পরকীয়ার জের, বউ-শাশুড়ি ও প্রেমিক খুন

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের কাশতলা দক্ষিণ পাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী জয়েন উদ্দিনের বাড়ি থেকে গতকাল সকালে নারীসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরকীয়ার জেরে তাদেরকে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে খুন করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী ও পুলিশ ধারণা করছে। নিহতরা হলেন- প্রবাসী জয়েন উদ্দিনের মা জমিলা বেগম (৬০), স্ত্রী সুমি বেগম (২৫) ও সুমির প্রেমিক শাহজালাল (৩০)। এ ঘটনায় প্রবাসীর চার বছরের শিশুপুত্র সাফিকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত চাকু ও ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে।

দিগড় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ মামুন ও স্থানীয়রা জানায়, সুমি বেগমের প্রেমিক শাহজালালের বাড়ি কালিহাতী পৌরসভার সাতুটিয়া এলাকায়। তিনি সাতুটিয়ার সোহরাব আলীর ছেলে। প্রেমিক শাহজালাল পেশায় সবজি ব্যবসায়ী। নিহত গৃহবধূ সুমি বেগম ঘাটাইলের কাশতলা দক্ষিণ পাড়া সুতার বাড়ির জিন্নত আলীর পালিত মেয়ে। সুমি ও শাহজালালের লাশ প্রবাসী জয়েন উদ্দিনের বসতঘরের বিছানার ওপর এবং শাশুড়ি জমিলা খাতুনের লাশ ঘরের মেঝেতে পড়েছিল। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তিনজনের লাশ উদ্ধার হওয়া বসতঘরের দেয়ালে রক্ত দিয়ে লেখা রয়েছে- ‘এমনটা হতো না যদি আমার সুমি আমার কাছে থাকত, সব কিছুর জন্য সুমির বাবা দায়ী’। এতে ধারণা করা হচ্ছে- প্রেম ও পরকীয়া বা ত্রিমুখী পরকীয়া-সংক্রান্ত কোন ঘটনা থেকে এ চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

প্রবাসী জয়েন উদ্দিনের ভাইয়ের স্ত্রী শাহনাজ বলেন, আমার শাশুড়ি সকালে ফজরের নামাজ পড়ার পর হাঁটতে বের হন। কিন্তু শনিবার (গতকাল) অনেক বেলা হয়ে গেলেও তারা ঘর থেকে বের না হওয়ায় আমি সুমিদের খোঁজ নিতে যাই। ঘরের মূল দরজা তালাবন্ধ থাকায় বাইর থেকে তাদের অনেক ডাকাডাকি করে কারও কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে অন্যদের খবর দেই। পরে অন্যরা শাবল এনে তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করলে তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। আর শিশুটিকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নিহত জমিলার দুই মেয়ে সোনাবানু ও জয়নব জানান, সকালে শুনলাম কে যেন মাকে বিষ খাওয়াইছে। রাস্তায় আসার পর শুনলাম, মা মারা গেছে। ভাতিজার অবস্থাও খুব খারাপ। তাকে ঢাকা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বাসায় আসার পর শুনলাম, প্লাস দিয়ে পিটিয়ে সবাইকে মারছে। কে মারছে, আমরা কিছু জানি না। এর আগে আমার ভাইয়ের বউ সুমি চলে গিয়েছিল। আমার ভাই জয়েন উদ্দিন বিদেশ থেকে এসে বউ সুমিকে নিয়ে আসে বাড়িতে। তারপর আমার ভাই গত তিন মাস আগে আবার সৌদি চলে যায়।

