১৭ বছর বয়স পর্যন্ত টিকাদান আজ শুরু

ঢাকায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন এখনও হয়নি

আরও ২২ জেলায় টিকাদানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে

ঢাকায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হচ্ছে আজ। তবে টিকার নিবন্ধনে শিশু শিক্ষার্থীদের খুব একটা সাড়া মিলছে না। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর ১২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাত্র ৩০ হাজার ৮৬৩ জন শিক্ষার্থী টিকা পেতে নিবন্ধন করেছে। ঢাকা মহানগরীতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ।

প্রথমদিন করোনাভাইরাসের টিকা পাচ্ছে ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল থেকে ঢাকার আটটি কেন্দ্রে একযোগে চলবে টিকাদান।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীর স্কুল এবং কলেজ মিলিয়ে ৭৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা সাত-আট লাখের মতো হবে।

এর মধ্যে গত ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী তিন লাখ ৪১ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থীর তথ্য পেয়েছিল মাউশি। ওইদিন পর্যন্ত আরও ৩০-৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য মাউশি পায়নি সংস্থাটি। এ হিসেবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের টিকার জন্য ঢাকা মহানগরীর প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেনি।

যদিও মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘এখন পর্যন্ত টিকার জন্য প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন হয়ে গেছে। আশা করছি, অন্য শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনও শিগগিরই সম্পন্ন হয়ে যাবে।’

নিবন্ধনকারী ৩১ হাজারের কম

মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন ৩০ অক্টোবর সংস্থার মহাপরিচালকে দেয়া এক চিঠিতে বলেছেন, ঢাকা মহানগরীর ১৬টি শিক্ষা থানার ১২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩০ হাজার ৮৬৩ জন শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে।

এর মধ্যে বাড্ডা শিক্ষা থানার ১৪টি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ৮৩৫ জন, ক্যান্টনমেন্ট থানার তিনটি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৯৫ জন, ধানমন্ডির দশটি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ২৪০ জন, কোতোয়ালির আটটি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৪১৪ জন, মিরপুরের ২০টি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ৮০১ জন, মোহাম্মদপুরের ১২টি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ৬৫৭ জন, মতিঝিলের ১৬টি প্রতিষ্ঠানের সাত হাজার ৮৫৬ জন, গুলশানের ১১টি প্রতিষ্ঠানের দুই হাজার ৩৪৯ জন, উত্তরার নয়টি প্রতিষ্ঠানের ৭৫৯ জন, শাহআলীর পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ২৭৩ জন ও রমনার ১৩টি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৪৪৮ জন শিক্ষার্থী টিকা পেতে নিবন্ধন করেছে।

কাফরুল, পল্লবী, ডেমরা ও শ্যামপুর শিক্ষা থানার তথ্য দিতে পারেনি মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক।

তবে অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘নিবন্ধন এখনও করা যাবে। অনেকে অভিভাবক মনে করছেন, তারা দু-একদিন পর্যবেক্ষণ করে সন্তানের টিকার নিবন্ধন করাবেন। এসব নানা কারণেই নিবন্ধনে বিলম্ব হতে পারে।’

১৫ দিনের মধ্যে ঢাকার শিক্ষার্থীদের টিকাদান সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নভেম্বরের মাঝামাঝি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তখন অনেক স্কুলেই পরীক্ষা কেন্দ্র থাকবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকার শিক্ষার্থীদের টিকাদান শেষ না হলে পরীক্ষা চলাকালীন টিকাদান চলবে।’

আজ প্রথমদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। শিশু শিক্ষার্থীদের ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যসচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক ডা. শামসুল হক গতকাল এক বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এই টিকাদান কার্যক্রমে শিশুদের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ফাইজারের টিকা ব্যবহার করব।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু এই শিশুদের এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নেই, তারা বার্থ রেজিস্ট্রেশন বা জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে এ তালিকায় (টিকাদান কর্মসূচি) অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।

