পীরগঞ্জের মাঝিপাড়া

বদলে গেছে চেহারা, পেয়েছে নতুন ঘর, তবু কাটছে না আতঙ্ক

রংপুরের পীরগঞ্জ মাঝিপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া ভাঙচুর ও লুটসহ তাণ্ডবের ঘটনার মাত্র ৯ দিনের মধ্যে পুরো মাঝিপাড়া গ্রামের দৃশ্যপট বদলে গেছে। সর্বশান্ত ২৬টি পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত সব বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। নগদ অর্থসহ অনেক ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন মাঝিপাড়ার ৭০টি পরিবার। তবু তাদের শঙ্কা কাটছে না। অনেকেই রাতে ঘুমাতে পারছেন না। বিশেষ করে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ওপর তারা কোনভাবেই আস্থা পাচ্ছেন না তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে। এখনও বেশিরভাগ জেলে নদী ও বিলে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না ভয়ে।

মাঝিপাড়ার উত্তরপাড়া গ্রামের মনা বালা নামে এক বৃদ্ধা আর রানী রায় জানালেন তাণ্ডবের পর অনেকেই তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, নগদ অর্থসহ ব্যাপক ত্রাণসামগ্রী পেয়েছেন কিন্তু আগে তো কোন খোঁজ নেয়নি। তাদের মাঝে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে সেটা কি টাকা আর ত্রাণ দিয়ে দূর হবে, কখনই হবে না। আর আবারও যে হামলা হবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে? এখন পুলিশ আছে, পাহারা দিচ্ছে, তারা কি সবসময় থাকবে?। কিন্তু আমাদের মাছ ধরতে হবে, বাজার ঘাট করতে হবে, বাজারে যেতে হবে, আমরা কি নিরাপদে আগের মতো চলাফেরা করতে পারবো?

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মাঝিপাড়া মন্দিরের সামনেই নিখিলের দোকান ছিল, পুরো দোকান জ্বালিয়ে দেয়া হলো প্রায় দু’লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেল। সে জানালো, আমি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না, আমার ক্ষতিপুরণ করবে কে?। অভিযোগ করলেন কাছাকাছি পুলিশ থেকেও তারা আমাদের রক্ষা করতে পারেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দুই প্রত্যক্ষদর্শী নারী জানালেন, ঘটনার জন্য দায়ী পরেশ ওরফে পরিতোষ দায়ী, সে কেন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য ফেইসবুকে পোস্ট দিলো, ১৭ অক্টোবর দুপুরের আগেই সেই স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। তাৎক্ষণিক কেন পুলিশ ব্যবস্থা নিল না। আগেই যদি পরিতোষকে আটক করা হতো তা হলে তাণ্ডবের ঘটনা ঘটতো বলে মনে হয় না তাদের। বরং পুলিশ এ ঘটনার পর মাঝিপাড়ায় হামলা হতে পারে আশঙ্কা করলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি সন্ধ্যা পর্যন্ত। ফলে ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়া পরেশ উজ্জল আর আল আমিনের দেয়া স্ট্যাটাস নিয়ে আশপাশের গ্রামগুলোসহ পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর এলাকায় হামলার প্রস্তুতির কথা আমরা জানতে পারছিলাম।

পরিতোষকে রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশ তাণ্ডব ঘটনার পরোক্ষ সুযোগ করে দিয়েছে : মাঝিপাড়া ঘুরে বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, মন্দিরের পুরোহিতের সহকারীসহ অনেকেই তাদের নাম প্রকাশ করলে ভবিষতে ক্ষতি হতে পারে জানিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর পীরগঞ্জ থানা থেকে একদল পুলিশ আসে জেলা শহর থেকেও অতিরিক্ত পুলিশ আসে। তারা ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া পরিতোষের বাড়িতে হামলা হতে পারে আশঙ্কা করে তার বাড়ির কাছেই অবস্থান নেয়। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগায় হামলাকারীরা তারা পরিতোষের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বড় করিমপুর উত্তর মাঝিপাড়া গ্রামে পেছন থেকে হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে আগুন দেয়। বাড়িঘরে যখন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল তখন পুলিশের টনক নড়ে তারা রাবার বুলেট গুলিবর্ষণ শুরু করে, কিন্তু ততক্ষণে ২৬টি পরিবারের প্রায় ৪০টি ঘর পুড়ে গেছে।

