বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তের প্রত্যাশায় জলবায়ু সম্মেলন শুরু

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তের প্রত্যাশায় স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত কপ-২৬। জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলনে প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা ২০৩০ সালের মধ্যে তারা কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমাবেন এবং পৃথিবী নামক গ্রহকে সাহায্য করবেন, তার ঘোষণা দেবেন। ধরিত্রী রক্ষায় ধনী দেশগুলোর করণীয় কী, তা প্রকাশ পাবে এবারের সম্মেলনে। এ কারণে কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী শুরুর পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে দ্রুত সাড়া দিয়েছিল, ঠিক সেভাবেই উদ্যেগী হয়ে মানবজাতির সামনে অস্তিত্ব সংকটের হুমকি তৈরি করা জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ মোকাবিলায় উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ এবারের কপ-২৬ সম্মেলনে পাঁচ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অংশ নিয়েছে। সম্মেলনে অভিযোজন ও ক্ষতি প্রশমনে সমান (৫০:৫০) অর্থ বরাদ্দের দাবিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোরালো দাবি তুলে ধরবে বাংলাদেশ।

বিগত কয়েক বছরে মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপর্যয় ঠেকাতে বারবার জরুরি ভিত্তিতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন বিজ্ঞানীরা। সম্মেলনের প্রথম দিন বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) তাদের প্রতিবেদন তুলে ধরে। সংস্থাটির আগের প্রতিবেদনে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করে বলেন, বিগত বছরগুলোর চেয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি চলতি বছরে অনেক বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অতিরিক্ত তাপমাত্রা, তাপপ্রবাহ, বন্যা ও দাবানলের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সম্মেলনের প্রথমদিন বক্তব্য রাখবেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহীদ। জলবায়ুর পরিবর্তনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে মালদ্বীপের নি¤œাঞ্চলীয় দ্বীপগুলো চরম হুমকির মুখে। এমন পরিস্থিতিতে চলতে থাকলে মালদ্বীপ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সংকট উত্তরণে বিষয়টি তুলে ধরবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ শহিদ। বন্যা, খরা ও দাবানলের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্ষতির জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। অথচ এই দেশগুলোর মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ উন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক কম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদেরই সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে। ফলে গ্লাাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে কম ধনী এবং ছোট দেশগুলোর চাহিদার বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানো জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্মেলনে অংশ নিতে গতকাল গ্লাসগোতে পৌঁছেন বিশ্ব নেতাদের অনেকেই। অনেকে আবার ইতালির রোম থেকে জি-২০ সম্মেলন শেষে যুক্ত হচ্ছেন কপ-২৬ সম্মেলনে। কপ-২৬ সম্মেলনকে প্যারিস চুক্তি-পরবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এতে নতুন ঘোষণা দিতে পারেন বাইডেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করছে, চীন বাতাসে ছড়াচ্ছে তার দ্বিগুণ গ্যাস। তবে ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি গ্যাস নিঃসরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের টার্গেট পূরণে কপ-২৬ এ জলবায়ু নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা পেশ করবে বেইজিং। স্কটল্যান্ডের সম্মেলনে নতুন করে কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, এই সম্মেলন বিশ্বের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুহূর্ত।’ দু’সপ্তাহের এই সম্মেলনের প্রাক্কালে নেতাদের তা সফল করার তাগিদ দিয়ে জনসন বলেছেন, ‘আমরা এ মুহূর্তকে কাজে লাগাতে পারব নাকি ফসকে যেতে দেব প্রত্যেকেই সে প্রশ্ন করছে।’ কপ-২৬ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা বলেছেন, ‘পাঁচ বছর আগে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে আমরা যা অর্জন করেছিলাম এবার তেমন চুক্তিতে পৌঁছা কঠিন হবে। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের দেশগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করার লক্ষ্যমাত্রা নিতে একমত হয়েছিল।’

