চার ‘জুনোটিক রোগ’ থেকে সুরক্ষার জন্য প্রকল্প

চার ‘জুনোটিক রোগ’ থেকে মানুষের সুরক্ষার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ৭৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ্ সার্ভিস জোরদারকরণ প্রকল্পের এ কার্যক্রম দেশের ২৮টি জেলার ২০১টি উপজেলায় চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় জুনোটিক রোগে মৃত/আক্রান্ত (কালিং সাপেক্ষে) গরু ও মহিষের খামারি পর্যায়ে ক্ষতিপূরণও প্রদান করা হচ্ছে। গতকাল ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ্ সার্ভিস জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় যশোর ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী খুলনা বিভাগীয় কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়। চার জুনোটিক রোগ (প্রাণিদেহ থেকে মানবদেহে সংক্রমিত রোগ) হচ্ছে, বোভাইন টিবি, ব্রুসেলোসিস, অ্যানথ্রাক্স ও জলাতঙ্ক।

খুলনা বিভাগীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফেরদৌস আলম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে এখন আমরা স্বপ্ন দেখছি, বিদেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করার। কিন্তু এ জন্য আমাদের নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। এজন্য আমাদের এফএমডি (ক্ষুরারোগ), জুনোটিক রোগমুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ভোলা, সিরাজগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে জোন করে রোগমুক্ত পশু উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পশু রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।

অতিরিক্ত সচিব মো. ফেরদৌস আলম আরও বলেন, দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে সায়েন্টিস্ট ও খামারিদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সায়েন্টিস্টরা গবেষণাগারে উন্নত নিরাপদ জাতউন্নয়ন করে হাঁস, মুরগি, গবাদিপশু উপহার দিচ্ছেন। খামারিরা সেটি লালন-পালন করে মানুষের মুখে তুলে দিয়ে আমিষের চাহিদা পূরণ করছেন। তাই খামারিদের সুরক্ষা দিতে হবে।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. সুখেন্দু শেখর গায়েন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম। সভায় জুনোটিক রোগের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. বাহানুর রহমান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ডা. স্বপন কুমার রায়, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাদিউজ্জামান, ডা. সিদ্দিকুর রহমান, ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী, ডা. শরিফুর রহমান প্রমুখ।

সভায় প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম জানান, ৭৩ কোটি ২৬ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ্ সার্ভিস জোরদারকরণ প্রকল্পের কার্যক্রম দেশের ২৮টি জেলার ২০১টি উপজেলায় চলমান রয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় জুনোটিক রোগে মৃত/আক্রান্ত (কালিং সাপেক্ষে) গরু ও মহিষের খামারি পর্যায়ে ক্ষতিপূরণ এবং নিরাপদ অপসারণে (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) ডিডিপিতে বরাদ্দের সংস্থান আছে। তিনি আরও জানান, গৃহপালিত প্রাণির ও প্রাণিজাত খাদ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরূপণের লক্ষ্যে ভেটেরিনারি পাবলিক হেল্থ ল্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ০৪টি জুনোটিক রোগ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং জুনোটিক রোগ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চলমান আছে।

এছাড়া জুনোটিক রোগে মৃত/কালিং পজিটিভ ফলাফলপ্রাপ্ত প্রাপ্তবয়স্ক বড় গরু/মহিষের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮০ হাজার, ১ বছর বয়সী বাছুর গরুর জন্য ৪০ হাজার টাকা প্রদানের সংস্থান আছে। এই প্রকল্পের কার্যক্রম ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

সভায় বক্তাগণ জুনোটিক রোগের ঝুঁকি হ্রাসে সব মৃত গবাদিপশুর নিরাপদ অপসারণ, প্রকল্প এলাকা বর্ধিতকরণ, উপজেলা পর্যায়ে খামারিসহ জনপ্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণের আওতাভুক্তকরণ ও আঞ্চলিক ল্যাব নিমার্ণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।

রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১ , ১৫ কার্তিক ১৪২৮ ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে রোগ সংক্রমণ

