১৬ জনকে আসামি করে মামলা, গ্রেপ্তার ২

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আহত আকিব : হামলাকারীদের বিচার দাবি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ (২১) ও রক্তিম (২২) নামে দুজনকে গত শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র তৌফিকুর রহমান বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এদিকে হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রলীগের কর্মী মাহাদি আকিব (২১)।

ক্যাম্পাসে নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হতে হয় ৬২তম ব্যাচের এ শিক্ষার্থীকে। মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া আকিব এখন চমেক চিকিৎসাধীন। মো. মাহাদি আকিবের ওপর হামলার বিচারের দাবি জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা। গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনে মাহাদি আকিবের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মত্যুদণ্ডের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়।

পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদিকুর রহমান বলেন, সংঘর্ষে আকিব নামে এক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এর আগে গত শনিবার দুপুরের দিকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের দ্রুত হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়া আকিবের চিকিৎসরা জানিয়েছেন, আকিবের ব্রেইনে মারাত্মক জখম হয়েছে। এ ক্ষত সেরে উঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। জ্ঞান ফিরলেও তার স্বাভাবিক চলাফেরা নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসকরাও।

জানা যায়, গুরুতর আহত আকিবকে প্রথমে চমেক হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে নেয়া হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড নিউরো সার্জারিতে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এরপর পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে মাথায় অস্ত্রোপচার হয় আকিবের। প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, অপারেশন সাকসেসফুল। তবে আকিব গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। মাথার হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে। সঙ্গে ব্রেইনেও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ইনজুরিটা খুব ভয়াবহ হওয়ায়। এই মুহূর্তে কোন কমেন্ট করতে চাই না। তবুও আমি খুবই আশাবাদী।

অধ্যাপক নোমান খালেদ ছাড়াও মেডিকেল টিমে ছিলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান, কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার।

এর আগে গত শনিবার সকালে মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটকে একা পেয়ে আকিবকে মারধর করে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। মারধরের শিকার আকিব শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর হামলায় জড়িতরা সবাই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিতি।

নওফেলের অনুসারী অভিজিত দাশ বলেন, শনিবার সকালে কলেজে আসার পথে আকিবকে একা পেয়ে হকিস্টিক, লাঠিসোঁঠা ও কাচের বোতল দিয়ে জখম করা হয়। এতে তার মাথায় মারাত্মকভাবে রক্তক্ষরণ হয়।

এদিকে গতকাল দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনে মাহাদি আকিবের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীরা চিকিৎসক হওয়ার উদ্দেশ্যে ভর্তি হন। অনেকে পড়ালেখার পাশাপাশি রাজনীতি করেন। রাজনীতির নামে এ রকম ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা ও হত্যাপ্রচেষ্টাকারীদের বহিষ্কারের দাবি জানাই। মানববন্ধনে একাত্মতা জানিয়ে বক্তব্য দেন, চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, সহ-সভাপতি একরামুল হক রাসেল, মাইনুল হাসান চৌধুরী শিমুল, আবুল মনসুর টিটু, সাব্বির সাকিব প্রমুখ। মানববন্ধনে অংশ নেন ডা. ইমন সিকদার, ডা. কে এম তানভীর, ডা. খোরশেদুল ইসলাম, ডা. শ্বাশত মজুমদার, ডা. মো. সাকি, ডা. রেজাউল করিম শ্রাবণ, তৌফিকুর রহমান, অভিজিৎ দাশ, কনক দেবনাথ, পিয়াল, জামশেদ, ফয়েজ, জামিল, আরিফ প্রমুখ।

সোমবার, ০১ নভেম্বর ২০২১ , ১৬ কার্তিক ১৪২৮ ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

চমেকে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ

১৬ জনকে আসামি করে মামলা, গ্রেপ্তার ২

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আহত আকিব : হামলাকারীদের বিচার দাবি

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ (২১) ও রক্তিম (২২) নামে দুজনকে গত শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র তৌফিকুর রহমান বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এদিকে হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রলীগের কর্মী মাহাদি আকিব (২১)।

ক্যাম্পাসে নিজ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হতে হয় ৬২তম ব্যাচের এ শিক্ষার্থীকে। মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়া আকিব এখন চমেক চিকিৎসাধীন। মো. মাহাদি আকিবের ওপর হামলার বিচারের দাবি জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা। গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনে মাহাদি আকিবের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মত্যুদণ্ডের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়।

পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদিকুর রহমান বলেন, সংঘর্ষে আকিব নামে এক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এর আগে গত শনিবার দুপুরের দিকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের দ্রুত হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়া আকিবের চিকিৎসরা জানিয়েছেন, আকিবের ব্রেইনে মারাত্মক জখম হয়েছে। এ ক্ষত সেরে উঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। জ্ঞান ফিরলেও তার স্বাভাবিক চলাফেরা নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসকরাও।

জানা যায়, গুরুতর আহত আকিবকে প্রথমে চমেক হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে নেয়া হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড নিউরো সার্জারিতে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এরপর পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে মাথায় অস্ত্রোপচার হয় আকিবের। প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী।

তিনি বলেন, অপারেশন সাকসেসফুল। তবে আকিব গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। মাথার হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে। সঙ্গে ব্রেইনেও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ইনজুরিটা খুব ভয়াবহ হওয়ায়। এই মুহূর্তে কোন কমেন্ট করতে চাই না। তবুও আমি খুবই আশাবাদী।

অধ্যাপক নোমান খালেদ ছাড়াও মেডিকেল টিমে ছিলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান, কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার।

এর আগে গত শনিবার সকালে মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটকে একা পেয়ে আকিবকে মারধর করে ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। মারধরের শিকার আকিব শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর হামলায় জড়িতরা সবাই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিতি।

নওফেলের অনুসারী অভিজিত দাশ বলেন, শনিবার সকালে কলেজে আসার পথে আকিবকে একা পেয়ে হকিস্টিক, লাঠিসোঁঠা ও কাচের বোতল দিয়ে জখম করা হয়। এতে তার মাথায় মারাত্মকভাবে রক্তক্ষরণ হয়।

এদিকে গতকাল দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনে মাহাদি আকিবের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীরা চিকিৎসক হওয়ার উদ্দেশ্যে ভর্তি হন। অনেকে পড়ালেখার পাশাপাশি রাজনীতি করেন। রাজনীতির নামে এ রকম ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা ও হত্যাপ্রচেষ্টাকারীদের বহিষ্কারের দাবি জানাই। মানববন্ধনে একাত্মতা জানিয়ে বক্তব্য দেন, চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, সহ-সভাপতি একরামুল হক রাসেল, মাইনুল হাসান চৌধুরী শিমুল, আবুল মনসুর টিটু, সাব্বির সাকিব প্রমুখ। মানববন্ধনে অংশ নেন ডা. ইমন সিকদার, ডা. কে এম তানভীর, ডা. খোরশেদুল ইসলাম, ডা. শ্বাশত মজুমদার, ডা. মো. সাকি, ডা. রেজাউল করিম শ্রাবণ, তৌফিকুর রহমান, অভিজিৎ দাশ, কনক দেবনাথ, পিয়াল, জামশেদ, ফয়েজ, জামিল, আরিফ প্রমুখ।