ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে মৎস্য আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। কিন্তু পূর্বের ন্যায় এখনও ইলিশের আকাল চলছে। তবে মেঘনার শাখা নদ-নদীগুলোতে পাঙ্গাস মাছের প্রাচুর্য জেলেদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। বরিশাল ও ভোলার ইলিশ মোকামের আড়তগুলোতে পাঙ্গাসের আধিক্য থাকায় আড়তদারদের ২২ দিনের বিপণন নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে। প্রতিদিনই বরিশালের মাছের আড়তে বিপুলসংখ্যক পাঙ্গাস নিয়ে আসছে জেলেরা। বাজারেও শীতের এ মাছের প্রাচুর্যে খুশি উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। দ্বীপজেলা ভোলার পূূর্বপাশে ভাটি মেঘনা আর পশ্চিমের তেতুলিয়া নদীর ভাটিতে সাগর মোহনা থেকে এ সময়ে যে পরিমাণ ইলিশ উজানে উঠে আসার কথা তার যথেষ্ট ঘাটতিতে জেলেদের মুখের হাসি মিলিয়ে যাবার মধ্যেই প্রচুর পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ায় ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরেই ভোলার উজানে চাঁদপুরের ভাটিতে বরিশালের হিজলা সংলগ্ন মেঘনা ও এর শাখা নদ-নদীগুলোতে প্রচুর পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ছে। ৩ থেকে ১০ কেজি ওজনের এসব মাছ নদীতেই ৩শ থেকে ৫শ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও দু-তিন হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে যখন পৌঁছে তখন তা ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তারপরেও গত কয়েকদিন ধরে বাজারে পাঙ্গাসের প্রাচুর্য মাছপ্রিয় বাঙালি মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের খাবারে ভালো আমিষের জোগান দিচ্ছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, শীতের সময় মেঘনা ও এর শাখা নদ-নদীসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীতে প্রচুর পাঙ্গাস মাছও ধরা পরে। এবার তা কিছুটা আগেই মেঘনা ও তেতুলিয়ার ভাটি থেকে উজানে চলে এসেছে। এমনকি বিজ্ঞানীদের সরেজমিন গবেষণায় ২০১৯ সালে ইলিশের মূল প্রজননকালীন ২২ দিনে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রসমূহে পরীক্ষামূলক নমুনায় ৮৩% ইলিশের রেনুর সঙ্গে ১৭% অন্য মাছের রেনু পোনাও পাওয়া যায়। ফলে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন ২২ দিনে উপকূলে অন্য মাছেরও নিরাপদ প্রজননস¤পন্ন হচ্ছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন মৎস্য বিজ্ঞানীগণ। ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে অন্য প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এবার নদ-নদীতে গত কয়েকদিনের পাঙ্গাসের আগাম বিচরণকে অত্যন্ত ভালো লক্ষণ মনে করে সহনীয় আহরণের ওপর গুরুত্ব দিতে চান মৎস্য বিজ্ঞানীগণ।
এ ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশালের বিভাগীয় উপ-পরিচালক জানান, ইলিশ প্রজননের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য মাছেরও নিরাপদ প্রজনন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদ-নদীতে শুধু পাঙ্গাস নয় বিভিন্ন মাছেরও প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত ভালো লক্ষণ বলেও মনে করেন তিনি। তবে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরেও নদ-নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য কম থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মুক্ত ভাসমান অবস্থায় ডিম ছেড়ে বেশিরভাগ ইলিশই আবার সাগরের নোনা পানিতে বিচরণ করছে। সুতরাং প্রজননোত্তর সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে ইলিশের বিচরণ অনেকটা সীমিত থাকাই স্বাভাবিক।
বরিশালের সব বাজারেই এখন পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সাইজের নদীর পাঙ্গাস -সংবাদ
আরও খবররবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরিশাল
বরিশালের সব বাজারেই এখন পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সাইজের নদীর পাঙ্গাস -সংবাদ
ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে মৎস্য আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। কিন্তু পূর্বের ন্যায় এখনও ইলিশের আকাল চলছে। তবে মেঘনার শাখা নদ-নদীগুলোতে পাঙ্গাস মাছের প্রাচুর্য জেলেদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। বরিশাল ও ভোলার ইলিশ মোকামের আড়তগুলোতে পাঙ্গাসের আধিক্য থাকায় আড়তদারদের ২২ দিনের বিপণন নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছে। প্রতিদিনই বরিশালের মাছের আড়তে বিপুলসংখ্যক পাঙ্গাস নিয়ে আসছে জেলেরা। বাজারেও শীতের এ মাছের প্রাচুর্যে খুশি উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। দ্বীপজেলা ভোলার পূূর্বপাশে ভাটি মেঘনা আর পশ্চিমের তেতুলিয়া নদীর ভাটিতে সাগর মোহনা থেকে এ সময়ে যে পরিমাণ ইলিশ উজানে উঠে আসার কথা তার যথেষ্ট ঘাটতিতে জেলেদের মুখের হাসি মিলিয়ে যাবার মধ্যেই প্রচুর পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ায় ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরেই ভোলার উজানে চাঁদপুরের ভাটিতে বরিশালের হিজলা সংলগ্ন মেঘনা ও এর শাখা নদ-নদীগুলোতে প্রচুর পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ছে। ৩ থেকে ১০ কেজি ওজনের এসব মাছ নদীতেই ৩শ থেকে ৫শ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও দু-তিন হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে যখন পৌঁছে তখন তা ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তারপরেও গত কয়েকদিন ধরে বাজারে পাঙ্গাসের প্রাচুর্য মাছপ্রিয় বাঙালি মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের খাবারে ভালো আমিষের জোগান দিচ্ছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, শীতের সময় মেঘনা ও এর শাখা নদ-নদীসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীতে প্রচুর পাঙ্গাস মাছও ধরা পরে। এবার তা কিছুটা আগেই মেঘনা ও তেতুলিয়ার ভাটি থেকে উজানে চলে এসেছে। এমনকি বিজ্ঞানীদের সরেজমিন গবেষণায় ২০১৯ সালে ইলিশের মূল প্রজননকালীন ২২ দিনে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রসমূহে পরীক্ষামূলক নমুনায় ৮৩% ইলিশের রেনুর সঙ্গে ১৭% অন্য মাছের রেনু পোনাও পাওয়া যায়। ফলে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন ২২ দিনে উপকূলে অন্য মাছেরও নিরাপদ প্রজননস¤পন্ন হচ্ছে বলে নিশ্চিত হয়েছেন মৎস্য বিজ্ঞানীগণ। ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশে অন্য প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এবার নদ-নদীতে গত কয়েকদিনের পাঙ্গাসের আগাম বিচরণকে অত্যন্ত ভালো লক্ষণ মনে করে সহনীয় আহরণের ওপর গুরুত্ব দিতে চান মৎস্য বিজ্ঞানীগণ।
এ ব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশালের বিভাগীয় উপ-পরিচালক জানান, ইলিশ প্রজননের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য মাছেরও নিরাপদ প্রজনন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদ-নদীতে শুধু পাঙ্গাস নয় বিভিন্ন মাছেরও প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত ভালো লক্ষণ বলেও মনে করেন তিনি। তবে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরেও নদ-নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য কম থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়াণ করে। উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মুক্ত ভাসমান অবস্থায় ডিম ছেড়ে বেশিরভাগ ইলিশই আবার সাগরের নোনা পানিতে বিচরণ করছে। সুতরাং প্রজননোত্তর সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে ইলিশের বিচরণ অনেকটা সীমিত থাকাই স্বাভাবিক।