এক অচেনা প্রাণীর আক্রমণ নিহত ১, আহত ৫

আতঙ্ক গোটা গ্রামে, লাঠি হাতে চলাচল করছেন গ্রামবাসী

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিণাথপুর ইউনিয়নে অচেনা এক প্রাণীর আক্রমণে আহত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে ও আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। এ নিয়ে ওই ইউনিয়নসহ আশপাশের মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। অনেকে দিনের বেলা হাতে লাঠি নিয়ে চলাফেরা করছেন। আতঙ্কে সন্তানের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক অভিভাবক। এদিকে অচেনা এই প্রাণীটিকে শিয়ালের উপপ্রজাতি হিসেবে উল্লেখ করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

গ্রামবাসী জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর হরিণাথপুর গ্রামের ফেরদৌস রহমান রুকু (৫৫), আমরুল ইসলাম (৩১) ও সুমি বেগম (৪০), কিশামত কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের আফছার আলী (৩৫) ও ব্রাক্ষ্মভিটা গ্রামের হামিদ মিয়াকেও (৪০), ২৪ অক্টোবর তালুক কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের মো. রাব্বী শেখ অচেনা এই প্রাণীটির আক্রমণের শিকার হন। এর মধ্যে ফেরদৌস রহমান রুকু মারা যান গত ১৮ অক্টোবর। তিনি বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদের ইমাম। সর্বশেষ ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় হরিণাথপুর গ্রামের মনজিলা বেগমকে (৫০) আক্রমণের সময় স্থানীয়রা ধানক্ষেতে আটক করে একটি শিয়ালকে মেরে ফেলে। পরে আশপাশে আরও অন্তত দুই থেকে তিনটি শিয়াল মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।

যারা এই প্রাণিটিকে দেখেছেন তারা বলছেন, প্রাণিটি দেখতে কুকুর বা শিয়ালের মতো। মোটা ধরনের প্রাণিটির গায়ের রঙ লাল, সাদা ও ধূসর। লেজ লম্বা। মুখটা লম্বা।

ফেরদৌস রহমান রুকুর ভাই সাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ে ঘাস কাটতে গেলে আক্রমণের শিকার হন তিনি। তার নাক ও পশ্চাৎদেশের মাংস ছিঁড়ে ফেলে অচেনা প্রাণিটি। এরপর তাকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে সেলাই শেষে জলাতঙ্ক ও টিটেনাস টিকা দিয়ে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে তাকে ১৭ অক্টোবর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে পরদিন তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

প্রাণিটির আক্রমণের শিকার মো. রাব্বী শেখের মা রুমি বেগম (২৭) বলেন, অচেনা এই প্রাণির আক্রমণে পার্শ¦বর্তী গ্রামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। আমার ছেলেও আক্রমণে আহত হয়েছে। এখন আতঙ্কে আছি যদি কিছু হয়ে যায়। একই আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন অন্যান্য আহত ব্যক্তিরাও।

তালুক কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, প্রাণিটির ভয়ে মানুষ সন্তানকে বিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়ে আবার নিয়ে আসছে। মানুষ দিনের বেলাতেও চলাচল করতে ভয় পাচ্ছে। লাঠি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে হরিণাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. রাকিব হোসেন বলেন, কোন শিয়াল মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে এমনটা করছে। আমরা মানুষজনকে সতর্ক থাকতে বলছি। বন্যপ্রাণির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কিছু নেই বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাছুদার রহমান সরকার সংবাদ প্রতিনিধিকে বলেন, শিয়ালের অনেকগুলো উপপ্রজাতি আছে। মানুষ যে হিসেবে অচেনা এই প্রাণিটির বিবরণ দিচ্ছেন সে অনুযায়ী মনে হচ্ছে এটি শিয়ালেরই একটি উপপ্রজাতি। আমরা গ্রামগুলো পরিদর্শন করে মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। মানুষকে সতর্ক হয়ে চলতে হবে। কেননা এই প্রাণি জলাতঙ্কের জীবাণু বহন করে থাকে। যদি কোন মানুষকে শিয়াল বা এই প্রাণিটি কামড়ায় তাহলে তাকে হাসপাতালে গিয়ে দ্রুত জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে ও যদি কোন পশুকে কামড়ায় তাহলে সেই পশুকে প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে টিকা দিতে হবে।

রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে

এক অচেনা প্রাণীর আক্রমণ নিহত ১, আহত ৫

আতঙ্ক গোটা গ্রামে, লাঠি হাতে চলাচল করছেন গ্রামবাসী

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিণাথপুর ইউনিয়নে অচেনা এক প্রাণীর আক্রমণে আহত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে ও আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। এ নিয়ে ওই ইউনিয়নসহ আশপাশের মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্ক। অনেকে দিনের বেলা হাতে লাঠি নিয়ে চলাফেরা করছেন। আতঙ্কে সন্তানের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক অভিভাবক। এদিকে অচেনা এই প্রাণীটিকে শিয়ালের উপপ্রজাতি হিসেবে উল্লেখ করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

গ্রামবাসী জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর হরিণাথপুর গ্রামের ফেরদৌস রহমান রুকু (৫৫), আমরুল ইসলাম (৩১) ও সুমি বেগম (৪০), কিশামত কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের আফছার আলী (৩৫) ও ব্রাক্ষ্মভিটা গ্রামের হামিদ মিয়াকেও (৪০), ২৪ অক্টোবর তালুক কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের মো. রাব্বী শেখ অচেনা এই প্রাণীটির আক্রমণের শিকার হন। এর মধ্যে ফেরদৌস রহমান রুকু মারা যান গত ১৮ অক্টোবর। তিনি বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদের ইমাম। সর্বশেষ ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় হরিণাথপুর গ্রামের মনজিলা বেগমকে (৫০) আক্রমণের সময় স্থানীয়রা ধানক্ষেতে আটক করে একটি শিয়ালকে মেরে ফেলে। পরে আশপাশে আরও অন্তত দুই থেকে তিনটি শিয়াল মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।

যারা এই প্রাণিটিকে দেখেছেন তারা বলছেন, প্রাণিটি দেখতে কুকুর বা শিয়ালের মতো। মোটা ধরনের প্রাণিটির গায়ের রঙ লাল, সাদা ও ধূসর। লেজ লম্বা। মুখটা লম্বা।

ফেরদৌস রহমান রুকুর ভাই সাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, বাড়ির পাশে বাঁশঝাড়ে ঘাস কাটতে গেলে আক্রমণের শিকার হন তিনি। তার নাক ও পশ্চাৎদেশের মাংস ছিঁড়ে ফেলে অচেনা প্রাণিটি। এরপর তাকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে সেলাই শেষে জলাতঙ্ক ও টিটেনাস টিকা দিয়ে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে তাকে ১৭ অক্টোবর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে পরদিন তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

প্রাণিটির আক্রমণের শিকার মো. রাব্বী শেখের মা রুমি বেগম (২৭) বলেন, অচেনা এই প্রাণির আক্রমণে পার্শ¦বর্তী গ্রামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। আমার ছেলেও আক্রমণে আহত হয়েছে। এখন আতঙ্কে আছি যদি কিছু হয়ে যায়। একই আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন অন্যান্য আহত ব্যক্তিরাও।

তালুক কেঁওয়াবাড়ী গ্রামের সাইদুর রহমান বলেন, প্রাণিটির ভয়ে মানুষ সন্তানকে বিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়ে আবার নিয়ে আসছে। মানুষ দিনের বেলাতেও চলাচল করতে ভয় পাচ্ছে। লাঠি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে হরিণাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. রাকিব হোসেন বলেন, কোন শিয়াল মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে এমনটা করছে। আমরা মানুষজনকে সতর্ক থাকতে বলছি। বন্যপ্রাণির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কিছু নেই বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাছুদার রহমান সরকার সংবাদ প্রতিনিধিকে বলেন, শিয়ালের অনেকগুলো উপপ্রজাতি আছে। মানুষ যে হিসেবে অচেনা এই প্রাণিটির বিবরণ দিচ্ছেন সে অনুযায়ী মনে হচ্ছে এটি শিয়ালেরই একটি উপপ্রজাতি। আমরা গ্রামগুলো পরিদর্শন করে মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। মানুষকে সতর্ক হয়ে চলতে হবে। কেননা এই প্রাণি জলাতঙ্কের জীবাণু বহন করে থাকে। যদি কোন মানুষকে শিয়াল বা এই প্রাণিটি কামড়ায় তাহলে তাকে হাসপাতালে গিয়ে দ্রুত জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে ও যদি কোন পশুকে কামড়ায় তাহলে সেই পশুকে প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে টিকা দিতে হবে।