বিজিবির অভিযানে এক লাখ ইয়াবা উদ্ধার
বাংলাদেশের দক্ষিণের শেষ সীমান্তবর্তী টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপ। এ দ্বীপকে ঘিরে রয়েছে স্থল পথের পাশাপাশি জলপথও। নাফ নদী ও সমুদ্রপথ দিয়ে এ দ্বীপে নৌকাযোগে যাতায়াত করা যায়। এক সময় সরকার কর্তৃক নিবন্ধনকৃত জেলেরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও হস্তচালিত কাঠের নৌকাযোগে মাছ শিকার করে দ্বীপে উঠত। এখন সেই পথ দখল করেছে মাদক পাচারকারী রোহিঙ্গারা।
নাফ নদী ও সমুদ্রপথে এক হাজারেরও বেশি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও হাতেচালিত কাঠের নৌকা চলাচল করছে। বেশিরভাগ নৌকাই রোহিঙ্গারা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা নানা কৌশলে নৌকাযোগে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক নদী ও সমুদ্রপথে এনে কক্সবাজারে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে মাদক পাচার করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসাযীরা ঘন ঘন কৌশল অবলম্বন করে মাদক পাচার করছে। এরপরও বর্ডার গার্ড বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড ও পুলিশ প্রায় সময় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, আইসসহ অন্যান্য মাদক জব্দ করছে। অভিযানের সময় কখনও অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার আবার কখনও মালিকবিহীন অবস্থায় ইয়াবাসহ মাদকের চালান জব্দ করা হচ্ছে।
সর্বশেষ বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সাল হাসান খানের পাঠানো এক তথ্যে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার গভীর রাতে বিজিবি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে জালিয়াপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা টহল দিচ্ছিল। গভীর রাতে দুই চোরাকারবারিকে হস্তচালিত কাঠের নৌকাযোগে পানিপথে বাংলাদেশের দিকে আসতে দেখে। বিজিবির টহল নৌকাটি তাদের কাছাকাছি হওয়ামাত্রই চোরাকারবারিদেরকে চ্যালেঞ্জ করে আটক করতে এগিয়ে যায়। তখন মাদক চোরাকারবারিরা তাদের কাছে থাকা একটি ব্যাগ ফেলে দিয়ে নদীতে ডুব দেয় ও সাঁতার কেটে বাংলাদেশের জলসীমার শূন্যপথ অতিক্রম করে মায়ানমারের দিকে পালিয়ে যায়।
বিজিবি সদস্যরা মাদক চোরাকারবারিদের উদ্ধারকৃত ব্যাগ তল্লাশি করে ব্যাগের ভেতর রাখা এক লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করেছে, যার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। ইয়াবা চোরাকারবারিরা পালিয়ে গেলেও তাদেরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনতে বিজিবির গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
বিজিবির কর্মকর্তারা বলেন, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) সীমান্তবর্তী এলাকায় দায়িত্ব নেয়ার পর মাদকদ্রব্য পাচার প্রতিরোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিহত, সমুদ্রপথে মানবপাচারসহ সীমান্তে সংঘটিত সীমান্ত অপরাধসমূহ প্রতিরোধকল্পে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখছে। এর আগেও বিজিবি টেকনাফ ও কক্সবাজারে অভিযান চালিয়ে ইয়াবার একাধিক চালান জব্দ করেছে। আটক করেছে অনেক মাদক ব্যবসায়ীকেও।
এদিকে আমাদের টেকনাফ রিপোর্টার জানান, টেকনাফের নাফ নদী ও সমুদ্রপথ ছাড়াও টেকনাফের কায়ুকখালি খাল দিয়ে ইয়াবার চালান আনা হয়। সেখানে ৪শ নৌকা আছে। এ সব নৌকা আগে সরকার কর্তৃক নিবন্ধনকৃত জেলেরা চালালেও এখন জেলেদের সংখ্যা কমে গেছে। নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রোহিঙ্গারা। এখনও সব মিলিয়ে ১৫শ ট্রলার ও ছোট ছোট নৌকা নাফ নদী ও সমুদ্রপথে চলে। আগে বেশিরভাগ জেলে ছিল। এখন সবই নিয়ন্ত্রণহীন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা সব নিয়ন্ত্রণ করছে। রোহিঙ্গা অপরাধীরা মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে।
বিভিন্ন সময় মাদকের চালান আটক করার পর নতুন নতুন রুটে তারা ইয়াবা, ক্রিস্টার মেথ আইস মায়ানমান থেকে এনে বাংলাদেশে বিক্রি করছে। গত ২২ দিন সাগর ও নদীপথে মাছধরা বন্ধ ছিল। এখন চালু হওয়ার পর আবার ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। এখন নিরাপত্তা আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ছে।
রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩
বিজিবির অভিযানে এক লাখ ইয়াবা উদ্ধার
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
বাংলাদেশের দক্ষিণের শেষ সীমান্তবর্তী টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপ। এ দ্বীপকে ঘিরে রয়েছে স্থল পথের পাশাপাশি জলপথও। নাফ নদী ও সমুদ্রপথ দিয়ে এ দ্বীপে নৌকাযোগে যাতায়াত করা যায়। এক সময় সরকার কর্তৃক নিবন্ধনকৃত জেলেরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও হস্তচালিত কাঠের নৌকাযোগে মাছ শিকার করে দ্বীপে উঠত। এখন সেই পথ দখল করেছে মাদক পাচারকারী রোহিঙ্গারা।
নাফ নদী ও সমুদ্রপথে এক হাজারেরও বেশি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও হাতেচালিত কাঠের নৌকা চলাচল করছে। বেশিরভাগ নৌকাই রোহিঙ্গারা নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা নানা কৌশলে নৌকাযোগে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক নদী ও সমুদ্রপথে এনে কক্সবাজারে নিয়ে যায়।
পরবর্তীতে টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে মাদক পাচার করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গা মাদক ব্যবসাযীরা ঘন ঘন কৌশল অবলম্বন করে মাদক পাচার করছে। এরপরও বর্ডার গার্ড বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড ও পুলিশ প্রায় সময় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, আইসসহ অন্যান্য মাদক জব্দ করছে। অভিযানের সময় কখনও অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার আবার কখনও মালিকবিহীন অবস্থায় ইয়াবাসহ মাদকের চালান জব্দ করা হচ্ছে।
সর্বশেষ বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সাল হাসান খানের পাঠানো এক তথ্যে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার গভীর রাতে বিজিবি টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে জালিয়াপাড়া এলাকায় নিরাপত্তা টহল দিচ্ছিল। গভীর রাতে দুই চোরাকারবারিকে হস্তচালিত কাঠের নৌকাযোগে পানিপথে বাংলাদেশের দিকে আসতে দেখে। বিজিবির টহল নৌকাটি তাদের কাছাকাছি হওয়ামাত্রই চোরাকারবারিদেরকে চ্যালেঞ্জ করে আটক করতে এগিয়ে যায়। তখন মাদক চোরাকারবারিরা তাদের কাছে থাকা একটি ব্যাগ ফেলে দিয়ে নদীতে ডুব দেয় ও সাঁতার কেটে বাংলাদেশের জলসীমার শূন্যপথ অতিক্রম করে মায়ানমারের দিকে পালিয়ে যায়।
বিজিবি সদস্যরা মাদক চোরাকারবারিদের উদ্ধারকৃত ব্যাগ তল্লাশি করে ব্যাগের ভেতর রাখা এক লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করেছে, যার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। ইয়াবা চোরাকারবারিরা পালিয়ে গেলেও তাদেরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনতে বিজিবির গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
বিজিবির কর্মকর্তারা বলেন, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) সীমান্তবর্তী এলাকায় দায়িত্ব নেয়ার পর মাদকদ্রব্য পাচার প্রতিরোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিহত, সমুদ্রপথে মানবপাচারসহ সীমান্তে সংঘটিত সীমান্ত অপরাধসমূহ প্রতিরোধকল্পে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখছে। এর আগেও বিজিবি টেকনাফ ও কক্সবাজারে অভিযান চালিয়ে ইয়াবার একাধিক চালান জব্দ করেছে। আটক করেছে অনেক মাদক ব্যবসায়ীকেও।
এদিকে আমাদের টেকনাফ রিপোর্টার জানান, টেকনাফের নাফ নদী ও সমুদ্রপথ ছাড়াও টেকনাফের কায়ুকখালি খাল দিয়ে ইয়াবার চালান আনা হয়। সেখানে ৪শ নৌকা আছে। এ সব নৌকা আগে সরকার কর্তৃক নিবন্ধনকৃত জেলেরা চালালেও এখন জেলেদের সংখ্যা কমে গেছে। নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রোহিঙ্গারা। এখনও সব মিলিয়ে ১৫শ ট্রলার ও ছোট ছোট নৌকা নাফ নদী ও সমুদ্রপথে চলে। আগে বেশিরভাগ জেলে ছিল। এখন সবই নিয়ন্ত্রণহীন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা সব নিয়ন্ত্রণ করছে। রোহিঙ্গা অপরাধীরা মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে।
বিভিন্ন সময় মাদকের চালান আটক করার পর নতুন নতুন রুটে তারা ইয়াবা, ক্রিস্টার মেথ আইস মায়ানমান থেকে এনে বাংলাদেশে বিক্রি করছে। গত ২২ দিন সাগর ও নদীপথে মাছধরা বন্ধ ছিল। এখন চালু হওয়ার পর আবার ইয়াবার চালান ধরা পড়ছে। এখন নিরাপত্তা আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ছে।