গরু-ছাগল, নগদ অর্থ, মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি পুরো হিন্দুপাড়া কর্ডন করে রাখতো তা হলে এত বড় তাণ্ডবের ঘটনা ঘটতো না। বরং ওনারা অপরাধী পরিতোষের বাড়ি রক্ষার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কেন তারা তাকে দুপুরের মধ্যে গ্রেপ্তার করলো না? পুলিশের যে চরম গাফিলতি ছিল, এ ঘটনা তদন্ত হয়েছে? এক শিক্ষার্থী বলেন, কেন এ ঘটনার জন্য দায়িত্বে অবহেলা, তাণ্ডবের ঘটনা সামলাতে ব্যর্থতার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো না, এসব প্রশ্নের উত্তর আমরা কোনদিনও হয়তো পাবো না।

তবে উত্তর ও দক্ষিণ মাঝিপাড়া গ্রাম ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যত সাহায্য দেয়া হোক এ যেন জুতা মেরে মাল্য দানের অবস্থা। আমরা শত ভাগ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছি না, ফলে আমাদের ওপর আবার হামলা হতে পারেÑ এ আশঙ্কা তারা সব সময় করছে বলে জানিয়েছেন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছে, হিন্দু পরিবারগুলোর নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কের কথা বলেছে। মাঝিপাড়ায় তাণ্ডবের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গোলাম রব্বানীকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মানবাধিকার কমিশন পরিচালক আশরাফুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আসরাফুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে একটি বিষয়ের উপর বার বার জোর দিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ ৭০টি হিন্দু পরিবার বার বার বলেছে তাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা। তাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। সবার আগে তারা তাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি চায় বলে জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন, বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কমিশন লিখিতভাবে জানাবে। চলতি সপ্তাহেই তাদের প্রতিবেদন দেবার কথা রয়েছে।

পুলিশের বক্তব্য

পীরগঞ্জে তাণ্ডবের ঘটনার পরের দিন রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন পরিতোষের অবমাননাকর পোস্ট দেয়ার কারণে মূলত ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেছেন, ঘটনার পড়তে পড়তে আমরা বিচার করবো। যারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিল করতে চান, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার বলেছেন, পরিবারদের আতঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই তাদের নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

তাণ্ডবকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

তাণ্ডবের ঘটনার পর অবমাননাকর স্ট্যাটাস প্রদানকারী পরিতোষকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়েছে। পরিতোষ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তার দুই সহযোগী উজ্জল ও আল আমিনকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে একই আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে, তারা দুজনেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

ঢাকায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রলীগ রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার নেতা সৈকত মণ্ডল ও তার সহযোগী রবিউলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে। তারাও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩টি মামলা হয়েছে। এছাড়া তাণ্ডবের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই মামলায় ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নতুন ঘর নির্মাণ ও অর্থ সহায়তা