কিন্তু বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পথে আছে, যা জলবায়ু বিপর্যয় ঘটাতে পারে, বলছে জাতিসংঘ। বিবিসি ওয়ান এর এন্ড্রু মার শো-তে অলোক শর্মা বলেন, ‘তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখাটা এখন নেতাদের ওপর নির্ভর করছে। তাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন এবং তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার ওই লক্ষ্য আমরা কীভাবে পূরণ করব সে ব্যাপারে আমাদের একযোগে একমত হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী চীনের মতো দেশগুলোর কাছ থেকে আমরা আরও বেশিকিছু আশা করি এবং এই জলবায়ু সম্মেলন এক্ষেত্রে তাদের জন্য নেতৃত্ব দেখানোর সত্যিকারের একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে।’

সম্মেলনের প্রথম দিনই বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) প্রকাশিত জলবায়ু পরিস্থিতি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেখা যাবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। জলবায়ু বিজ্ঞানীদের তৈরি ডব্লিউএমও’র এ সাময়িক প্রতিবেদনে চলতি বছরের বৈশ্বিক তাপমাত্রার সঙ্গে আগের বছরগুলোর তাপমাত্রার তুলনা করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দাবদাহ, বন্যা ও দাবানলের মতো চরম আবহাওয়াজনিত দুর্যোগগুলোর তীব্রতা বাড়ছে। গত দশক ছিল এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ দশক; পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া যে প্রয়োজন, সে বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকাররা একমতও হয়েছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত এ আয়োজন যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত হওয়া অন্যতম বড় সম্মেলন। সম্মেলনটি গত বছর হওয়ার কথা থাকলেও মহামারীর কারণে এক বছর পিছিয়ে যায়।

এদিকে, রোমে অনুষ্ঠিত জি-২০র খসড়া ঘোষণায় জোটনেতারা তাপমাত্রা যেন প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রির বেশি উপরে না উঠে, তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্ত ২০০৯ সালে বিশ্বনেতারা ২০২০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোর জন্য করা জলবায়ু তহবিলে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণ হয়নি। প্রতিশ্রুতিটি পূরণ হতে ২০২৩ সাল লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

সম্মেলনে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন ডেভিড অ্যাটেনবরো ও গ্রেটা থুনবার্গের মতো সুপরিচিত পরিবেশকর্মীরাও। ‘ক্লাইমেট ট্রেনে’ চেপে শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় গ্লাসগোতে নামেন গ্রেটা; ট্রেন থেকে নামার পরপরই তার আশপাশে ভিড় জমে যায়। চার্টার্ড এ ট্রেনটি অ্যামস্টারডাম থেকে রওনা হয়, এতে থাকা পাঁচশ’র মতো যাত্রীর মধ্যে ছিলেন নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ইতালি ও জার্মানির প্রতিনিধিরা, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য ও দেড়শ তরুণ পরিবেশকর্মী। বিমানের চেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এবারের গ্লাসগো সম্মেলনে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিধিদের অনেকেই ট্রেনকে বেছে নিয়েছেন।

জলবায়ু সম্মেলন : ৫ বিষয়ে সরব বাংলাদেশ

কপ-২৬ এ বাংলাদেশ পাঁচ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অংশ নিয়েছে। এতে অভিযোজন ও ক্ষতি প্রশমনে সমান (৫০:৫০) অর্থ বরাদ্দের দাবিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোরালো দাবি তুলে ধরবে বাংলাদেশ। সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্যারিস চুক্তির ‘আর্টিকেল ৬’, অভিযোজন, অর্থায়ন, লোকসান ও ক্ষতিকে মূল আলোচ্য রেখে আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনের জন্য ‘পজিশন পেপার’ (অবস্থানপত্র) প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ। সম্মেলনে বাংলাদেশ একটা গ্রুপ হিসেবে অংশ নেবে, জোট করে বক্তব্য তুলে ধরবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এজেন্ডাভিত্তিক অবস্থানে জোর দেব আমরা। যেমন- ফিন্যান্সের বিষয়ে জোর দেব ৫০% অ্যাডাপটেশনের জন্য, ৫০% মিটিগেশনের জন্য বরাদ্দ নিশ্চিত করতে চাই আমরা’।