দিগড় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ মামুন জানান, গৃহবধূ সুমি বেগম ও শাহজালালের পরকীয়ার কারণে এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই ও সিআইডির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঘাটাইল থানার ওসি আজহারুল ইসলাম সরকার জানান, ঘটনাটি কে বা কারা, কখন ঘটিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। তবে পরকীয়ার জেরে এই হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে র?্যাব-১২ টাঙ্গাইলের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রেমঘটিত সম্পর্ক থেকেই এই হত্যাকা- ঘটেছে। তবে হত্যা করে আত্মঘাতী হয়েছে কি না- তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমরা সেই বিষয়গুলোও মাথায় রেখে ছায়াতদন্ত করছি। আশা করি, দ্রুত ঘটনার আসল কারণ জানা যাবে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলে নবাগত পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, হত্যার ঘটনাটির বিষয়ে এখন মন্তব্য করার সময় আসেনি। এই হত্যার রহস্য উন্মোচনের জন্য আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করি, তা হলো সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ। ইতোমধ্যে সিআইডি থেকে ক্রাইমসিন টিম কাজ করছে। তারা সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার কাজ করছে। একটি ঘরের মধ্যে তিনটি লাশ। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করার জন্য ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। সবকিছু সংগ্রহ করার পর আমরা বিশেজ্ঞদের কাছে পাঠাব। তাদের মতামত আসার পরই আমরা বিস্তারিতভাবে বলতে পারব যে, ঘটনার আসল রহস্যটা কী, এটি একটা হত্যাকা- নিশ্চিতভাবে বলা যায়। এর সঙ্গে এক ছোট বাচ্চা আছে গুরুতর আহত। সেই ঘটনার সঙ্গে সংযুক্ত করে আমরা ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা এবং সঙ্গে ৩২৬ ধারাও থাকবে। মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত মেয়ে বা ছেলের পক্ষে যে কেউ হতে পারে। তারা আসলেই আমরা মামলা রুজু করে নেব। আমাদের সন্দেহে যেটা আছে, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তদন্তের স্বার্থে সন্দেহে কারা আছে, এ বিষয়ে এখন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। এখানে একটি ধারালো ছুরি পেয়েছি। এছাড়াও হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ছোট ছোট বস্তু আমরা জব্দ করেছি এবং এগুলো হত্যাকা-ে ব্যবহৃত হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। দেয়ালের মধ্যে যে লেখা আছে সেই লেখা কে লিখেছে, সেটা আমরা এখনও নিশ্চিত নই। আমরা যাদেরকে সন্দেহ করেছি, তাদের লেখা আমরা সংগ্রহ করেছি এবং যে লেখা দেয়ালে আছে সেগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হবে। সিআইডি থেকে মতামত আসলে আমরা বুঝতে পারব লেখাটি কে লিখেছে।

রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে তিন লাশ

পরকীয়ার জের, বউ-শাশুড়ি ও প্রেমিক খুন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দিগড় ইউনিয়নের কাশতলা দক্ষিণ পাড়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী জয়েন উদ্দিনের বাড়ি থেকে গতকাল সকালে নারীসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরকীয়ার জেরে তাদেরকে কুপিয়ে ও শ্বাসরোধে খুন করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী ও পুলিশ ধারণা করছে। নিহতরা হলেন- প্রবাসী জয়েন উদ্দিনের মা জমিলা বেগম (৬০), স্ত্রী সুমি বেগম (২৫) ও সুমির প্রেমিক শাহজালাল (৩০)। এ ঘটনায় প্রবাসীর চার বছরের শিশুপুত্র সাফিকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত চাকু ও ছোরা উদ্ধার করা হয়েছে।

দিগড় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ মামুন ও স্থানীয়রা জানায়, সুমি বেগমের প্রেমিক শাহজালালের বাড়ি কালিহাতী পৌরসভার সাতুটিয়া এলাকায়। তিনি সাতুটিয়ার সোহরাব আলীর ছেলে। প্রেমিক শাহজালাল পেশায় সবজি ব্যবসায়ী। নিহত গৃহবধূ সুমি বেগম ঘাটাইলের কাশতলা দক্ষিণ পাড়া সুতার বাড়ির জিন্নত আলীর পালিত মেয়ে। সুমি ও শাহজালালের লাশ প্রবাসী জয়েন উদ্দিনের বসতঘরের বিছানার ওপর এবং শাশুড়ি জমিলা খাতুনের লাশ ঘরের মেঝেতে পড়েছিল। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তিনজনের লাশ উদ্ধার হওয়া বসতঘরের দেয়ালে রক্ত দিয়ে লেখা রয়েছে- ‘এমনটা হতো না যদি আমার সুমি আমার কাছে থাকত, সব কিছুর জন্য সুমির বাবা দায়ী’। এতে ধারণা করা হচ্ছে- প্রেম ও পরকীয়া বা ত্রিমুখী পরকীয়া-সংক্রান্ত কোন ঘটনা থেকে এ চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