ঘটনার পরপরই সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে শুরু করে অসংখ্য বেসরকারি সংস্থা এনজিওসহ বিভিন্ন মহলের নগদ অর্থ, খাবার, শাড়ি কাপড়সহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী পেয়ে তারা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরগুলো নতুন করে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় দেখলে বোঝার কোন উপায় নেই ৯ দিন আগে তারা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছিল। বরং সরকার ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তায় মাঝিপাড়ার হতদরিদ্র পরিবারগুলো এখন স্বাবলম্বি হয়ে পড়েছে। এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের কৃতজ্ঞাতার কথা জানালো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত একেকটি পরিবার নগদ ২ থেকে ৩ লাখ তারও বেশি নগদ টাকা, নতুন ঢেউ টিন, পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী- বিশেষ করে চাল, পরনের কাপড়, শাড়ি, লুঙ্গিসহ বিভিন্ন সামগ্রী পেয়েছে। যা তারা কল্পনাও করেনি। অনেক পরিবার বলেছে, আগে দিনভর নদীতে বিলে মাছ ধরে সেই মাছ বিক্রি করে চাল ডাল কিনে চুলা জলতো। এখনও প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী, নগদ অর্থ যা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরও জানান, মাঝিপাড়ার তাণ্ডবের ঘটনা সারাদেশের মানুষের মাঝে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে। সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ঘটনার পর পরেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের নগদ অর্থসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরগুলোর জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন।

তাক্ষণিকভাবে একশ বান্ডিল টিন দিয়েছেন সেই সঙ্গে ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ। এ ছাড়াও তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে প্রতিটি পরিবারকে নগদ অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী প্রদান করেছেন। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান মন্ত্রী দুবার ঘটনাস্থলে এসে নিজ হাতে বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা ও ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। দ্রুত বাড়িঘর নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলা প্রশাসক আসিব আহসান প্রতিদিনই ঘটনাস্থলে এসে নির্মাণ কাজের তদারকি করেছেন।

তিনি আরও জানান, উপজেলার ওই পল্লীতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করেছে। তালিকায় ২৬টি পরিবারের বেশি ক্ষতি এবং হালকা ক্ষতি হয়েছে ৪০টি পরিবার। ওইসব পরিবারকে দেয়া সরকারি-বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেয়া নগদ টাকাসহ অন্যান্য সামগ্রীর তালিকা করা হয়েছে। এতে ২৬টি পরিবার তিন লাখ টাকারও বেশি নগদ টাকা এবং কাপড়, শুকনো খাবারও পেয়েছেন। এছাড়া যাদের কম ক্ষতি হয়েছে তারাও লক্ষাধিক নগদ অর্থসহ ত্রাণ সামগ্রী ও মালামাল সাহায্য পেয়েছেন।

মাঝিপাড়ার নিখিল চন্দ্র বলেন, আগুন লাগে দি মোর দোকান ঘরটা পুড়ি দিচে। ঘটনার একদিন পরেই ইউএনও স্যার, পিআইও স্যার হামার পাড়ার পোড়া-ভাংগা বাড়িগুল্যা ঠিক করার জন্যে মিস্ত্রি নাগে দেয়। মুই এখন মোর নুতুন ঘরে দোকান করছো। ক্ষতিগ্রস্ত দেবেন চন্দ্র বলেন, হামার এমপি স্পিকার আপা টিন আর নগদ ট্যাকা দিছে। পিআইও স্যার সেই টিন দিয়া মোর ঘরগুল্যা একদম নুতুন করি বানে দিচে। এ জন্য হামরা সবাই খুশি। তিনি আরও বলেন, আগুনে মোর দুটা গরু পুড়ি মারা যায়। মোক গরু, নগদ ট্যাকা, শাড়ি, লুঙ্গি, কম্বল, চাল, ডাল সগি দিচে।

জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, মাঝিপাড়ায় তাণ্ডবের ঘটনার পর বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিটি পরিবারকে ২ থেকে তিন লাখ টাকা নগদ অর্থ প্রদান করেছে। এছাড়া ব্রাকসহ বিভিন্ন এনজিও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআর এসসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অকল্পনীয় নগদ অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা ক্ষতিগ্রস্তরা পেয়েছেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে যা বিরল ঘটনা।

রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

পীরগঞ্জের মাঝিপাড়া

বদলে গেছে চেহারা, পেয়েছে নতুন ঘর, তবু কাটছে না আতঙ্ক

লিয়াকত আলী বাদল, পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে ফিরে

image

রংপুর : পীরগঞ্জের মাঝিপাড়া তা-বের পর জেলেদের জন্য সরকারি খরচে নির্মাণাধীন নতুন ঘর, গত সপ্তাহের তোলা ছবি -সংবাদ