আশা করা হচ্ছে এবারের কপ-২৬ এর মূল বিষয় হয়ে উঠতে পারে- জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে উন্নত দেশগুলোর দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রত্যাশার ব্যবধান ঘোচানোর চেষ্টা। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, প্রত্যাশা পূরণে তারা নিজেদের দাবিগুলোও তুলে ধরবে। জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন-১) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘একটা দেশ তো এককভাবে কথা বলতে পারে না। এক বছর ধরে তাদের সঙ্গে সভা করে আমাদের পজিশন যেটি, সেটি এলডিসি পজিশন, আমরা সেভাবে অগ্রসর হচ্ছি।’

এবারের সম্মেলনে এজেন্ডাভিত্তিক কিছু অবস্থান নির্ধারণ করে বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে পরিবেশ অধিদপ্তরের এই পরিচালক মির্জা শওকত (জলবায়ু পরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন) বলেন, ‘যেমন- ফিন্যান্সের বিষয়ে জোর দেব, আর্টিকেল ৬ এ কিছু বিষয় রয়েছে, লস অ্যান্ড ড্যামেজে কোন বিষয়কে আমরা এম্পেসাইজ করব, মূলত এ নিয়ে অবস্থানপত্র তৈরি করা হয়েছে।’

সম্মেলন নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ও চাপ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সবকিছু মিলিয়ে খুব একটা আশাপ্রদ কিছু হবে কিনা তা নিয়ে বরাবরের মতো সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

কেন গুরুত্বপূর্ণ কপ-২৬?

চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় গ্লাসগো নগর কর্তৃপক্ষ আগামী এক দশকে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাদের ভবন ও অবকাঠামোগুলো রক্ষা, কারণ যে নকশায় এগুলো নির্মিত হয়েছিল, তা এখন টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে উঠেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধির হার শূন্যতে নামিয়ে আনার বড় লক্ষ্য ঠিক করেছে গ্লাসগো নগর কর্তৃপক্ষ। সবার প্রশ্ন নগর কর্তৃপক্ষ তা পারবে? কার্বন নির্গমন হার শূন্য মানে হল, যে পরিমাণ কার্বন শহরে নির্গত হবে, তার পুরোটাই শুষে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। সেজন্য চাই প্রচুর গাছপালা এবং কার্বন ক্যাপচার। অর্থাৎ প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় উপায়ে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ বাড়াতে হবে। সেটি করতে গেলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর প্রয়োজন। তবে, এ পর্যন্ত ২২ হাজার গাছ লাগানো ছাড়া আর কী কী পদক্ষেপ গ্লাসগো নগর কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা এখনও জানা যায়নি বলেও জানায় বিবিসি।

image

রাজধানী শহর পরিবেশ দূষণের শিকার। বিভিন্ন অঞ্চল থাকে প্রায় সময় ধূলিময়, নির্মাণকাজ, সড়ক মেরামত লেগেই আছে, বাতাসে ছড়ায় ধূলি, নগরবাসীর চলাচল হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। গতকাল পুরান ঢাকার চাঁনখারপুল থেকে তোলা ছবি -সোহরাব আলম

আরও খবর
জলবায়ু সংকট : বিশ্বকে আরও বড় লক্ষ্য নির্ধারণের আহ্বান শেখ হাসিনার
ঢাকায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন এখনও হয়নি
১৬ জনকে আসামি করে মামলা, গ্রেপ্তার ২
রাজধানীতে নারীকে পিটিয়ে হত্যা
সুজন সিকদারের টার্গেট দরিদ্র নারীরাই
ফেরি উদ্ধারে হামজা-রুস্তম ব্যর্থ

