শ্রম আইনের কিছু ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক

শ্রম আইনের কিছু ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেছে গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাতুজ আলী কাদের বলেছেন, ‘শ্রম আইনে অনেকগুলো ধারা যুক্ত রয়েছে, যা বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং শ্রমজীবী মানুষদের মৌলিক মানবাধিকারকে ক্ষুণœ করে।’

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জিপিইইউয়ের সভাপতি ফজলুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে মাতুজ আলী কাদের বলেন, ‘২০০৬ সালে শ্রম আইন পাস হওয়ার শুরুতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে বড় আকারে সংশোধনী হওয়া সত্ত্বেও একটি গণতান্ত্রিক শ্রম আইন অধরাই রয়ে গেছে। যদিও শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যার বিচারে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।’

বাংলাদেশে শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানার মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আইনটিতে সংশোধনী আনা হলেও এখনও এটি শ্রমবান্ধব হয়েছে বলে বলা যায় না। শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারা উপধারায় প্রত্যক্ষভাবে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারা উপধারা সন্নিবেশিত রয়েছে। শ্রম আইনের পুরো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা আমাদের আজকের উদ্দেশ্য নয়। আইনে কিছু অধিকার দেয়া থাকলেও এই আইনেই কিছু ধারা প্রয়োগ করে আবার তা ক্ষুণœ করা হয়েছে।’

আইনের ৩১৩ ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধারাটিতে বলা আছে- মালিক বা মালিকপক্ষ, কেউ একজন শ্রমিকের প্রতি অসৎ শ্রম আচরণ করলে তাতে ক্ষুব্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে একজন শ্রমিক বা শ্রমজীবী নিজে তার প্রতিকার প্রার্থনা করে শ্রম আদালতে দরখাস্ত করতে পারবেন না। শ্রম আদালতে যাওয়ার আগে মহাপরিচালকের কাছে অনুমতির জন্য বা তার পক্ষে মামলা দায়ের করার জন্য দরখাস্ত করতে হবে। বলা দরকার, মহাপরিচালক নিজে বা তার দপ্তরের অফিসারদের বিষয়ে আমরা কখনই আশাবাদী হতে পারি না যে, তারা সততার সঙ্গে কাজটি করবেন।’

এসব বিষয় বিবেচনা করে গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ২৯, ৩১, ৩৮ ও ৪০ অনুচ্ছেদ কার্যকরণের জন্য সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধিকার বলে হাইকোর্ট বিভাগে ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর রিট পিটিশন করে বলে জানান মাতুজ আলী কাদের।

তিনি বলেন, ‘গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ সরকারের আইন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের দু’জন সচিব, মহাপরিচালক (শ্রম) ও অপর তিন জনের প্রতি রুল নিশি জারি করেন এবং চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দাখিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন।’

তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোন এপ্লয়িজ ইউনিয়ন বিশ্বাস করে, অসৎ শ্রম আচরণের বিচার প্রার্থনার ক্ষেত্রে তৃতীয় কোন পক্ষের উপর শ্রমিকের নির্ভরতা দূর হলে দেশের আপামর শ্রমিক এ থেকে উপকৃত হবে এবং দেশের সর্বস্তরের শ্রমিক সংগঠন তথা শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের এ যাত্রাপথে আমরা পাশে পাবো।’

রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

জিপিইইউর দাবি

শ্রম আইনের কিছু ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শ্রম আইনের কিছু ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেছে গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ)। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাতুজ আলী কাদের বলেছেন, ‘শ্রম আইনে অনেকগুলো ধারা যুক্ত রয়েছে, যা বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং শ্রমজীবী মানুষদের মৌলিক মানবাধিকারকে ক্ষুণœ করে।’

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জিপিইইউয়ের সভাপতি ফজলুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে মাতুজ আলী কাদের বলেন, ‘২০০৬ সালে শ্রম আইন পাস হওয়ার শুরুতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে বড় আকারে সংশোধনী হওয়া সত্ত্বেও একটি গণতান্ত্রিক শ্রম আইন অধরাই রয়ে গেছে। যদিও শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যার বিচারে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।’

বাংলাদেশে শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানার মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আইনটিতে সংশোধনী আনা হলেও এখনও এটি শ্রমবান্ধব হয়েছে বলে বলা যায় না। শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারা উপধারায় প্রত্যক্ষভাবে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী ধারা উপধারা সন্নিবেশিত রয়েছে। শ্রম আইনের পুরো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা আমাদের আজকের উদ্দেশ্য নয়। আইনে কিছু অধিকার দেয়া থাকলেও এই আইনেই কিছু ধারা প্রয়োগ করে আবার তা ক্ষুণœ করা হয়েছে।’

আইনের ৩১৩ ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ধারাটিতে বলা আছে- মালিক বা মালিকপক্ষ, কেউ একজন শ্রমিকের প্রতি অসৎ শ্রম আচরণ করলে তাতে ক্ষুব্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে একজন শ্রমিক বা শ্রমজীবী নিজে তার প্রতিকার প্রার্থনা করে শ্রম আদালতে দরখাস্ত করতে পারবেন না। শ্রম আদালতে যাওয়ার আগে মহাপরিচালকের কাছে অনুমতির জন্য বা তার পক্ষে মামলা দায়ের করার জন্য দরখাস্ত করতে হবে। বলা দরকার, মহাপরিচালক নিজে বা তার দপ্তরের অফিসারদের বিষয়ে আমরা কখনই আশাবাদী হতে পারি না যে, তারা সততার সঙ্গে কাজটি করবেন।’

এসব বিষয় বিবেচনা করে গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭, ২৯, ৩১, ৩৮ ও ৪০ অনুচ্ছেদ কার্যকরণের জন্য সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধিকার বলে হাইকোর্ট বিভাগে ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর রিট পিটিশন করে বলে জানান মাতুজ আলী কাদের।

তিনি বলেন, ‘গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ সরকারের আইন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের দু’জন সচিব, মহাপরিচালক (শ্রম) ও অপর তিন জনের প্রতি রুল নিশি জারি করেন এবং চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দাখিল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন।’

তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোন এপ্লয়িজ ইউনিয়ন বিশ্বাস করে, অসৎ শ্রম আচরণের বিচার প্রার্থনার ক্ষেত্রে তৃতীয় কোন পক্ষের উপর শ্রমিকের নির্ভরতা দূর হলে দেশের আপামর শ্রমিক এ থেকে উপকৃত হবে এবং দেশের সর্বস্তরের শ্রমিক সংগঠন তথা শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের এ যাত্রাপথে আমরা পাশে পাবো।’