দরিদ্র ও সুন্দরী নারীদের টার্গেট করতেন সুজন সিকদার নামে এক মানবপাচারকারী। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তাদের বিয়ে করতেন সুজন ও তার সহযোগীরা। বিয়ের পর সুন্দরী নারীদের পাচার করতেন বিভিন্ন দেশে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আবদুুল্লাহ আল মোমেন। এর আগে গত শনিবার রাতে রাজধানীর কড়াইল বস্তি এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা সুজন সিকদারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ সময় তার সহযোগী রমজান মোল্লাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আবদুুল্লাহ আল মোমেন জানান, মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা প্রথমে দরিদ্র পরিবারের নারীদের টার্গেট করতেন। এরপর চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে বিদেশে পাচার করতেন। বেশিরভাগ সময় পাচার নারীদের জোরপূর্বক ডিজে পার্টিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকা-ে জড়ানো হতো। পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা সুজন সিকদার ও রমজান মোল্লাকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে একজন ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। অন্য এক নারীকে বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সুজন। পরবর্তীতে তাকে ঘটনাটি জানিয়ে সতর্ক করা হয়।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, নারীদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য মৌখিকভাবে তাদের বিয়ে করতেন চক্রের সদস্যরা। বিয়ের পর ভিকটিমদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি মোবাইলে ধারণ করতেন। পরে পার্শ্ববর্তী দেশে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় চাকরির কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পাচার করে দিতেন। তিনি আরও বলেন, কোন নারী পার্শ্ববর্তী দেশে যেতে রাজি না হলে তাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিত চক্রটি। আর পাচার করা নারীদের পতিতালয়ে বিক্রি ও জোরপূর্বক ডিজে পার্টিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকা-ে জড়ানো হতো।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্ততারকৃতরা জানান, যশোর সীমান্ত এলাকা দিয়ে নারী পাচার করতেন তারা। নারী পাচারের ক্ষেত্রে যশোর সীমান্ত পারাপারে পলাতক আসামি হোসেন সহায়তা করত। হোসেন পাচার করা নারীদের পার্শ্ববর্তী দেশের এই চক্রের অন্য সহযোগীর কাছে হস্তান্তর করতেন। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, সুজন সিকদার তিনটি বিয়ে করেছেন, যার মধ্যে একজনকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের উদ্দেশ্যে সুজন এক নারীকে বিয়ে করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এছাড়া গ্রেপ্তার রমজান স্ত্রী মারা গেছেন- এমন মিথ্যা বলে অন্য এক নারীকে বিয়ে করেন। এই দুই নারীকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচারের জন্য গ্রেপ্তাররা ভারতীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২৮ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে জানায় র‌্যাব।

এক প্রশ্নের উত্তরে লে. কর্নেল আবদুুল্লাহ আল মোমেন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের স্ত্রীরা জানতেন না তাদের স্বামী গরিব পরিবারের নারীদের বিয়ে করে পাচার করে আসছিল। চক্রটির পেছনে কাদের হাত আছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গত শনিবার রাজধানী ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে নারীপাচার চক্রের অন্যতম হোতা কামরুল ইসলাম ওরফে জলিল ওরফে ডিজে কামরুল ওরফে ড্যান্স কামরুলসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪। এ সময় ২৩ নারী ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়। কথিত ‘ড্যান্স ক্লাব’ খুলে সেখানে তরুণীদের নাচ বা গান শেখানোর আড়ালে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করাতো চক্রটি। পাশাপাশি অনেক নারীকে বিভিন্ন দেশে পাচার করে চক্রটি।