সোমবার, ০১ নভেম্বর ২০২১ , ১৬ কার্তিক ১৪২৮ ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তের প্রত্যাশায় জলবায়ু সম্মেলন শুরু

সংবাদ ডেস্ক

image

রাজধানী শহর পরিবেশ দূষণের শিকার। বিভিন্ন অঞ্চল থাকে প্রায় সময় ধূলিময়, নির্মাণকাজ, সড়ক মেরামত লেগেই আছে, বাতাসে ছড়ায় ধূলি, নগরবাসীর চলাচল হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ। গতকাল পুরান ঢাকার চাঁনখারপুল থেকে তোলা ছবি -সোহরাব আলম

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তের প্রত্যাশায় স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত কপ-২৬। জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলনে প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা ২০৩০ সালের মধ্যে তারা কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমাবেন এবং পৃথিবী নামক গ্রহকে সাহায্য করবেন, তার ঘোষণা দেবেন। ধরিত্রী রক্ষায় ধনী দেশগুলোর করণীয় কী, তা প্রকাশ পাবে এবারের সম্মেলনে। এ কারণে কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী শুরুর পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে দ্রুত সাড়া দিয়েছিল, ঠিক সেভাবেই উদ্যেগী হয়ে মানবজাতির সামনে অস্তিত্ব সংকটের হুমকি তৈরি করা জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ মোকাবিলায় উদ্যোগী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ এবারের কপ-২৬ সম্মেলনে পাঁচ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অংশ নিয়েছে। সম্মেলনে অভিযোজন ও ক্ষতি প্রশমনে সমান (৫০:৫০) অর্থ বরাদ্দের দাবিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোরালো দাবি তুলে ধরবে বাংলাদেশ।

বিগত কয়েক বছরে মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপর্যয় ঠেকাতে বারবার জরুরি ভিত্তিতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন বিজ্ঞানীরা। সম্মেলনের প্রথম দিন বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) তাদের প্রতিবেদন তুলে ধরে। সংস্থাটির আগের প্রতিবেদনে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করে বলেন, বিগত বছরগুলোর চেয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধি চলতি বছরে অনেক বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অতিরিক্ত তাপমাত্রা, তাপপ্রবাহ, বন্যা ও দাবানলের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সম্মেলনের প্রথমদিন বক্তব্য রাখবেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ শহীদ। জলবায়ুর পরিবর্তনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে মালদ্বীপের নি¤œাঞ্চলীয় দ্বীপগুলো চরম হুমকির মুখে। এমন পরিস্থিতিতে চলতে থাকলে মালদ্বীপ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সংকট উত্তরণে বিষয়টি তুলে ধরবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ শহিদ। বন্যা, খরা ও দাবানলের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্ষতির জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। অথচ এই দেশগুলোর মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ উন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক কম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদেরই সবচেয়ে বেশি ভুগতে হচ্ছে। ফলে গ্লাাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে কম ধনী এবং ছোট দেশগুলোর চাহিদার বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানো জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্মেলনে অংশ নিতে গতকাল গ্লাসগোতে পৌঁছেন বিশ্ব নেতাদের অনেকেই। অনেকে আবার ইতালির রোম থেকে জি-২০ সম্মেলন শেষে যুক্ত হচ্ছেন কপ-২৬ সম্মেলনে। কপ-২৬ সম্মেলনকে প্যারিস চুক্তি-পরবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এতে নতুন ঘোষণা দিতে পারেন বাইডেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করছে, চীন বাতাসে ছড়াচ্ছে তার দ্বিগুণ গ্যাস। তবে ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি গ্যাস নিঃসরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের টার্গেট পূরণে কপ-২৬ এ জলবায়ু নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা পেশ করবে বেইজিং। স্কটল্যান্ডের সম্মেলনে নতুন করে কোনো চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, এই সম্মেলন বিশ্বের জন্য ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুহূর্ত।’ দু’সপ্তাহের এই সম্মেলনের প্রাক্কালে নেতাদের তা সফল করার তাগিদ দিয়ে জনসন বলেছেন, ‘আমরা এ মুহূর্তকে কাজে লাগাতে পারব নাকি ফসকে যেতে দেব প্রত্যেকেই সে প্রশ্ন করছে।’ কপ-২৬ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট অলোক শর্মা বলেছেন, ‘পাঁচ বছর আগে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে আমরা যা অর্জন করেছিলাম এবার তেমন চুক্তিতে পৌঁছা কঠিন হবে। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের দেশগুলো তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করার লক্ষ্যমাত্রা নিতে একমত হয়েছিল।’

