বৃক্ষপ্রেমী ইদ্রিসের ৪ শতাধিক বটচারা ৩০ বছরে মহীরুহ

আদিমতম বৃক্ষ বট। বট গাছকে ঘিরে বাংলা অঞ্চলে রয়েছে শত-সহস্র্র বছরের ঐতিহ্য। উষ্ণ আবহাওয়ায় বিশাল দেহের এই ছায়াবৃক্ষটি মানুষের শরীর ও মনকে এক প্রশান্তির ফুরফুরে শীতলতা এনে দেয়। প্রাচীণকাল থেকেই বটবৃক্ষের ছাঁয়াতলে বসে হাট বাজার, বাংলা সংস্কৃতির জারী, সারি, বাউলগানের আসর গ্রামীন মেলা।

প্রতিদিন সূর্য্য সকালের নরম স্নিগ্ধতা মেখে গাছের চাড়া নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন বৃক্ষ প্রেমিক ইদ্রিস আলী। পাবনা জেলাসহ আশপাশের উপজেলার মানুষের হৃদয় মনে গেঁথে আছেন তিনি। বৃক্ষ পাগল ইদ্রিস আলীর জন্ম গ্রহণ করেছেন পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার চিথুলিয়ার পূর্ব পাড়া গ্রামে। ৩০ বছর যাবত তিনি নিজের অর্থ ও সেচ্ছাশ্রমে ফরিদপুর উপজেলাসহ পাবনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে স্কুল, কলেজ,মাদ্রাসা, মসজিদ আঙিনায় বৃক্ষ রোপণ করে যাচ্ছেন।

মহামারী এই করোনার মধ্যেইও তিনি থেমে নেই প্রতিদিন রোপণ করছেন বট, পাইকর, ফলজ, বনজ বৃক্ষ। যেখানেই জায়গায় কিছুটা ফাকা থাকে সেখানেই চোখে চলে যায় ইদ্রিস আলীর। ছোট বেলা থেকেই বৃক্ষকে ভালোবাসতেন, বাড়ির আঙিনায় রোপণ করতেন নানা রকম ফুলের গাছ। সেখান থেকেই বৃক্ষের সাথে তার প্রেম গড়ে উঠে। ইদ্রিস আলী একদিন তার দাদার সাথে গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটছিলেন হাটা পথে তার চোখে পরে একটি সু বিশাল বটবৃক্ষ। বটবৃক্ষকে দেখে তিনি অবাক বনে যান। তখন তার দাদাকে জিজ্ঞাসা করেন এই গাছের নাম কি? দাদা চিনিয়ে দেয় এর নাম বট গাছ।

এই গাছ শত, শত বছর বাঁচে, মানুষকে ছাঁয়া দেয়। পাখিরা বসতে পারে খেলা করতে পারে। তখন থেকেই বটবৃক্ষের অতল প্রেমে পড়ে যায় ইদ্রিস আলী । স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাটবাজার, বিলের ধারে, ফাকা রাস্তার পাশ দিয়ে তিনি এ পর্যন্ত ৪০০ টির অধিক বটবৃক্ষ রোপণ করছেন। এছাড়াও রাস্তার দু’পাশে শোভা বর্ধনের জন্য তিনি অজস্র্র তাল, খেজুরের বীজ রোপণ করেছেন। ইদ্রিস আলী পেশায় একজন দর্জি। ফরিদপুরে সপ্তাহের দুটি হাটে সেলাই মেশিনের পেডেলে পা চালিয়ে লুঙ্গি সেলাই করে যা উপার্জন করেন সেই টাকা দিয়ে হাট থেকেই গাছের চাড়া কিনে নিয়ে যান বাড়িতে।