রংপুরের পীরগঞ্জ মাঝিপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া ভাঙচুর ও লুটসহ তাণ্ডবের ঘটনার মাত্র ৯ দিনের মধ্যে পুরো মাঝিপাড়া গ্রামের দৃশ্যপট বদলে গেছে। সর্বশান্ত ২৬টি পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত সব বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। নগদ অর্থসহ অনেক ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন মাঝিপাড়ার ৭০টি পরিবার। তবু তাদের শঙ্কা কাটছে না। অনেকেই রাতে ঘুমাতে পারছেন না। বিশেষ করে পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ওপর তারা কোনভাবেই আস্থা পাচ্ছেন না তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে। এখনও বেশিরভাগ জেলে নদী ও বিলে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না ভয়ে।

মাঝিপাড়ার উত্তরপাড়া গ্রামের মনা বালা নামে এক বৃদ্ধা আর রানী রায় জানালেন তাণ্ডবের পর অনেকেই তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, নগদ অর্থসহ ব্যাপক ত্রাণসামগ্রী পেয়েছেন কিন্তু আগে তো কোন খোঁজ নেয়নি। তাদের মাঝে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে সেটা কি টাকা আর ত্রাণ দিয়ে দূর হবে, কখনই হবে না। আর আবারও যে হামলা হবে না তার গ্যারান্টি কে দেবে? এখন পুলিশ আছে, পাহারা দিচ্ছে, তারা কি সবসময় থাকবে?। কিন্তু আমাদের মাছ ধরতে হবে, বাজার ঘাট করতে হবে, বাজারে যেতে হবে, আমরা কি নিরাপদে আগের মতো চলাফেরা করতে পারবো?

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মাঝিপাড়া মন্দিরের সামনেই নিখিলের দোকান ছিল, পুরো দোকান জ্বালিয়ে দেয়া হলো প্রায় দু’লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেল। সে জানালো, আমি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না, আমার ক্ষতিপুরণ করবে কে?। অভিযোগ করলেন কাছাকাছি পুলিশ থেকেও তারা আমাদের রক্ষা করতে পারেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দুই প্রত্যক্ষদর্শী নারী জানালেন, ঘটনার জন্য দায়ী পরেশ ওরফে পরিতোষ দায়ী, সে কেন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য ফেইসবুকে পোস্ট দিলো, ১৭ অক্টোবর দুপুরের আগেই সেই স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। তাৎক্ষণিক কেন পুলিশ ব্যবস্থা নিল না। আগেই যদি পরিতোষকে আটক করা হতো তা হলে তাণ্ডবের ঘটনা ঘটতো বলে মনে হয় না তাদের। বরং পুলিশ এ ঘটনার পর মাঝিপাড়ায় হামলা হতে পারে আশঙ্কা করলেও কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি সন্ধ্যা পর্যন্ত। ফলে ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়া পরেশ উজ্জল আর আল আমিনের দেয়া স্ট্যাটাস নিয়ে আশপাশের গ্রামগুলোসহ পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর এলাকায় হামলার প্রস্তুতির কথা আমরা জানতে পারছিলাম।

পরিতোষকে রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশ তাণ্ডব ঘটনার পরোক্ষ সুযোগ করে দিয়েছে : মাঝিপাড়া ঘুরে বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, মন্দিরের পুরোহিতের সহকারীসহ অনেকেই তাদের নাম প্রকাশ করলে ভবিষতে ক্ষতি হতে পারে জানিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর পীরগঞ্জ থানা থেকে একদল পুলিশ আসে জেলা শহর থেকেও অতিরিক্ত পুলিশ আসে। তারা ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া পরিতোষের বাড়িতে হামলা হতে পারে আশঙ্কা করে তার বাড়ির কাছেই অবস্থান নেয়। আর এ সুযোগটাই কাজে লাগায় হামলাকারীরা তারা পরিতোষের বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বড় করিমপুর উত্তর মাঝিপাড়া গ্রামে পেছন থেকে হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে আগুন দেয়। বাড়িঘরে যখন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল তখন পুলিশের টনক নড়ে তারা রাবার বুলেট গুলিবর্ষণ শুরু করে, কিন্তু ততক্ষণে ২৬টি পরিবারের প্রায় ৪০টি ঘর পুড়ে গেছে।