প্রবাসী জয়েন উদ্দিনের ভাইয়ের স্ত্রী শাহনাজ বলেন, আমার শাশুড়ি সকালে ফজরের নামাজ পড়ার পর হাঁটতে বের হন। কিন্তু শনিবার (গতকাল) অনেক বেলা হয়ে গেলেও তারা ঘর থেকে বের না হওয়ায় আমি সুমিদের খোঁজ নিতে যাই। ঘরের মূল দরজা তালাবন্ধ থাকায় বাইর থেকে তাদের অনেক ডাকাডাকি করে কারও কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে অন্যদের খবর দেই। পরে অন্যরা শাবল এনে তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করলে তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি। আর শিশুটিকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নিহত জমিলার দুই মেয়ে সোনাবানু ও জয়নব জানান, সকালে শুনলাম কে যেন মাকে বিষ খাওয়াইছে। রাস্তায় আসার পর শুনলাম, মা মারা গেছে। ভাতিজার অবস্থাও খুব খারাপ। তাকে ঢাকা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বাসায় আসার পর শুনলাম, প্লাস দিয়ে পিটিয়ে সবাইকে মারছে। কে মারছে, আমরা কিছু জানি না। এর আগে আমার ভাইয়ের বউ সুমি চলে গিয়েছিল। আমার ভাই জয়েন উদ্দিন বিদেশ থেকে এসে বউ সুমিকে নিয়ে আসে বাড়িতে। তারপর আমার ভাই গত তিন মাস আগে আবার সৌদি চলে যায়।

দিগড় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ মামুন জানান, গৃহবধূ সুমি বেগম ও শাহজালালের পরকীয়ার কারণে এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই ও সিআইডির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঘাটাইল থানার ওসি আজহারুল ইসলাম সরকার জানান, ঘটনাটি কে বা কারা, কখন ঘটিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। তবে পরকীয়ার জেরে এই হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে র?্যাব-১২ টাঙ্গাইলের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রেমঘটিত সম্পর্ক থেকেই এই হত্যাকা- ঘটেছে। তবে হত্যা করে আত্মঘাতী হয়েছে কি না- তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমরা সেই বিষয়গুলোও মাথায় রেখে ছায়াতদন্ত করছি। আশা করি, দ্রুত ঘটনার আসল কারণ জানা যাবে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলে নবাগত পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, হত্যার ঘটনাটির বিষয়ে এখন মন্তব্য করার সময় আসেনি। এই হত্যার রহস্য উন্মোচনের জন্য আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করি, তা হলো সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ। ইতোমধ্যে সিআইডি থেকে ক্রাইমসিন টিম কাজ করছে। তারা সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার কাজ করছে। একটি ঘরের মধ্যে তিনটি লাশ। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করার জন্য ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। সবকিছু সংগ্রহ করার পর আমরা বিশেজ্ঞদের কাছে পাঠাব। তাদের মতামত আসার পরই আমরা বিস্তারিতভাবে বলতে পারব যে, ঘটনার আসল রহস্যটা কী, এটি একটা হত্যাকা- নিশ্চিতভাবে বলা যায়। এর সঙ্গে এক ছোট বাচ্চা আছে গুরুতর আহত। সেই ঘটনার সঙ্গে সংযুক্ত করে আমরা ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা এবং সঙ্গে ৩২৬ ধারাও থাকবে। মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত মেয়ে বা ছেলের পক্ষে যে কেউ হতে পারে। তারা আসলেই আমরা মামলা রুজু করে নেব। আমাদের সন্দেহে যেটা আছে, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তদন্তের স্বার্থে সন্দেহে কারা আছে, এ বিষয়ে এখন মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। এখানে একটি ধারালো ছুরি পেয়েছি। এছাড়াও হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ছোট ছোট বস্তু আমরা জব্দ করেছি এবং এগুলো হত্যাকা-ে ব্যবহৃত হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। দেয়ালের মধ্যে যে লেখা আছে সেই লেখা কে লিখেছে, সেটা আমরা এখনও নিশ্চিত নই। আমরা যাদেরকে সন্দেহ করেছি, তাদের লেখা আমরা সংগ্রহ করেছি এবং যে লেখা দেয়ালে আছে সেগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য সিআইডিতে পাঠানো হবে। সিআইডি থেকে মতামত আসলে আমরা বুঝতে পারব লেখাটি কে লিখেছে।