বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর ইমিগ্রেশন কাস্টম ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত

গতি ফিরবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে

বেনাপোল-পেট্টাপোল বন্দর সপ্তাহে ৭ দিনে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। ইতোমধ্যে এ নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপাতত পরীক্ষামূলক তিন মাস চলবে এ কার্যক্রম। ভালো সাড়া পেলে তা দীর্ঘস্থায়ী করা হবে। খুব দ্রুত এ সেবা চালু হবে দুই দেশের বন্দর ও কাস্টমস ইমিগ্রেশনে। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ২৪ ঘণ্টা বন্দরের কার্যক্রম সচলে যেমন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি ফিরবে, তেমনি ভ্রমণে সুবিধা পাবেন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী দেশি-বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীরা।

ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, গত ২৫ অক্টোবর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির ডিরেক্টর অজিত কুমার সিং (অপারেশন) এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে। সেই নির্দেশিকা অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে তিন মাসের জন্য নতুন এই নিয়ম চালু করা হবে।

সফল হলে পরবর্তীকালে তা স্থায়ীভাবে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তবে এটি কার্যকর হবে শুধুমাত্র পেট্টাপোল-বেনাপোল সীমান্তে। নতুন এই ব্যবস্থা এখন শুধুমাত্র কার্যকর হওয়া সময়ের অপেক্ষায়।

ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে ২৪ ঘণ্টা বন্দর চালুর সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি ভারত থেকে একটি চিঠিও পেয়েছেন মেইলে বলে জানান মতিয়ার রহমান।

এর আগে গত ৩১ আগস্ট এ বিষয়ে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বর্ডার ম্যানেজমেন্ট কমিটির বৈঠক হয়। তারপরই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বেনাপোল আমদানি রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বাণিজ্য আর চিকিৎসা সেবা নিতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিপুল যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যাত্রী পরিষেবা চালু রয়েছে ইমিগ্রেশনে। এ সময়ের বাইরে কোন যাত্রীর সীমান্ত পার হওয়ার যতই প্রয়োজন থাকুক না কেন নির্দিষ্ট সময়ের পর ইমিগ্রেশন দপ্তর খোলা না হওয়া অবধি তাদের আটকে পড়তে হতো বর্ডারে। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল বন্দর ২৪ ঘণ্টা সচল রাখার। যাত্রী পরিষেবা ২৪ ঘণ্টার জন্য চালু হলে হয়রানি কমবে দুই দেশের নাগরিকদের।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বর্তমানে বেনাপোল-পেট্টাপোল বন্দরের মধ্যে সপ্তাহে ৬ দিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এছাড়া সরকারি ছুটির দিনও বাণিজ্য বন্ধ থাকে। এখন সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা আমদানি-রপ্তানি চালু হলে বাণিজ্যে গতি ফিরবে। এতে সরকারেরও রাজস্ব আয় বাড়বে। উপকৃত হবে দুই দেশের মানুষ।

এশিয়ার সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল-পেট্টাপোল। তবে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট দিয়ে ২৪ ঘণ্টার পণ্য পরিষেবা চালু থাকলেও করোনার কারণে লকডাউন পরিস্থিতিতে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনও বেশ কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর পণ্য পরিবহন চালু হয়েছে। এবার দুই দেশের মধ্যে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা চালু হবে যাত্রী পরিষেবাও। এতে বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াত দুই খাতে প্রসার ঘটবে।

প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে কমপক্ষে ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের বছরে রাজস্ব আয় হয় ৬ হাজার কোটি টাকা। আর এ পথে দুই দেশের মধ্যে বছরে প্রায় ১৮ লাখ যাত্রী যাতায়াত করে। ভ্রমণ খাতে সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ১শ কোটি টাকার কাছাকাছি। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বেনাপোল-পেট্টাপোল বন্দরের মধ্যে মেডিকেল, বিজনেস ও স্টুডেন্ট ভিসায় যাত্রী যাতায়াত চালু রয়েছে। তবে গত বছরের ১৩ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ট্যুরিস্ট ভিসা।

রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর ইমিগ্রেশন কাস্টম ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত

গতি ফিরবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে

যশোর অফিস

বেনাপোল-পেট্টাপোল বন্দর সপ্তাহে ৭ দিনে ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। ইতোমধ্যে এ নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আপাতত পরীক্ষামূলক তিন মাস চলবে এ কার্যক্রম। ভালো সাড়া পেলে তা দীর্ঘস্থায়ী করা হবে। খুব দ্রুত এ সেবা চালু হবে দুই দেশের বন্দর ও কাস্টমস ইমিগ্রেশনে। বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, ২৪ ঘণ্টা বন্দরের কার্যক্রম সচলে যেমন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতি ফিরবে, তেমনি ভ্রমণে সুবিধা পাবেন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতকারী দেশি-বিদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীরা।

ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, গত ২৫ অক্টোবর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির ডিরেক্টর অজিত কুমার সিং (অপারেশন) এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে। সেই নির্দেশিকা অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে তিন মাসের জন্য নতুন এই নিয়ম চালু করা হবে।

সফল হলে পরবর্তীকালে তা স্থায়ীভাবে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তবে এটি কার্যকর হবে শুধুমাত্র পেট্টাপোল-বেনাপোল সীমান্তে। নতুন এই ব্যবস্থা এখন শুধুমাত্র কার্যকর হওয়া সময়ের অপেক্ষায়।

ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে ২৪ ঘণ্টা বন্দর চালুর সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি ভারত থেকে একটি চিঠিও পেয়েছেন মেইলে বলে জানান মতিয়ার রহমান।

এর আগে গত ৩১ আগস্ট এ বিষয়ে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বর্ডার ম্যানেজমেন্ট কমিটির বৈঠক হয়। তারপরই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বেনাপোল আমদানি রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বাণিজ্য আর চিকিৎসা সেবা নিতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বিপুল যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যাত্রী পরিষেবা চালু রয়েছে ইমিগ্রেশনে। এ সময়ের বাইরে কোন যাত্রীর সীমান্ত পার হওয়ার যতই প্রয়োজন থাকুক না কেন নির্দিষ্ট সময়ের পর ইমিগ্রেশন দপ্তর খোলা না হওয়া অবধি তাদের আটকে পড়তে হতো বর্ডারে। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল বন্দর ২৪ ঘণ্টা সচল রাখার। যাত্রী পরিষেবা ২৪ ঘণ্টার জন্য চালু হলে হয়রানি কমবে দুই দেশের নাগরিকদের।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বর্তমানে বেনাপোল-পেট্টাপোল বন্দরের মধ্যে সপ্তাহে ৬ দিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এছাড়া সরকারি ছুটির দিনও বাণিজ্য বন্ধ থাকে। এখন সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা আমদানি-রপ্তানি চালু হলে বাণিজ্যে গতি ফিরবে। এতে সরকারেরও রাজস্ব আয় বাড়বে। উপকৃত হবে দুই দেশের মানুষ।

এশিয়ার সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল-পেট্টাপোল। তবে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট দিয়ে ২৪ ঘণ্টার পণ্য পরিষেবা চালু থাকলেও করোনার কারণে লকডাউন পরিস্থিতিতে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনও বেশ কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর পণ্য পরিবহন চালু হয়েছে। এবার দুই দেশের মধ্যে সাতদিন ২৪ ঘণ্টা চালু হবে যাত্রী পরিষেবাও। এতে বাণিজ্য ও যাত্রী যাতায়াত দুই খাতে প্রসার ঘটবে।

প্রতি বছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে কমপক্ষে ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের বছরে রাজস্ব আয় হয় ৬ হাজার কোটি টাকা। আর এ পথে দুই দেশের মধ্যে বছরে প্রায় ১৮ লাখ যাত্রী যাতায়াত করে। ভ্রমণ খাতে সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ১শ কোটি টাকার কাছাকাছি। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বেনাপোল-পেট্টাপোল বন্দরের মধ্যে মেডিকেল, বিজনেস ও স্টুডেন্ট ভিসায় যাত্রী যাতায়াত চালু রয়েছে। তবে গত বছরের ১৩ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে ট্যুরিস্ট ভিসা।