চারদিনেও উদ্ধার হলো না ফেরি

প্রত্যয়-এর বদলে ‘রুস্তম’ এসেছে

চারদিনেও পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরি আমানত শাহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। স্বল্প সক্ষমতার উদ্ধারকারী যান দিয়েই ফেরিটি উদ্ধারে বার বার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রুস্তম নামে আরও একটি স্বল্প সক্ষমতার উদ্ধারকারী যান আনা হয়েছে। সেটাও তেমন কাজে আসবে বলে মনে হচ্ছে না। রুস্তমের ভারোত্তোলন সক্ষমতা মাত্র ষাট টন। হামজা ও রুস্তম মিলে ভারোত্তোলন সক্ষমতা হলো একশ বিশ টন। অন্যদিকে ডুবে যাওয়া ফেরিটির ওজন আটশ ছয় টন। তার ওপর চারদিন ধরে পানিতে ডুবে আছে ফেরিটি। এখন এর ওজন প্রায় হাজার টন।

পাটুরিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বলেছেন, ডুবন্ত ফেরিটি উদ্ধারে প্রয়োজনে প্রাইভেট উদ্ধারকারী দল নিয়োগ দেয়া হবে।

এদিকে কয়েকদিন ধরে নদীতে ডুবে থাকা যানবাহনের মালিক ও শ্রমিকরা তাদের যানবাহনের ক্ষতিপূরণের দাবিতে পাটুরিয়া ঘাটে গতকাল মানববন্ধন করেছেন। তাদের দাবি অবহেলা ও খামখেয়ালির কারণে তাদের যানবাহন উদ্ধার হচ্ছে না, যা হচ্ছে তাও নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ বলছেন, গত চারদিনে প্রায় সব যান উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এখন মাত্র একটি ট্রাক উদ্ধার করা বাকি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানিয়েছে, সব মিলিয়ে তেরোটি ট্রাক ও তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও উদ্ধার অভিযান চলমান আছে। উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের বদলে পাটুরিয়ায় এসেছে রুস্তম নামের জাহাজ। ফলে রুস্তম ও হামজা দিয়েই উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছেন। মাত্র একশ বিশ টন সক্ষমতার দুটি জাহাজ দিয়ে কীভাবে হাজার টনের ফেরি উদ্ধার করা হবে- এর উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান পাটুরিয়া ঘাট পরিদর্শন এবং ফেরিটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর সকাল ৯টায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলসহ আমানত শাহ নামের ফেরিটি পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় পাটুরিয়া ঘাটে ভিড়ে। মাঝনদীতেই ফেরিতে পানি উঠতে থাকায় ফেরির গতি বাড়িয়ে দ্রুত পাটুরিয়ার পাঁচ নম্বর ঘাটে ভিড়ে যায়। তাড়াহুড়োর সময় পুরাতন ফেরিটির তলা ফেটে তীব্র গতিতে পানি উঠতে থাকে। এমন অবস্থায় ফেরিটি পন্টুনের সঙ্গে সঠিকভাবে না আটকিয়েই ট্রাক আনলোড করতে থাকে। তাড়াহুড়োয় কর্তৃপক্ষ ফেরিটি পন্টুনের সঙ্গে বাঁধতেই ভুলে যায়। এতে মাত্র দুটি ট্রাক পূর্বদিক থেকে নামলেও ফেরিটির পশ্চিম দিকে ভারী হয়ে যায় এবং কাত হয়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার সময় ফেরিটিতে থাকা ট্রাকগুলো একটি আরেকটির ওপর ছিটকে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায়।

এ সময় ফেরিতে পনেরোটি ট্রাক, দুটি প্রাইভেটকার ও চৌদ্দটি মোটরসাইকেল এবং কিছু যাত্রী ছিল। খবর পেয়ে ফায়ার সার্র্ভিসের দুটি ইউনিটের কর্মীরা পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছান এবং এখন পর্যন্ত ঘাটে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে।

পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরি আমানত শাহ ও পনেরোটি ট্রাক, দুটি প্রাইভেটকার ও চৌদ্দটি মোটরসাইকেলের মধ্যে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চারদিনে তেরোটি ট্রাক এবং তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, পাটুরিয়ায় একটি ফেরিঘাট বন্ধ থাকায় গতকালও অতিরিক্ত যানবাহন পারাপারে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিল। যানবাহনের চাপ সামাল দিতে অনেক গাড়ি আরিচা রোডে লাইন করে রাখা হয়েছে। এতে আরিচায় যানজট লেগে আছে। সাধারণ যাত্রী ও যানবাহন ভোগান্তির কবলে পড়েছে।

রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

চারদিনেও উদ্ধার হলো না ফেরি

প্রত্যয়-এর বদলে ‘রুস্তম’ এসেছে

রফিকুল ইসলাম, শিবালয় (মানিকগঞ্জ)

image

চারদিনেও পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরি আমানত শাহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। স্বল্প সক্ষমতার উদ্ধারকারী যান দিয়েই ফেরিটি উদ্ধারে বার বার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে রুস্তম নামে আরও একটি স্বল্প সক্ষমতার উদ্ধারকারী যান আনা হয়েছে। সেটাও তেমন কাজে আসবে বলে মনে হচ্ছে না। রুস্তমের ভারোত্তোলন সক্ষমতা মাত্র ষাট টন। হামজা ও রুস্তম মিলে ভারোত্তোলন সক্ষমতা হলো একশ বিশ টন। অন্যদিকে ডুবে যাওয়া ফেরিটির ওজন আটশ ছয় টন। তার ওপর চারদিন ধরে পানিতে ডুবে আছে ফেরিটি। এখন এর ওজন প্রায় হাজার টন।

পাটুরিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বলেছেন, ডুবন্ত ফেরিটি উদ্ধারে প্রয়োজনে প্রাইভেট উদ্ধারকারী দল নিয়োগ দেয়া হবে।

এদিকে কয়েকদিন ধরে নদীতে ডুবে থাকা যানবাহনের মালিক ও শ্রমিকরা তাদের যানবাহনের ক্ষতিপূরণের দাবিতে পাটুরিয়া ঘাটে গতকাল মানববন্ধন করেছেন। তাদের দাবি অবহেলা ও খামখেয়ালির কারণে তাদের যানবাহন উদ্ধার হচ্ছে না, যা হচ্ছে তাও নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ বলছেন, গত চারদিনে প্রায় সব যান উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এখন মাত্র একটি ট্রাক উদ্ধার করা বাকি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানিয়েছে, সব মিলিয়ে তেরোটি ট্রাক ও তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও উদ্ধার অভিযান চলমান আছে। উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের বদলে পাটুরিয়ায় এসেছে রুস্তম নামের জাহাজ। ফলে রুস্তম ও হামজা দিয়েই উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছেন। মাত্র একশ বিশ টন সক্ষমতার দুটি জাহাজ দিয়ে কীভাবে হাজার টনের ফেরি উদ্ধার করা হবে- এর উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান পাটুরিয়া ঘাট পরিদর্শন এবং ফেরিটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ২৭ অক্টোবর সকাল ৯টায় দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে ট্রাক, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলসহ আমানত শাহ নামের ফেরিটি পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় পাটুরিয়া ঘাটে ভিড়ে। মাঝনদীতেই ফেরিতে পানি উঠতে থাকায় ফেরির গতি বাড়িয়ে দ্রুত পাটুরিয়ার পাঁচ নম্বর ঘাটে ভিড়ে যায়। তাড়াহুড়োর সময় পুরাতন ফেরিটির তলা ফেটে তীব্র গতিতে পানি উঠতে থাকে। এমন অবস্থায় ফেরিটি পন্টুনের সঙ্গে সঠিকভাবে না আটকিয়েই ট্রাক আনলোড করতে থাকে। তাড়াহুড়োয় কর্তৃপক্ষ ফেরিটি পন্টুনের সঙ্গে বাঁধতেই ভুলে যায়। এতে মাত্র দুটি ট্রাক পূর্বদিক থেকে নামলেও ফেরিটির পশ্চিম দিকে ভারী হয়ে যায় এবং কাত হয়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার সময় ফেরিটিতে থাকা ট্রাকগুলো একটি আরেকটির ওপর ছিটকে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায়।

এ সময় ফেরিতে পনেরোটি ট্রাক, দুটি প্রাইভেটকার ও চৌদ্দটি মোটরসাইকেল এবং কিছু যাত্রী ছিল। খবর পেয়ে ফায়ার সার্র্ভিসের দুটি ইউনিটের কর্মীরা পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছান এবং এখন পর্যন্ত ঘাটে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে।

পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরি আমানত শাহ ও পনেরোটি ট্রাক, দুটি প্রাইভেটকার ও চৌদ্দটি মোটরসাইকেলের মধ্যে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চারদিনে তেরোটি ট্রাক এবং তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, পাটুরিয়ায় একটি ফেরিঘাট বন্ধ থাকায় গতকালও অতিরিক্ত যানবাহন পারাপারে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিল। যানবাহনের চাপ সামাল দিতে অনেক গাড়ি আরিচা রোডে লাইন করে রাখা হয়েছে। এতে আরিচায় যানজট লেগে আছে। সাধারণ যাত্রী ও যানবাহন ভোগান্তির কবলে পড়েছে।