বৃক্ষ রোপণ করে গভীর মমতায় তা আবার পরিচর্যা করেন নিজেই। প্রকৃতি ও বৃক্ষকে ভালোবেসে আজো বিয়ের পিড়িতে বসনেনি ইদ্রিস আলী চিরকুমার হয়ে আছেন! এখন বয়স তার ৫৫ বছর। তার পৈত্রিক ভিটায় একটি টিনের ঘরে একাই থাকেন তিনি।

তার ঘরে গেলে এক আলাদা অনুভূতি জাগে মনে, দেখা যায় টিনের বেড়ার সাথে ঝুলানো রয়েছে বৃক্ষ প্রেমিককে নিয়ে আঞ্চলিকসহ প্রথম সারির প্রায় সব জাতীয় সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের পেপার কাটিং। রয়েছে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ছবি বাঁধানো ছবি। রয়েছে তার নিজের লেখা কবিতা। তার পরিবারে ৪ ভাই সাত বোনের মধ্যে ইদ্রিস আলী তৃতীয়। এখন তার একটি বোনই বৃক্ষ পাগল ইদ্রিস আলীকে কিছুটা দেখা শোনা করছেন। বৃক্ষ রোপণের বাহিরে সময় পেলেই খবরের কাগজে চোখ রাখেন তিনি। বয়সের ভারে এখন নানা রকম অসুখ বাসা বেঁধেছে দেহে। এই সরল মনের মানুষ ইদ্রিস আলীর নিত্যদিন খেতে হয় ভারি, ভারি ওষুধ।

নিজের ওষুধ না কিনে যিনি গাছের চাড়া কিনে সেচ্ছাশ্রমে রোপণ করছেন তাকে অন্তরের অন্তরস্থল থেকে জানাই শ্রদ্ধা.... সেলুট বটবৃক্ষ প্রেমিক ইদ্রিস আলী। কালকাল সুন্দর এই ধরণীতে তুমি থাকবে, থাকবে বৃক্ষের সবুজ পাতায়, থাকবে মানবের নিশ্বাসে, নিশ্বাসে।

সোমবার, ০১ নভেম্বর ২০২১ , ১৬ কার্তিক ১৪২৮ ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বৃক্ষপ্রেমী ইদ্রিসের ৪ শতাধিক বটচারা ৩০ বছরে মহীরুহ

প্রতিনিধি, চাটমোহর (পাবনা)

image

আদিমতম বৃক্ষ বট। বট গাছকে ঘিরে বাংলা অঞ্চলে রয়েছে শত-সহস্র্র বছরের ঐতিহ্য। উষ্ণ আবহাওয়ায় বিশাল দেহের এই ছায়াবৃক্ষটি মানুষের শরীর ও মনকে এক প্রশান্তির ফুরফুরে শীতলতা এনে দেয়। প্রাচীণকাল থেকেই বটবৃক্ষের ছাঁয়াতলে বসে হাট বাজার, বাংলা সংস্কৃতির জারী, সারি, বাউলগানের আসর গ্রামীন মেলা।

প্রতিদিন সূর্য্য সকালের নরম স্নিগ্ধতা মেখে গাছের চাড়া নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন বৃক্ষ প্রেমিক ইদ্রিস আলী। পাবনা জেলাসহ আশপাশের উপজেলার মানুষের হৃদয় মনে গেঁথে আছেন তিনি। বৃক্ষ পাগল ইদ্রিস আলীর জন্ম গ্রহণ করেছেন পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার চিথুলিয়ার পূর্ব পাড়া গ্রামে। ৩০ বছর যাবত তিনি নিজের অর্থ ও সেচ্ছাশ্রমে ফরিদপুর উপজেলাসহ পাবনা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে স্কুল, কলেজ,মাদ্রাসা, মসজিদ আঙিনায় বৃক্ষ রোপণ করে যাচ্ছেন।

