ানমারের সামরিক সরকারবিরোধী ছায়া সরকার বলে পরিচিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)-র প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইয়ে-ইউ ও বুদালিন শহরে বিরোধী বাহিনীর হামলায় ১৪ জনের মতো সরকারি সেনা নিহত হয়েছেন। এনইউজি’র প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, অক্টোবরের ১৯ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে ১২৭টি ঘটনায় জান্তা সরকারের প্রায় ২০০ সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। আর আহত সেনাদের সংখ্যা ৪৪ জন।

চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। রক্তপাতহীন এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন মায়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং। অং সান সুচি ও তার দল এনএলডির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা বর্তমানে গৃহবন্দী বা কারাবন্দী অবস্থায় আছেন।

পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে জান্তা সরকারের হাতে দেশটিতে প্রায় ১২০০ জন নিহত হয়েছেন এবং ৭ হাজারের বেশি মানুষকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই দেশটির বিভিন্ন জায়গায় জ্বালাও-পোড়াও অব্যাহত রেখেছে সেনারা। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজারের বেশি মানুষ।

রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

মায়ানমারে সেনাবাহিনীর হামলা, বাড়িঘরে আগুন

৩ দিনে ৮৫ জান্তা সেনা নিহত

image

জান্তার সেনাবাহিনীর দেয়া আগুনে জ্বলছে দেশটির চিন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে সাধারণ জনগণের বসতবাড়ি -রয়টার্স

মায়ানমারের চিন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে নতুন করে সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে ব্যাপক তা-ব চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। বহু বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছে তারা। প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, চিন রাজ্যের থান্টলাং শহরে স্থানীয় আত্মরক্ষা বাহিনীর সঙ্গে সেনা সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। এরপরই ভারি গোলাবর্ষণ চালায় সেনারা। থান্টলাং থেকে পালিয়ে আসা এক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় ফরাসি সংবাদমাধ্যম এএফপির। তিনি বলেন, এক সেনা সদস্যকে আটকের জেরে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ওই এলাকা প্রচ- গোলাগুলির কথা জানতে পেরেছি। সাধারণ মানুষের ওপর কামান নিয়ে হামলা চালিয়েছে সেনাবাহিনী। এতে ৮০ থেকে একশ’ ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।

সংবাদমাধ্যমকে তিনি আরও জানান, ‘আমরা জানি না আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কিনা।’ তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক ছবিতে দেখা গেছে, পাহাড়ের ভেতরে থাকা বাড়িঘর থেকে কালো ধোঁয়া ছড়াতে দেখা গেছে।

হামলার নিন্দা জানিয়ে দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, সেনারা হামলার পর কমপক্ষে ১০০ বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। স্থানীয়রা সেখানে আর ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে এই সংস্থাটি।

এদিকে, দেশটির সামরিক সরকারের বিরোধীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৮৫ জান্তা সেনা নিহত হয়েছেন। গত তিন দিনে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাগাইং অঞ্চলে সরকার বিরোধী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সরকারি বাহিনীর সদস্যদের প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) ২৫ সেনা সদস্য নিহত হন। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মায়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী। প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, গত বুধবারমা য়ানমারের জান্তাবিরোধী বাহিনী কাউলিন পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (কেএলপিডিএফ) যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪০ জন সরকারি সেনা নিহত হয়েছিলেন। সাগাইংয়ের কাউলিন শহরের কিউনবিনথা গ্রামের কাছে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

জান্তাবিরোধী বাহিনী কেএলপিডিএফের সংবাদ প্রকাশ করে থাকে কাউলিন রিভ্যুলিউশন (কেআর)। সংস্থাটি বলছে, বুধবার ও বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষ-প্রাণহানির পাশাপাশি ওই এলকায় পৃথক আরেকটি লড়াইয়ে জান্তা সরকারের আরও ২০ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন।

কেআরের বরাত দিয়ে ইরাবতী বলছে, সর্বশেষ কাউলিন শহরের পূর্বাঞ্চলে সরকারি বাহিনী এবং প্রতিরোধ বাহিনী কেএলপিডিএফের যোদ্ধাদের মধ্যে গোলাগুলিতে ২৫ জন জান্তা সেনা নিহত হয়। একইসঙ্গে ওই সংঘর্ষে তিনজন প্রতিরোধ যোদ্ধাও নিহত হন। এছাড়া কেআরের প্রকাশিত একটি ছবিতে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে সংঘর্ষে নিহত কয়েকজন সরকারি সেনার মৃতদেহ পোড়াতে দেখা যায় কেএলপিডিএফের যোদ্ধাদের।

গ্রুপটি জানিয়েছে, সংঘর্ষের পর ইয়ে হতুত ও নামে মায়ানমার সেনাবাহিনীর এক মেজরের আংশিক পুঁতে রাখা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সরকারি সেনা সদস্যরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আংশিক পুঁতে রাখা অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। এছাড়া সংঘর্ষের আগে বৃহস্পতিবার সকালে ছয়টি গাড়িতে করে জান্তা সেনারা কাউলিনে প্রবেশ করে বলেও জানানো হয়েছে। মায়ানমারের সামরিক সরকারবিরোধী ছায়া সরকার বলে পরিচিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)-র প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইয়ে-ইউ ও বুদালিন শহরে বিরোধী বাহিনীর হামলায় ১৪ জনের মতো সরকারি সেনা নিহত হয়েছেন। এনইউজি’র প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, অক্টোবরের ১৯ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে ১২৭টি ঘটনায় জান্তা সরকারের প্রায় ২০০ সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। আর আহত সেনাদের সংখ্যা ৪৪ জন।

চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সুচির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। রক্তপাতহীন এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন মায়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং। অং সান সুচি ও তার দল এনএলডির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা বর্তমানে গৃহবন্দী বা কারাবন্দী অবস্থায় আছেন।

পর্যবেক্ষক সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের (এএপিপি) সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে জান্তা সরকারের হাতে দেশটিতে প্রায় ১২০০ জন নিহত হয়েছেন এবং ৭ হাজারের বেশি মানুষকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই দেশটির বিভিন্ন জায়গায় জ্বালাও-পোড়াও অব্যাহত রেখেছে সেনারা। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজারের বেশি মানুষ।