৭৬০ জন নার্স করোনাকালীন প্রণোদনার অর্থ পাননি

আক্রান্ত ৬৭ জন, মৃত্যু ৪

করোনা মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্বপালন করলেও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৭৬০ জন নার্স ব্রাদার এখন পর্যন্ত প্রণোদনার টাকা পাননি। অন্যদিকে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ৪ কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে এবং ৭৬ জন করোনায় আক্রান্ত হলেও তারা কোন ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি গোফরান আহাম্মেদ এ জন্য হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলামের দায়িত্বহীনতা আর নার্সদের প্রতি চরম অবজ্ঞাপনাকেই দায়ী করেছেন।

এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নসহ ৪৭২ জন চিকিৎসক আছেন এদের প্রায় সকলেই করোনার প্রণোদনা পেয়েছেন বলে হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে করোনাকালীন সময়ে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ৭৬ জন নার্স ও কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে করোনা স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

নার্সরা অভিযোগ করেছে, তারা নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে করোনায় আক্রান্ত এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। সরকার অনেক আগেই হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীদের করোনাকালীন দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আসলেও দীর্ঘ ৯ মাসেও তাদের প্রণোদনার টাকা প্রদান করা হয়নি। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার হাসপাতালের পরিচালকের কাছে ধরনা নিয়ে ঘেরাও বিক্ষোভ করেও কোন কাজ হয়নি। উনি বার বার আশ্বাস দিয়েও প্রণোদনার টাকা প্রদান করছেন না। তালিকা তৈরির অজুহাত দেখিয়ে সময় ক্ষেপণ করছেন।

এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি অভিযোগ করেন, সরকার করোনাকালীন স্বাস্থ্য সেবাদানকারী চিকিৎসক নার্স ও কর্মচারীদের প্রণোদনা দেবার নির্দেশনা দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দেশের সব হাসপাতালে করোনাকালীন স্বাস্থ্য সেবা দানকারী নার্স ও কর্মচারীদের তালিকা তৈরি করে অধিদপ্তরে পাঠানোর আদেশ দিলেও হাসপাতালের পরিচালক নানান অজুহাতে তালিকা চূড়ান্ত করার নামে সময় ক্ষেপণ করছেন। ফলে আমরা প্রণোদনার অর্থ পাচ্ছি না। তিনি বলেন, এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া ও করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রণোদনার অর্থ না পেলে কঠোর আন্দোলনে যাব।

এ দিকে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান জানান, আমাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৬ জন নার্স ও কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। এর মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ৪ জন মারা গেছেন আর যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। এটা চরম অমানবিক। এ ব্যাপারে বার বার পরিচালককে বলেও কোন কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তার।

সার্বিক বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তালিকা যাচাইবাছাই শেষ হবার পথে। অচিরেই তালিকা অধিদপ্তরে পাঠানোর পর নির্দেশনা পেলে অর্থ প্রদান করা হবে। কতদিন সময় লাগবে এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আশা করি খুবই কম সময়ে হয়ে যাবে।

রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

৭৬০ জন নার্স করোনাকালীন প্রণোদনার অর্থ পাননি

আক্রান্ত ৬৭ জন, মৃত্যু ৪

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, রংপুর

করোনা মহামারিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্বপালন করলেও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৭৬০ জন নার্স ব্রাদার এখন পর্যন্ত প্রণোদনার টাকা পাননি। অন্যদিকে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ৪ কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে এবং ৭৬ জন করোনায় আক্রান্ত হলেও তারা কোন ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি গোফরান আহাম্মেদ এ জন্য হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলামের দায়িত্বহীনতা আর নার্সদের প্রতি চরম অবজ্ঞাপনাকেই দায়ী করেছেন।

এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নসহ ৪৭২ জন চিকিৎসক আছেন এদের প্রায় সকলেই করোনার প্রণোদনা পেয়েছেন বলে হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে করোনাকালীন সময়ে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ৭৬ জন নার্স ও কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে করোনা স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

নার্সরা অভিযোগ করেছে, তারা নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে করোনায় আক্রান্ত এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। সরকার অনেক আগেই হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীদের করোনাকালীন দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আসলেও দীর্ঘ ৯ মাসেও তাদের প্রণোদনার টাকা প্রদান করা হয়নি। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার হাসপাতালের পরিচালকের কাছে ধরনা নিয়ে ঘেরাও বিক্ষোভ করেও কোন কাজ হয়নি। উনি বার বার আশ্বাস দিয়েও প্রণোদনার টাকা প্রদান করছেন না। তালিকা তৈরির অজুহাত দেখিয়ে সময় ক্ষেপণ করছেন।

এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সেস এসোসিয়েশনের সভাপতি অভিযোগ করেন, সরকার করোনাকালীন স্বাস্থ্য সেবাদানকারী চিকিৎসক নার্স ও কর্মচারীদের প্রণোদনা দেবার নির্দেশনা দিয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দেশের সব হাসপাতালে করোনাকালীন স্বাস্থ্য সেবা দানকারী নার্স ও কর্মচারীদের তালিকা তৈরি করে অধিদপ্তরে পাঠানোর আদেশ দিলেও হাসপাতালের পরিচালক নানান অজুহাতে তালিকা চূড়ান্ত করার নামে সময় ক্ষেপণ করছেন। ফলে আমরা প্রণোদনার অর্থ পাচ্ছি না। তিনি বলেন, এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া ও করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রণোদনার অর্থ না পেলে কঠোর আন্দোলনে যাব।

এ দিকে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান জানান, আমাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৬ জন নার্স ও কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। এর মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ৪ জন মারা গেছেন আর যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। এটা চরম অমানবিক। এ ব্যাপারে বার বার পরিচালককে বলেও কোন কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তার।

সার্বিক বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তালিকা যাচাইবাছাই শেষ হবার পথে। অচিরেই তালিকা অধিদপ্তরে পাঠানোর পর নির্দেশনা পেলে অর্থ প্রদান করা হবে। কতদিন সময় লাগবে এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আশা করি খুবই কম সময়ে হয়ে যাবে।