মহামারী এই করোনার মধ্যেইও তিনি থেমে নেই প্রতিদিন রোপণ করছেন বট, পাইকর, ফলজ, বনজ বৃক্ষ। যেখানেই জায়গায় কিছুটা ফাকা থাকে সেখানেই চোখে চলে যায় ইদ্রিস আলীর। ছোট বেলা থেকেই বৃক্ষকে ভালোবাসতেন, বাড়ির আঙিনায় রোপণ করতেন নানা রকম ফুলের গাছ। সেখান থেকেই বৃক্ষের সাথে তার প্রেম গড়ে উঠে। ইদ্রিস আলী একদিন তার দাদার সাথে গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটছিলেন হাটা পথে তার চোখে পরে একটি সু বিশাল বটবৃক্ষ। বটবৃক্ষকে দেখে তিনি অবাক বনে যান। তখন তার দাদাকে জিজ্ঞাসা করেন এই গাছের নাম কি? দাদা চিনিয়ে দেয় এর নাম বট গাছ।

এই গাছ শত, শত বছর বাঁচে, মানুষকে ছাঁয়া দেয়। পাখিরা বসতে পারে খেলা করতে পারে। তখন থেকেই বটবৃক্ষের অতল প্রেমে পড়ে যায় ইদ্রিস আলী । স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাটবাজার, বিলের ধারে, ফাকা রাস্তার পাশ দিয়ে তিনি এ পর্যন্ত ৪০০ টির অধিক বটবৃক্ষ রোপণ করছেন। এছাড়াও রাস্তার দু’পাশে শোভা বর্ধনের জন্য তিনি অজস্র্র তাল, খেজুরের বীজ রোপণ করেছেন। ইদ্রিস আলী পেশায় একজন দর্জি। ফরিদপুরে সপ্তাহের দুটি হাটে সেলাই মেশিনের পেডেলে পা চালিয়ে লুঙ্গি সেলাই করে যা উপার্জন করেন সেই টাকা দিয়ে হাট থেকেই গাছের চাড়া কিনে নিয়ে যান বাড়িতে।

বৃক্ষ রোপণ করে গভীর মমতায় তা আবার পরিচর্যা করেন নিজেই। প্রকৃতি ও বৃক্ষকে ভালোবেসে আজো বিয়ের পিড়িতে বসনেনি ইদ্রিস আলী চিরকুমার হয়ে আছেন! এখন বয়স তার ৫৫ বছর। তার পৈত্রিক ভিটায় একটি টিনের ঘরে একাই থাকেন তিনি।

তার ঘরে গেলে এক আলাদা অনুভূতি জাগে মনে, দেখা যায় টিনের বেড়ার সাথে ঝুলানো রয়েছে বৃক্ষ প্রেমিককে নিয়ে আঞ্চলিকসহ প্রথম সারির প্রায় সব জাতীয় সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের পেপার কাটিং। রয়েছে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ছবি বাঁধানো ছবি। রয়েছে তার নিজের লেখা কবিতা। তার পরিবারে ৪ ভাই সাত বোনের মধ্যে ইদ্রিস আলী তৃতীয়। এখন তার একটি বোনই বৃক্ষ পাগল ইদ্রিস আলীকে কিছুটা দেখা শোনা করছেন। বৃক্ষ রোপণের বাহিরে সময় পেলেই খবরের কাগজে চোখ রাখেন তিনি। বয়সের ভারে এখন নানা রকম অসুখ বাসা বেঁধেছে দেহে। এই সরল মনের মানুষ ইদ্রিস আলীর নিত্যদিন খেতে হয় ভারি, ভারি ওষুধ।

নিজের ওষুধ না কিনে যিনি গাছের চাড়া কিনে সেচ্ছাশ্রমে রোপণ করছেন তাকে অন্তরের অন্তরস্থল থেকে জানাই শ্রদ্ধা.... সেলুট বটবৃক্ষ প্রেমিক ইদ্রিস আলী। কালকাল সুন্দর এই ধরণীতে তুমি থাকবে, থাকবে বৃক্ষের সবুজ পাতায়, থাকবে মানবের নিশ্বাসে, নিশ্বাসে।