টিকা পেতে স্কুল শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে হচ্ছে; তারপর মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে টিকা নেওয়ার তারিখ ও টিকাদান কেন্দ্রের নাম জানানো হবে। টিকা নেওয়ার সময় টিকা কার্ড প্রিন্ট করে নিয়ে যেতে হবে বলে জানান ডা. শামসুল হক

নিবন্ধন ছাড়া টিকা নয় স্কুল শিক্ষার্থীদের

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সহায়তায় ঢাকায় আটটি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্য সব স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হবে।

আট প্রতিষ্ঠান হলো- বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার হার্ডকো স্কুল, মালিবাগের সাউথ পয়েন্ট স্কুল, গুলশানের চিটাগাং গ্রামার স্কুল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ, ধানমন্ডির কাকলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরার সাউথ ব্রিজ স্কুল এবং মিরপুরের স্কলাস্টিকা স্কুল।

স্বল্পসংখ্যক কেন্দ্রে টিকাদানের কারণ সর্ম্পকে ডা. শামসুল হক জানান, ফাইজারের টিকা দেওয়া এবং ডাইলুয়েন্ট মিশ্রণের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের প্রয়োজন হয়। এ কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়েছে।

আট কেন্দ্রের প্রতিটিতে ২৫টি করে বুথ থাকবে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ‘এসব স্কুল তাদের বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও টিকা দিতে পারবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কাউকে টিকা দেওয়া হবে না। নিবন্ধন করতে হবে এবং টিকা নেওয়ার জন্য টিকা কার্ড নিয়ে আসতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতিদিন একটি কক্ষে ২০০ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হবে। মতিঝিল ও রমনা এলাকার শিক্ষার্থীরা আইডিয়াল স্কুল টিকা কেন্দ্রে টিকা নেবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্য প্রথমে ১২টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় চারটি বাতিল করা হয়েছে।

ফাইজার ভ্যাসকিনটি তাপমাত্রা সংবেদনশীল-জানিয়ে অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘যে কেন্দ্র, যে বুথে এই টিকা দিতে হয় সেটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হতে হয়। এই ভ্যাকসিন তৈরি করা জন্য যে ডইলুয়েন্ট লাগে সেটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখতে হয়। এই দুটি বিষয় বিবেচনা করে যেখানে আমাদের এই সুযোগ আছে সেই স্কুলগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, প্রতিদিন যেন ৪ থেকে ৫ হাজার শিশুকে টিকা দিতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেক স্কুলের তালিকা চেয়েছিলাম, কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিকভাবে ২৫টি করে বুথ করা যায়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা রয়েছে, এমন মোট আটটি স্কুলের তালিকা দিয়েছে।’

টিকা নিয়ে অসুস্থ হলে পাঁচ হাসপাতালে চিকিৎসা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, টিকা নেওয়ার পর কোনো শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত বৃস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ দিকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের তালিকা পাওয়ার পর আইসিটি মন্ত্রণালয়কে নিবন্ধনের জন্য দেওয়া হয়েছে।

আরও ২২ জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকাদানের প্রস্তুতি

ঢাকার বাইরে ২২টি জেলায় টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক শামসুল হক। ফাইজারের টিকার কোল্ড চেইন সীমাবদ্ধতার কারণে একসঙ্গে সব জেলায় তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় নেয়ার কথা জানিয়েছেন শামসুল হক।

গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণির ১২০ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। ওইসব শিক্ষার্থীর কোনো সমস্যা না হওয়ায় সারাদেশে স্কুলশিশুদের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

ফাইজারের টিকার মজুত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ফাইজার-বায়োএনকেটের ৭০ লাখের বেশি ডোজ কোভিড টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই টিকা এসেছে ‘কোভ্যাক্স’ সুবিধার আওতায় নামমাত্র মূল্যে। নভেম্বরে ফাইজারের আরও ৩৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

সোমবার, ০১ নভেম্বর ২০২১ , ১৬ কার্তিক ১৪২৮ ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