গরু-ছাগল, নগদ অর্থ, মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি পুরো হিন্দুপাড়া কর্ডন করে রাখতো তা হলে এত বড় তাণ্ডবের ঘটনা ঘটতো না। বরং ওনারা অপরাধী পরিতোষের বাড়ি রক্ষার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কেন তারা তাকে দুপুরের মধ্যে গ্রেপ্তার করলো না? পুলিশের যে চরম গাফিলতি ছিল, এ ঘটনা তদন্ত হয়েছে? এক শিক্ষার্থী বলেন, কেন এ ঘটনার জন্য দায়িত্বে অবহেলা, তাণ্ডবের ঘটনা সামলাতে ব্যর্থতার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো না, এসব প্রশ্নের উত্তর আমরা কোনদিনও হয়তো পাবো না।

তবে উত্তর ও দক্ষিণ মাঝিপাড়া গ্রাম ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, যত সাহায্য দেয়া হোক এ যেন জুতা মেরে মাল্য দানের অবস্থা। আমরা শত ভাগ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছি না, ফলে আমাদের ওপর আবার হামলা হতে পারেÑ এ আশঙ্কা তারা সব সময় করছে বলে জানিয়েছেন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছে, হিন্দু পরিবারগুলোর নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কের কথা বলেছে। মাঝিপাড়ায় তাণ্ডবের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গোলাম রব্বানীকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। মানবাধিকার কমিশন পরিচালক আশরাফুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আসরাফুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে একটি বিষয়ের উপর বার বার জোর দিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ ৭০টি হিন্দু পরিবার বার বার বলেছে তাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা। তাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। সবার আগে তারা তাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি চায় বলে জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন, বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কমিশন লিখিতভাবে জানাবে। চলতি সপ্তাহেই তাদের প্রতিবেদন দেবার কথা রয়েছে।

পুলিশের বক্তব্য

পীরগঞ্জে তাণ্ডবের ঘটনার পরের দিন রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন পরিতোষের অবমাননাকর পোস্ট দেয়ার কারণে মূলত ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের বলেছেন, ঘটনার পড়তে পড়তে আমরা বিচার করবো। যারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে ফায়দা হাসিল করতে চান, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার বলেছেন, পরিবারদের আতঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই তাদের নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

তাণ্ডবকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

তাণ্ডবের ঘটনার পর অবমাননাকর স্ট্যাটাস প্রদানকারী পরিতোষকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়েছে। পরিতোষ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তার দুই সহযোগী উজ্জল ও আল আমিনকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে একই আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে, তারা দুজনেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

ঢাকায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রলীগ রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখার নেতা সৈকত মণ্ডল ও তার সহযোগী রবিউলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে। তারাও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩টি মামলা হয়েছে। এছাড়া তাণ্ডবের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই মামলায় ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নতুন ঘর নির্মাণ ও অর্থ সহায়তা

