সুন্দরবন দস্যুমুক্ত ঘোষণার তৃতীয় বর্ষপূর্তি আজ

পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। এক সময়ে সুন্দরবনকে ঘিরে ৩২টি জল ও বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা মৎস্যজীবীদের জিম্মি করে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাত। পরবর্তীতে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র‌্যাবের মহাপরিচালককে প্রধান সমন্বয়ক করে সুন্দরবন জলদস্যু দমনে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে জলদস্যু মুক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। র‌্যাবের একের পর এক সাড়াশি অভিযানে জলদস্যুরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। অনেকেই অস্ত্র ও গুলিসহ র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়ে। আর পালিয়ে থাকা জলদস্যুরা ফেরারী জীবনের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয়।

২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের পহেলা নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য, ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়। ২০১৮ সালের পহেলা নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন ঘোষণা করেন। গত তিন বছর ধরে র‌্যাবের সাফল্য ধরে রেখেছে। এরপর থেকে প্রতিবছর পহেলা নভেম্বর দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবস পালিত হয়। আজ সোমবার তৃতীয় বর্ষপূর্তি দিবস।

সুন্দরবনের অস্ত্রধারী অপরাধীরা আত্মসমর্পণের পর পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সাবেক জলদস্যুদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা নগদ আর্থিক অনুদান দেয়। আর সরকার কর্তৃক আইনি সহায়তা এবং র‌্যাবের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তাসহ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ফলে সুন্দরবনের সব জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।

সম্প্রতি র‌্যাব পুনর্বাসন চাহিদা সমীক্ষা চালিয়ে আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের মাঝে ঘর, দোকান, নৌকা, জাল ও গবাদি পশু হস্তান্তর করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের স্বাবলম্বী হতে র‌্যাব আরও ভূমিকা রাখবে।

র‌্যাবের দাবি, সুন্দরবনে বর্তমানে শান্তির সু-বাতাস বইছে। অপহরণ-হত্যা এখন নেই। জেলেদের কষ্টার্জিত উপার্জনের ভাগও কাউকে দিতে হচ্ছে না। মাওয়ালী, বাওয়ালী, বনজীবী, বন্যপ্রাণী এখন সবই নিরাপদ। নির্ভয়ে-নির্বিঘে্ন আসছে দর্শনার্থী, পর্যবেক্ষক, জাহাজ বণিকরা। এভাবেই সরকারের দূরদর্শিতায় সুন্দরবন কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক গতিশীলতা ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হল।

র‌্যাবের তৎপরতা : ১. দস্যুমুক্ত সুন্দরবন বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারী করা হচ্ছে। ২. সুন্দরবনে র‌্যাবের দৃশ্যমান উপস্থিতি রাখতে দূবলারচরসহ কয়েকটি স্থানে র‌্যাবের ক্যাম্প স্থাপন এবং টহল ও আভিযানিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। ৩. নিয়মিত নৌ ও পায়ে হেঁটে টহলের পাশাপাশি হেলিকপ্টারযোগে টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। ৪. আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের মোটিভেশন ও নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা। ৫. আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আইনি সহায়তা দেয়া। ৬. আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের সামাজিক নিরাপত্তা ও আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়ন। ৭. আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যু পরিবারের সদস্যদের স্বাবলম্বী করতে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ দেয়া। ৮. আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের বিভিন্ন উৎসব ও করোনাকালীন সহায়তা দেয়া। ৯. মাঠপর্যায়ে গণসংযোগ, জনসমর্থন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি। ১০. পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান চাহিদা সমীক্ষা ও তা বাস্তবায়ন।

র‌্যাবের তথ্য মতে, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে মাস্টার বাহিনী, মজনু বাহিনী, ইলিয়াস বাহিনী, খোকাবাবু বাহিনী বড় ভাই বাহিনী, দাদা ভাই বাহিনীসহ ৩২টি বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের কাছ থেকে ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পর থেকে সেখানে অপহরণ কমে গেছে। কোন বাহিনী নেই। পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নত।

আমাদের বাগেরহাট প্রতিনিধি আজাদুল হক জানান, দস্যুমুক্ত সুন্দরবন ঘোষণা দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাগেরহাটের রামপালে র‌্যাবের উদ্যোগে একটি অনুষ্ঠান হবে। সেখানে আত্মসমর্পণকৃত দস্যুরা উপস্থিত থাকবেন। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে।

এছাড়াও সুন্দরবনকে ঘিরে এখন আর দস্যু বাহিনীর তৎপরতা নেই। তবে চোরাই হরিণ শিকারের ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটে। এ চক্র এখনও সক্রিয়। সুন্দরবনের বিভিন্ন শাখা খালে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করা হয়।

সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, র‌্যাব এখনও টহল দেয়। বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের তৎপরতা রয়েছে। এছাড়াও কোস্টগার্ডও রয়েছে। স্থানীয় পরিবেশবাদীদের দাবি, বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার বন্ধ করা। বিষ প্রয়োগের কারণে মাছের বংশ ধ্বংস হয়ে যায়।

সোমবার, ০১ নভেম্বর ২০২১ , ১৬ কার্তিক ১৪২৮ ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৩