কিন্তু বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পথে আছে, যা জলবায়ু বিপর্যয় ঘটাতে পারে, বলছে জাতিসংঘ। বিবিসি ওয়ান এর এন্ড্রু মার শো-তে অলোক শর্মা বলেন, ‘তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখাটা এখন নেতাদের ওপর নির্ভর করছে। তাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন এবং তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার ওই লক্ষ্য আমরা কীভাবে পূরণ করব সে ব্যাপারে আমাদের একযোগে একমত হওয়া দরকার।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী চীনের মতো দেশগুলোর কাছ থেকে আমরা আরও বেশিকিছু আশা করি এবং এই জলবায়ু সম্মেলন এক্ষেত্রে তাদের জন্য নেতৃত্ব দেখানোর সত্যিকারের একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে।’

সম্মেলনের প্রথম দিনই বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) প্রকাশিত জলবায়ু পরিস্থিতি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেখা যাবে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। জলবায়ু বিজ্ঞানীদের তৈরি ডব্লিউএমও’র এ সাময়িক প্রতিবেদনে চলতি বছরের বৈশ্বিক তাপমাত্রার সঙ্গে আগের বছরগুলোর তাপমাত্রার তুলনা করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দাবদাহ, বন্যা ও দাবানলের মতো চরম আবহাওয়াজনিত দুর্যোগগুলোর তীব্রতা বাড়ছে। গত দশক ছিল এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ দশক; পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া যে প্রয়োজন, সে বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকাররা একমতও হয়েছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু সংক্রান্ত এ আয়োজন যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত হওয়া অন্যতম বড় সম্মেলন। সম্মেলনটি গত বছর হওয়ার কথা থাকলেও মহামারীর কারণে এক বছর পিছিয়ে যায়।

এদিকে, রোমে অনুষ্ঠিত জি-২০র খসড়া ঘোষণায় জোটনেতারা তাপমাত্রা যেন প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রির বেশি উপরে না উঠে, তা নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্ত ২০০৯ সালে বিশ্বনেতারা ২০২০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোর জন্য করা জলবায়ু তহবিলে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণ হয়নি। প্রতিশ্রুতিটি পূরণ হতে ২০২৩ সাল লেগে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

সম্মেলনে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন ডেভিড অ্যাটেনবরো ও গ্রেটা থুনবার্গের মতো সুপরিচিত পরিবেশকর্মীরাও। ‘ক্লাইমেট ট্রেনে’ চেপে শনিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় গ্লাসগোতে নামেন গ্রেটা; ট্রেন থেকে নামার পরপরই তার আশপাশে ভিড় জমে যায়। চার্টার্ড এ ট্রেনটি অ্যামস্টারডাম থেকে রওনা হয়, এতে থাকা পাঁচশ’র মতো যাত্রীর মধ্যে ছিলেন নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ইতালি ও জার্মানির প্রতিনিধিরা, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য ও দেড়শ তরুণ পরিবেশকর্মী। বিমানের চেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এবারের গ্লাসগো সম্মেলনে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিনিধিদের অনেকেই ট্রেনকে বেছে নিয়েছেন।