ঘটনার পরপরই সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে শুরু করে অসংখ্য বেসরকারি সংস্থা এনজিওসহ বিভিন্ন মহলের নগদ অর্থ, খাবার, শাড়ি কাপড়সহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী পেয়ে তারা পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরগুলো নতুন করে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় দেখলে বোঝার কোন উপায় নেই ৯ দিন আগে তারা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছিল। বরং সরকার ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তায় মাঝিপাড়ার হতদরিদ্র পরিবারগুলো এখন স্বাবলম্বি হয়ে পড়েছে। এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের কৃতজ্ঞাতার কথা জানালো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত একেকটি পরিবার নগদ ২ থেকে ৩ লাখ তারও বেশি নগদ টাকা, নতুন ঢেউ টিন, পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী- বিশেষ করে চাল, পরনের কাপড়, শাড়ি, লুঙ্গিসহ বিভিন্ন সামগ্রী পেয়েছে। যা তারা কল্পনাও করেনি। অনেক পরিবার বলেছে, আগে দিনভর নদীতে বিলে মাছ ধরে সেই মাছ বিক্রি করে চাল ডাল কিনে চুলা জলতো। এখনও প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী, নগদ অর্থ যা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

তিনি আরও জানান, মাঝিপাড়ার তাণ্ডবের ঘটনা সারাদেশের মানুষের মাঝে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে। সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ঘটনার পর পরেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের নগদ অর্থসহ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরগুলোর জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী নিজে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন।

তাক্ষণিকভাবে একশ বান্ডিল টিন দিয়েছেন সেই সঙ্গে ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ। এ ছাড়াও তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে প্রতিটি পরিবারকে নগদ অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী প্রদান করেছেন। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান মন্ত্রী দুবার ঘটনাস্থলে এসে নিজ হাতে বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা ও ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। দ্রুত বাড়িঘর নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলা প্রশাসক আসিব আহসান প্রতিদিনই ঘটনাস্থলে এসে নির্মাণ কাজের তদারকি করেছেন।

তিনি আরও জানান, উপজেলার ওই পল্লীতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করেছে। তালিকায় ২৬টি পরিবারের বেশি ক্ষতি এবং হালকা ক্ষতি হয়েছে ৪০টি পরিবার। ওইসব পরিবারকে দেয়া সরকারি-বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে দেয়া নগদ টাকাসহ অন্যান্য সামগ্রীর তালিকা করা হয়েছে। এতে ২৬টি পরিবার তিন লাখ টাকারও বেশি নগদ টাকা এবং কাপড়, শুকনো খাবারও পেয়েছেন। এছাড়া যাদের কম ক্ষতি হয়েছে তারাও লক্ষাধিক নগদ অর্থসহ ত্রাণ সামগ্রী ও মালামাল সাহায্য পেয়েছেন।

মাঝিপাড়ার নিখিল চন্দ্র বলেন, আগুন লাগে দি মোর দোকান ঘরটা পুড়ি দিচে। ঘটনার একদিন পরেই ইউএনও স্যার, পিআইও স্যার হামার পাড়ার পোড়া-ভাংগা বাড়িগুল্যা ঠিক করার জন্যে মিস্ত্রি নাগে দেয়। মুই এখন মোর নুতুন ঘরে দোকান করছো। ক্ষতিগ্রস্ত দেবেন চন্দ্র বলেন, হামার এমপি স্পিকার আপা টিন আর নগদ ট্যাকা দিছে। পিআইও স্যার সেই টিন দিয়া মোর ঘরগুল্যা একদম নুতুন করি বানে দিচে। এ জন্য হামরা সবাই খুশি। তিনি আরও বলেন, আগুনে মোর দুটা গরু পুড়ি মারা যায়। মোক গরু, নগদ ট্যাকা, শাড়ি, লুঙ্গি, কম্বল, চাল, ডাল সগি দিচে।

জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, মাঝিপাড়ায় তাণ্ডবের ঘটনার পর বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিটি পরিবারকে ২ থেকে তিন লাখ টাকা নগদ অর্থ প্রদান করেছে। এছাড়া ব্রাকসহ বিভিন্ন এনজিও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআর এসসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অকল্পনীয় নগদ অর্থ ও ত্রাণ সহায়তা ক্ষতিগ্রস্তরা পেয়েছেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে যা বিরল ঘটনা।