বউ ভেবে ছুরিকাঘাতে অন্য নারীকে হত্যা

সেকুলের স্ত্রীর মতো একই রঙের বোরকা পরে বের হয়েছিলেন পোশাককর্মী আয়েশা। গত শুক্রবার ভোরে মোহাম্মদপুরের আদাবরের নবোদয় হাউজিং এলাকার রাস্তায় রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন আয়েশা। কিন্তু, একই রঙের বোরকা পরায় স্ত্রী ভেবে পোশাককর্মী আয়েশার গলায় কাঁচি দিয়ে কোপ দেন তিনি। আহত আয়েশার বোরকার নেকাব সরাতেই ভুল বুঝতে পারেন। তখন নিজেই আয়েশাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয় জনতা সেকুলকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। আর আয়েশাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবদুল লতিফ জানান, নিজের স্ত্রী ভেবে আয়েশার বুকে ও পিঠে কাঁচি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন সেকুল।

কিন্তু, বোরখার মুখ খুলেই ভুল বুঝতে পারেন। তখন নিজেই আয়েশাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয়রা তাকে ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।

পেশায় ট্রাকচালক সেকুল স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন গাবতলী এলাকায়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশকে তিনি বলেছেন, কিছুদিন আগে তাকে ছেড়ে আরেকজনের সঙ্গে চলে যান তার স্ত্রী। বাসা থেকে বেশ কিছু টাকা-পয়সাও নিয়ে যান। সে কারণে তাকে খুন করার ‘জেদ চেপে’ গিয়েছিল তার।

তিনি বলেন, কয়েক দিন খোঁজ নিয়ে সেকুল জানতে পারেন, তার স্ত্রী মোহাম্মদপুরের নবীনগরের দিকে থাকেন। সে অনুযায়ী শুক্রবার ভোরে ওই কাঁচির টুকরো হাতে নিয়ে নবোদয় হাউজিং কমিউনিটি সেন্টারসংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় ওঁৎ পেতে ছিলেন তিনি।

পরে ওই দিক দিয়ে তার স্ত্রীর মতো বোরকা পরা এক নারীকে রিকশা করে নবোদয় বাজারের দিকে যেতে দেখে সেকুলের ধারণা হয়, এটাই তার স্ত্রী। রিকশাটি নবোদয় বাজারের আগে রাস্তার পশ্চিম মাথায় পৌঁছালে পেছন থেকে হাতের কাঁচি দিয়ে রিকশায় থাকা ওই নারীর ঘাড়ে কোপ দেন সেকুল। তাতে ওই নারী রিকশা থেকে পড়ে যান। সেকুল তখন তার বুকে ও পিঠে আরও কয়েকটি কোপ দেন। তারপর মুখের ওপর থেকে নেকাব সরিয়ে তিনি দেখেন এ তো তার স্ত্রী নয়। সেকুল পুলিশকে বলেছেন, তার স্ত্রী যে ধরনের বোরকা পরেন আর যেভাবে পরেন, ওই নারীও ঠিক একই ধরনের বোরকা পরায় তার চিনতে ভুল হয়ে গেছে।

ওসি আবদুল লতিফ আরও জানান, আয়েশা সিদ্দিকার পরিচয় তারা জানতে পারেন তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। সেখান থেকেই তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

আয়েশার বোন খালেদা সিদ্দিকা জানান, তাদের বাড়ি দিনাজপুরের বিরলে। তার বোন ঢাকা উদ্যানের কাছে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তার স্বামী মো. রুবেল বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। আদাবরে একটি ভবনের কাজ পাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে তাকে সেখানেই থাকতে হচ্ছে। স্বামীর জন্য ভোরবেলা উঠে ভাত রান্না করে ও গত কয়েকদিন আদাবরে গিয়ে দিয়ে আসছিল। শুক্রবার সকালে যাওয়ার সময় ওই ঘটনা। তাকে খাবার দিয়ে আয়েশার যাওয়ার কথা ছিল কারখানায়। পাঁচ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে তাদের।

রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বউ ভেবে ছুরিকাঘাতে অন্য নারীকে হত্যা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

সেকুলের স্ত্রীর মতো একই রঙের বোরকা পরে বের হয়েছিলেন পোশাককর্মী আয়েশা। গত শুক্রবার ভোরে মোহাম্মদপুরের আদাবরের নবোদয় হাউজিং এলাকার রাস্তায় রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন আয়েশা। কিন্তু, একই রঙের বোরকা পরায় স্ত্রী ভেবে পোশাককর্মী আয়েশার গলায় কাঁচি দিয়ে কোপ দেন তিনি। আহত আয়েশার বোরকার নেকাব সরাতেই ভুল বুঝতে পারেন। তখন নিজেই আয়েশাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় স্থানীয় জনতা সেকুলকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। আর আয়েশাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়। মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবদুল লতিফ জানান, নিজের স্ত্রী ভেবে আয়েশার বুকে ও পিঠে কাঁচি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন সেকুল।

কিন্তু, বোরখার মুখ খুলেই ভুল বুঝতে পারেন। তখন নিজেই আয়েশাকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয়রা তাকে ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।

পেশায় ট্রাকচালক সেকুল স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন গাবতলী এলাকায়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশকে তিনি বলেছেন, কিছুদিন আগে তাকে ছেড়ে আরেকজনের সঙ্গে চলে যান তার স্ত্রী। বাসা থেকে বেশ কিছু টাকা-পয়সাও নিয়ে যান। সে কারণে তাকে খুন করার ‘জেদ চেপে’ গিয়েছিল তার।

তিনি বলেন, কয়েক দিন খোঁজ নিয়ে সেকুল জানতে পারেন, তার স্ত্রী মোহাম্মদপুরের নবীনগরের দিকে থাকেন। সে অনুযায়ী শুক্রবার ভোরে ওই কাঁচির টুকরো হাতে নিয়ে নবোদয় হাউজিং কমিউনিটি সেন্টারসংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকায় ওঁৎ পেতে ছিলেন তিনি।

পরে ওই দিক দিয়ে তার স্ত্রীর মতো বোরকা পরা এক নারীকে রিকশা করে নবোদয় বাজারের দিকে যেতে দেখে সেকুলের ধারণা হয়, এটাই তার স্ত্রী। রিকশাটি নবোদয় বাজারের আগে রাস্তার পশ্চিম মাথায় পৌঁছালে পেছন থেকে হাতের কাঁচি দিয়ে রিকশায় থাকা ওই নারীর ঘাড়ে কোপ দেন সেকুল। তাতে ওই নারী রিকশা থেকে পড়ে যান। সেকুল তখন তার বুকে ও পিঠে আরও কয়েকটি কোপ দেন। তারপর মুখের ওপর থেকে নেকাব সরিয়ে তিনি দেখেন এ তো তার স্ত্রী নয়। সেকুল পুলিশকে বলেছেন, তার স্ত্রী যে ধরনের বোরকা পরেন আর যেভাবে পরেন, ওই নারীও ঠিক একই ধরনের বোরকা পরায় তার চিনতে ভুল হয়ে গেছে।

ওসি আবদুল লতিফ আরও জানান, আয়েশা সিদ্দিকার পরিচয় তারা জানতে পারেন তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। সেখান থেকেই তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

আয়েশার বোন খালেদা সিদ্দিকা জানান, তাদের বাড়ি দিনাজপুরের বিরলে। তার বোন ঢাকা উদ্যানের কাছে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তার স্বামী মো. রুবেল বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। আদাবরে একটি ভবনের কাজ পাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে তাকে সেখানেই থাকতে হচ্ছে। স্বামীর জন্য ভোরবেলা উঠে ভাত রান্না করে ও গত কয়েকদিন আদাবরে গিয়ে দিয়ে আসছিল। শুক্রবার সকালে যাওয়ার সময় ওই ঘটনা। তাকে খাবার দিয়ে আয়েশার যাওয়ার কথা ছিল কারখানায়। পাঁচ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে তাদের।