জলবায়ু সম্মেলন : ৫ বিষয়ে সরব বাংলাদেশ

কপ-২৬ এ বাংলাদেশ পাঁচ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অংশ নিয়েছে। এতে অভিযোজন ও ক্ষতি প্রশমনে সমান (৫০:৫০) অর্থ বরাদ্দের দাবিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোরালো দাবি তুলে ধরবে বাংলাদেশ। সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্যারিস চুক্তির ‘আর্টিকেল ৬’, অভিযোজন, অর্থায়ন, লোকসান ও ক্ষতিকে মূল আলোচ্য রেখে আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনের জন্য ‘পজিশন পেপার’ (অবস্থানপত্র) প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ। সম্মেলনে বাংলাদেশ একটা গ্রুপ হিসেবে অংশ নেবে, জোট করে বক্তব্য তুলে ধরবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এজেন্ডাভিত্তিক অবস্থানে জোর দেব আমরা। যেমন- ফিন্যান্সের বিষয়ে জোর দেব ৫০% অ্যাডাপটেশনের জন্য, ৫০% মিটিগেশনের জন্য বরাদ্দ নিশ্চিত করতে চাই আমরা’।

আশা করা হচ্ছে এবারের কপ-২৬ এর মূল বিষয় হয়ে উঠতে পারে- জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে উন্নত দেশগুলোর দেওয়া প্রতিশ্রুতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রত্যাশার ব্যবধান ঘোচানোর চেষ্টা। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, প্রত্যাশা পূরণে তারা নিজেদের দাবিগুলোও তুলে ধরবে। জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন-১) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, ‘একটা দেশ তো এককভাবে কথা বলতে পারে না। এক বছর ধরে তাদের সঙ্গে সভা করে আমাদের পজিশন যেটি, সেটি এলডিসি পজিশন, আমরা সেভাবে অগ্রসর হচ্ছি।’

এবারের সম্মেলনে এজেন্ডাভিত্তিক কিছু অবস্থান নির্ধারণ করে বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে পরিবেশ অধিদপ্তরের এই পরিচালক মির্জা শওকত (জলবায়ু পরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন) বলেন, ‘যেমন- ফিন্যান্সের বিষয়ে জোর দেব, আর্টিকেল ৬ এ কিছু বিষয় রয়েছে, লস অ্যান্ড ড্যামেজে কোন বিষয়কে আমরা এম্পেসাইজ করব, মূলত এ নিয়ে অবস্থানপত্র তৈরি করা হয়েছে।’

সম্মেলন নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ও চাপ থাকলেও শেষ পর্যন্ত সবকিছু মিলিয়ে খুব একটা আশাপ্রদ কিছু হবে কিনা তা নিয়ে বরাবরের মতো সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

কেন গুরুত্বপূর্ণ কপ-২৬?

চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় গ্লাসগো নগর কর্তৃপক্ষ আগামী এক দশকে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাদের ভবন ও অবকাঠামোগুলো রক্ষা, কারণ যে নকশায় এগুলো নির্মিত হয়েছিল, তা এখন টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে উঠেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন বৃদ্ধির হার শূন্যতে নামিয়ে আনার বড় লক্ষ্য ঠিক করেছে গ্লাসগো নগর কর্তৃপক্ষ। সবার প্রশ্ন নগর কর্তৃপক্ষ তা পারবে? কার্বন নির্গমন হার শূন্য মানে হল, যে পরিমাণ কার্বন শহরে নির্গত হবে, তার পুরোটাই শুষে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। সেজন্য চাই প্রচুর গাছপালা এবং কার্বন ক্যাপচার। অর্থাৎ প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম উভয় উপায়ে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ বাড়াতে হবে। সেটি করতে গেলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর প্রয়োজন। তবে, এ পর্যন্ত ২২ হাজার গাছ লাগানো ছাড়া আর কী কী পদক্ষেপ গ্লাসগো নগর কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা এখনও জানা যায়নি বলেও জানায় বিবিসি।