সুন্দরবন দস্যুমুক্ত ঘোষণার তৃতীয় বর্ষপূর্তি আজ

বাকী বিল্লাহ

পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। এক সময়ে সুন্দরবনকে ঘিরে ৩২টি জল ও বনদস্যু বাহিনীর সদস্যরা মৎস্যজীবীদের জিম্মি করে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাত। পরবর্তীতে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র‌্যাবের মহাপরিচালককে প্রধান সমন্বয়ক করে সুন্দরবন জলদস্যু দমনে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে জলদস্যু মুক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। র‌্যাবের একের পর এক সাড়াশি অভিযানে জলদস্যুরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। অনেকেই অস্ত্র ও গুলিসহ র‌্যাবের অভিযানে ধরা পড়ে। আর পালিয়ে থাকা জলদস্যুরা ফেরারী জীবনের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয়।

২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের পহেলা নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য, ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত হয়। ২০১৮ সালের পহেলা নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন ঘোষণা করেন। গত তিন বছর ধরে র‌্যাবের সাফল্য ধরে রেখেছে। এরপর থেকে প্রতিবছর পহেলা নভেম্বর দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবস পালিত হয়। আজ সোমবার তৃতীয় বর্ষপূর্তি দিবস।

সুন্দরবনের অস্ত্রধারী অপরাধীরা আত্মসমর্পণের পর পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সাবেক জলদস্যুদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা নগদ আর্থিক অনুদান দেয়। আর সরকার কর্তৃক আইনি সহায়তা এবং র‌্যাবের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তাসহ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ফলে সুন্দরবনের সব জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।

সম্প্রতি র‌্যাব পুনর্বাসন চাহিদা সমীক্ষা চালিয়ে আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের মাঝে ঘর, দোকান, নৌকা, জাল ও গবাদি পশু হস্তান্তর করার পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের স্বাবলম্বী হতে র‌্যাব আরও ভূমিকা রাখবে।

র‌্যাবের দাবি, সুন্দরবনে বর্তমানে শান্তির সু-বাতাস বইছে। অপহরণ-হত্যা এখন নেই। জেলেদের কষ্টার্জিত উপার্জনের ভাগও কাউকে দিতে হচ্ছে না। মাওয়ালী, বাওয়ালী, বনজীবী, বন্যপ্রাণী এখন সবই নিরাপদ। নির্ভয়ে-নির্বিঘে্ন আসছে দর্শনার্থী, পর্যবেক্ষক, জাহাজ বণিকরা। এভাবেই সরকারের দূরদর্শিতায় সুন্দরবন কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক গতিশীলতা ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হল।

র‌্যাবের তৎপরতা : ১. দস্যুমুক্ত সুন্দরবন বাস্তবায়নে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারী করা হচ্ছে। ২. সুন্দরবনে র‌্যাবের দৃশ্যমান উপস্থিতি রাখতে দূবলারচরসহ কয়েকটি স্থানে র‌্যাবের ক্যাম্প স্থাপন এবং টহল ও আভিযানিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। ৩. নিয়মিত নৌ ও পায়ে হেঁটে টহলের পাশাপাশি হেলিকপ্টারযোগে টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। ৪. আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের মোটিভেশন ও নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা। ৫. আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আইনি সহায়তা দেয়া। ৬. আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের সামাজিক নিরাপত্তা ও আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়ন। ৭. আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যু পরিবারের সদস্যদের স্বাবলম্বী করতে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ দেয়া। ৮. আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের বিভিন্ন উৎসব ও করোনাকালীন সহায়তা দেয়া। ৯. মাঠপর্যায়ে গণসংযোগ, জনসমর্থন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি। ১০. পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান চাহিদা সমীক্ষা ও তা বাস্তবায়ন।

র‌্যাবের তথ্য মতে, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে মাস্টার বাহিনী, মজনু বাহিনী, ইলিয়াস বাহিনী, খোকাবাবু বাহিনী বড় ভাই বাহিনী, দাদা ভাই বাহিনীসহ ৩২টি বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের কাছ থেকে ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

আমাদের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার পর থেকে সেখানে অপহরণ কমে গেছে। কোন বাহিনী নেই। পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নত।

আমাদের বাগেরহাট প্রতিনিধি আজাদুল হক জানান, দস্যুমুক্ত সুন্দরবন ঘোষণা দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাগেরহাটের রামপালে র‌্যাবের উদ্যোগে একটি অনুষ্ঠান হবে। সেখানে আত্মসমর্পণকৃত দস্যুরা উপস্থিত থাকবেন। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি চলছে।

এছাড়াও সুন্দরবনকে ঘিরে এখন আর দস্যু বাহিনীর তৎপরতা নেই। তবে চোরাই হরিণ শিকারের ঘটনা মাঝে মধ্যে ঘটে। এ চক্র এখনও সক্রিয়। সুন্দরবনের বিভিন্ন শাখা খালে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করা হয়।

সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, র‌্যাব এখনও টহল দেয়। বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের তৎপরতা রয়েছে। এছাড়াও কোস্টগার্ডও রয়েছে। স্থানীয় পরিবেশবাদীদের দাবি, বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার বন্ধ করা। বিষ প্রয়োগের কারণে মাছের বংশ ধ্বংস হয়ে যায়।