১৭ বছর বয়স পর্যন্ত টিকাদান আজ শুরু

ঢাকায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন এখনও হয়নি

আরও ২২ জেলায় টিকাদানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে

রাকিব উদ্দিন

image

রাজধানীর ১২টি স্কুলে শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিন দেয়া হবে আজ থেকে। গতকাল এ উপলক্ষে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রস্তুতি কার্যক্রম চলে -সংবাদ

ঢাকায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হচ্ছে আজ। তবে টিকার নিবন্ধনে শিশু শিক্ষার্থীদের খুব একটা সাড়া মিলছে না। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর ১২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাত্র ৩০ হাজার ৮৬৩ জন শিক্ষার্থী টিকা পেতে নিবন্ধন করেছে। ঢাকা মহানগরীতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ।

প্রথমদিন করোনাভাইরাসের টিকা পাচ্ছে ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল থেকে ঢাকার আটটি কেন্দ্রে একযোগে চলবে টিকাদান।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীর স্কুল এবং কলেজ মিলিয়ে ৭৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা সাত-আট লাখের মতো হবে।

এর মধ্যে গত ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী তিন লাখ ৪১ হাজার ৭২৩ জন শিক্ষার্থীর তথ্য পেয়েছিল মাউশি। ওইদিন পর্যন্ত আরও ৩০-৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য মাউশি পায়নি সংস্থাটি। এ হিসেবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের টিকার জন্য ঢাকা মহানগরীর প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেনি।

যদিও মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘এখন পর্যন্ত টিকার জন্য প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থীর নিবন্ধন হয়ে গেছে। আশা করছি, অন্য শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনও শিগগিরই সম্পন্ন হয়ে যাবে।’

নিবন্ধনকারী ৩১ হাজারের কম

মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন ৩০ অক্টোবর সংস্থার মহাপরিচালকে দেয়া এক চিঠিতে বলেছেন, ঢাকা মহানগরীর ১৬টি শিক্ষা থানার ১২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩০ হাজার ৮৬৩ জন শিক্ষার্থী টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে।

এর মধ্যে বাড্ডা শিক্ষা থানার ১৪টি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ৮৩৫ জন, ক্যান্টনমেন্ট থানার তিনটি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৯৫ জন, ধানমন্ডির দশটি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ২৪০ জন, কোতোয়ালির আটটি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৪১৪ জন, মিরপুরের ২০টি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ৮০১ জন, মোহাম্মদপুরের ১২টি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ৬৫৭ জন, মতিঝিলের ১৬টি প্রতিষ্ঠানের সাত হাজার ৮৫৬ জন, গুলশানের ১১টি প্রতিষ্ঠানের দুই হাজার ৩৪৯ জন, উত্তরার নয়টি প্রতিষ্ঠানের ৭৫৯ জন, শাহআলীর পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ২৭৩ জন ও রমনার ১৩টি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৪৪৮ জন শিক্ষার্থী টিকা পেতে নিবন্ধন করেছে।

কাফরুল, পল্লবী, ডেমরা ও শ্যামপুর শিক্ষা থানার তথ্য দিতে পারেনি মাউশির ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক।

তবে অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘নিবন্ধন এখনও করা যাবে। অনেকে অভিভাবক মনে করছেন, তারা দু-একদিন পর্যবেক্ষণ করে সন্তানের টিকার নিবন্ধন করাবেন। এসব নানা কারণেই নিবন্ধনে বিলম্ব হতে পারে।’

১৫ দিনের মধ্যে ঢাকার শিক্ষার্থীদের টিকাদান সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নভেম্বরের মাঝামাঝি এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তখন অনেক স্কুলেই পরীক্ষা কেন্দ্র থাকবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকার শিক্ষার্থীদের টিকাদান শেষ না হলে পরীক্ষা চলাকালীন টিকাদান চলবে।’

আজ প্রথমদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। শিশু শিক্ষার্থীদের ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যসচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক ডা. শামসুল হক গতকাল এক বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘আমরা এই টিকাদান কার্যক্রমে শিশুদের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত ফাইজারের টিকা ব্যবহার করব।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু এই শিশুদের এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নেই, তারা বার্থ রেজিস্ট্রেশন বা জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে এ তালিকায় (টিকাদান কর্মসূচি) অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।