চার ‘জুনোটিক রোগ’ থেকে সুরক্ষার জন্য প্রকল্প

যশোর অফিস

চার ‘জুনোটিক রোগ’ থেকে মানুষের সুরক্ষার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ৭৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ্ সার্ভিস জোরদারকরণ প্রকল্পের এ কার্যক্রম দেশের ২৮টি জেলার ২০১টি উপজেলায় চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় জুনোটিক রোগে মৃত/আক্রান্ত (কালিং সাপেক্ষে) গরু ও মহিষের খামারি পর্যায়ে ক্ষতিপূরণও প্রদান করা হচ্ছে। গতকাল ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ্ সার্ভিস জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় যশোর ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী খুলনা বিভাগীয় কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়। চার জুনোটিক রোগ (প্রাণিদেহ থেকে মানবদেহে সংক্রমিত রোগ) হচ্ছে, বোভাইন টিবি, ব্রুসেলোসিস, অ্যানথ্রাক্স ও জলাতঙ্ক।

খুলনা বিভাগীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ফেরদৌস আলম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে এখন আমরা স্বপ্ন দেখছি, বিদেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করার। কিন্তু এ জন্য আমাদের নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। এজন্য আমাদের এফএমডি (ক্ষুরারোগ), জুনোটিক রোগমুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ভোলা, সিরাজগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে জোন করে রোগমুক্ত পশু উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পশু রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।

অতিরিক্ত সচিব মো. ফেরদৌস আলম আরও বলেন, দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে সায়েন্টিস্ট ও খামারিদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সায়েন্টিস্টরা গবেষণাগারে উন্নত নিরাপদ জাতউন্নয়ন করে হাঁস, মুরগি, গবাদিপশু উপহার দিচ্ছেন। খামারিরা সেটি লালন-পালন করে মানুষের মুখে তুলে দিয়ে আমিষের চাহিদা পূরণ করছেন। তাই খামারিদের সুরক্ষা দিতে হবে।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. সুখেন্দু শেখর গায়েন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম। সভায় জুনোটিক রোগের উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. বাহানুর রহমান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ডা. স্বপন কুমার রায়, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাদিউজ্জামান, ডা. সিদ্দিকুর রহমান, ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী, ডা. শরিফুর রহমান প্রমুখ।

সভায় প্রকল্প পরিচালক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম জানান, ৭৩ কোটি ২৬ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ্ সার্ভিস জোরদারকরণ প্রকল্পের কার্যক্রম দেশের ২৮টি জেলার ২০১টি উপজেলায় চলমান রয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় জুনোটিক রোগে মৃত/আক্রান্ত (কালিং সাপেক্ষে) গরু ও মহিষের খামারি পর্যায়ে ক্ষতিপূরণ এবং নিরাপদ অপসারণে (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) ডিডিপিতে বরাদ্দের সংস্থান আছে। তিনি আরও জানান, গৃহপালিত প্রাণির ও প্রাণিজাত খাদ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিরূপণের লক্ষ্যে ভেটেরিনারি পাবলিক হেল্থ ল্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ০৪টি জুনোটিক রোগ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা এবং জুনোটিক রোগ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চলমান আছে।

এছাড়া জুনোটিক রোগে মৃত/কালিং পজিটিভ ফলাফলপ্রাপ্ত প্রাপ্তবয়স্ক বড় গরু/মহিষের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮০ হাজার, ১ বছর বয়সী বাছুর গরুর জন্য ৪০ হাজার টাকা প্রদানের সংস্থান আছে। এই প্রকল্পের কার্যক্রম ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

সভায় বক্তাগণ জুনোটিক রোগের ঝুঁকি হ্রাসে সব মৃত গবাদিপশুর নিরাপদ অপসারণ, প্রকল্প এলাকা বর্ধিতকরণ, উপজেলা পর্যায়ে খামারিসহ জনপ্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণের আওতাভুক্তকরণ ও আঞ্চলিক ল্যাব নিমার্ণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।