টিকা পেতে স্কুল শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে হচ্ছে; তারপর মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে টিকা নেওয়ার তারিখ ও টিকাদান কেন্দ্রের নাম জানানো হবে। টিকা নেওয়ার সময় টিকা কার্ড প্রিন্ট করে নিয়ে যেতে হবে বলে জানান ডা. শামসুল হক

নিবন্ধন ছাড়া টিকা নয় স্কুল শিক্ষার্থীদের

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সহায়তায় ঢাকায় আটটি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্য সব স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হবে।

আট প্রতিষ্ঠান হলো- বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার হার্ডকো স্কুল, মালিবাগের সাউথ পয়েন্ট স্কুল, গুলশানের চিটাগাং গ্রামার স্কুল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ, ধানমন্ডির কাকলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরার সাউথ ব্রিজ স্কুল এবং মিরপুরের স্কলাস্টিকা স্কুল।

স্বল্পসংখ্যক কেন্দ্রে টিকাদানের কারণ সর্ম্পকে ডা. শামসুল হক জানান, ফাইজারের টিকা দেওয়া এবং ডাইলুয়েন্ট মিশ্রণের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের প্রয়োজন হয়। এ কারণে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হয়েছে।

আট কেন্দ্রের প্রতিটিতে ২৫টি করে বুথ থাকবে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ‘এসব স্কুল তাদের বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও টিকা দিতে পারবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কাউকে টিকা দেওয়া হবে না। নিবন্ধন করতে হবে এবং টিকা নেওয়ার জন্য টিকা কার্ড নিয়ে আসতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতিদিন একটি কক্ষে ২০০ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হবে। মতিঝিল ও রমনা এলাকার শিক্ষার্থীরা আইডিয়াল স্কুল টিকা কেন্দ্রে টিকা নেবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্য প্রথমে ১২টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় চারটি বাতিল করা হয়েছে।

ফাইজার ভ্যাসকিনটি তাপমাত্রা সংবেদনশীল-জানিয়ে অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘যে কেন্দ্র, যে বুথে এই টিকা দিতে হয় সেটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হতে হয়। এই ভ্যাকসিন তৈরি করা জন্য যে ডইলুয়েন্ট লাগে সেটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রাখতে হয়। এই দুটি বিষয় বিবেচনা করে যেখানে আমাদের এই সুযোগ আছে সেই স্কুলগুলো নির্বাচন করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, প্রতিদিন যেন ৪ থেকে ৫ হাজার শিশুকে টিকা দিতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেক স্কুলের তালিকা চেয়েছিলাম, কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিকভাবে ২৫টি করে বুথ করা যায়, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা রয়েছে, এমন মোট আটটি স্কুলের তালিকা দিয়েছে।’

টিকা নিয়ে অসুস্থ হলে পাঁচ হাসপাতালে চিকিৎসা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, টিকা নেওয়ার পর কোনো শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত বৃস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি প্রায় শেষ দিকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের তালিকা পাওয়ার পর আইসিটি মন্ত্রণালয়কে নিবন্ধনের জন্য দেওয়া হয়েছে।

আরও ২২ জেলায় শিক্ষার্থীদের টিকাদানের প্রস্তুতি

ঢাকার বাইরে ২২টি জেলায় টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক শামসুল হক। ফাইজারের টিকার কোল্ড চেইন সীমাবদ্ধতার কারণে একসঙ্গে সব জেলায় তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় নেয়ার কথা জানিয়েছেন শামসুল হক।

গত ১৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের কয়েকটি স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণির ১২০ জন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়। ওইসব শিক্ষার্থীর কোনো সমস্যা না হওয়ায় সারাদেশে স্কুলশিশুদের টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

ফাইজারের টিকার মজুত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ফাইজার-বায়োএনকেটের ৭০ লাখের বেশি ডোজ কোভিড টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই টিকা এসেছে ‘কোভ্যাক্স’ সুবিধার আওতায় নামমাত্র মূল্যে। নভেম্বরে ফাইজারের আরও ৩৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।